অপশন ট্রেডিং বা বিশেষত অপশন কেনা কেন সবথেকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ?

5/5 - (1 জন রেটিং করেছেন)

কথায় আছে ‘আশায় মরে চাষা’। প্রবাদটা চাষীদের নিয়ে হলেও এটা চাষ বাদে অন্য অনেক কাজের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আর ওই অন্য সব কাজের মধ্যে অপশন ট্রেডিং অন্যতম। আশাই আমাদের জীবনে বাঁচার চালিকাশক্তি। কিন্তু সমস্যা তখনই হয় যখন সেই আশা হয়ে যায় দুরাশা। আর যারা অপশন ট্রেডিং করতে আসে তাদের মধ্যে সিংহভাগই মরে ঐ দুরাশার জন্যই!

শেয়ার ট্রেডিংটাকে ব্যবসার মতো ট্রিট করে আয়ের একটা উৎস তৈরি করা অসম্ভব নয়। তবে বৈশিষ্ট্যগত ভাবে সব ধরণের ট্রেডিং-ই ঝুঁকিপূর্ণ। আবার তার মধ্যে যেক্ষেত্রে যত বেশি লিভারেজ ব্যবহার করা হয় বা যত কম সময়ের মধ্যে যত বেশি লাভের প্রত্যাশা (দুরাশা) করা হয় ঝুঁকিও তত বেশি হয়। আর এই ঝুঁকির স্কেলে অপশন ট্রেডিং-এর স্থান সব থেকে উপরে। কিন্তু তা সত্ত্বেও লোভের বশবর্তী হয়ে শেয়ার বাজারের অনেক অংশগ্রহণকারীই এধরণের ট্রেডিং-এর দিকে ঝুঁকে থাকে।

অনেক নতুন ট্রেডারই কিছুদিন স্টক ট্রেড করার পর নিজেকে প্রোমোট করে অপশন ট্রেডার হয়ে যায় আর এটাকে তারা স্টক ট্রেডিং-এর মতোই ধরে নেয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অপশন ট্রেডিং সাধারণ স্টক ট্রেডিং-এর থেকে অনেকটাই আলাদা। এটাকে বা বিশেষত অপশন বাইং-কে স্টক ট্রেডিং এর মত ট্রিট করলেই বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী!

এধরণের ট্রেডিং কেন আলাদা বা সবথেকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ আর এভাবে ট্রেড করে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার আশা করা মানে আসলে কেন মস্ত এক দুরাশা সেব্যাপারেই জানতে পারবেন এই নিবন্ধে।

অপশন, লিভারেজ আর রিস্ক ম্যানেজমেন্ট

অপশনের সবথেকে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে পাওয়া বিশাল পরিমাণ লিভারেজ। এর সাহায্যে খুব কম পরিমাণ টাকা লাগিয়েই বিশাল টাকার সমতুল্য সিকিউরিটির উপর পজিশন নেওয়া যায়। আর প্রত্যাশার দিকে বাজার চললে ঐ কম টাকা খাটিয়েই বিশাল বড় লাভ করা যায়। নিজের ক্যাপিটালের উপর ভিত্তি করে এই লাভের (বা লসের) হার অস্বাভাবিক রকম হতে পারে। যেমন ধরুন এক দিনের ভিতরে ক্যাপিটাল কয়েক গুনও হয়ে যেতে পারে! আর এই লোভেই তো ঝাঁকে ঝাঁকে রিটেল ট্রেডার অপশনের রাস্তায় আসে।

এতে কি ধরণের লিভারেজ পাওয়া যায় সেটা বোঝার জন্য নিফটি ৫০ ইনডেক্সের অপশন কন্ট্রাক্টের একটা উদাহরণ ব্যবহার করা যাক। ধরে নিই নিফটি ৫০ এখন ২০০০০-এ আছে। এবং এই মুহূর্তে এই ইনডেক্সের ২০০০০ সিই বা কলের দাম (প্রিমিয়াম) চলছে ২০০ টাকা। তো ১ লট বা ৫০ কোয়ান্টিটিতে এই স্ট্রাইক প্রাইসে পজিশন নিতে খরচ পড়বে মাত্র ১০ হাজার টাকা (২০০*৫০=১০০০০)। কিন্তু ১ টা লট কেনা মানে আসলে যে পরিমাণ সিকিউরিটিতে এক্সপোজার হচ্ছে তার প্রকৃত মান ২০০০০*৫০= ১০০০০০০ টাকা বা ১০ লাখ টাকা।

মানে, বুঝতেই পারছেন এই অপশনের সাহায্যে মাত্র ১০ হাজার টাকায় ১০ লাখ টাকার সিকিউরিটিতে ট্রেড করার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। যেখানে স্টক ট্রেডিং করলে মাত্র ৫ এক্স বা ৫ গুন লিভারেজ পাওয়া যায় সেখানে এক্ষেত্রে লিভারেজ হয়ে যাচ্ছে ১০০ এক্স বা ১০০ গুন। আর এটাই অপশন ট্রেডিং-এর দিকে ট্রেডারদের ঝোঁকার অন্যতম প্রধান কারণ।

কিন্তু কথায় আছে লিভারেজ হচ্ছে একধরণের গণবিধ্বংসী অস্ত্র, যদি না একে সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়…। আর এর সঠিক ব্যবহার মানে হচ্ছে যথাযথ রিস্ক ম্যানেজমেন্ট করা। লিভারেজ নিয়ে ট্রেড করার ক্ষেত্রে নিয়ম হচ্ছে পজিশন এমন বড় যেন না নেওয়া হয় যাতে লসের পরিমাণ পুরো ট্রেডিং ক্যাপিটালের ৫% কে ছাপিয়ে যায়। অপশনে ট্রেড করার ক্ষেত্রে যতটা টাকা ব্যবহার করে অপশন কেনা হয় সেই পুরো টাকাটা খুব তাড়াতাড়ি শূন্য হয়ে যেতে পারে। তাই যেকোনো সময়ে অপশন ট্রেড করতে চাইলে পুরো ক্যাপিটালের একটা ছোট পার্সেন্টেজ (<৫%) নিয়ে তবেই কেনাবেচা করতে হয়।

আরও পড়ুনঃ  টাটা গ্রুপের শেয়ার বাজারে লিস্টেড সমস্ত কোম্পানির তালিকা...

কিন্তু যখন এক উঠতি ট্রেডার রাতারাতি বড়লোক হওয়ার দুরাশা নিয়ে অপশন ট্রেডিং করতে আসে তখন এই নিয়মটা খুব সহজেই ভেঙে ফেলে। আর সেটা করলে বিপর্যয় দরজায় কড়া নাড়তে বেশি সময় নেয়না। কখনো কখনো কপালের জোরে কেউ এভাবে বড়সড়ো লাভ করলেও সেটা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়। কারণ কখনোও ভুল করে ঠিক হয়ে গেলে ভুলটাকেই ঠিক বলে মনে হয়। আর ঐ কাজের পুনরাবৃত্তি করতে গেলেই আসল ছবিটা সামনে চলে আসে।

২০০৯ সালে জনৈক ট্রেডার ভোটের ফলের আগে তার সমস্ত ক্যাপিটাল দিয়ে নিফটি ৫০-র আউট অফ দা মানি কল অপশন কিনে রাখে। মা লক্ষ্মীর শুভদৃষ্টি তার উপর এমন পড়ে যে, বাজার তার প্রত্যাশা অনুযায়ী তো যায় ই, এমন ভাবে যায় যে ভোটের রেজাল্টের পর দু’দিনে নিফটি 40% উঠে যায়। আর তার ফলস্বরূপ তার ২ লাখের ক্যাপিটাল বেড়ে ২ কোটি হয়ে যায়! কিন্তু গল্পটা এখানেই শেষ হয় না, আগামী ৬ মাসে সে এই ২ কোটি আর তার সাথে নিজের সমস্ত ক্যাপিটাল খুইয়ে বসে। একেই বলে কপাল!

সুতরাং বুঝতেই পারছেন আশা আর ভাগ্যের বশে এখানে টিকে থাকা কঠিন। আর তাই এক্ষেত্রে রিস্ক ম্যানেজমেন্ট করাটা খুবই জরুরী। অপশনে ট্রেড করার সময় প্রিমিয়াম কত লাগছে সেই হিসেব না করে কত টাকার সিকিউরিটিতে এক্সপোজার হচ্ছে সেটা মেপে তবেই ট্রেড নেওয়া উচিৎ।

অপশনের দাম (প্রিমিয়াম) সময়ের সাথে সাথে কমতে থাকে

অপশন ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে ট্রেডাররা সবথেকে বেশি টাকা লস করে যখন তারা বাজার বুলিশ ধরে নিয়ে কল কেনে বা বাজার বিয়ারিশ ধরে নিয়ে পুট কেনে। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা আউট অফ দা মানি কল বা পুট অপশন কেনা পছন্দ করে কারণ একমাত্র ঐ ক্ষেত্রেই প্রিমিয়াম কম হয়। কিন্তু এতে একটা বড় সমস্যা আছে…

ধরুন নিফটি আছে ১৯৫০০-এ। এবং বাজার বুলিশ মনে করে আপনি ১৯৭০০ স্ট্রাইক প্রাইসের কল অপশন কিনলেন কল প্রতি ১০০ টাকা দাম বা প্রিমিয়াম দিয়ে। এবার যদি আপনি এটা এক্সপায়ারি পর্যন্ত ধরে রাখতে চান তাহলে যেহেতু স্ট্রাইক প্রাইস ১৯৭০০, তাই নিফটি ১৯৭০০ টপকালে তবেই আপনার অপশনের কিছু ভ্যালু থাকবে, কিন্তু লাভের মুখ তখনও দেখতে পাবেন না। কারণ, যেহেতু প্রিমিয়াম ছিল ১০০ টাকা, তাই ব্রেক-ইভেন বা প্রিমিয়ামের টাকা উঠে আসবে তখনই যখন নিফটি ১৯৭০০+১০০= ১৯৮০০ তে পৌঁছাবে। এবং এর পর ইনডেক্স আরও বাড়লে তবেই প্রকৃত অর্থে লাভ হবে।

সুতরাং এই ট্রেড নেওয়া মানে বাজার ১৯৫০০ থাকার সময় স্বল্প সময়ের মধ্যে ৩০০ পয়েন্ট দূরে ১৫৮০০ পার করে আরও উপরে ওঠার আশা করা। কিন্তু এভাবে লাভ করার আশা করা মানে,

  • বাজার কোনদিকে যাবে সেব্যাপারে ঠিক হতে হবে,
  • শুধু দিক সম্পর্কে ঠিক হওয়াটাই যথেষ্ট নয়। অনেকখানি বড় স্কেলে (যেমন, এখানের উদাহরণে ৩০০ পয়েন্ট) ঠিক হতে হবে,
  • তাছাড়া খুব কম সময়ের ব্যবধানে ঠিক হতে হবে।

কিন্তু এই ৩টে বিষয়ে একসাথে ঠিক হওয়াটা খুবই চাপের ব্যাপার! এমনকি যদি বাজার ফ্ল্যাট থাকে মানে এদিক-ওদিক কোনোদিকেই মুভ না করে তাহলেও কিন্তু লসই হয় কারণ এক্সপায়ারি কাছে আসার জন্য টাইম ভ্যালু কমার সাথে সাথে প্রিমিয়ামও কমতে থাকে। অপশন প্রিমিয়াম হচ্ছে ইনট্রিন্সিক ভ্যালু আর টাইম ভ্যালুর যোগফল। বাজারে আর যাই হোক না কেন টাইম ভ্যালু অনবরত কমাটা অবধারিত। আর এজন্যই অপশন বায়াররা বেশিরভাগ সময়েই লস করে কারণ তারা সবসময়ই বয়ে যাওয়া সময়ের সাথে লড়াই করে চলে।

আরও পড়ুনঃ  শেয়ার বাজারের 11টা সেক্টর বা ক্ষেত্র। বিনিয়োগের আগে জানতেই হবে

আবার সব থেকে বেশি যে অপশন কন্ট্রাক্ট এর উপর ট্রেড হয় সেগুলো সাধারণত অ্যাট দা মানি বা আউট অফ দা মানি কন্ট্রাক্ট হয়। এই সমস্ত কন্ট্রাক্ট গুলোর ক্ষেত্রে কোনো ইনট্রিনসিক ভ্যালু থাকেই না এবং যে প্রিমিয়াম দেখা যায় সেটার পুরোটাই টাইম ভ্যালু হয়। আর টাইম ভ্যালু এক্সপায়ারি কাছে আসার সাথে সাথে শূন্য-র দিকে যেতে থাকায় এক্ষেত্রে লস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি হয়। 

অপশন কিনে অ্যাভারেজিং ডাউন করা মস্ত এক ভুল

শেয়ার বাজারে টাকা ডোবার একটা বড় কারণ হচ্ছে অ্যাভারেজিং ডাউন করা। লম্বা সময়ের বিনিয়োগে বড় কোনো বিশ্বাসযোগ্য কোম্পানির শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে এটা কাজে এলেও বা এটা করা যুক্তিসম্মত হলেও বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এটা সর্বনাশই ডেকে আনে।

এই যেমন ইয়েস ব্যাংকের ক্ষেত্রেই ধরুন না, স্ক্যাম ধরা পড়ার আগে কত বড় সম্ভাবনাময় ব্যাংক হিসাবে কত শত মানুষ বিনিয়োগ করেছিল। এবং যখন শেয়ারের দাম পড়া শুরু হয়েছিল তখনও সামনের সর্বনাশটা বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীই আন্দাজ করতে ব্যর্থ হয়েছিল এবং পড়ন্ত শেয়ার আরো আরো কিনে অ্যাভারেজ ডাউন করে পোর্টফোলিও ভরিয়েছিল। অনেকে তো আবার অন্য কোম্পানির শেয়ার বেচে দিয়ে এই শেয়ার কিনেছিল। কিন্তু ভেতরের খবরটা যখন সামনে এসেছিল তখন কিন্তু ইতিমধ্যেই সর্বনাশটা যা হওয়ার হয়ে গিয়েছিল। যে যত বেশি এভারেজিং ডাউন করেছিল সে তত বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল।

তবে একটু আগেই যেটা বলেছি আবারো বলছি, এই অ্যাভারেজিং লম্বা সময়ের জন্য পুরানো, পরীক্ষিত, ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে এবং যখন লং টার্ম বুল মার্কেট চলে সে সময়ে কখনো কখনো কার্যকরী হয় বটে, কারণ এটা কার্যকর হওয়ার ক্ষেত্রে সময় বিনিয়োগের পক্ষে কাজ করে। ভালো কোম্পানির শেয়ারের দামের কম সময়ে ওঠানামার সমস্যা বা ঝুঁকি লম্বা সময়ে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আর থাকে না। কিন্তু এই কাজটা অপশন কেনার ক্ষেত্রে করতে গেলেই মুশকিল, কারণ এক্ষেত্রে সময় বিনিয়োগের বিপরীতে কাজ করে (যে ব্যাপারে একটু আগেই বিস্তৃত বিবরণী দিয়েছি)।

শেয়ারবাজারে যেকোনো ট্রেডের ক্ষেত্রেই এমন কোনো পজিশন নেওয়া উচিত নয় যেক্ষেত্রে একটা ট্রেডে ট্রেডিং ক্যাপিটালের ৫% এর বেশি লস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাজার যখন ট্রেডের উল্টোদিকে মুভ করে তখন লস সীমিত থাকলে ঠিকঠাক রিঅ্যাক্ট করা যায় বা উপযুক্ত সিদ্ধান্তটা নেওয়া যায়। কিন্তু সাধারণত অ্যাভারেজ ডাউন সে-ই করে যে লস মেনে নিতে পারেনা। আর এটা করতে গিয়ে পজিশন বিশাল বড় হয়ে যায় আর শেষ পর্যন্ত বিশাল একটা লস হজম করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকেনা।

সুতরাং বুঝতেই পারছেন, অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে অ্যাভারেজিং ডাউন একেবারেই নৈব নৈব চ!

লস স্টপ করার ক্ষেত্রে অপেক্ষা করলেই কপাল পোড়ে

লস ছোটো থাকতে থাকতে গিলে নেওয়াটা অনেক সহজ। আর সেটা যত বড় হয় গলাধঃকরণে তত সমস্যা হয়। এমনিতে অপশন ট্রেডের ক্ষেত্রে সব সময়েই স্টপলস অর্ডার ব্যবহার করাই বাঞ্ছনীয়। আর যদি পজিশন বড়, যেমন ধরুন যদি ট্রেডিং ক্যাপিটালের ১% এর থেকেও বেশি হয় তাহলেই স্টপলস অর্ডার মাস্ট। অনেক রিটেল ট্রেডারই এই স্টপলস ব্যবহার করার বদলে ট্রেডে যখন ছোটো লস হয় তখন লস ঘুরে লাভ হওয়ার অপেক্ষা করে আর বড় লস হলে লস ছোটো হওয়ার অপেক্ষা করে। আর লস খুব বড় হয়ে গেলে, ‘যা হয় হোক, এত বড় লস নেওয়া তো সম্ভবই নয়’ বলে সব কপালের উপরে ছেড়ে দেয়।

আরও পড়ুনঃ  শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ আর জীবনবীমা একইসাথে। 2 ইন 1 ইউলিপ

কিন্তু আশার এই চক্র দুর্ভাগ্যক্রমে শুধুমাত্র হতাশাই ডেকে আনে। অনেকে অনেক সময় আবার এই অপেক্ষা করতে গিয়ে ইন্ট্রাডে পজিশনকে লং টার্ম পজিশনে বা ওভারনাইট পজিশনে বদলে দিয়ে আরো বড় বিপদের পথে পা দেয়। একটু আগেই যেমনটা বলেছি যেহেতু অপশনের ভ্যালু অনবরত কমতে থাকে, কন্ট্র্যাক্ট একটা দিন বা উইকেন্ডে দুটো দিন বা আরও বেশি সময় এক্সট্রা ধরে থাকার ফলস্বরূপ (এমনকি বাজার বন্ধ থাকার সময়ও) টাইম ভ্যালু কমে যাওয়ার জন্য প্রিমিয়ামটা কমতে থাকে ফলে বিষয়টায় হিতে বিপরীতই হয়।

তাই, উপায় একটাই, নির্দিষ্ট স্টপলস রেখে লস ছোটো থাকতেই ঝেড়ে ফেলাটা মাস্ট!

অপশন ট্রেডিং-এর মোটা ইমপ্যাক্ট কস্ট

শােয়ার বা অন্য যেকোনো সিকিউরিটির দামই সব সময় অনবরত ওঠানামা করে। তাছাড়া সর্বোচ্চ দামের বাই অর্ডার (বিড) বা সর্বনিম্ন দামের সেল অর্ডারের (বিড) মধ্যেও সব সময়ই একটা তফাৎ থাকে (যেটাকে বিড-আস্ক স্প্রেড বলে)। এই কারণে যেকোনো সিকিউরিটি কেনা-বেচা করার সময় অর্ডার প্লেস করার পর পছন্দের দামের থেকে যতটা বেশি দামে অর্ডারটা এক্সিকিউট হয় সেটাকে ইম্প্যাক্ট কস্ট বলে।

এই ইম্প্যাক্ট কস্ট অ্যাভয়েড বা কম করতে লিমিট অর্ডার দেওয়া যেতে পারে, তবে সেক্ষেত্রে এক্সিকিউশনের গ্যারান্টি পাওয়া যায় না কারণ অপশন খুবই ভোলাটাইল হয় এবং প্রতিমুহূর্তে ভীষণভাবে ওঠানামা করে। এই ইম্প্যাক্ট কস্ট একটা অদৃশ্য খরচ যেটা অনবরত ট্রেডারের করা লাভের উপর ভাগ বসাতে থাকে। আর যখন পজিশন বড় নেওয়া হয় বা যে তার পুরো ক্যাপিটাল নিয়ে অপশন ট্রেড করে বা মুহুর্মুহু ট্রেড নেয় তার ক্ষেত্রে এটাই বড় একটা অংশ হয়ে যায়।

যেমন ধরুন ১০০ টাকার কোনো অপশন কন্ট্রাক্ট কেনার ক্ষেত্রে ইমপ্যাক্ট কস্ট ৫০ পয়সা বা ০.৫%। পুরো ক্যাপিটালের ৫% এর উপর ট্রেড করলে এই হারটা কমে নগন্য হয়ে যায় বটে, কিন্তু যদি পুরো ক্যাপিটাল নিয়ে ট্রেড করা হয় তাহলে ইম্প্যাক্ট কস্ট ওই ০.৫% ই থেকে যায়। আর যত বেশি ট্রেড নেওয়া হয় এটা তত বাড়তে থাকে। যখন ট্রেডের সংখ্যা ২০ হয়ে যায় তখন এটা বেড়ে ক্যাপিটালের ১০% হয়ে যায়। আর প্রকৃত লাভ পেতে হলে এটাকে ছাপিয়ে লাভ করতে হয়।

ট্রেড করতে গিয়ে এমনিতে ট্রানজাকশন কস্ট তো আছেই, তার ওপরে এই ইম্প্যাক্ট কস্ট খরচের যন্ত্রণা টাকে গোদের ওপর বিষ ফোঁড়ার মতো আরো বাড়িয়ে দেয়। এটার পরিমাণ বা হার কম রাখতে পুরো ক্যাপিটাল এর উপর ট্রেড না করার পাশাপাশি অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় ট্রেড করা থেকে বিরত থাকা এবং যেখানে যতটা সম্ভব লিমিট অর্ডার দেওয়ার চেষ্টা করা উচিৎ।

শেষ কথা

আশা করি এতক্ষণে বোঝাতে পেরেছি অপশন কেনা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ আর কেন সাধারণ স্টক ট্রেডিং-এর থেকে আলাদা। তাই এদিকের ঘোলা জলা পা দিতে চাইলে সবার আগে উপরের বিষয়গুলো ভালোভাবে জেনে বুঝে তারপরে এগোন।

আজ তাহলে এখানেই শেষ করি। ভালো থাকবেন।

সম্পর্কিত পাঠঃ
শেয়ার বাজারে ডেরিভেটিভ বা ফিউচার ও অপশন কী?
শেয়ার বাজারের বহুল ব্যবহৃত 40+ টি গুরুত্বপূর্ণ টার্ম বা পরিভাষা ও তাদের অর্থ

মন্তব্য করুন