শেয়ার বাজারে ট্রেডিং বা ইনভেস্টিং- এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য চার্জের তালিকা

5/5 - (2 জন রেটিং করেছেন)

শেয়ার কেনাবেচা করার সময় চার্জ হিসাবে কিছু অতিরিক্ত খরচের বিষয়টা কারো কাছেই অজানা নয়। তবে অনেক সময় আমরা এই চার্জের খুঁটিনাটি গুলো জানার বিষয়টা উপেক্ষা করে যাই। কিন্তু এটা ভালোভাবে না বুঝে নিলে একদিকে যেমন লাভের ক্ষেত্রে চার্জ বাদে আসলে কত লাভ হল বা লসের ক্ষেত্রে কত এক্সট্রা গচ্চা গেল সেটা বোঝা মুশকিল হয়ে যায় তেমনই আবার অনেকসময় না জেনে অতিরিক্ত কিছু চার্জের বোঝা ঘাড়ে চেপে যায়।

নতুন ট্রেডারদের ক্ষেত্রে কম পুঁজিতে ট্রেড করার সময় এই ব্যাপারে খেয়াল রাখা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে। কারণ, তাদের ক্ষেত্রে লাভগুলো সাধারণত ছোট ছোট হয় আর কম কোয়ান্টিটিতে ট্রেড করায় চার্জের আনুপাতিক হার টাও বেশি হয়। ট্রেড করতে গিয়ে তাদের দেয় চার্জগুলো অনেকসময় এতটাই বড় আকার নেয় যে, লাভের পুরো গুড়টাই খেয়ে শেষ করে দেয়!

সেই কারণে, এব্যাপারে বিস্তারিত ভাবে জেনে নিলে একদিকে যেমন চার্জ যতটা সম্ভব কম রাখার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ট্রেডিং প্ল্যান করা যায়, অন্যদিকে তেমন ভুল করে অতিরিক্ত চার্জ দেওয়া থেকে বিরত থাকা যায় ও ব্রোকারের ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত এক্সট্রা চার্জগুলোও এড়িয়ে চলা যায়।

তাই, এই নিবন্ধে আমরা শেয়ার ট্রেডিং বা ইনভেস্টিং এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সমস্তরকম চার্জ-বৃত্তান্ত জেনে নেব।

সূচীপত্র দেখান

শেয়ার ব্যবসা ও চার্জ

শেয়ার কেনা-বেচার ক্ষেত্রে চার্জের হিসেবটা বেশ জটিল। এর বাইরে অন্য অনেক ক্ষেত্রে চার্জ হিসেব করার সময় যেখানে একটা নির্দিষ্ট পার্সেন্টেজ অংক কষে নিলেই হয়ে যায়, এক্ষেত্রে কিন্তু বিষয়টা তেমন মোটেও নয়। কারণ, এক্ষেত্রে একটা দুটো নয়, চার্জের একটা লম্বা তালিকা আছে যেগুলো শেয়ার কেনাবেচা করার সময় ব্রোকার, সরকার এবং রেগুলেটরের তরফ থেকে নেওয়া হয়। তাছাড়া অন্যান্য কিছু কিছু সার্ভিস, অ্যাকাউন্ট মেনটেনেন্স ও পেনাল্টি বাবদ আরও কিছু অতিরিক্ত চার্জ ধার্য করা হয়।

শেয়ার ব্যবসা সংক্রান্ত এধরণের সবরকম চার্জগুলোর বিস্তারিত বিবরণী নীচে দিলাম।

সিকিউরিটি কেনাবেচার সময় দেয় চার্জ

ক) ব্রোকারেজ – ব্রোকারের প্রধান চার্জ

প্রতিবার শেয়ার, ডেরিভেটিভ বা অন্য যেকোনো ইন্সট্রুমেন্ট কেনা এবং বেচা উভয় ক্ষেত্রেই এই চার্জ প্রযোজ্য হয়। তবে অর্ডার প্লেস করা মাত্রই এটা দিতে হয় না। বাই বা সেল অর্ডার দেওয়ার পর অর্ডার এক্সিকিউট হলে তবেই এই চার্জ ধার্য হয়। আর অর্ডার প্লেস করার পর সেটা এক্সিকিউট না হয়ে যদি কোনো কারণে ক্যানসেল হয়ে যায় বা ক্যানসেল করে দেওয়া হয় তাহলে এই ব্রোকারেজ দিতে হয় না।

বিভিন্ন ব্রোকারের ক্ষেত্রে এর নিয়ম বা পরিমাণ আলাদা রকম হয়। ব্রোকারেজের উপর ভিত্তি করে ব্রোকার গুলোকে দুই শ্রেণীতে ভাগ করা হয় — ট্র্যাডিশনাল ব্রোকার এবং ডিসকাউন্ট ব্রোকার। একসময় ট্র্যাডিশনাল ব্রোকারের ক্ষেত্রে ব্রোকারেজ অনেক বেশি হতো আর ডিসকাউন্ট ব্রোকারের ক্ষেত্রে অনেক কম। তবে বর্তমানে দুই পক্ষের তফাৎটা অনেকটাই ঘুচে গেছে। ডিসকাউন্ট ব্রোকারের চাপে পড়ে বেশীরভাগ ট্র্যাডিশনাল ব্রোকাররাও (কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া) তাদের ব্রোকারেজ অনেক কমিয়ে এনেছে এবং এখন মোটামুটি সব ব্রোকারের ক্ষেত্রেই এই চার্জ কিছুটা আলাদা হলেও মোটামুটি কাছাকাছিই হয়ে গেছে।

আরও পড়ুনঃ  কিভাবে টাকা বাড়ানো যায়? বিনিয়োগের সেরা 10 বিকল্প।

এমনিতে এখন সব ধরনের ট্রেডের ক্ষেত্রেই বেশিরভাগ ব্রোকার ফ্ল্যাট রেট ২০ বা ০.০৩%-০.৫% বা সর্বোচ্চ ২০ টাকা ব্রোকারেজ নিয়ে থাকে। আবার কোনো কোনো ব্রোকার ট্রেড ভলিউম অনুযায়ী কিছু সাবস্ক্রিপশন প্ল্যানের অপশন দেয়, যেক্ষেত্রে চাইলে বছরে একবার ফি দিয়ে ব্রোকারেজ কমিয়ে নেওয়া যায়।

অনেক ব্রোকার আবার ইকুইটি ডেলিভারি অর্ডারের ক্ষেত্রে কোনো ব্রোকারেজই নেয়না। তবে এই চার্জ নেওয়া যখন হয় তখন পার্সেন্টেজের বিচারে ইন্ট্রাডে অর্ডারের ব্রোকারেজের থেকে সামান্য বেশি হয়। কিন্তু সেক্ষেত্রে ম্যাক্সিমাম সিলিং ২০ টাকাই থাকে। আর ডেরিভেটিভের মধ্যে অপশনের ক্ষেত্রে সাধারণত ফ্ল্যাট রেটেই (২০ টাকা) এই চার্জ নেওয়া হয়।

খ) যে চার্জ গুলো এক্সচেঞ্জ অর্থাৎ বিএসই বা এনএসই নেয়

#১ এক্সচেঞ্জ ট্রানজ্যাকশন / টার্নওভার চার্জ

ট্রানজ্যাকশনের পরিমানের উপর নির্ভর করে এক্সচেঞ্জ অর্থাৎ এনএসই ও বিএসই-র তরফে এই চার্জ নেওয়া হয় এবং বাই ও সেল দুই দিকেই এটা ধার্য হয়। এনএসই-তে ইকুইটি ডেলিভারি ও ইন্ট্রাডের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ০.০০৩২৫%, ফিউচারের ক্ষেত্রে ০.০০১৯% আর অপশন প্রিমিয়ামের উপর ০.০৫০%। বিএসই-র ক্ষেত্রেও এই হার একই রকম হয়।

#২ এনএসই-র ইনভেস্টরস প্রোটেকশন ফান্ড ট্রাস্ট চার্জ

ইনভেস্টরস প্রটেকশন ফান্ডের জন্য এনএসই-র তরফে ইকুইটি ও ফিউচারের ক্ষেত্রে ০.০০০১% অর্থাৎ কোটিতে ১০ টাকা এবং অপশনের ক্ষেত্রে ০.০০০৫% অর্থাৎ কোটিতে ৫০ টাকা চার্জ নেওয়া হয়। এটাও বাই এবং সেল দুই দিকেই প্রযোজ্য হয়।

গ) ডিপি চার্জ – যা ডিপোজিটরি ও ডিপোজিটরি পার্টিসিপেন্ট নেয়

ডিম্যাটে আগে থেকে থাকা শেয়ার বেচে দেওয়ার সময় এই চার্জ ধার্য হয়। অর্থাৎ আগে ডেলিভারি নেওয়া ইকুইটি শেয়ারের ক্ষেত্রেই কেবলমাত্র এটা প্রযোজ্য হয়। শেয়ার কেনার সময়, ইন্ট্রাডে ট্রেডিং-এর সময় এবং ফিউচার-অপশন কেনা-বেচার সময় এই চার্জ দিতে হয় না।

এর মান স্থির ও সুনির্দিষ্ট হয় যা প্রতি ট্রেডিং সেশনে বা ট্রেডিং-এর আলাদা আলাদা দিনে আলাদা আলাদা কোম্পানির শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়। শেয়ারের দাম যাই হোক বা এক দিনের মধ্যে একটা কোম্পানির শেয়ার বেচতে যত কোয়ান্টিটির বা যতগুলো অর্ডারই দেওয়া হোক না কেন এর মান অপরিবর্তিত থাকে।

এই চার্জ যায় ডিপোজিটরি (যেমন সিডিএসএল বা এনএসডিএল) ও ডিপোজিটরি পার্টিসিপেন্ট বা ব্রোকার এর কাছে। আর ব্রোকার ভেদে এই চার্জ কোম্পানি প্রতি মোটামুটি ১৩.৫-২০ টাকার মধ্যে হয়।

চলুন একটা উদাহরণের সাহায্যে এই কেসটা আরেকটু ভালোভাবে বুঝে নেওয়া যাক। ধরুন আমার ব্রোকারের ক্ষেত্রে এই ডিপি চার্জ ১৬ টাকা। এবার যদি আমি বাজার খোলা থাকাকালীন আমার ডিম্যাটে থাকা ‘ক’ কোম্পানির শেয়ারের ২, ৩ এবং ৪ কোয়ান্টিটি বেচার ৩টে অর্ডার দিই তবে মোট ডিপি চার্জ ধার্য হবে ১৬ টাকা। একইভাবে আরেক কোম্পানি ‘খ’ এর কিছু শেয়ার বেচলে এই চার্জ পুনরায় দিতে হবে এবং সেক্ষেত্রে ঐ দিনের জন্য মোট ডিপি চার্জ ধার্য হবে ১৬+১৬=৩২ টাকা।

ঘ) বিভিন্ন রকম ট্যাক্স – যা সরকার নেয়

#১ সিকিউরিটি ট্রানজ্যাকশন ট্যাক্স বা এসটিটি

এক্সচেঞ্জে ট্রানজ্যাকশন করার জন্য সরকারের তরফ থেকে এই ট্যাক্স নেওয়া হয়। ইকুইটি ডেলিভারির ক্ষেত্রে কেনা এবং বেচা দুই দিকেই আর ইন্ট্রাডে ট্রেডিং ও ফিউচার-অপশনের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র বেচার দিকে এই চার্জ প্রযোজ্য হয়। পার্সেন্টেজের বিচারে দেখতে এর হার কম মনে হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটা ব্রোকারেজকেও ছাপিয়ে যায়।

খুব সম্প্রতি এর পরিমাণ আরও কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। এখন এর হার ইকুইটি ডেলিভারির ক্ষেত্রে ০.১%, ইন্ট্রাডের ক্ষেত্রে ০.০২৫%, ইকুইটি ফিউচারের ক্ষেত্রে ০.০১২৫% এবং অপশনের ক্ষেত্রে ০.০৬২৫%।

আরও পড়ুনঃ  শেয়ার ট্রেডিং-এর সেরা 7 ইন্ডিকেটর। টেকনিক্যাল অ্যানালিসিসের ব্রম্ভাস্ত্র

#২ স্ট্যাম্প ডিউটি

স্ট্যাম্প ডিউটি রাজ্যের রেভিনিউ সিস্টেমের অংশ যা কেবলমাত্র সিকিউরিটি কেনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়। বেচা বা সেল করার ক্ষেত্রে এটা দিতে হয়না। এটা রাজ্য সংগ্রহ করলেও ২০২০ থেকে ভারতবর্ষের সমস্ত রাজ্যে এটা সমান ও নির্দিষ্ট হারে বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

এর পরিমাণ ডেলিভারির ক্ষেত্রে ০.০১৫% বা কোটিতে ১৫০০ টাকা, ফিউচারের ক্ষেত্রে ০.০০২% বা কোটিতে ২০০ টাকা, ইন্ট্রাডে এবং অপশনের ক্ষেত্রে ০.০০৩% বা কোটিতে ৩০০ টাকা।

#৩ জিএসটি

গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স বা জিএসটি প্রতিদিনের জীবনে প্রতি পদে পদে দিতে হয়। এবং শেয়ার বাজার-ও এর বাইরে পড়ে না। সার্ভিস হিসেবে ব্রোকারেজ, ট্রানজ্যাকশন, ডিপি ইত্যাদি প্রায় সমস্তরকম চার্জের উপরই ১৮% জিএসটি এক্সট্রা দিতে হয়।

ঙ) সেবি চার্জ – যা সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া নেয়

সেবি বাজার রেগুলেট করার জন্য ডেলিভারি, ইন্ট্রাডে, ফিউচার এবং অপশন প্রতি ক্ষেত্রে বাই ও সেল উভয় দিকেই ০.০০০১% বা প্রতি কোটিতে ১০ টাকা চার্জ নেয়।

ব্রোকারের নেওয়া অন্যান্য কিছু চার্জ যা বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রযোজ্য হয়

চ) মার্জিন ট্রেডিং চার্জ

ব্রোকার মার্জিন ট্রেডিং ফেসিলিটি দিলে এবং তা ব্যবহার করলে মোটামুটি বছরে কমবেশি ১৮% বা দৈনিক ০.০৫% সুদ গুনতে হয়।

ছ) শেয়ার প্লেজিং সম্পর্কিত চার্জ

ডেরিভেটিভ ট্রেডিং-এর জন্য অতিরিক্ত কোল্যাটার‍্যাল মার্জিন পেতে শেয়ার প্লেজ (তথা আনপ্লেজ) করলে ২০-৫০ টাকা (+ জিএসটি) চার্জ দিতে হয়।

জ) কল টু ট্রেড চার্জ

কোনো কোনো ব্রোকার ফোন কলের মাধ্যমে অর্ডার প্লেস করলে প্রতি অর্ডারের জন্য (কমবেশি) অতিরিক্ত ৫০ টাকা চার্জ করে থাকে।

ঝ) কর্পোরেট অ্যাকশন অর্ডার চার্জ

অফার ফর সেল, বাইব্যাক, টেকওভার ও ডিলিস্টিং অর্ডারের জন্য ২০ টাকা (+ জিএসটি) চার্জ দিতে হয়। 

যে চার্জ গুলো ভুল করার খেসারত হিসাবে ব্রোকারকে দিতে হয়

ছ) পেনাল্টি

সব নিয়মের মধ্যে করলে এই চার্জ প্রযোজ্য হয়না, তবে নিয়মের বাইরে পা ফেললেই কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিছু পেনাল্টি দিতে হয়। যেমন,

#১ মার্জিন শর্টফল পেনাল্টি

একটা ট্রেড নেওয়ার পর অপ্রত্যাশিত কিছু হলে এবং অতিরিক্ত মার্জিন-এর প্রয়োজন হলে আর সেই টাকা ট্রেডিং অ্যাকাউন্টে না থাকলে মার্জিন শর্টফল পেনাল্টি দিতে হয়। এই শর্টফল যদি ১ লাখের ভেতরে হয় এবং প্রযোজ্য মার্জিনের ১০%-এর কম হয় তাহলে সেক্ষেত্রে পেনাল্টির পরিমান হয় ০.৫% আর যদি শর্টফল ১ লাখের উপরে হয় বা প্রযোজ্য মার্জিনের ১০%-এর বেশি হয় সেক্ষেত্রে পেনাল্টির পরিমাণ হয় ১%।

পরপর তিনদিনের বেশি বা মাসে পাঁচবারের বেশি এ ধরনের ঘটনা ঘটলে ঐ লিমিটের পর থেকে ৫% পেনাল্টি দিতে হয়। তাছাড়া এই পেনাল্টির উপর জিএসটি-ও ধার্য হয়।

#২ ডেবিট ব্যালেন্স ও ডিলেইড পেমেন্ট চার্জ

শেয়ার প্লেজ করে কোল্যাটার‍্যাল মার্জিন নিয়ে ডেরিভেটিভ ট্রেড করার ক্ষেত্রে নিয়ম হচ্ছে ট্রেড নেওয়ার সময় যত মার্জিন দরকার তার অন্তত অর্ধেক বা ৫০% যেন ক্যাশ ব্যালেন্স হিসাবে অ্যাকাউন্টে মজুত থাকে। যদি এটা না হয়, অর্থাৎ ক্যাশ ব্যালেন্স যদি কম পড়ে যায় তাহলে সেক্ষেত্রে যে অ্যামাউন্টটা কম পড়ে সেটাকে ডেবিট ব্যালেন্স হিসেবে ধরা হয় এবং তার উপর ডিলেইড পেমেন্ট চার্জ ধার্য হয় যার পরিমাণ দৈনিক ০.০৫% (বার্ষিক ১৮%) হয়।

এছাড়া ডেবিট ব্যালেন্স থাকাকালীন যেকোনো অর্ডার প্লেস করার জন্য ডবল চার্জ ধার্য হয় (২০-র বদলে ৪০ টাকা)।

#৩ অটো স্কয়ার অফ চার্জ

যেকোনো কারণে স্কয়ার অফ অর্ডার যদি অটোমেটিক হয়ে যায় বা ব্রোকার নিজে থেকেই করে দেয় সেক্ষেত্রে অর্ডার পিছু অতিরিক্ত ৫০ টাকা ধার্য হয়।

ব্রোকারের পাঁচমিশালী চার্জ

জ) বিবিধ চার্জ

#১ অ্যাকাউন্ট ওপেনিং ও মেন্টেনেন্স চার্জ

ডিম্যাট কাম ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট ওপেন ও মেনটেনেন্সের জন্য বিভিন্ন ব্রোকারের তরফে বিভিন্ন রকম চার্জ নেওয়া হয়। তবে সাধারণভাবে এই দুটো চার্জ ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার ভিতরেই থাকে। অনেক ব্রোকার বাৎসরিক মেনটেনেন্সের বদলে এককালীন মেন্টেনেন্স ফি দেওয়ার অপশন দেয়, তবে অংকটা সেক্ষেত্রে বেশ বড় হয়। কিছু কিছু ব্রোকার আবার অনেকসময় প্রমোশনাল অফার হিসেবে ওপেনিং চার্জটা নেয় না আর কিছু ব্রোকার পার্মানেন্টলি এই দুটো চার্জই নেয় না।

আরও পড়ুনঃ  শেয়ার বাজারের উপর ভোট বা নির্বাচনের প্রভাব কেমনতর হয়....?

#২ ডেরিভেটিভ ফিজিক্যাল ডেলিভারি চার্জ

ডেরিভেটিভের ফিজিক্যাল ডেলিভারি নিতে হলে অতিরিক্ত ব্রোকারেজ (০.২৫%) দিতে হয়। তবে নেটেড-অফ কন্ট্রাক্টের জন্য খানিকটা কম ব্রোকারেজ পড়ে (০.১%)।

#৩ অফ মার্কেট ট্রান্সফার চার্জ

অফ মার্কেট অর্ডারের জন্য ট্রান্সফার ভ্যালুর ০.০৩% বা সর্বোচ্চ ২৫ টাকা (ব্রোকার ভেদে আলাদা হতে পারে) চার্জ পড়ে।

#৪ ফিজিক্যাল কপি নেওয়ার চার্জ

ক্লায়েন্ট মাস্টার রিপোর্ট বা কন্ট্র্যাক্ট নোটের ফিজিক্যাল কপি নিতে হলে সাধারণত ২০ টাকা প্লাস কুরিয়ার চার্জ দিতে হয়।

#৫ পেমেন্ট গেটওয়ে চার্জ

ফান্ড যোগ করার জন্য ইউপিআই-এর বদলে অন্যান্য বিকল্প ব্যবহার করার জন্য সাধারণত ৭ থেকে ১০ টাকা চার্জ লাগে।

🗹 জনপ্রিয় এক ব্রোকারের শেয়ার কেনাবেচা সম্পর্কিত চার্জের তালিকা


চার্জের নাম
চার্জের হার
ডেলিভারিইন্ট্রাডেফিউচারঅপশন
ব্রোকারেজ০.০৩%, সর্বোচ্চ ২০ টাকা০.০৩%, সর্বোচ্চ ২০ টাকাফ্ল্যাট রেট ২০ টাকা
🗹 বাই 🗹 সেল🗹 বাই 🗹 সেল🗹 বাই 🗹 সেল
এক্সচেঞ্জ ট্রানজ্যাকশনএনএসইঃ ০.০০৩২৫%
বিএসইঃ ০.০০৩৭৫%
এনএসইঃ ০.০০৩২৫%
বিএসইঃ ০.০০৩৭৫%
এনএসইঃ ০.০০১৯%
বিএসইঃ ০
এনএসইঃ ০.০৫%
বিএসইঃ ০.০০৫%
🗹 বাই 🗹 সেল🗹 বাই 🗹 সেল🗹 বাই 🗹 সেল🗹 বাই 🗹 সেল
ইনভেস্টরস প্রোটেকশন ফান্ড ট্রাস্টএনএসইঃ ১০ টাকা/কোটিএনএসইঃ ১০ টাকা/কোটিএনএসইঃ ১০ টাকা/কোটিএনএসইঃ ৫০ টাকা/কোটি
🗹 বাই 🗹 সেল🗹 বাই 🗹 সেল🗹 বাই 🗹 সেল🗹 বাই 🗹 সেল
ডিপি১৩.৫ টাকা
🗹 সেল
এসটিটি০.১%০.০২৫%০.০১২৫%০.০৬২৫%
🗹 বাই 🗹 সেল🗹 সেল🗹 সেল🗹 সেল
স্ট্যাম্প ডিউটি০.০১৫% বা ১৫০০ টাকা/কোটি০.০০৩% বা ৩০০ টাকা/কোটি০.০০২% বা ২০০ টাকা/কোটি০.০০৩% বা ৩০০ টাকা/কোটি
🗹 বাই🗹 বাই🗹 বাই🗹 বাই
জিএসটি১৮%১৮%১৮%১৮%
সেবি১০ টাকা/কোটি১০ টাকা/কোটি১০ টাকা/কোটি১০ টাকা/কোটি
🗹 বাই 🗹 সেল🗹 বাই 🗹 সেল🗹 বাই 🗹 সেল🗹 বাই 🗹 সেল

🗹 শেয়ার কেনাবেচায় কত চার্জ পড়তে পারে তা সহজে চেক করার উপায়

আজকের দিনে বেশিরভাগ ব্রোকারই ব্রোকারেজ ক্যালকুলেটর প্রোভাইড করে। বিশেষ কোনো দামের বিশেষ কোনো সিকিউরিটির যেকোনো কোয়ান্টিটি কেনাবেচা করার ক্ষেত্রে সব মিলিয়ে মোট কত চার্জ পড়তে পারে সেটা এক ঝলকে ঐ ক্যালকুলেটরের ওয়েব পেজ থেকে খুব সহজেই চেক করেতে পারবেন। 

কয়েকটা জনপ্রিয় ব্রোকারের ব্রোকারেজ ক্যালকুলেটরের ঠিকানা নীচে দিলাম।

🗹 কিভাবে চার্জ কম রাখা যাবে?

নীচের পন্থাগুলো অনুসরণ করলে চার্জগুলো যতটা সম্ভব কম রাখা যাবে। 

  • ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে যখন তখন যত খুশি ট্রেড না নিয়ে খুব ভালো পজিশন পেলে তবেই ট্রেড নিতে হবে। অনেকগুলো ট্রেড নিয়ে অল্প লাভ করার চেষ্টা করার বদলে অল্প ট্রেড নিয়ে অনেকটা লাভ করার চেষ্টা করতে হবে।
  • ইনভেস্টিং-এর ক্ষেত্রে এর মূল মন্ত্র ভুলে গেলে চলবে না। ইনভেস্টিং মানে লং টার্মের খেলা। তাই বাজারে ছোটখাটো মোমেন্ট হওয়া মাত্র এক দুদিন ছাড়া ছাড়া কেনাবেচা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • ইনভেস্টিং এবং ট্রেডিং দুই ক্ষেত্রেই প্রত্যেক অর্ডারে যত বেশি কোয়ান্টিটির কেনাবেচা করা হবে চার্জের হার তুলনামূলকভাবে তত কম হবে।
  • পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ার বেচার প্রয়োজন পড়লে আলাদা আলাদা দিনে ভাগে ভাগে বেচার থেকে একদিনে বেচলে ডিপি চার্জটা কম পড়বে।
  • ট্রেডিং করার সময় পেনাল্টি এড়াতে চাইলে ডিম্যাট অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত ক্যাশ ব্যালেন্স রাখতে হবে।

শেষ কথা

আশা করি শেয়ারবাজারে ট্রেডিং বা ইনভেস্টিং করার ক্ষেত্রে কত কি চার্জ দিতে হয় সেব্যাপারে একটা পরিষ্কার ধারণা এতক্ষণে আপনার তৈরি হয়ে গেছে। এরপর এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে অর্ডার প্লেস করলেই চার্জ যতটা সম্ভব কম রাখতে পারবেন আর তাহলেই আপনার লভ্যাংশ কিছুটা হলেও বাড়াতে সক্ষম হবেন। আর সেটা হলেই আমার প্রচেষ্টা সার্থক হবে।

এই নিবন্ধের বিষয়বস্তু ভাল লাগলে বা কাজের মনে হলে সকলকে শেয়ার করে দেওয়ার অনুরোধ রইলো। আর এই বিষয়ে কোনো কিছু বলার থাকলে কমেন্ট সেকশনে কমেন্ট করতে পারেন।

আজকের মত এখানেই শেষ করলাম। ভালো থাকবেন। 🙂


দাবিত্যাগঃ এখানে দেওয়া সমস্ত চার্জগুলো বড় কিছু ব্রোকারের চার্জ অনুসরণ করে দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো ব্রোকারের চার্জ এখানে দেওয়া চার্জ থেকে কিছুটা আলাদা হলেও হতে পারে।

মন্তব্য করুন