সেরা ৩ ইন্ট্রাডে বা ডে ট্রেডিং স্ট্র্যাটেজি। নতুন ট্রেডারদের জন্য। পার্ট-১

4/5 - (3 জন রেটিং করেছেন)

শেয়ার বাজার থেকে টাকা কামানোর কত শত উপায়ের মধ্যে একটা ভীষণই জনপ্রিয় উপায় হচ্ছে ইন্ট্রাডে বা ডে ট্রেডিং। ইন্ট্রাডে ট্রেডিং মানে একদিনের ভিতরেই শেয়ার কেনা-বেচা কিংবা বেচা-কেনার নিস্পত্তি করা। এভাবে ট্রেড করার মধ্যে একটা রোমাঞ্চ আছে। কারণ, এক্ষেত্রে ঝটপট লাভ করার সুযোগ পাওয়া যায়। তবে ওই সুযোগটা আসে ক্ষতির ঝুঁকি গুলোকে এড়াতে পারলে তবেই।

প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ ট্রেডার ইন্ট্রাডে ট্রেডিং-এর জলে নামলেও ঝুঁকিগুলোকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে লাভের মুখ দেখতে সক্ষম হয় হাতেগোনা কিছু ট্রেডারই। ট্রেডিং-এর এই ফর্মে ৯৯% এরও বেশি অংশগ্রহণকারীদের বিফল হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে যথাযথ স্ট্র্যাটেজি অনুসরণ না করা।

এই নিবন্ধে সফল ইন্ট্রাডে ট্রেডারদের অনুসৃত সরল ও জনপ্রিয় কিছু ইন্ট্রাডে ট্রেডিং স্ট্র্যাটেজির কথাই শেয়ার করব।

মোমেন্টাম স্ট্র্যাটেজি

মোমেন্টাম কথাটার বাংলা মানে গতিবেগ। শেয়ারের দামের গতিবেগের বা বর্তমান ট্রেন্ডের শক্তির উপর ভিত্তি করে করা ট্রেডকে মোমেন্টাম ট্রেডিং বলে। শেয়ারের দাম কখনো সোজা পথে চলে না। দাম কখনো বাড়ে তো কখনো কমে। দাম যখন বাড়ে তখন কমার মত কোনো পরিস্থিতি তৈরি হওয়া পর্যন্ত সাধারণত বাড়তেই থাকে বাড়তেই থাকে আর একইভাবে দাম যখন কমে তখন আবার বাড়ার পরিস্থিতি তৈরি হওয়া পর্যন্ত দাম ক্রমাগত কমতেই থাকে। শেয়ারের দামের পরিবর্তনের এই বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগিয়েই মোমেন্টাম ট্রেডিং করা হয়।

যখন কোনো শেয়ারের দাম বাড়ে তখন সেটা আরো বেশি বেশি ট্রেডার ও ইনভেস্টরদের (বায়ার) আকৃষ্ট করে। ফলস্বরূপ সেটার চাহিদা তথা দাম আরও বাড়তে থাকে। এবং এটা ততক্ষন চলতে থাকে যতক্ষণ না সেটার দাম এমন জায়গায় পৌঁছায় যে বায়াররা ক্লান্ত হয়ে যায় এবং ক্রমশ বেশি বেশি সংখ্যায় সেলাররা আসতে শুরু করে। অতঃপর যখন সেলারদের আধিপত্য শুরু হয় তখন মোমেন্টামের দিক পরিবর্তন হয় এবং এতক্ষণ যেটা দাম বাড়ার দিকে ঘটে চলেছিল সেটা দাম কমার দিকে ঘটা শুরু হয়।

মোমেন্টাম ট্রেডারদের সবসময়ই চেষ্টা থাকে একটা দিকে ট্রেন্ড কতটা শক্তিশালী সেটা শনাক্ত করা এবং ট্রেন্ডের দিকে পজিশন নেওয়া। আর ট্রেন্ডের মোমেন্টাম বা শক্তি যখন কমতে থাকে তখন পজিশন ক্লোজ করে দেওয়া। মোমেন্টাম ট্রেডাররা একটা ট্রেন্ডের টপ বা বটম খোঁজার বদলে বাজারের সেন্টিমেন্ট অনুযায়ী ট্রেন্ডের মাঝের অংশ বা প্রধান বডি থেকে লাভ করার চেষ্টা করে।

মোমেন্টাম কেমন সেটা তিনটে বিষয় থেকে বোঝা যায়। যথাঃ
#১ ভলিউম- মোমেন্টাম বেশি হওয়া মানে একসাথে অনেক অংশগ্রহণকারীদের অ্যাকটিভ থাকা। তাই মোমেন্টাম বেশি মানে ভলিউম-ও বেশী হওয়া। আবার এর উল্টোটাও সত্যি, অর্থাৎ ভলিউম কমে যাওয়া মানে মোমেন্টাম-ও কমে যাওয়া। তাই এই স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী ট্রেড করতে হলে ভলিউমের দিকে বিশেষ ভাবে নজর রাখতে হয়।
#২ ভোলাটিলিটি- কম সময়ের মধ্যে মোমেন্টাম বাড়া-কমা মানে দামেরও দ্রুত পরিবর্তন হওয়া। আর সেটা মানেই ভোলাটিলিটি বাড়া। তাই, যখন মোমেন্টাম বাড়ে তখন স্বাভাবিকভাবেই ভোলাটিলিটিও বাড়ে।
#৩ টাইম ফ্রেম- মোমেন্টাম জিনিসটাই শর্ট টার্ম বা ছোটো টাইম ফ্রেমের সাথে সম্পর্কিত। যত কম সময়ে যত বেশী দাম বাড়ে বা কমে সেটা তত বেশী মোমেন্টামের পরিচায়ক হয়।

মোমেন্টাম স্ট্র্যাটেজিতে ব্যবহৃত ইন্ডিকেটর

মোমেন্টাম ট্রেডিং টেকনিক্যাল অ্যানালিসিস এর উপর নির্ভর করে। যেকোনো শেয়ার বা ইন্সট্রুমেন্টের দামের মোমেন্টাম নির্ধারণ করার জন্য যে সমস্ত সেটআপ বা ইন্ডিকেটর কাজে আসে তার মধ্যে কয়েকটা হল,

#১ মোমেন্টাম ইন্ডিকেটর

মোমেন্টাম নামের ইন্ডিকেটরই মোমেন্টাম ট্রেডিং-এর জন্য অনেকের কাছে সবথেকে প্রিয়। এই ইন্ডিকেটরটা সবথেকে সাম্প্রতিক ক্লোজিং প্রাইসের সঙ্গে আগের ক্লোজিং প্রাইসের তুলনা করে ট্রেন্ড  কতটা শক্তিশালী সে বিষয়ে ইঙ্গিত দেয়।

আরও পড়ুনঃ  সবথেকে দামী শেয়ার যাদের এমন 10 ভারতীয় কোম্পানি। #3 জামার ভিতরে...

এটা এক ধরনের অসিলেটর ইন্ডিকেটর এবং এক্ষেত্রে একটা লাইন সেন্টারের ০ থেকে দুই দিকে +১০০ বা -১০০ ভ্যালু পর্যন্ত এদিক ওদিক করে। ট্রেন্ড যত শক্তিশালী হয় এর ভ্যালু তত বেশি হয়। উদাহরণস্বরূপ এক্ষেত্রে কোনো এক মুহূর্তে ৫০ রিডিং অন্য কোনো মুহূর্তের ৩০ রিডিং এর থেকে বেশি শক্তিশালী আপট্রেন্ডের নির্দেশ করে, আবার একইভাবে -৪০ রিডিং -২০ রিডিং-এর থেকে বেশি শক্তিশালী ডাউনট্রেন্ড নির্দেশ করে।

#২ ট্রেন্ড লাইন

এটা আসলে কোনো ইন্ডিকেটর নয়। প্রাইস চার্টের উপর এক সরলরেখায় অবস্থিত কিছু প্রান্তিক বিন্দু যোগ করে নিজে এঁকে নেওয়া হেলানো লাইনই ট্রেন্ডলাইন। এর ঢাল থেকে ট্রেন্ড কোন দিকে সেটা বোঝা যায় আর দাম ট্রেন্ডলাইন ছুঁলে বা এর কাছে এলে এন্ট্রি নেওয়ার ভালো পজিশন পাওয়া যায়।

#৩ মুভিং অ্যাভারেজ

ট্রেন্ড লাইনের মতোই মুভিং অ্যাভারেজ লাইন থেকেও একইভাবে ট্রেন্ড এবং এন্ট্রি এক্সিট পজিশন বোঝা যায়। মোমেন্টাম যত বাড়ে দাম এর থেকে তত দূরে সরে যায় আর মোমেন্টাম যত কমে দাম তত এর কাছে আসে।

#৪ আরএসআই

আরএসআই ইন্ডিকেটরে ৭০-এর উপরে বা ৩০-এর নিচে রিডিং হলে ওভারবট বা ওভারসোল্ড হিসাবে ধরা হয়। আর ওভারবট জোন মানে সাধারণত আপট্রেন্ডের মোমেন্টাম কমে আসা বোঝায় আর ওভারসোল্ড জোন মানে ডাউনট্রেন্ডের মোমেন্টাম কমে আসা বোঝায়।

#৫ স্টকাস্টিক অসিলেটর

এটাও এক ধরনের মোমেন্টাম অসিলেটর। এটা সাম্প্রতিক ক্লোজিং প্রাইসের সঙ্গে পূর্ববর্তী ট্রেডিং রেঞ্জের তুলনা করে। এটা দুটো লাইন নিয়ে তৈরি হয় এবং ০ থেকে ১০০-র মধ্যে অসিলেট বা ওঠানামা করে। এক্ষেত্রে ৮০-র ওপরে বা ২০-র নিচে রিডিং হলে ওভারবট বা ওভারসোল্ড হিসাবে ধরা হয় আর দুই লাইন যখন ক্রস করে তখন ট্রেন্ডের দিকের পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসাবে ধরা হয়।

#৬ প্রাইস অ্যাকশন

প্লেন প্রাইস অ্যাকশন ব্যবহার করেও মোমেন্টামের ধারণা পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ নতুন নতুন হাই বা নতুন নতুন লো তৈরি হওয়া যেমন ট্রেন্ডের দিকের নিশানা দেয় তেমনই ক্যান্ডেলের দৈর্ঘ্য বা দুই হাই বা লো লেভেলের দূরত্ব মোমেন্টাম এর শক্তির নিশানা দেয়।

এই স্ট্র্যাটেজির খামতি

এভাবে ট্রেড করার জন্য বাজারের বা অন্যান্য ট্রেডারের সাম্প্রতিক অ্যাক্টিভিটির উপর নির্ভর করতে হয়। আর আমাদের নিজেদের প্রত্যাশা, মনোভাব বা গণনা অনুযায়ী সব সময় বাজার (বা অংশগ্রহণকারীরা) চলে না, চলতে পারেও না। আর যখনই এমনটা হয় তখনই ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।

তাছাড়া বাজারে বিভিন্ন রকম ঘটনা ক্রমাগত ঘটতে থাকে। এক ধরণের পরিস্থিতিতে বিশেষ সিগন্যাল অনুযায়ী পজিশন নেওয়ার পর বাজারের পরিস্থিতির কোনোরকম পরিবর্তন হলে অনেকসময় ফলাফল প্রত্যাশার বিপরীত হয়।

ব্রেকআউট স্ট্র্যাটেজি

শেয়ারের দাম ওঠানামা করতে করতে কখনো দেখা যায় কিছু বিশেষ লেভেলে দামটা কিছুক্ষনের জন্য থমকে যায়। ঐ বিশেষ লেভেলটা উপরের দিকে হলে সেটাকে পার করে দাম আরও উপরে উঠতে আর নীচের দিকে হলে একই ভাবে সেটাকে পার করে আরও নিচে নামতে ব্যর্থ হয়। এই লেভেল গুলো পার করার বদলে দাম বারে বারে এখানে বাউন্স খায়, অর্থাৎ এই জায়গায় দামের কনসলিডেশন হয়।

উপরের দিকের ঐ লেভেলটাকে বলে রেজিস্ট্যান্স আর নিচের থেকে লেভেলটাকে বলে সাপোর্ট। এই সাপোর্ট বা রেজিস্ট্যান্স অনুভূমিক বা মেঝের সাথে সমান্তরাল হতে পারে আবার হেলানোও (ট্রেন্ডলাইন) হতে পারে। শর্ট বা লং টার্মের সাপোর্ট আর রেজিস্ট্যান্সের মাঝে দাম এভাবে কিছুটা সময় উপর নিচ করার পর একটা সময় ওই লেভেলগুলো ভেদ করে বেশি গতি নিয়ে উপরে বা নিচের দিকে নেমে যায়। আর এই ঘটনাটাকেই ব্রেকআউট (বা ব্রেকডাউন) বলে।

এই ব্রেকআউটকে কাজে লাগিয়ে যে ট্রেড করা হয় তাকে ব্রেকআউট ট্রেডিং বলে। এই স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী প্রাইস যখনই রেজিস্ট্যান্স ভেদ করে উপরে ওঠে বা সাপোর্ট ভেদ করে নীচে নামে তখনই এন্ট্রি নেওয়া হয়।

breakout strategy
ব্রেকআউট ট্রেডিং

ব্রেকআউট ট্রেডের বৈশিষ্ট্য

  • ব্রেকআউট হওয়ার আগে ২ রেজিস্ট্যান্স ও সাপোর্ট লেভেলের মধ্যে স্লো কনসলিডেশন হওয়া মাস্ট। যত বেশি সময় ধরে এটা ঘটে ব্রেকআউটের তীব্রতা তত বেশি হয়।
  • উপর দিকে ব্রেকআউটের কনফরমেশনের জন্য রেজিস্ট্যান্স লেভেলের উপরে অন্তত একটা ক্যান্ডেলে প্রাইস ক্লোজ হওয়া আবশ্যক আর নীচের দিকে ব্রেকআউট (অনেক সময় এটাকে ব্রেকডাউন-ও বলা হয়) -এর জন্য সাপোর্ট লেভেলের নিচে প্রাইস ক্লোজ হওয়া আবশ্যক।
  • ব্রেকআউট হওয়ার সময় ভলিউম-ও বাড়ে। তাই উল্টো দিক থেকে দেখলে ব্রেকআউট হওয়ার সময় একইসাথে ভলিউম লক্ষণীয়ভাবে বাড়লে সেটাকে এর শক্তিশালী সিগন্যাল বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে।
  • উপর দিকে ব্রেকআউট হওয়ার পর রেজিস্ট্যান্স সাপোর্ট হিসেবে আর নীচের দিকে ব্রেকআউট হওয়ার পর সাপোর্ট রেজিস্ট্যান্স হিসেবে কাজ করে।
  • এন্ট্রি নেওয়ার জন্য ব্রেকআউট ক্যান্ডেলের পরের ক্যান্ডেল ব্যবহার করা যেতে পারে। আরো একটু সেফ হতে চাইলে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে প্রাইস যখন প্রথমবার রিট্রেস করে তখন নতুন সাপোর্ট বা রেজিস্ট্যান্স লেভেল থেকে এন্ট্রি নেওয়া যেতে পারে।
  • স্টপলস লেভেল হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে উপর দিকে ব্রেকআউটের ক্ষেত্রে পুরানো সাপোর্ট লেভেলের কিছুটা নিচে এবং নিচের দিকে ব্রেকআউটের ক্ষেত্রে পুরানো রেজিস্ট্যান্স লেভেলের কিছুটা উপরে। সাপোর্ট ও রেজিস্ট্যান্স লেভেলের দূরত্ব বেশি হলে ব্রেকআউট বা তার আগের ক্যান্ডেলের কিছুটা নীচেও স্টপলস লেভেল ধরা যেতে পারে।
  • এটা মোমেন্টাম ট্রেডিং-এরই একটা ধরণ। ব্রেকআউট যখন হয় বা এন্ট্রি যখন নেওয়া হয় তখন মোমেন্টাম হাই থাকে। এন্ট্রির পর দাম প্রত্যাশিত দিকে গেলে কিছুটা সময় পার হওয়ার পর যখন আর লক্ষ্যের দিকে মোমেন্টাম থাকেনা তখনই ট্রেড ক্লোজ করার আদর্শ সময় হিসাবে ধরা হয়।
আরও পড়ুনঃ  শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের বা শেয়ার কেনার 15 টা ঝুঁকি

ব্রেকআউট প্যাটার্ন

ব্রেক আউট ট্রেডিং করার জন্য সেরা উপায় হচ্ছে সাপোর্ট বা রেজিস্ট্যান্স লেভেল নির্ধারণ করে যথাক্রমে তার নীচে বা উপরে প্রাইস কনসলিডেশন হচ্ছে কিনা স্পট করা এবং তারপর ব্রেকআউট হওয়ার জন্য অপেক্ষা করা। এছাড়া বিভিন্ন রকম চার্ট প্যাটার্ন যেমন ট্রায়াঙ্গেল, ওয়েজ, কাপ অ্যান্ড হ্যান্ডেল, চ্যানেল, ফ্ল্যাগ ইত্যাদি তৈরি হতে দেখা গেলেও তারপর ব্রেকআউট বা ব্রেকডাউন হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

অনেকসময় শেয়ার সম্পর্কিত বিশেষ কোনো খবরের প্রকাশ টেকনিক্যাল ব্রেকআউটের সাথে একসাথে ঘটলে এই স্ট্র্যাটেজি আরও বেশি কার্যকরী হয়।

খামতি

  • এক্ষেত্রে খুব তাড়াতাড়ি ট্রেডের সিদ্ধান্ত নিতে হয়, নয়তো অনেক সময় সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
  • ইদানিংকালে বিভিন্ন ধরণের ট্রেডার বিভিন্নভাবে ট্রেডে অংশ নেওয়ায় সবকিছু নিয়ম মেনে করার পরেও অনেক সময়েই ফলস ব্রেকআউট হতে দেখা যায় যা লসের কারণ হয়।
  • অতিরিক্ত কনফারমেশন সিগন্যাল ফলস ব্রেকআউটের সম্ভাবনা কমালেও অনেক সময় দামের বড় মুভমেন্ট ধরার সম্ভাবনাটা কমিয়ে দেয়।

মুভিং অ্যাভারেজ ক্রসওভার স্ট্র্যাটেজি

টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস-এর ক্ষেত্রে মুভিং অ্যাভারেজ খুবই পরিচিত এবং বহুল ব্যবহৃত একটা ইন্ডিকেটর। এটা আসলে আঁকাবাঁকা একটা লাইন যেটা ক্যান্ডেলস্টিক চার্টের উপর ওভারলে হিসাবে প্লট করে ব্যবহার করা হয় এবং এর থেকে বাজারের বা বিশেষ কোনো শেয়ারের ওভারঅল ট্রেন্ডের বিষয়ে একটা ধারণা পাওয়া যায়।

এই ইন্ডিকেটর যে টাইম ফ্রেমের চার্টে যোগ করা হয় সেই চার্টের আগের কয়েকটা ক্যান্ডেলের (বা টাইমফ্রেমের) ক্লোজিং প্রাইসের (সাধারণত) গড় গুলোকে যোগ করে তৈরি হয়। কতগুলো ক্যান্ডেল হিসেবের মধ্যে ধরা হচ্ছে সেই অনুযায়ী এগুলো বিভিন্ন লেন্থের হয়।

এর লেন্থ যখন বড় হয় অর্থাৎ অনেকগুলো ক্যান্ডেলের ক্লোজিং প্রাইস থেকে পাওয়া মুভিং অ্যাভারেজ লাইন লম্বা সময়ের ট্রেন্ডের বিষয়ে ধারণা দেয় আর কম লেন্থের মুভিং অ্যাভারেজ কম সময়ের ট্রেন্ডের বিষয়ে ধারণা দেয়।

একসাথে দুটো অর্থাৎ একটা কম লেন্থের আর একটা বেশি লেন্থের মুভিং অ্যাভারেজ লাইন ব্যবহার করা হলে যখন কম লেন্থের লাইনটা বেশী লেন্থের লাইনকে একদিক থেকে ক্রস করে অন্যদিকে চলে যায় তখন বড় লেন্থের লাইন অনুযায়ী যে ট্রেন্ড চলছিল সেই ট্রেন্ডের বিপরীত ট্রেন্ডের সূচনার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

আরও পড়ুনঃ  শেয়ার বাজারে ডেরিভেটিভ বা ফিউচার ও অপশন কী? নতুনদের জন্য

দুটো আলাদা মুভিং অ্যাভারেজ লাইনের ক্রস করার এই ঘটনাটাকে মুভিং অ্যাভারেজ ক্রসওভার বলে। এমনিতে ট্রেড করার বেসিক সূত্র হচ্ছে ঠিকঠাক সময়ে এন্ট্রি আর এক্সিট। আর এই ক্রসওভার অনুযায়ী একটা ট্রেডে ঢোকার বা বেরোবার ভালো মুহূর্ত নির্ধারণ করা যায়।

নীচের ছবিতে বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবেঃ

মুভিং অ্যাভারেজ ক্রসওভার
মুভিং অ্যাভারেজ

উপরের ছবিতে কমলা লাইনটা কম লেন্থের আর নীলটা বেশি লেন্থের মুভিং অ্যাভারেজ। এখানে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে কিভাবে ক্রসওভারগুলো ট্রেন্ড বদলানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে।

মুভিং অ্যাভারেজ ইন্ডিকেটরের পাশাপাশি আরএসআই, ভলিউম ইত্যাদি ইন্ডিকেটর থেকে পাওয়া সিগন্যাল এবং ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন, চার্ট প্যাটার্ন ও সাপোর্ট-রেজিস্ট্যান্স জোন লক্ষ্য করে ট্রেড নিলে সফলতার হার আরও ভালো হয়।

এই স্ট্র্যাটেজির খামতি

  • মুভিং অ্যাভারেজ ল্যাগিং ইন্ডিকেটর হওয়ায় এক্ষেত্রে ট্রেন্ড শুরু হওয়ার সাথে সাথেই সিগন্যাল পাওয়া যায় না। সিগন্যাল যখন পাওয়া যায় ততক্ষনে ট্রেন্ড ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। আর এর ফলে কখনও কখনও সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার বা ফলস সিগন্যাল পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
  • মুভিং অ্যাভারেজ খুবই স্লো ইন্ডিকেটর। ফলে বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে হঠাৎ কোনো পরিবর্তন হলে তাড়াতাড়ি রেসপন্স করা যায় না।
  • রেঞ্জ বাউন্ড বা খুব ভোলাটাইল মার্কেটে এই স্ট্র্যাটেজির উপর নির্ভর করে ট্রেড করা যায় না। 

ইন্ট্রাডে ট্রেডিং করার কিছু সাধারণ নিয়মাবলী

  • নিজের ট্রেডিং স্ট্র্যাটেজি প্ল্যান করুন এবং স্ট্রিক্টলি সেটাকে ফলো করে চলুন।
  • ট্রেডিংয়ের জন্য এমন স্টক বা ইন্সট্রুমেন্ট বেছে নিন যেটা আপনার স্ট্র্যাটেজির সাথে খাপ খায়।
  • যে ইন্সট্রুমেন্টই বাছুন না কেন সেটার লিকুইডিটি যেন বেশি থাকে।
  • স্টপলস ছাড়া ট্রেড করা থেকে বিরত থাকুন।
  • ট্রেড নেওয়ার জন্য এমন সেটআপ বাছুন যেখানে স্টপলসের থেকে বেশী টার্গেটের সুযোগ পাওয়া যায়। রিস্ক রিওয়ার্ড রেশিও, অর্থাৎ স্টপলস : টার্গেট কমপক্ষে ১ : ২ হওয়া বাঞ্ছনীয়।
  • ট্রেডিং-এ ততটাই ফান্ড ব্যবহার করুন বা ঝুঁকি নিন যতটা আপনি নিতে পারবেন। এতোটাও ঝুঁকি বা পজিশন নেবেন না যাতে একটা লস আপনার বর্তমান আর্থিক অবস্থা ঘেঁটে দিতে পারে।
  • আপনার লাভ ও লস কত হচ্ছে সেটা হিসেবের মধ্যে রাখুন।

শেষ কথা

ইন্ট্রাডে ট্রেডিং খুবই দ্রুতগতির একটা অ্যাক্টিভিটি। আবেগকে দূরে সরিয়ে রেখে সঠিক স্ট্রাটেজি অনুযায়ী প্ল্যান মাফিক ট্রেড করতে পারলেই দুনিয়া নিজের মুঠোতে! যদিও এটা বলা যতটা সহজ করা ততটাই কঠিন। তবে মনে অদম্য ইচ্ছা ও চেষ্টা থাকলে আর সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে থাকলে সফলতা আসতে বাধ্য!

আজ তাহলে এখানেই শেষ করলাম। পার্ট-২ পরে কখনো পাবলিশ করব। সেটা পড়তে আগ্রহী হলে বেল বাটন থেকে নোটিফিকেশন সাবস্ক্রিপশন অন করে রাখতে পারেন। এই নিবন্ধটা পড়ে ভালো লাগলে বা কাজের মনে হলে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো।

ভালো থাকবেন।


পরিপূরক পাঠঃ
>> ক্যান্ডেলস্টিক চার্ট কী?
>> সেরা 20 ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন। 
>> সবথেকে সেরা 10+ চার্ট প্যাটার্ন। 
>> শেয়ার ট্রেডিং-এর সেরা 7 ইন্ডিকেটর। 
>> শেয়ার বাজারের বহুল ব্যবহৃত 40+ টি গুরুত্বপূর্ণ টার্ম বা পরিভাষা ও তাদের অর্থ

মন্তব্য করুন