মাইনের টাকায় এই 7 টা কাজ আবশ্যিক। #4 সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ

5/5 - (1 জন রেটিং করেছেন)

মাসের শেষে পকেট খালি হওয়ার পর নতুন মাসের প্রথমে যখন মাইনেটা ঢোকে তখন, ‘আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে…।’ কিন্তু মাইনে পাওয়ার পর পকেট মোটা থাকার অনাবিল আনন্দে অনেক সময়েই টাকা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেব্যাপারে আমরা বিস্মৃত হই। আর টাকার সদ্ব্যবহার না করলে তার খারাপ প্রভাব নিজের এবং পরিবারের সকলের উপরেই পড়ে।

মাইনের টাকার আদর্শ ব্যবহার কেমন হওয়া উচিৎ বা মাইনের টাকায় কী কী করলে নিজের ও কাছের মানুষদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ দুইই আনন্দঘন, শান্তিপূর্ণ, সুন্দর, সুরক্ষিত, সম্ভাবনাময় ও স্মৃতিমেদুর হয়ে ওঠে সেটাই আজ এই নিবন্ধের আলোচনার বিষয়…

#1 দেনা থাকলে যতটা সম্ভব ও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শোধ করে দেওয়া বাঞ্ছনীয়

ধার করা কখনোই কারো জন্যই ভালো নয়। কিন্তু জীবনে কখনো কখনো এমন পরিস্থিতি আসে যে ধার করতে বা লোন নিতে বাধ্য হতে হয়। কিন্তু লোন নিলে লম্বা সময়ের জন্য সেটাকে জিইয়ে না রেখে উচিত হচ্ছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অন্য সবকিছু করার আগে লোনের টাকা শোধ করে দেওয়া।

এখন নানা রকম ইএমআই স্কিম এসে ছোট ছোট ইএমআই তে লম্বা সময় ধরে লোন শোধ করার সুযোগ পাওয়া যায় বলে মনে হয় যেন আমাদের বেশি খরচ হচ্ছে না, কিন্তু যে কোনো লোনের ক্ষেত্রে আমাদের যে হারে সুদ দিতে হয় সেটা সাধারণ ফিক্সড ডিপোজিটের ইন্টারেস্টের থেকে বেশি তো হয়ই, এমনকি অনেক সময় শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করলেও লোনের সুদের থেকে বেশি রিটার্ন পাওয়া খুবই কঠিন হয়ে যায়।

আবার যদি ক্রেডিট কার্ডের আউটস্ট্যান্ডিং ব্যালেন্স ক্যারি ফরওয়ার্ড করা হয় সে ক্ষেত্রে বাৎসরিক সুদ 40% বা তার বেশিও দিতে হতে পারে।

তাই ইনকামের টাকা হাতে আসার পর প্রয়োজনীয় ছাড়া অন্যান্য খরচ, জমানো, বিনিয়োগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বরাদ্দ করার আগে সবার প্রথমে উচিত হচ্ছে সমস্ত রকম দেনার টাকা মিটিয়ে দেওয়া।

আরও পড়ুনঃ  শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ আর জীবনবীমা একইসাথে। 2 ইন 1 ইউলিপ

#2 এমার্জেন্সি ফান্ড তৈরি

ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। তাই ভবিষ্যতের প্রতিকুল পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য ভাবনা চিন্তাটা আজ থেকেই করা উচিত।

জীবন যখন আপনার দিকে বুলডোজার ছুটিয়ে দেবে তখন আপনার এমার্জেন্সি ফান্ডই আপনাকে বাঁচাবে। হঠাৎ ফোনটা, কিংবা বাড়ির অন্য কোনো প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বিকল হলে সেটা বদলানো, চুরি ডাকাতি বা প্রাকৃতিক ক্ষতির মোকাবিলা করা, অ্যাক্সিডেন্ট বা অন্য কোনো অনভিপ্রেত অবস্থায় মেডিকেল খরচ সামলানো ইত্যাদি বিবিধ ক্ষেত্রে হঠাৎ যখন টাকার দরকার পড়বে তখন এই এমার্জেন্সি ফান্ডই আপনার পাশে দাঁড়াবে!

এমার্জেন্সি ফান্ড মানে কমপক্ষে আপনার 6 থেকে 12 মাসের মোট খরচের সমপরিমাণ টাকা কোনো লিকুইড অ্যাসেট (যেমন ফিক্সড ডিপোজিট) হিসেবে সাইডে রাখা। লিকুইড অ্যাসেট মানে হচ্ছে যেখান থেকে খুব সহজেই টাকাটা উইথড্র করা যায়।

#3 হেলথ ও টার্ম ইন্সুরেন্স কেনা

এমারজেন্সি ফান্ডের পাশাপাশি কমপক্ষে দুটো ইন্সুরেন্স করা বা কেনা আজকের দিনে সবার জন্য খুবই প্রয়োজন। যথাঃ

ক) হেলথ ইন্সুরেন্স – একবার যদি কোনো কারণে নিজেকে বা পরিবারের অন্য কাউকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় তাহলে সেক্ষেত্রে আপনার এমার্জেন্সি ফান্ড কিন্তু খুব বেশি দিন সাপোর্ট দিতে পারবে না। কারণ এখন সমস্ত হসপিটালেই খরচ আকাশছোঁয়া। তাই নিজের এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্য ভালো কোন রেপুটেড ইন্সুরেন্স প্রোভাইডারের কাছে একটা হেলথ ইন্সুরেন্স করা খুবই দরকার। 

খ) টার্ম ইন্সুরেন্স – হেলথ ইন্সুরেন্সের পাশাপাশি পরিবারের যে সমস্ত সদস্য আপনার ওপর নির্ভরশীল তাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে আপনার নিজের জন্য একটা টার্ম ইন্সুরেন্স করাও অত্যাবশ্যক। কারণ কার জীবনে কখন কি হয় সেটা কেউ জানে না। আর আপনার জীবনে কিছু হলে তার সাথে সাথে আপনার ওপর নির্ভরশীল আপনার কাছের মানুষগুলো যাতে অথৈ জলে না পড়ে তার জন্য একটা টার্ম ইন্সুরেন্সও কিনে রাখা উচিৎ।

এই দুই ইন্সুরেন্সের ক্ষেত্রেই মনে হতে পারে প্রিমিয়ামের টাকাগুলো বেকার নষ্ট হচ্ছে এবং এর থেকে ভালো প্রিমিয়ামের টাকাটা যে কোনো খাতে বিনিয়োগ করা। ইন্সুরেন্সের প্রিমিয়ামের টাকা এর বদলে বিনিয়োগ করলে সেটা কিন্তু ইন্সুরেন্সের এত মত কম খরচে বড় টাকার আর্থিক সুরক্ষা এবং মানসিক শান্তি কোনোটাই দিতে পারবে না। 

আরও পড়ুনঃ  সবথেকে নিরাপদ উপায়ে কিভাবে টাকা ডবল বা দ্বিগুণ হবে? #6 আমার পছন্দ

#4 বিনিয়োগ করা শুরু করুন

খরচের পর যে টাকা বেঁচে থাকে কিংবা প্রতি মাসে মাইনে পাওয়ার পরই প্রথমেই কিছু টাকা আলাদা করে সেই টাকায় বিনিয়োগ করা শুরু করুন। চাকরি জীবন শুরু হওয়ার পর যত তাড়াতাড়ি বিনিয়োগ করা শুরু করবেন ততই কমপাউন্ডডিং এর ম্যাজিকে লম্বা সময়ের বিচারে বিশাল সম্পদ তৈরি করতে পারবেন।

কম ও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন বিনিয়োগের রাস্তা আপনার জন্য খোলা আছে। আপনার প্রয়োজন ও মানসিকতা অনুযায়ী যেকোনো এক বা একাধিক বিনিয়োগের বিকল্প বেছে নিন ও বিনিয়োগ শুরু করুন।

বিনিয়োগের ব্যাপারে আরো জানতে চাইলে বিনিয়োগের সেরা 10 বিকল্পের কথা ← এখান থেকে জানতে পারবেন আর বিনিয়োগ সম্পর্কিত বিবিধ আর্টিকেল ← এই জায়গায় পাবেন।

#5 বেড়াতে যান বা বেড়ানোর জন্য টাকা জমান 

আমাদের জীবন এমনিতে খুবই একঘেয়ে। প্রতিদিনের রুটিনমতো বাড়ির কাজ বা চাকরি সম্পর্কিত কাজ এবং কাজের পরে যা কিছু কর্মকাণ্ড থাকে সব মিলিয়ে ওই থোড় বডি খাড়া – খাড়া বড়ি থোড়। এই একঘেয়ে জীবন থেকে সাময়িক মুক্তির আস্বাদ পেতে মাঝে মাঝে বেড়িয়ে আসা খুবই প্রয়োজন। বেড়াতে যাওয়া মানে একঘেয়েমি কাটানোর পাশাপাশি পৃথিবীটাকে এক্সপ্লোর করা যায়, নতুন কালচার সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায় এবং বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের মানুষদের জীবনধারণ সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়। তাই মাঝে মাঝে বেড়াতে যাওয়া লাক্সারি তো নয়ই বরং আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয়ই বটে।

তাই ছোট বড় বিভিন্ন ট্যুর প্ল্যান করা এবং সেই অনুযায়ী নিয়মিত মাইনের কিছু টাকা বরাদ্দ করা উচিৎ। তবে একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না লোন বা ইএমআই, অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচ, এমার্জেন্সি ফান্ড ও বিনিয়োগের খাতে বরাদ্দ করার পর তবেই কিন্তু এই খাতে বরাদ্দ করা বাঞ্ছনীয়। 

#6 কাউকে বা কোনো কারণে আর্থিক সাহায্য করুন

আপনি সৌভাগ্যবান কারণ আপনি নিজে ইনকাম করে নিজের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম। কিন্তু আমাদের সমাজে সকলে এত সৌভাগ্যবান হয় না। অনেককেই দুবেলা দুমুঠো খেতে পাওয়ার জন্য অন্যের সাহায্যের উপর নির্ভর করে থাকতে হয়। তাই আপনার সামর্থ্যমতো যে কোনো কাউকে বা কোনো একটা কারণে কখনো সখনো আপনার মাইনের সামান্য কিছুটা অংশ দান করুন। বিশ্বাস করুন, কাজটা অতটাও কঠিন নয়।

আরও পড়ুনঃ  অনলাইনে কেনাকাটার জন্য সেরা 5 ক্রেডিট কার্ড - যেগুলো ব্যবহারে সবথেকে বেশি ছাড় ও ক্যাশব্যাক পাওয়া যায়

তাছাড়া দান বা সাহায্য করার সাথে সাথে একটা অদ্ভুত মানসিক শান্তি জড়িয়ে আছে যেটা আপনি দান করা শুরু করলে তবে বুঝতে পারবেন।

“যে সবচেয়ে বেশি দেয় সেই সবচেয়ে বেশি পেয়ে থাকে”

-শ্রী শ্রী ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব

#7 মাঝে মাঝে নিজের জন্য খরচ করতে ভুলবেন না যেন!

আপনি আপনার মাইনের টাকা দিয়ে সংসারের সমস্ত রকম প্রয়োজনীয় খরচ সামলাচ্ছেন, সবার জন্য খরচ করছেন, সঞ্চয় করছেন, বিনিয়োগ করছেন। কিন্তু এই সমস্ত করতে গিয়ে নিজের কথাটা ভুলে যাবেন না যেন!

সব রকম ডায়েট প্ল্যান এর ক্ষেত্রেই মাঝে মাঝে এক একটা চিট করার দিন সুপারিশ করা হয়। কারণ এইটুকু মুক্তির আস্বাদ না পেলে পুরো ডায়েট-টাই ভেঙে যেতে পারে। একইভাবে আপনি সব রকম প্রয়োজনীয় খরচ সামলাচ্ছেন মানে এই নয় যে নিজের বর্তমানের সমস্ত আনন্দ, চাহিদা এবং শখগুলোকে জলাঞ্জলি দিয়ে দিতে হবে।

প্রয়োজনীয় খরচগুলো করুন কিন্তু তার সাথে সাথে মাঝে মাঝে সিনেমা যান, রেস্টুরেন্টে খান কিংবা নিজের ছোট বড় শখগুলো পূরণ করার দিকেও নজর দিন।

শেষ করার আগে…

শেষকালে একটাই কথা বলব, মাইনের টাকা কোন খাতে কতখানি বরাদ্দ করবেন সে বিষয়ে আগে থেকেই যদি একটু প্ল্যান করে নেন তাহলে আপনার জীবনটা অনেক সহজ হয়ে যাবে।

আজ তাহলে এ পর্যন্তই। ধৈর্য ধরে এতোখানি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

মন্তব্য করুন