শেয়ার বাজারের উপর ভোট বা নির্বাচনের প্রভাব কেমনতর হয়….?

5/5 - (1 জন রেটিং করেছেন)

শেয়ারের দাম তথা পুরো শেয়ার বাজার সব সময়ই স্থানীয় এবং বিশ্বব্যাপী বিবিধ নতুন ঘটনার সাপেক্ষে সংবেদনশীল। আর যেহেতু ভোট বা নির্বাচন প্রত্যেকটা দেশের ক্ষেত্রেই এমন একটা ঘটনা যা আগামী দিনে দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিক নির্ধারণ করে, তাই যখন ভোট কাছে আসে তখন শেয়ার বাজারে এক বিশেষ ধরণের অস্থিরতার জন্ম হয়।

তবে শেয়ার বাজারে যে ভোটের প্রভাব পড়ে — এই বিষয়টা আজকের দিনে কারো কাছেই খুব একটা অজানা নয়। কিন্তু সেই প্রভাব কিভাবে, কেন বা কতটা পড়ে সেটাই আজকের এই নিবন্ধের আলোচনার বিষয়…

ভোট কিভাবে শেয়ার বাজারের উপর প্রভাব ফেলে?

ভোটের সময়, মানে এর কিছুটা আগে এবং কিছুটা পরে সাধারণত শেয়ার বাজার ভীষণই ভোলাটাইল বা অস্থির থাকে। কারণ ‘ভোট’- এর সাথে কিছু অনিশ্চয়তা বহন করে চলে। যখন থেকে ভোটের রণ দামামা বেজে ওঠে তখন থেকেই এনিয়ে আলোচনা তুঙ্গে ওঠে। কিন্তু আগে থেকে কেউই ঠিকমতো ঠাওর করতে পারে না যে, কোন দল কেমন ফলাফল করবে বা কোন দল জিতবে। তাছাড়া জেতার পর জয়ী দল কী যে করবে তা নিয়েও একটা অনিশ্চয়তা থাকে। তবে একটা চিরসত্য হচ্ছে, যে দলই জিতুক না কেন তার প্রভাব দেশের ইকোনমি তথা শেয়ার বাজারের উপর দারুনভাবে পড়ে।

সাধারণত, বর্তমানে যে সরকার গদিতে আছে সেই সরকারই যদি গদি ধরে রাখতে সক্ষম হয় তাহলে বাজার উপর দিকে ওঠে। কারণ সরকার অপরিবর্তিত থাকা মানে স্থিতিশিলতা বহাল থাকা আর বাজার সেটাই পছন্দ করে। আর অন্যদিকে সরকার বদলালে নতুন সরকার নতুন কিছু পলিসি নিয়ে আসে এবং আগের সরকারের থেকে আলাদা ঢঙে কাজ করে। কিন্তু তার প্রভাব দেশের অর্থনীতির উপর বা বিবিধ ব্যবসার উপর কিভাবে পড়বে সেটা আগে থেকে পরিষ্কার হয়না বলেই অন্তত সাময়িকভাবে বাজার পড়ে যায় বা উচ্চ ভোলাটিলিটি তৈরি হয়।

ভোটের সাথে সম্পর্কিত যে সমস্ত কারণগুলো এর অব্যবহিত আগে, এর সময় এবং এর অব্যবহিত পরে শেয়ার বাজারে শেয়ারের দামের উপর প্রভাব ফেলে সেগুলো হলো…

নির্বাচনী ইশতেহার

ভোট আসার আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নিজেদের ঢাক পেটানোর সময় ভোটে জিতলে অর্থনৈতিক সামাজিক এবং পরিবেশগত কি কি নীতি আনতে চলেছে সে সম্পর্কে কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে, আর সেই তালিকাটাকেই নির্বাচনী ইশতেহার বলা হয়। এই ইশতেহারে যদি এমন কোনো প্রতিশ্রুতি থাকে যাতে দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া হয় বা বিবিধ ব্যবসায় সুবিধা হবে এমন ধরনের কোনো নীতি প্রবর্তন করার কথা বলা হয়, সেক্ষেত্রে সেটা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশাবাদী মনোভাব তৈরি করে। যেমন ধরুন, কোনো পার্টি ট্যাক্স রেট কমানোর কথা বলে ক্ষমতায় এলে বাজারের উপর পজিটিভ প্রভাব পড়ে।

সরকারের মতাদর্শ

যে রাজনৈতিক দলের আইডিওলজি বা মতাদর্শ দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক বৃদ্ধির পথে সাহায্যকারী হয়, সেই দল জিতলে বা জেতার পরিস্থিতি তৈরি হলে বাজার ওঠে আর উল্টোটা হলে পড়ে।

আরও পড়ুনঃ  কেবলমাত্র ব্যাংকের ফিক্সড ডিপোজিটে টাকা রেখে যারা ঠকছেন তাদের জন্য শেয়ার বাজারে পা রাখার দিশা।

নেতার ব্যক্তিত্ব

প্রতি রাজনৈতিক দলেরই প্রধান একটা মুখ থাকে। সেই মুখ যদি হয় ভীষণ জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী, যদি তার ব্যক্তিত্ব হয় অসাধারণ, আর যদি সে তার দলকে জয়ের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে সফল হয় তবে বাজারের উপরেও তার সু-প্রভাব ফুটে ওঠে। কারণ এই ধরনের একজন বড় মাপের নেতা দেশের মধ্যে একটা পজিটিভ সেন্টিমেন্ট তৈরি করতে এবং বেশি বেশি বিদেশী বিনিয়োগ আনতে সক্ষম হয়। ফলস্বরূপ বাজারে ঊর্ধ্বমুখী ট্রেন্ড দেখা যায়।

সেক্টর বা কোম্পানি স্পেসিফিক ট্রেন্ড

ভোট যেভাবে পুরো বাজারের ওপর প্রভাব ফেলে সেভাবে কখনো কখনো কিছু কিছু বিশেষ সেক্টর বা বিশেষ কোম্পানির ওপরও আলাদাভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। যে পার্টি জেতার সম্ভাবনা তৈরি হয় বা জেতে সেই পার্টির নির্বাচনী ইশতেহারে কিংবা নীতিতে কোনো বিশেষ সেক্টর যদি অতিরিক্ত কোন সুবিধা পায় তবে সেই সেক্টরের বিবিধ কোম্পানির শেয়ারের দামের ওপর পজিটিভ প্রভাব পড়ে। যেমন ধরুন, যদি কোনো সরকার গদিতে বসার পর ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্টের ওপর ফোকাস করে তবে ইনফ্রাস্ট্রাকচার তথা রিয়েল এস্টেট স্টকগুলোর দাম বাড়ে।

আবার কিছু কিছু বড় বড় কোম্পানির মালিক পক্ষের সাথে কোনো এক বিশেষ রাজনৈতিক দলের বিশেষ সম্পর্ক থাকে। ঐ দল যখন ক্ষমতায় থাকে তখন ঐ বিশেষ সম্পর্কের জেরে ঐ কোম্পানি তাদের ব্যবসাক্ষেত্রে কিছু অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে আর তাদের ব্যবসা বৃদ্ধির পথ সুগম হয়। কিন্তু সেই রাজনৈতিক দল যদি গদি হারায় সেক্ষেত্রে সেই কোম্পানির শেয়ারের দামের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে।

শেয়ার বাজারের উপর ভোটের প্রভাবের ইতিহাস

ভোট সম্পর্কিত শেয়ার বাজারের এই অনিশ্চয়তা তথা ভোলাটিলিটির প্রভাব কতদিন বা কতটা সময় পর্যন্ত এবং কতটা পরিমাণে পড়ে সেটা জানতে হলে আমাদের চলে যেতে হবে অতীতে। বিগত বছরগুলোতে হওয়া বিভিন্ন ভোটের সময় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং তার সাথে শেয়ার বাজারের উত্থান পতন পর্যালোচনা করলেই এই বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে।

তাহলে চলুন, বিগত ২৫ বছরের রাজনীতির ইতিহাসে ভোটের সময় ভারতের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট আর শেয়ার বাজারের উত্থান-পতনের ঘটনাবলী দেখে নেওয়া যাক…

১৯৯৯ এর পূর্ব-প্রেক্ষাপট

১৯৮৯ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত সময়টা ভারতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে ভীষণই অস্থির ও জোড়া-ভাঙার সময় ছিল। উচ্চ রাজস্ব ঘাটতি, মুদ্রাস্ফীতি, ফরেক্স রিজার্ভ-এর অভাব ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে ভারতের আর্থিক অবস্থা এবং একই সাথে শেয়ার বাজারের রিটার্ন খুব একটা ভালো ছিল না। তার মধ্যে রাজীব গান্ধীর অধীনে চলা কন্ট্রোভার্সি, তার মৃত্যু, এশিয়ার আর্থিক সংকট ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে বাজার ভীষণ রকম অনিশ্চয়তার কালো মেঘে ঢাকা ছিল।

১৯৯৯ঃ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স বা এনডিএ পার্টির জয়

১৯৯৬ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত মুহুর্মুহু প্রধানমন্ত্রীর বদল এবং সরকারের মধ্যে স্থিতিশীলতার অভাব থাকার জন্য ১৯৯৯ সালের ভোটে বাজার একটা পরিবর্তন চাইছিল। আর ভারতের আপামর জনগনের চাহিদাও ছিল একই। আর এই গদি বদল যে অবধারিত সেটা ভোট আসার আগেই বিনিয়োগকারীদের কাছে প্রায় পরিষ্কার ছিল। সেজন্যই ভোটের আগের ৬ মাসেই বাজার প্রায় ৯% উঠে গিয়েছিল।

অতঃপর সকলের প্রত্যাশা মিলে যায় এবং স্বনামধন্য অটল বিহারী বাজপেয়ী বাবুর নেতৃত্বে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স বা এনডিএ ভোটে জিতে ক্ষমতায় এসে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটা স্থিতিশীলতার অনুভূতি নিয়ে আসে। ফলস্বরূপ ভোটের ফলাফল বেরোবার সাথে সাথে সেন্সেক্স এক ধাক্কায় ৭% বেড়ে যায় আর আগামী ৩ মাস ঐ ঊর্ধ্বগতি বজায় থাকে।

আরও পড়ুনঃ  শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ আর জীবনবীমা একইসাথে। 2 ইন 1 ইউলিপ

সরকার গদিতে আসার পর আর্থিক শৃঙ্খলা, কাঠামোগত সংস্কার, বিদেশী বিনিয়োগ ইত্যাদি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়ায় জিডিপি বাড়ে, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রনে আসে এবং বাজারের অবস্থার উন্নতি হয়। ভোটের পরের ৬ মাসে বাজার ৩.৫% ওঠে এবং সবমিলিয়ে ভোটের ৬ মাস আগে থেকে ৬ মাস পর পর্যন্ত ১ বছর ব্যাপী সময়ে বাজার মোট ২০% এর থেকেও বেশি রিটার্ন দেয়।

কিন্তু ক্রমশ বিবিধ স্থানীয় এবং বিদেশী সমস্যা (যেমন ৯/১১-র হামলা) সরকারের সমস্ত সু-প্রচেষ্টায় জল ঢেলে দেয় আর দু বছরের মাথায় বাজার ৫০% পড়ে যায়। এই সরকারের ৫ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার সময় সেনসেক্সের গড় বার্ষিক রিটার্ন গিয়ে দাঁড়ায় মাত্র ৩%-এ।

২০০৪ঃ ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স বা ইউপিএ হিসাবে কংগ্রেসের প্রত্যাবর্তন

বড়সড় নেগেটিভ কিছু না পেলে বাজার সাধারণত সরকার পরিবর্তন পছন্দ করেনা। কারণ পরিবর্তনের সাথে সাথে আসে কিছু অনিশ্চয়তা। ১৯৯৯ এর পর ২০০৪-এও বাজার আগেরবারের মতোই এনডিএ সরকারই চেয়েছিল। কিন্তু জনগন এবারে বাজারের চাহিদার বিপরীতে গিয়ে কংগ্রেসকে ফিরিয়ে আনে। ফলস্বরূপ, ভোটের আগের ৬ মাস বাজার উঠলেও ফলাফল প্রকাশের পর সেনসেক্স দু-তিন দিনে 15% পড়ে যায়।

তবে ভোটের ফলাফল আশানুরূপ না হলেও ইউপিএ সরকারের কর্মকাণ্ড বাজারে আশা ফিরিয়ে আনে। আর আগামী ৬ মাসে বাজার আবার ১০% উপরে উঠে যায়। ফলে ভোটের ৬ মাস আগে থেকে ৬ মাস পর পর্যন্ত রিটার্ন গিয়ে দাঁড়ায় ২০% এর থেকেও বেশি। ৮% জিডিপি গ্রোথ রেট আর রেকর্ড পরিমাণ বিদেশী বিনিয়োগের প্রভাবে ২০০৭ পর্যন্ত এই বুল র‍্যালি চলে। অতঃপর ২০০৮-এর পৃথিবী ব্যাপী আর্থিক সংকটের প্রভাবে এই র‍্যালি কিছুটা থমকে গেলেও পরের বছরের ভোটের মরশুম আসা পর্যন্ত বাজার আবার ভালো ছন্দে ফিরে আসে।

২০০৯ঃ কংগ্রেসের দ্বিতীয় অধ্যায়

একটু আগেই যেমনটা বলেছি বাজার স্থিতিশীলতা পছন্দ করে। তাই ২০০৯ তে দ্বিতীয়বার কংগ্রেস আসার সম্ভাবনা থাকার জন্য ভোটের আগের ৬ মাসেই বাজার ১২% উঠে যায়। অতঃপর ভোটের ফল যখন বাজারের প্রত্যাশার সাথে মিলে যায় তখন এক দিনে বাজার ১৭% উঠে যায়। এই সময়টায় বিশ্বব্যাপী বাজারের পরিস্থিতি ভালো থাকায় আগামী ৬ মাসেও বাজার প্রায় ৪০% রিটার্ন দেয়। ফলস্বরূপ ভোটের আগে পরে মিলিয়ে ১ বছরে সেনসেক্স ৮০%-এরও বেশি রিটার্ন দেয়!

কিন্তু শুরুটা দারুণ হলেও এই টার্মে কংগ্রেস সরকার আশানুরূপ কাজকর্ম করে উঠতে সক্ষম হয়নি। তারা রাজস্বের ঘাটতি এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয় এবং গোদের ওপর বিষ ফোড়ার মত ওই সময় আবার এই সরকার বিভিন্ন স্ক্যামে কলঙ্কিত হওয়ায় বিনিয়োগের প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি হয়। কিন্তু এত সব কিছু সত্বেও কংগ্রেসের এই টার্মের প্রথম তিন বছরে সেন্সেক্স ১৫.৫% রিটার্ন দেয়।

২০১৪ঃ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপির জয়

যেকোনো পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বড় জয় মানেই ইকোনমিতে স্থিতিশীলতা প্রত্যাশিত। আর শেয়ার বাজারের অংশগ্রহণকারীদের সর্বাগ্রে কাম্য এই স্থিতিশীলতাই। তাই যখন ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি বিপুল পরিমাণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে গদিতে আসে তখন বিনিয়োগকারীদের সেন্টিমেন্টে পজিটিভ প্রভাব পড়ে। এই ভোটের ৬ মাস আগে থেকে ফলাফলের দিন পর্যন্ত সেন্সেক্স ১৮% বাড়ে আর এর ৬ মাস পরে আরো ১৬% বৃদ্ধি পেয়ে এই সময়টায় এক বছরে প্রায় ৩৭% রিটার্ন দেয়।

এই সময়টায় বাজার ভীষণ রকম স্থিতিশীল হয় ও ভোলাটিলিটি অনেকটাই কমে যায়। তাছাড়া সেনসেক্স এসময়ে রেকর্ড হাই লেভেলে পৌঁছে যায়।

আরও পড়ুনঃ  বিদেশী কোম্পানির শেয়ারে কিভাবে বিনিয়োগ করা যেতে পারে?

২০১৯ঃ মোদি-রাজ অব্যাহত

বিজেপির কিছু হঠকারী কাজকর্ম সত্ত্বেও ইকনোমির বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম অর্থনৈতিক সংস্কার ও ব্যবসা-বান্ধব অবস্থান নেওয়ার জন্য বাজার তথা জনগন এবারেও মোদি সরকারের পক্ষেই রায় দেয়। ডি-মনিটাইজেশন ও জিএসটি-র বাস্তবায়নের পরে এ সময়ে ইকোনমির অবস্থা ততটা ভালো না থাকলেও ভোটের আগের ৬ মাসে সেনসেক্স প্রায় ১১% আর এর ৬ মাস পরে ৪% উঠে ১ বছরে রিটার্ন দেয় ১৫%।

সিদ্ধান্ত

সিদ্ধান্তে আসার আগে উপরে আলোচিত বিগত পাঁচ লোকসভা নির্বাচনের ৬ মাস আগের এবং ৬ মাস পরের সেন্সেক্সের রিটার্ন আরো একবার টেবিলের আকারে দেখে নেওয়া যাক…

নির্বাচনের বছরজয়ী দলনির্বাচনের ৬ মাস আগে থেকে ফলাফলের দিন পর্যন্ত সেনসেক্স-এর রিটার্ননির্বাচনের ৬ মাস পরের সেনসেক্স-এর রিটার্ননির্বাচনের আগে পরে মিলিয়ে ১ বছরের রিটার্ন
১৯৯৯এনডিএ~১৬%~৩%~২০%
২০০৪কংগ্রেস (ইউপিএ)~৯%~১০%~২০%
২০০৯কংগ্রেস ২.০~৩০%~৪০%~৮০%
২০১৪মোদি সরকার (বিজেপি)~১৮%~১৬%~৩৭%
২০১৯মোদি সরকার ২.০~১১%~৪%~১৫%

ভোট নিঃসন্দেহে একটা দেশের ইকোনোমি ও শেয়ার বাজারের বিচারে বড় একটা ঘটনা। তাই ভোটের সময় এই সম্পর্কিত অনিশ্চয়তার জন্য শেয়ার বাজারে অস্থিরতা প্রত্যাশিত। তবে উপরের আলোচনা থেকে একটা কথা পরিষ্কার যে, বাজারের প্রত্যাশা যাইহোক বা যে পার্টিই ক্ষমতায় আসুক না কেন, ভোটের অব্যাহত আগে ও পরে এর জন্য শর্ট টার্মে হওয়া উপর-নিচ লম্বা সময়ের বিচারে নস্যাৎ হয়ে যায়।

শেয়ার বাজারের গতিবিধি শুধুমাত্র ভোটের উপরই নির্ভর করেনা। অনেক কিছু বিষয় শেয়ারের দাম তথা শেয়ার বাজারের উত্থান-পতন কে প্রভাবিত করে। তাই, দেশের ভিতরে ও দেশের বাইরে ঘটে চলা হাজারো ঘটনার মতোই ভোট-ও একটা ঘটনা যেটা আসার সময় শেয়ার বাজারকে প্রভাবিত করে বটে, তবে কিছুটা সময় যাবার পর সেটা আর পাঁচটা অন্যান্য ঘটনার মতোই সময়ের নিয়মে বাজারের স্মৃতিপটে আবছা হয়ে যায়। আর বাজার চলতে থাকে তার নিজস্ব খেয়ালী ছন্দে।

এক্ষেত্রে স্বনামধন্য বিনিয়োগকারী বেঞ্জামিন গ্রাহামের একটা উক্তি ভীষণই প্রাসঙ্গিক, “স্বল্প সময়ের বিচারে বাজার একটা ভোটিং মেশিন, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এটা একটা ওজনের মেশিন।“

শেষ কথাঃ ২০২৪ এর ভোট

২০২৪ এর ভোট সামনেই। এবারেও বাজারের পছন্দ বিজেপিই। তবে বিরোধী জোট ইন্ডিয়া ক্রমশ হেড লাইনে আসতে শুরু করেছে। এবং ভোটের ফল কি হতে পারে সেব্যাপারে বেশ একটা অনিশ্চয়তার মেঘ-ও তৈরি হতে শুরু করেছে। এই ভোটের ব্যাপারে মর্গান স্ট্যানলির প্রকাশিত একটা রিপোর্ট অনুযায়ী যদি বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জেতে তাহলে বাজার ০-৫% বাড়তে পারে। যদি বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেয়ে জোট সরকার গঠন করে তাহলে বাজার ৫-২৫% পড়তে পারে। আর যদি বিজেপি হেরে যায় তাহলে বাজার ৪০% পর্যন্ত পড়তে পারে।

তবে ভোটের ফল যাই হোক বা ভোটের আগে পরে বাজার যত উপর-নিচেই যাক না কেন আগামী ১-২ বছরে বাজার আবার তার নিজের ছন্দে ঠিকই ফিরবে। আর এটা ভুলে গেলে চলবে না, মোমেন্টাম এখন ভারতের ফরেই আর ভবিষ্যতেও তেমনটা হওয়াই প্রত্যাশিত। কারণ সম্প্রতি ভারতের এই উত্থান কাঠামোগত এক বৃদ্ধির গল্প।

এই বলে আজকের মতো এখানেই শেষ করলাম। মন্তব্য সেকশনে সকলের মতামতের আশা রাখলাম। ভালো থাকবেন।


সম্পর্কিত পাঠঃ
শেয়ার বাজারের বহুল ব্যবহৃত 40+ টি গুরুত্বপূর্ণ টার্ম বা পরিভাষা ও তাদের অর্থ
শেয়ারের দাম এত কমে-বাড়ে কেন বলুন তো?

মন্তব্য করুন