এসআইপি শুরু করার আগে যে সমস্ত বিষয়গুলো না জানলেই নয়…

4.5/5 - (2 জন রেটিং করেছেন)

এসআইপি – এই কথাটা আশা করি আজকের দিনে একটা খুবই পরিচিত একটা টার্ম। তবে বেশীরভাগের কাছে এটা শেয়ার বাজারে টাকা লাগানোর একটা পন্থা মাত্র। কিন্তু আসলে এটা কী? কাজ কিভাবে করে? কী কী উপায়ে এটা করা যায়? এভাবে বিনিয়োগ করা টাকা আসলে কোথায় যায় ও কিভাবে খাটে? এর সুবিধা কী? অসুবিধা কী? আর এতে ঝুঁকিই বা কেমন? ইত্যাদি এবিষয়ে খুঁটিনাটি জিনিসগুলো সম্পর্কে ধারণা হয় তাদের থাকেই না বা থাকলেও সাধারণত খুব একটা পরিষ্কার থাকে না।

কিংবদন্তী বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেটের কথায়, “যা বোঝো না, তাতে কখনো বিনিয়োগ কোরো না।” বিষয়টা এসআইপি বা অন্য যাকিছু হোক, যখন নিজের কষ্টের টাকা বিনিয়োগের প্রশ্ন আসে, তখন পুরোপুরি না বুঝে নিয়ে কখনোই কোনোভাবেই টাকা লাগানো উচিৎ নয়। আর তাই এই পথে টাকা বিনিয়োগ করার আগে যে যে বিষয়গুলো জেনে নেওয়া উচিৎ বা যে যে জিনিসগুলোর উপর খেয়াল রাখা উচিত সেগুলোই তুলে ধরব এই নিবন্ধে।

এসআইপি আসলে কী?

এস আই পি-র পুরো কথা সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান, যার বাংলা মানে নিয়মানুগ বিনিয়োগ প্রণালী। অর্থাৎ নিয়ম করে বিনিয়োগ করার নামই এসআইপি। আর এখানে নিয়ম মানে হচ্ছে নির্দিষ্ট সময় অন্তর স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিনিয়োগ করা।

ঠিক যেমন ব্যাংকের রেকারিং ডিপোজিটে একটা পূর্বনির্ধারিত অ্যামাউন্টের টাকা নির্দিষ্ট সময় অন্তর কাটিয়ে জমানো যায় তেমনই এক্ষেত্রেও পূর্বনির্ধারিত নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা এক মাস, তিন মাস বা এক বছর অন্তর (সাধারণত) কোনো একটা মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা যায়।

সময় এলে যাতে নিজে নিজেই টাকা কেটে বিনিয়োগ সম্পন্ন হয়ে যায় তার জন্য এটা শুরু করার সময়ই ব্যাংকে স্ট্যান্ডিং ইন্সট্রাকশন দেওয়া হয় যাতে এই ব্যাপারটা স্বয়ংক্রিয় হয়ে যায় এবং ভবিষ্যতে আর এনিয়ে মাথা ঘামাতে না হয়।

এসআইপি-র টাকা আসলে যায় কোথায়?

সাধারণত এসআইপি করা হয় যেকোনো একটা মিউচুয়াল ফান্ডে। লাইসেন্স প্রাপ্ত ফান্ডহাউস বা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির তৈরি হরেক রকম মিউচুয়াল ফান্ডে অনেক বিনিয়োগকারীদের থেকে টাকা তুলে বিনিয়োগের একটা থিম অনুযায়ী ইকুইটি, বন্ড, মানি মার্কেট ইন্সট্রুমেন্ট বা অন্য যেকোনো ধরণের সিকিউরিটিতে বিনিয়োগ করা হয়। আর এসআইপি করা মানে বেছে নেওয়া এই ধরণের কোনো একটা ফান্ডে গিয়ে বিনিয়োগ করা টাকাটা যোগ হওয়া।

এমনিতে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগ করা টাকার অনুপাত অনুযায়ী ইউনিট পাওয়া যায়। একইভাবে এসআইপি করলেও যেসময়ে টাকা কাটা হচ্ছে, সেসময়ের ফান্ডের এনএভি অনুযায়ী কাটা টাকায় যতগুলো বা যত অংশে ইউনিট পাওয়ার কথা তত পরিমাণে ইউনিট বিনিয়োগকারীর নামে অ্যালট হয়ে যায়।

যেহেতু এর অ্যামাউন্ট আগে থেকেই ঠিক থাকে তাই ওই টাকায় সাধারণত পূর্ণ সংখ্যায় ইউনিট পাওয়া যায় না। ইউনিটের এনএভি (দাম) অনুযায়ী ঐ টাকায় ভগ্নাংশে ইউনিট পাওয়া যায়।

এসআইপি করার সুবিধা কী? লাম্পসাম বনাম এসআইপি।

মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার দুটো পথ আছে। প্রথম পথ লাম্পসাম বা এককালীন বড় একটা অ্যামাউন্ট বিনিয়োগ করা এবং দ্বিতীয় পথ এসআইপি। লাম্পসামের তুলনায় এই এসআইপি রুটে বিনিয়োগের কিছু সুবিধে আছে। যেমন,

#১ অ্যাভারেজিং বা রুপি কস্ট অ্যাভারেজিং

মিউচুয়াল ফান্ডগুলো সাধারণত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শেয়ার বাজার সম্পর্কিত সিকিউরিটি বা ইকুইটিতে বিনিয়োগ করে থাকে। আর শেয়ার বাজার মানেই এর সাথে জড়িয়ে থাকে ভোলাটিলিটি। ভোলাটিলিটির পাতি বাংলা মানে অস্থিরতা। শেয়ার বাজারে সব শেয়ারের দাম ভীষণই অস্থির হয়। এদের দাম অহরহ কমা-বাড়া হতে থাকে। এবং শেয়ার যত ভালো কোম্পানিরই হোক না কেন এর দাম কখন কতটা বাড়বে বা পড়বে সেটা কিন্তু কেউই আগে থেকে বলতে পারে না।

আরও পড়ুনঃ  শেয়ার বাজারের উপর ভোট বা নির্বাচনের প্রভাব কেমনতর হয়....?

তাই শেয়ার বাজার সম্পর্কিত যেকোনো সিকিউরিটিতে লাম্পসাম বিনিয়োগের সমস্যা হচ্ছে বিনিয়োগ করার পরই যদি বাজারে বড় কোনো পতন আসে তাহলে বিনিয়োগে লাভ তো দূর, বিনিয়োগের মান ঋনাত্মক হয়ে যায় এবং সেই লস মেকআপ করে আবার লাভের দিকে আসতে আসতে অনেকটা সময় চলে যায়। ফলে সময় অনুযায়ী রিটার্নের হারে প্রভাব পড়ে।

উপরের পরিস্থিতিটা সব ভালো মানের সিকিউরিটির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কারণ সিকিউরিটি বা শেয়ার ভালো হলে তার দাম শর্ট টার্মে কমা বাড়া যাই হোক না কেন লম্বা সময়ের বিচারে সাধারণত বাড়েই। আর বেশিরভাগ মিউচুয়াল ফান্ডকে ভালো মানের সিকিউরিটি হিসাবেই ধরে নেওয়া যেতে পারে, কারণ এক্ষেত্রে সাধারণত ভালো ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা হয় এবং পুরো বিষয়টা পেশাদার ফান্ড ম্যানেজারের তদারকিতে হয়।

যাইহোক, এধরণের ভালো মানের সিকিউরিটি বা ভালো মিউচুয়াল ফান্ডের ভ্যালু লম্বা সময়ের বিচারে বাড়বে ধরে নিয়ে যদি এসআইপি করা হয় তাহলে নির্দিষ্ট সময় অন্তর একটা টাকা ফান্ডে যেতে থাকে। বাজার উপরের দিকে থাকলে ইউনিটের এনএভি বেশি হয়, ফলে ঐ টাকায় কম ইউনিট পাওয়া যায় আর বাজার নীচের দিকে থাকলে এনএভি কম হওয়ায় বেশি ইউনিট পাওয়া যায়। ফলে শর্ট টার্মের উপরনিচটা নস্যাৎ হয়ে যায়, কারণ, আলাদা পরিস্থিতি ও আলাদা দামে ইউনিট পাওয়া যাওয়ায় কেনা ইউনিটগুলো একটা গড় দামে চলে আসে।

তাই এতে বিনিয়োগের ঝুঁকি কমে এবং বিনিয়োগের টাকা এককালীন বিনিয়োগের থেকে বেশি সুরক্ষিত থাকে। তাছাড়া এই গড় দাম পাওয়া যাওয়ার জন্য যেকোনো সময়ই এসআইপি শুরু করার জন্য আদর্শ হয়।

#২ সহজে নিয়মিত বিনিয়োগের রাস্তা খুলে যায়

আর্থিক সচ্ছলতা ও স্বাধীনতার চাবিকাঠি হচ্ছে নিয়মিত বিনিয়োগ করা। কিন্তু ম্যানুয়ালি নিয়মিত বিনিয়োগ করার বিষয়টা বলতে সহজ হলেও লম্বা সময় ধরে বাস্তবে করে যাওয়াটা ততটাও সহজ নয়। একদিকে এটা করতে যাওয়া যেমন জটিল তেমনই অন্যদিকে প্রতিদিনের ব্যাস্ততার মাঝে নিয়মিত এটা করে যাওয়া এই ফিল্ডে না থাকলে প্রায় অসম্ভবেরই সামিল হয়। তাছাড়া ম্যানুয়ালি করতে গিয়ে বাজারের পরিস্থিতি আর বিনিয়োগের মাঝে আবেগ চলে আসে, যা অনেকসময় ভুল পথে চালিত করে।

তাই, বিনিয়োগের সবথেকে সহজ পথ হচ্ছে এই এসআইপি। এটা শুরু করার জন্য প্রথমবার শুধু আবেদন করতে হয় এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্ট্যান্ডিং ইন্সট্রাকশন সেট করে দিতে হয়। ব্যাস, তারপর থেকে শুধু টাকা কাটার আগে ব্যাংকে প্রয়োজনীয় ব্যালেন্স রাখলেই চলে। এর থেকে বেশি আর কোনো কিছু নিয়েই মাথা ঘামানোর প্রয়োজন পড়ে না। এমনকি টাকা কাটার ঠিক আগে রিমাইন্ডার নোটিফিকেশন চলে আসে যাতে এই কাজটাও স্মুথলি চলতে পারে। টাকা কাটার পর বাকিটা নিজে থেকেই হয়ে যায়। আর সবকিছু নিজে থেকে হয়ে যায় বলে এক্ষেত্রে আবেগও কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনা।

#৩ যৎসামান্য টাকায় শুরু করা যায়

লাম্পসাম বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এককালীন অনেকগুলো টাকার দরকার পড়ে। কিন্তু মিউচুয়াল ফান্ডে এসআইপি করার ক্ষেত্রে সাধারণত ফান্ড ভেদে ন্যূনতম ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা থাকলেই বিনিয়োগ শুরু করা যায়। এমনকি ইদানিংকালে কিছু কিছু মিউচুয়াল ফান্ড ১০০ টাকাতেও এসআইপি করার সুযোগ দেয়। কম টাকায় শুরু করে ক্রমবর্ধমান আয়ের সাথে সাথে ক্রমশ এই অংকটা বাড়িয়ে নিয়ে আরো বড় লাভের সুযোগ করে নেওয়া যায়।

#৪ বিনিয়োগের ব্যাপারে ডিসিপ্লিন্ড বা নিয়মনিষ্ঠ থাকা যায়

বিনিয়োগ করে বড় সম্পদ বানানোর একটা গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে নিয়মনিষ্ঠ হয়ে ক্রমাগত বিনিয়োগ করে যাওয়া। তবে এই কাজটা মোটেও সহজ নয়। কারণ প্রতিনিয়তই আমাদের অযাচিত কিছু খরচের ঝামেলা চলে আসে আর তার উপর কিছু কিছু এমারজেন্সি তো আছেই। আর সব মিলিয়ে বারে বারে ‘পরের বারের’ পরিস্থিতি চলে আসে।

আরও পড়ুনঃ  শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ আর জীবনবীমা একইসাথে। 2 ইন 1 ইউলিপ

কিন্তু এসআইপি করা থাকলে কমিটমেন্ট থাকার জন্য অনেকটা বাধ্য হয়েই বাকি খরচের আগে এই বিনিয়োগের কাজটা ঠিকঠাক সম্পন্ন হয়ে যায়। আর তার ফলে পথভ্রষ্ট না হয়ে আর্থিক লক্ষ্যগুলো অর্জন করা যায়।

#৫ চক্রবৃদ্ধির লাভ পাওয়া যায়

লম্বা সময় ধরে নিয়ম মাফিক বিনিয়োগ করে গেলে বাৎসরিক গড় রিটার্নের হার খুব বেশি না হলেও চক্রবৃদ্ধির জন্য বেশ বড় অঙ্কের টাকা ফেরত পাওয়া যায়। একটা ছোট্ট অঙ্কের এসআইপি-ও লম্বা সময় ধরে চক্রবৃদ্ধির জন্য একটা বিশাল অঙ্কে পরিণত হতে পারে। একটা উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টা আরও ভালোভাবে পরিষ্কার হয়ে যাবেঃ

ধরুন রাম ৪০ বছর বয়সে তার অবসর সময়ের জন্য প্রতিমাসে ২০০০ টাকা এসআইপি করার সিদ্ধান্ত নিল। যেহেতু লম্বা সময়ের বিচারে বেশীরভাগ মিউচুয়াল ফান্ডে সাধারণত কমপক্ষে বাৎসরিক ১২% রিটার্ন পাওয়া যায়ই, তাই এই হারে ৬০ বছর বয়সে সে মোট ফেরত পাবে ১৯,৯৮,২৯৬ বা প্রায় ২০ লক্ষ টাকা, যা প্রকৃত বিনিয়োগের প্রায় ৪ গুন।

আবার যদি সে এই সিদ্ধান্তটা ২০ বছর বয়সে নিত তাহলে একই রিটার্নের হারে সে ফেরত পেত ২,৩৭,৬৪,৮৪০ বা ২ কোটি সাড়ে ৩৭ লাখেরও বেশি। সুতরাং বুঝতেই পারছেন সবকিছু এক রেখে শুধুমাত্র সময়টা ডবল করে দেওয়ায় চক্রবৃদ্ধি হওয়ার জন্য রিটার্ন আগের তুলনায় ১০ গুণেরও বেশি হয়ে গেলো! এটাই চক্রবৃদ্ধির শক্তি।

#৬ যখন খুশি শুরু বা বন্ধ করা যায়

এমনিতে রিটার্নের দিক দিয়ে যেমন যখন খুশি এসআইপি করতে কোনো বাধা নেই, তেমনি পদ্ধতিগত দিক দিয়েও যখন খুশি এসআইপি শুরু করতে এবং বন্ধ করতে কোনো বাধা নেই। তাছাড়া এটা বন্ধ করলেও ইতিমধ্যে পাওয়া ইউনিট বাজারে বিনিয়োগ হয়েই থাকে এবং ফান্ডের পারফরম্যান্স অনুযায়ী তার ভ্যালুও বাড়ার সুযোগ থাকে। ঐ বিনিয়োগ তখনই ওঠে যখন অ্যালট হওয়া ইউনিট রিডিম করা বা বেচে দেওয়া হয়।

তাছাড়া কখনোও কোনো কারণে কিছু সময়ের জন্য ইন্সটলমেন্ট দিতে সমস্যা হলে এসআইপি কয়েক মাস পজ করে বা থামিয়ে আবার কয়েকমাস পর থেকে পুনরায় চালু করার সুবিধাও পাওয়া যায়।

মিউচুয়াল ফান্ডের বাইরে এসআইপি। স্টক-এসআইপি

এতক্ষণ কেবলমাত্র মিউচুয়াল ফান্ডে এসআইপি করার কথাই বলছি। কিন্তু এসআইপি মানে তো সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান। এবং এর মধ্যে কোথাও মিউচুয়াল ফান্ডের কথা কিন্তু উল্লেখ নেই! অর্থাৎ, বিনিয়োগ যেখানেই করা হোক সেটা যদি সিস্টেমেটিক হয় তবে তাকে এসআইপি-ই বলা হবে। যদিও সাধারণত মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার জন্যই এই রুট ধরা হয়, তবে চাইলে এর বাইরেও এই পন্থায় বিনিয়োগ করা যায়। এবং এব্যাপারে খানিকটা হিন্ট আমি আগেই দিয়েছি।

তো মিউচুয়াল ফান্ডের বাইরে সরাসরি এক বা একাধিক শেয়ার কিংবা ইটিএফ-এও এসআইপি-র মাধ্যমে বিনিয়োগ করা যায়। তবে এটা শুরু করার রাস্তাটা একটু আলাদা হয়। আর এক্ষেত্রে স্থির টাকার বদলে স্থির সংখ্যার স্টক নির্দিষ্ট সময় অন্তর নিজে থেকেই কেনার ব্যবস্থাপনা করতে হয়। ফলে শেয়ারের দাম অনুযায়ী এক্ষেত্রে ফান্ডের প্রয়োজনীয়তাটা প্রতিবার আলাদা হয়।

কিভাবে এসআইপি শুরু করতে হয়?

এসআইপি শুরু করা খুবই সহজ। তবে এটা শুরু করার আগে কয়েকটা ধাপ অনুসরণ করতে হয়। যথাঃ

  • লক্ষ্য স্থিরঃ সবার প্রথমে নিজের লক্ষ্য স্থির করতে হয়। তবেই কত সময়ে কত রিটার্ন দরকার তার একটা সম্ভাব্য হিসেব পাওয়া যায়।
  • এসআইপি-র অঙ্ক ও সময়কাল নির্ধারণঃ লক্ষ্যপূরণ করতে নিজের আয় অনুযায়ী কত সময়ের জন্য কত টাকার এসআইপি করতে হবে সেটা যেকোনো একটা এসআইপি ক্যালকুলেটর (উদাঃ গ্রো ক্যালকুলেটর) ব্যবহার করে নির্ধারণ করে নিতে হয়।
  • ভালো মিউচুয়াল ফান্ড বা শেয়ার নির্বাচনঃ এরপর বিনিয়োগ বা এসআইপি করার জন্য উপযুক্ত মিউচুয়াল ফান্ড বা শেয়ার বেছে নিতে হয়।
সম্পর্কিত পাঠঃ
সঠিক ও ভালো মিউচুয়াল ফান্ড চেনার উপায়
শেয়ার বাজারে ভালো শেয়ার চেনার উপায়

এই ধাপগুলোর পর এসআইপি শুরু করার পালা আসে। মিউচুয়াল ফান্ড আর সরাসরি শেয়ারে এটা করার নিয়মটা খানিকটা আলাদা হয়।

আরও পড়ুনঃ  বিভিন্ন ধরণের বিনিয়োগে কত ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স দিতে হয়...?

মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে অফলাইনে করতে চাইলে ট্র্যাডিশনাল উপায়ে ব্যাংক বা এএমসি-তে এসআইপি শুরু করার জন্য কেওয়াইসি ও স্ট্যান্ডিং ইন্সট্রাকশন সহ আবেদন করা যায়। আর অনলাইনে বিভিন্ন ব্যাংক, এএমসি, মিউচুয়াল ফান্ড ডিস্ট্রিবিউটরের অ্যাপ বা ওয়েবসাইট কিংবা ফোনপের মতো আধুনিক বিভিন্ন ফিনটেক অ্যাপ থেকেও এর জন্য আবেদন করা যায় বা শুরু করা যায়।

তবে সরাসরি পছন্দের এক বা একাধিক শেয়ার কিংবা ইটিএফ এর বাস্কেটে এসআইপি করতে হলে ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট থাকার দরকার পড়ে। এখন প্রায় সব বড় বড় ব্রোকারই (যেমন জিরোধা, গ্রো ইত্যাদি) স্টক-এসআইপি করার সুবিধা দেয়। ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট থেকে এটা করার জন্য প্রথমত উপযুক্ত অপশন থেকে স্টক বেছে নিয়ে ও তার সংখ্যা এন্ট্রি করে বাস্কেট তৈরি করতে হয়। তারপর মাসের যে তারিখ (দিন) ও সময়ে এটা করতে চাওয়া হচ্ছে সেটা পুট করার পর এসআইপি-টা চালু করে দিতে হয়।

ট্র্যানজ্যাকশনে প্রয়োজনীয় ফান্ডের জন্য ডিম্যাট অ্যাকাউন্টে ব্যালেন্স রাখলেই চলে বা সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্ট্যান্ডিং ইন্সট্রাকশন সেট করে দেওয়া যায়। এরপর সেট করা মাসের নির্দিষ্ট দিন ও সময়ে বাস্কেট অনুযায়ী নির্দিষ্ট সংখ্যার শেয়ার নিজে থেকেই কেনা হয়ে পোর্টফলিওতে যোগ হয়ে যায়।

এসআইপি-র অসুবিধা

এসআইপি মানে সবকিছুই কিন্তু সুবিধের নয়। এর কিছু অসুবিধাও আছে। যেমন,

  • বাজারের পরিস্থিতি সব সময় পরিবর্তনশীল। কখনো বাজার ওঠে তো কখনো পড়ে। যখন বাজার পড়ে তখন ভালো ভালো শেয়ারগুলো অনেক কম দামে পাওয়া যায়। ফলে ওই সময় বেশি পরিমাণে বিনিয়োগ করলে বেশি লাভের সম্ভাবনা তৈরি হয়। কিন্তু এসআইপির ক্ষেত্রে বাজারের পরিস্থিতি যেমনই হোক পূর্ব নির্ধারিত অঙ্কেই বিনিয়োগ সম্পন্ন হয়।
  • বাজার যখন অনবরত উপরের দিকে ওঠে তখন অ্যাভারেজিং-এর জন্য লাম্পসামের থেকে এক্ষেত্রে রিটার্নের হার কম হয়।
  • ভোলাটাইল বাজারে পরিস্থিতি অনুযায়ী চটপট বাই সেল করতে পারলে লাভের সম্ভাবনা বাড়ে। ডিম্যাটে সরাসরি শেয়ার কেনাবেচার ক্ষেত্রে তৎক্ষণাৎ এগুলো করা গেলেও এসআইপি শুরু বা বন্ধ করার আবেদন করার পর সেটা কার্যকরী হতে বেশ কিছুটা সময় নেয়।
  • কিছু কিছু ট্যাক্স সেভিং ফান্ড যেমন ইএলএসএস-এর ক্ষেত্রে এসআইপি শুরু করার পর ৩ বছরের লক-ইন পিরিয়ড থাকে।
  • নির্দিষ্ট সময় অন্তর অনবরত টাকা ঢেলে যেতে হয় বলে যাদের আয় স্থির নয় তাদের জন্য এটা উপযুক্ত নয়।

শেষ কথা

কিছু অসুবিধা থাকলেও নতুনদের বিনিয়োগ শুরু করার জন্য সবথেকে সেরা উপায় হচ্ছে এই এসআইপি-র পথ ধরা। কম পুঁজি, কম অভিজ্ঞতা ও কম ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে এর কোনো জুড়ি নেই।

এই বলেই আজকের মতো এখানেই শেষ করলাম। কিছু বলার থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানানোর অনুরোধ রইল। ভালো থাকবেন।


সম্পর্কিত পাঠঃ
মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের আগে এই টার্ম গুলো না জানলেই নয়…
মিউচুয়াল ফান্ড কত ধরণের হয়?
মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের সুবিধা ও অসুবিধা।

মন্তব্য করুন