বিনিয়োগের 4 টে স্ট্র্যাটেজি বা কৌশল। নতুনদের না জানলেই নয়…

5/5 - (4 জন রেটিং করেছেন)

শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের বিষয়টা সমুদ্রের মতোই বিশাল। গভীরতা না জেনে বুঝে এই বাজারের জলে পা রাখলে একদিকে যেমন তলিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে তেমনি অন্যদিকে এখানে সাঁতার কাটার কৌশল জানা থাকলে বিশাল সম্পদ প্রাপ্তিরও সুযোগ পাওয়া যায়।

এই অস্থির জলে নেমে দিকভ্রান্ত না হতে চাইলে বিনিয়োগের যেকোনো একটা নির্দিষ্ট কৌশল অনুসরণ করতেই হয়। আর বিবিধ কৌশলের মধ্যে কোনটা নিজের জন্য উপযুক্ত হবে সেটা নিজের ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা, লক্ষ্য, ক্যাপিটালের পরিমাণ ইত্যাদি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে বেছে নিতে হয়।

বেশিরভাগ অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের যে সমস্ত স্ট্র্যাটেজি বা কৌশল অনুসরণ করে থাকেন তার মধ্যে সবথেকে বেশী প্রচলিত চারটে কৌশলের কথাই জানতে পারবেন এই প্রতিবেদনে।

সূচীপত্র দেখান

নিজের জন্য বিনিয়োগের উপযুক্ত স্ট্র্যাটেজি বা কৌশল খোঁজার আগে…

আমরা বিনিয়োগ করি নিজেদের টাকায় এবং নিজেদের কাঙ্খিত সময় দিগন্তে কিছু লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্যে। তাই বিনিয়োগ শুরু করার বা বিনিয়োগের জন্য নিজের সঠিক স্ট্রাটেজি নির্ধারণ করার আগে নিজের ব্যাপারে কিছু বিষয় চেক আপ করে নেওয়া প্রয়োজন। যেমন,

#১ নিজের বর্তমান আর্থিক অবস্থা কেমন?

বিনিয়োগ করার আগে সবার প্রথমে নিজের আর্থিক অবস্থাটা তো বুঝে নিতেই হবে, তাই না? মাস গেলে আয় কত, সেখান থেকে ব্যয় কত, ঘাড়ের উপর ধার কত ইত্যাদি ব্যাপার গুলো একবার একটু হিসাব কষে নিলেই কতটা টাকা দিয়ে বিনিয়োগ শুরু করা যাবে বা ধারাবাহিকভাবে কতটা টাকা বিনিয়োগের খাতে পাঠানো যাবে সেটা বুঝে নেওয়া যাবে। আর বিনিয়োগের উপযুক্ত স্ট্র্যাটেজি বেছে নেওয়ার জন্য সবার আগে এটা বোঝা জরুরী।

এমনিতে বিনিয়োগ শুরু করার জন্য প্রচুর টাকার দরকার পড়ে না। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে নিজের আয় থেকে খরচ বাদ দিয়ে অতিরিক্ত টাকা বাঁচিয়ে রাখা না যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত বিনিয়োগ না শুরু করাই উচিত। তাছাড়া বিনিয়োগ শুরু করে দিলেই তো আর কাজ শেষ হয়ে যায় না! নিজের নির্ধারিত কৌশল অনুযায়ী সময়মতো তার মধ্যে আরো ক্যাপিটাল যোগ করার ক্ষেত্রে কতখানি ক্যাপিটাল যোগানো সম্ভব হবে সেটাও বিনিয়োগ শুরু করার আগেই হিসেব করে নেওয়া জরুরী।

#২ লক্ষ্য কী?

বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সবার লক্ষ্য আলাদা রকম হয়। এবং নিজের ক্ষেত্রে লক্ষ্যটা ঠিক কী সেটা বিনিয়োগের আগেই স্থির করে নেওয়া প্রয়োজন। কারণ লক্ষ্য অনুযায়ী কৌশল নির্ধারণ করতে হয়। যেমন ধরুন যদি আপনি বুড়ো বয়সে অবসর সময়ের জন্য বিনিয়োগ করেন সেক্ষেত্রে আপনার যে কৌশল অনুসরণ করতে হবে তার থেকে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ যোগানোর জন্য বিনিয়োগের কৌশলটা হবে আলাদা।

লক্ষ্য স্থির করা মানে আসলে নিজের সময় দিগন্ত টাকে ঠিক করে নেওয়া। বিভিন্ন লক্ষ্যের ক্ষেত্রে সময় দিগন্ত টা বিভিন্ন রকম হয়। যে লক্ষ্যের সময় দিগন্ত ছোট সেক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কৌশল অবলম্বন করা বাঞ্ছনীয় নয়। আবার যে লক্ষ্য কয়েক দশক দূরে সেক্ষেত্রে লম্বা সময়ের জন্য উপযুক্ত কৌশল অবলম্বন করতে হয়।

#৩ ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা কতটা?

তৃতীয় যে জিনিসটা মেপে নেওয়া প্রয়োজন সেটা হচ্ছে ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা। এটা একদিকে যেমন বয়স এবং আয় কত তার উপর নির্ভর করে, অন্যদিকে নিজের মানসিক অবস্থার উপরও নির্ভর করে।

আরও পড়ুনঃ  কিভাবে টাকা বাড়ানো যায়? বিনিয়োগের সেরা 10 বিকল্প।

বয়স কম ও আয় বেশী হলে স্বাভাবিকভাবেই বেশি ঝুঁকি নেওয়া যায়। কারণ এক্ষেত্রে কখনো কোনো কারণে লস বেশি হলেও সেটা হজম করে নেওয়া যায় বা সেটা পুনরুদ্ধার করার জন্য সময় পাওয়া যায় কিংবা প্রয়োজনমত বাড়তি অর্থেরও যোগান দেওয়া যায়। অন্যদিকে আয় কম হলে কিংবা বয়স বেশি হলে বড় কোন লস ম্যানেজ করার ক্ষেত্রে সময় এবং অর্থের অপ্রতুলতার জন্য বেশি ঝুঁকি নেওয়া যায় না।

আবার অন্যদিকে অনেকের কাছে লস মেনে নেওয়া খুব সহজ আর অনেকের কাছে কঠিন। যারা লস সহ্য করতে পারেনা এবং পোর্টফোলিওতে সাময়িক বা দীর্ঘকালীন নেগেটিভ ব্যালেন্স মনের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে তাদের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কৌশল বেছে নেওয়া মোটেও সমীচীন নয়।

>> নিজের সম্পর্কে উপরের প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর পেয়ে যাওয়ার পর বিনিয়োগের যেকোনো কৌশল বেছে নেওয়ার বা বিনিয়োগ শুরু করার আগে আরও কিছু কাজ করার, শেখার বা জানার প্রয়োজন পড়ে। যেমন ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট বিশ্লেষণ করা, ক্যান্ডেলস্টিক চার্ট পড়া, বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত শেয়ার বাছাই করা, পছন্দের শেয়ারের পাশাপাশি সেটার সেক্টরের খবরাখবর রাখা এবং ইকনমিতে যেকোনো রকম পরিবর্তন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা ইত্যাদি। একটা শেয়ারকে কেন্দ্র করে সমস্ত কিছু সম্পর্কে ওভারঅল একটা আইডিয়া থাকলে অন্ধের মত কখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয় না।

প্রথম স্ট্র্যাটেজি বা কৌশলঃ ভ্যালু ইনভেস্টিং

দর কষাকষি করে বিনিয়োগ করার কৌশলের নামই হচ্ছে ভ্যালু ইনভেস্টিং। একটা পছন্দের স্টক, সেটার ইন্ট্রিন্সিক ভ্যালু বা অন্তর্নিহিত মূল্যের থেকে কম দামে যখন পাওয়া যায় তখনই ভ্যালু ইনভেস্টাররা সেটা কিনে থাকেন। যারা এই কৌশল অনুসরণ করে বিনিয়োগ করেন তারা বিশ্বাস করেন যে বাজারে শেয়ারের দামে সব সময়েই কিছু না কিছু অসঙ্গতি থাকে। আর সেই অসঙ্গতিকে কাজে লাগিয়ে ডিসকাউন্টেড প্রাইসে শেয়ার কিনে লাভ করাই হল এই কৌশলের প্রধান উদ্দেশ্য।

বিনিয়োগের এই কৌশল প্রথম প্রবর্তন করেন বেঞ্জামিন গ্রাহাম আর এটা বিখ্যাত হয়ে ওঠে কিংবদন্তী বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেট বাবুর প্রয়োগে। ভ্যালু ইনভেস্টারদের মতে বাজার ভালো এবং খারাপ খবরে ওভার-রিঅ্যাক্ট করে। তাই শর্ট টার্মে শেয়ারের দামের উপর নিচ হওয়াটা একটা কোম্পানির লং টার্ম ফান্ডামেন্টালের সঙ্গে খাপ খায় না। আর কোনো নেগেটিভ কারনে বাজার যখন সাময়িকভাবে ওভার-রিঅ্যাক্ট করে তখন ভালো ফান্ডামেন্টালের শেয়ার সস্তায় কিনে থাকে ভ্যালু ইনভেস্টাররা।

অন্তর্নিহিত মূল্য নির্ধারণ

এই কৌশলে বিনিয়োগ করতে হলে একটা শেয়ারের দাম কত হলে সস্তা ধরা হবে সেটা বুঝে নিতে হয় আর তার জন্য সেটার অন্তর্নিহিত মূল্য কত সেটা নির্ধারণ করতে হয়। অন্তর্নিহিত মূল্য নির্ধারণ করার জন্য বিভিন্ন বিনিয়োগকারী বিভিন্ন রকম সূত্র অনুসরণ করে থাকেন। তবে সাধারণভাবে এটা নির্ধারণ করতে কোম্পানির ফাইন্যান্সিয়াল পারফরম্যান্স, রেভিনিউ, ইনকাম, ক্যাশ ফ্লো, লাভ, কোম্পানির ব্র্যান্ড ভ্যালু, বিজনেস মডেল, টার্গেট মার্কেট, কম্পিটিটিভ অ্যাডভান্টেজ ইত্যাদি বিষয়গুলোর ব্যবহার করা হয়।

খুব সহজ হিসাবে এক ঝলকে প্রাইস টু আর্নিংস বা পিই এবং প্রাইস টু বুক বা পিবি দেখেই একটা কোম্পানি আন্ডার-ভ্যালুড না ওভার-ভ্যালুড সেটা বুঝে নেওয়া যায়। যে শেয়ারের এই রেশিও দুটো যত কম হয় সাধারণভাবে সেই শেয়ার তত আন্ডার-ভ্যালুড ধরা হয়। একটা কোম্পানির পিই রেশিও একই ধরনের অন্যান্য কোম্পানির পিই রেশিওর তুলনায় কত কম বা বেশি সেটা তুলনা করলেই কোম্পানিটা কতটা সস্তা সেটার একটা ধারণা পাওয়া যায়। আর পিবি রেশিওটা সাধারণত অ্যাসেট-হেভি কোম্পানি যেমন ব্যাংকের ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ করে।

মার্জিন অফ সেফটি 

এই অন্তর্নিহিত মূল্যের অনুমান কোনো ক্ষেত্রেই একশো শতাংশ সঠিক হতে পারে না। তাই এধরনের বিনিয়োগের কৌশল অনুসরণ করার ক্ষেত্রে ইনভেস্টাররা তাদের নিজস্ব ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা অনুযায়ী ‘মার্জিন অফ সেফটি’ বা নিরাপত্তার সীমারেখা মেনে চলেন। এটা মানে হচ্ছে তাদের হিসেবে অনুযায়ী কোনো শেয়ারের অন্তর্নিহিত মূল্য যা বেরিয়ে আসে, দাম তার থেকে আরও কিছুটা কম হলে তবেই তাঁরা বিনিয়োগের পথে হাঁটেন।

আরও পড়ুনঃ  শেয়ার ব্যবসা বা ট্রেডিং শুরু করতে ন্যূনতম কত টাকার দরকার?

উদাহরণস্বরূপ, ভ্যালু ইনভেস্টিং-এর প্রবর্তক বেঞ্জামিন গ্রাহাম তাঁর হিসেব অনুযায়ী কোনো শেয়ারের অন্তর্নিহিত মূল্যের তুলনায় সেটার প্রকৃত দাম অন্তত তিন ভাগের দুই ভাগ হলে তবেই তিনি বিনিয়োগ করতেন।

কাদের জন্য ভ্যালু ইনভেস্টিং উপযুক্ত?

ভ্যালু ইনভেস্টিং তাদের জন্যই উপযুক্ত যারা লম্বা সময়ের জন্য বিনিয়োগ করতে বা শেয়ার হোল্ড করে থাকতে প্রস্তুত। কারণ এই স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভালো রিটার্ন পেতে বছর কিংবা দশকও লেগে যেতে পারে। স্বল্প সময়ের বিচারে শেয়ারের দাম যেদিকেই যাক না কেন ভ্যালু ইনভেস্টারদের ফোকাস থাকে বৃহত্তর লক্ষ্যের দিকে। শেয়ার বাছাই যদি সঠিক হয় তবে এই ধরনের বিনিয়োগে লম্বা সময় অপেক্ষার পর বহুগুণ রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

দ্বিতীয় স্ট্র্যাটেজিঃ গ্রোথ ইনভেস্টিং

এই স্ট্যাটেজিতে বার-গেন ডিল খোঁজার বদলে এমন ধরনের স্টক খোঁজার চেষ্টা করা হয় যেগুলোর দাম বাড়ার সম্ভাবনা প্রবল থাকে। এই ধরনের কোম্পানিগুলো সাধারণত নতুন ও অপেক্ষাকৃত ছোট হয় আর এদের ইনকাম ইন্ডাস্ট্রি অ্যাভারেজ বা ওভারঅল মার্কেটের থেকে বেশি হারে বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।

গ্রোথ ইনভেস্টাররা উদীয়মান কোম্পানি বা ‘নেক্সট বিগ থিং’ খোঁজার প্রচেষ্টায় থাকেন। এ ধরনের নতুন কোম্পানি তাদের ব্যবসায় সফল হলে অসাধারণ রিটার্ন পাওয়া যায়। তবে যেহেতু কোম্পানিগুলো তুলনায় নতুন এবং ট্রায়েড ও টেস্টেড নয়, তাই এক্ষেত্রে ঝুঁকিটাও অনেক বেশি থাকে।

সাধারণত যে ইন্ডাস্ট্রি খুব ফাস্ট বাড়ছে সেই ইন্ডাস্ট্রিতে এই স্ট্রাটেজির জন্য উপযুক্ত শেয়ার পাওয়া যায়। এ ধরনের শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে কেবলমাত্র শেয়ারের দাম বাড়ার মাধ্যমেই লাভের প্রত্যাশা করা হয়। কারণ এ ধরনের কোম্পানিগুলো তাদের লাভের বেশিরভাগটাই ব্যবসা বাড়ানোর কাজে ব্যবহার করে এবং সেজন্য এ ধরনের শেয়ারে ডিভিডেন্ড থেকে ইনকাম খুব কম হয় কিংবা হয়ই না। আর ভ্যালু ইনভেস্টিং-এ যেখানে কম পিই রেশিও ওয়ালা কোম্পানি খোঁজা হয় সেখানে গ্রোথ কোম্পানির পিই রেশিও সাধারণত বেশির দিকেই থাকে।

এই স্ট্র্যাটেজিতে এমন ধরনের কোম্পানি খোঁজা হয় যেগুলোর,

  • বিগত পাঁচ-দশ বছরের হিস্টোরিকাল ইনকামের বৃদ্ধি অসাধারণ,
  • ফরওয়ার্ড ইনকামের বৃদ্ধি বা আর্নিং এস্টিমেটস দারুন,
  • লাভের মার্জিন খুব ভালো (বর্তমান > বিগত ৫ বছরের গড়),
  • রিটার্ন অন ইকুইটি বা আরওই উত্তম এবং ক্রমবর্ধমান (বর্তমান > বিগত ৫ বছরের গড়),
  • শক্তিশালী স্টক পারফরমেন্স (বৃদ্ধির হার>১৫%)।

কাদের জন্য গ্রোথ ইনভেস্টিং উপযুক্ত?

যে সমস্ত বিনিয়োগকারী ভ্যালু ইনভেস্টিং-এর থেকে কম সময়ের মধ্যে বেশি ঝুঁকি নিয়ে বেশি রিটার্ন পেতে আগ্রহী তারা এই কৌশল অনুসরণ করতে পারেন। এছাড়া যারা বিনিয়োগে ক্যাশ ফ্লো বা ডিভিডেন্ড নিয়ে বিচলিত নয় তাদের জন্যও এটা উপযুক্ত।

এই ধরনের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেহেতু ছোট এবং অপেক্ষাকৃত নতুন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা হয় তাই এ ধরনের কোম্পানি অনেক সময় দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার-ও সম্ভাবনা থাকে। তাই অনেক সময় যাদের ডিসপোজেবল ইনকাম থাকে তাদের এই কৌশলে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ অন্যান্য স্ট্র্যাটেজির থেকে এক্ষেত্রে ক্যাপিটাল খোয়া যাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

তৃতীয় স্ট্র্যাটেজিঃ মোমেন্টাম ইনভেস্টিং

মোমেন্টাম ইনভেস্টিং মানে ট্রেন্ড ফলো করা। আপ ট্রেন্ডের সময় ক্রমাগত দাম বাড়তে থাকা শেয়ার কিনে নিয়ে এবং সেই মোমেন্টাম শেষ হওয়ার সময় বেচে দিয়ে লাভ পকেটে পোরার নামই মোমেন্টাম ইনভেস্টিং। এটা আসলে ট্রেডিং-এর সমতুল্য।

মোমেন্টাম ইনভেস্টাররা মনে করেন শেয়ারের দাম যখন বাড়ে তখন অনেকটা সময় ধরে বাড়তেই থাকে। তাই গতানুগতিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেখানে কম দামে শেয়ার কিনে বেশি দামে বেচা হয় সেখানে মোমেন্টাম ইনভেস্টিং-এর ক্ষেত্রে বেশি দামে কিনে আরও বেশি দামে বেচা হয়। 

এক্ষেত্রে ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিস এর পাশাপাশি ট্রেডিং এর মতই বিভিন্ন রকম ইন্ডিকেটর (যেমনঃ মুভিং অ্যাভারেজ, আর এস আই, এম এ সি ডি, স্টকাস্টিক অসিলেটর ইত্যাদি) এবং ট্রেন্ডলাইনের ব্যবহার করে মূল ট্রেন্ড, এন্ট্রি ও সম্ভাব্য এক্সিট পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়। এন্ট্রি নেওয়ার পর যখন ইন্ডিকেটরগুলো ট্রেন্ডে দুর্বলতার লক্ষণ প্রকাশ করে তখন শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুনঃ  শেয়ার বাজারে ডেরিভেটিভ ট্রেডিং-এ লাভ লসের আসল সত্যি।

কাদের জন্য মোমেন্টাম ইনভেস্টিং উপযুক্ত?

যারা অ্যাকটিভ ইনভেস্টার তাদের জন্য এই স্ট্র্যাটেজি উপযুক্ত। কারণ এক্ষেত্রে শেয়ারের দামের উত্থান পতনের উপর ক্রমাগত নজর রাখতে হয় এবং যেকোনো সময় কেনা বা বেচার জন্য রেডি থাকতে হয়। বিনিয়োগের গতানুগতিক ‘বাই অ্যান্ড হোল্ড’-এর ধারণা এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এছাড়া এক্ষেত্রে নিয়মিত টেকনিক্যাল অ্যানালিসিসও করতে হয়। তাই ফান্ডামেন্টালের পাশাপাশি এই কৌশলে বিনিয়োগের জন্য টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিসের জ্ঞান থাকাটাও জরুরী।

ভীষণ অনুমানমূলক প্রকৃতির জন্য এটা বিনিয়োগের সব থেকে ঝুঁকিপূর্ণ উপায়ের মধ্যে একটা। তাই যারা সেই পরিমাণ ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত তাদের জন্যই এটা উপযুক্ত।

চতুর্থ স্ট্র্যাটেজিঃ রুপি কস্ট অ্যাভারেজিং

ইনভেস্টিং-টা মোটেও সহজ কাজ নয়। অনেক অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীও সঠিক সময়ে বিনিয়োগে ব্যর্থ হন। এই রুপি কস্ট অ্যাভারেজিং হচ্ছে এমন একটা স্ট্র্যাটেজি যেটা পর্যায়ক্রমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শেয়ার কেনার ব্যবস্থাপনা করে দিয়ে বাজারের অস্থিরতার সাথে ডিল করাটা সহজ করে দেয়।

রুপি কস্ট অ্যাভারেজিং মানে আসলে পছন্দের শেয়ারে নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিনিয়োগ করে যাওয়া। শেয়ারের দাম যতই ওঠানামা করুক না কেন এভাবে বিনিয়োগ করলে একটা গড় দামে শেয়ার পাওয়া যায়।

ভালো শেয়ার বেছে নিয়ে লম্বা সময় ধরে এভাবে বিনিয়োগ করে গেলে সহজ উপায়ে সম্পদ তৈরি করা যায়। আর যেহেতু পুরো ব্যবস্থাপনাটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয় তাই এক্ষেত্রে আবেগকে বিনিয়োগের বাইরে রাখা যায়। 

সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান বা এসআইপি করে বিনিয়োগ করা মানে আসলে এই রুপি কস্ট এভারেজিং স্ট্র্যাটেজিই ফলো করা। এমনিতে আমরা মিউচুয়াল ফান্ডে এসআইপি করার ব্যাপারে পরিচিত হলেও ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট থেকে পছন্দের শেয়ারেও এসআইপি করা যায়।

কাদের জন্য রুপি কস্ট অ্যাভারেজিং উপযুক্ত?

বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীর জন্যই এটা একটা ভালো বিকল্প। তবে বিশেষ করে যারা বিনিয়োগ শুরু করতে চান এবং যাদের শেয়ার বাজারে ব্যয় করার মত অতিরিক্ত সময় নেই তাদের জন্য এই স্ট্র্যাটেজি বেশি উপযুক্ত।

তবে এভাবে বিনিয়োগ করার জন্য ধারাবাহিকভাবে সব সময়ের জন্য অতিরিক্ত টাকা রেডি থাকা আবশ্যক।

সব জটিলতা কাটিয়ে সরল উপায়ে এই কৌশল গুলো অনুসরণ করার উপায়

উপরের সবকটা স্ট্র্যাটেজিই সঠিকভাবে প্রয়োগ করার জটিলতা এড়াতে চাইলে প্রথম তিনটে স্ট্র্যাটেজির উপর ভিত্তি করে তৈরি মিউচুয়াল ফান্ড বা ইনডেক্স ফান্ডে চতুর্থ স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী এসআইপি করে খুব সহজেই বিনিয়োগ করা যেতে পারে।

এ ধরনের কয়েকটা ফান্ড হল,

শেষ কথা

বিনিয়োগের জন্য নির্দিষ্ট একটা স্ট্র্যাটেজি বেছে নেওয়া উক্ত স্ট্রাটেজিটার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। উপরের স্ট্র্যাটেজিগুলোর মধ্যে যেটাই বেছে নেওয়া হোক না কেন, ভালো রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা সবকটাতেই আছে। কিন্তু সেটা বাস্তবায়িত হওয়ার জন্য শুধু প্রয়োজন পড়ে বিনিয়োগ শুরু করার পর বেছে নেওয়া স্ট্র্যাটেজিটাকে সঠিকভাবে মেনে চলা…

আজ তাহলে এখানেই শেষ করি। ভালো থাকবেন। 🙂

>> আর্টিকেলে ব্যবহৃত যেকোনো টার্ম বা পরিভাষার জন্য পরিভাষার তালিকা-টা দেখে নিতে পারেন। 
দাবিত্যাগঃ এই আর্টিকেলে উদাহরণ হিসেবে দেওয়া যেকোনো শেয়ার বা মিউচুয়াল ফান্ড কেবলমাত্র বিষয়টা বোঝার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। ওগুলো মোটেও বিনিয়োগের জন্য কোনো রেকমেন্ডেশন নয়।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)

এখানে বর্ণিত স্ট্র্যাটেজি গুলোর মধ্যে সব থেকে ঝুঁকি কম কোনটায়?

ভ্যালু ইনভেস্টিং এবং রুপি কস্ট অ্যাভারেজিং এমনিতে সব থেকে কম ঝুঁকিপূর্ণ। আবার এই দুটো স্ট্র্যাটেজি একসাথে প্রয়োগ করলে ঝুঁকি আরো কমে যায়।

সবথেকে সহজে অনুসরণযোগ্য স্ট্র্যাটেজি কোনটা?

রুপি কস্ট অ্যাভারেজিং।


মন্তব্য করুন