সক্রিয় শেয়ার ট্রেডিং-এর 4 ধরণ। নতুন ট্রেডারদের এগুলো জানা চাই-ই-চাই।

5/5 - (3 জন রেটিং করেছেন)

ট্রেডিং-এর আক্ষরিক বাংলা অর্থ দুই পার্টির মধ্যে কোনো পণ্য বা সেবার লেনদেন। আর শেয়ার ট্রেডিং-এ ওই পণ্যটা হল বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার। ‘শেয়ার ট্রেডিং’ – এটা শুনতে দুই শব্দ সম্বলিত ছোট্ট সরল একটা কথা হলেও আসলে কিন্তু বিষয়টা মোটেও এতটা সহজ সরল নয়।

উপযুক্ত সময়ে বা পরিস্থিতিতে কম দামে শেয়ার কিনে এবং তা বেশি দামে বেচে দিয়ে (শর্ট করার ক্ষেত্রে আগে ধার নিয়ে বেশী দামে বেচে পরে কম দামে কেনা) লাভ কুক্ষিগত করাই সক্রিয় ট্রেডিং-এর লক্ষ্য থাকে। কিন্তু সফলভাবে এটা করার জন্য প্রয়োজন পড়ে একটা পোক্ত পরিকল্পনার। আলাদা আলাদা ট্রেডার তাদের পছন্দ, ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা, সক্রিয়তা, ক্যাপিটালের পরিমাণ, হোল্ডিং পিরিয়ড ইত্যাদি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরণের পরিকল্পনা করে থাকে।

সক্রিয়তা ও হোল্ডিং পিরিয়ডের বিচারে এই ট্রেডিং পরিকল্পনাগুলো মোটামুটি ৪ ধরণের হয় এবং এই নিবন্ধে সেগুলোর কথাই জানতে পারবেন।

ইন্ট্রা-ডে ট্রেডিং

ডে মানে দিন। এক দিনের ভিতরেই শেয়ার কেনা-বেচা (লং) বা বেচা-কেনা (শর্ট) করার নাম ইন্ট্রা-ডে বা সংক্ষেপে ডে ট্রেডিং। ছুটির দিন বাদে শেয়ার বাজার খোলে সকাল ৯ টা ১৫ মিনিটে (ওপেনিং টাইম) এবং বন্ধ হয় বিকাল ৩ টে ৩০ মিনিটে (ক্লোজিং টাইম)। এই সময়ের মধ্যে কেনাবেচার কাজ সম্পূর্ণ করা হলে তাকে ডে-ট্রেডিং বলা হয়।

এধরণের ট্রেডের নাম ডে-ট্রেড হলেও এগুলো যে সারাদিন ব্যাপীই স্থায়ী হতে হবে তেমন কোনো ব্যাপার কিন্তু নেই। এগুলো কয়েক ঘণ্টা, কয়েক মিনিট, এমনকি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেও নিস্পন্ন হতে পারে।

নিয়ম

এ ধরনের ট্রেড করতে হলে পজিশন নেওয়ার সময় বা সিকিউরিটি কেনার অর্ডার প্লেস করার সময় ইন্ট্রাডে বা এমআইএস (মার্জিন ইন্ট্রাডে স্কয়ারঅফ) অপশন বেছে নিতে হয়।

আরও পড়ুনঃ  শেয়ার ব্যবসা বা ট্রেডিং শুরু করতে ন্যূনতম কত টাকার দরকার?

মার্কেট ক্লোজ হওয়ার আগে এধরণের ট্রেডের পজিশন স্কোয়ার অফ না করে দিলে ক্লোজিং টাইমের পাঁচ থেকে কুড়ি মিনিট আগে (ব্রোকার এবং সিকিউরিটি ভেদে এই সময়টা আলাদা হয়) অটো স্কয়ার অফ হয়ে যায়। এবং এর জন্য এক্সট্রা চার্জও (সাধারণত ৫০ + ট্যাক্স) নেওয়া হয়।

>> এমআইএস মোডে নেওয়া ট্রেড চাইলে ডেলিভারিতে কনভার্ট-ও করে নেওয়া যায়।

মার্জিন

ইন্ট্রা ডে অর্ডারে মার্জিনের সুবিধা পাওয়া যায়। অর্থাৎ ক্যাপিটালের থেকে কয়েক গুন (সাধারণত ৫X) বেশী টাকার সিকিউরিটিতে পজিশন নেওয়া যায়। ফলে তুলনামূলক অনেক কম টাকায় অনেক বেশি ভ্যালুর সিকিউরিটিতে ট্রেড করা যায়।

ঝুঁকি

যেকোনো ধরণের ট্রেড-ই এমনিতে ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ মার্জিন ব্যবহার করার ফলে বেশী পরিমাণ লাভের সম্ভাবনার পাশাপাশি বড় লসের সম্ভাবনাও থাকে আর কম সময়ের মধ্যে ভোলাটিলিটির কারণে সিকিউরিটির দাম প্রত্যাশার বিপরীতে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।

তবে অন্যদিকে এধরণের ট্রেডগুলোকে তুলনায় কম ঝুঁকিপূর্ণও বলা যায়। কারণ, যেহেতু একদিনের মধ্যেই এই ট্রেডগুলোর নিস্পত্তি হয়ে যায়, তাই ক্লোজিং টাইমের পর কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে পরদিন গ্যাপ আপ – গ্যাপ ডাউন (ওভারনাইট রিস্ক) হলেও কিংবা আরও লম্বা সময়ে শেয়ারের দাম প্রত্যাশার বিপরীতে গেলেও, তার কোনো প্রভাব ক্যাপিটালে পড়ে না। তাছাড়া স্টপলস ব্যবহার করে লস এর পরিমাণ-টাকেও কন্ট্রোলে রাখা যায়।

সক্রিয়তা

এটা ভীষণই সক্রিয় একধরণের ট্রেডিং। নতুন নতুন ট্রেড নেওয়ার জন্য বা ভালো এন্ট্রি পেতে বিভিন্ন চার্ট ঘেঁটে এধরণের ট্রেডিং-এ অনবরত চার্ট রিডিং করে যেতে হয় এবং এন্ট্রি নেওয়ার পরও দামের উপর নিরবিচ্ছিন্ন নজর রাখতে হয়। কারণ কয়েক মিনিট এমনকি কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে এক্ষেত্রে একটা ভালো ট্রেডও হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে কিংবা একটা লাভের ট্রেড লসে বদলে যেতে পারে!

চাপ

বাজার সব সময়েই ভীষণ খেয়ালী। তাই যত ভালো করেই ট্রেড শেখা হোক বা করার চেষ্টা করা হোক না কেন, ট্রেড কখনো পক্ষে তো কখনো বিপক্ষে যেতেই থাকে, আর তার ফলে লাভ আর লসের চক্র চলতেই থাকে। যার জন্য এটা মনের উপর বেশ প্রভাব ফেলে। এছাড়া অনবরত চার্ট দেখে বিবিধ সিদ্ধান্ত নিতে হয়ে বলে কাজটা খুবই স্ট্রেসফুল হয়।

আরও পড়ুনঃ  মিউচুয়াল ফান্ডে কী কী উপায়ে বিনিয়োগ করা যায়? না জানলে ক্ষতি আপনার!

স্ক্যাল্পিং

এটাও একধরনের ইন্ট্রাডে ট্রেডিং, তবে এর সবথেকে ফাস্ট ভার্সন। এটা কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এতে শেয়ারের দামের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পরিবর্তনকে কাজে লাগিয়ে লং বা শর্ট পজিশন নিয়ে ছোটো ছোটো লাভের চেষ্টা করা হয়।

এভাবে ট্রেড করতে হলে খুব তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিতে হয় এবং সেজন্য লেজার ফোকাস ও ডিসিপ্লিনের দরকার পড়ে। কম সময়ের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ট্রেড নেওয়া হয় বলে এক্ষেত্রে ট্রানজ্যাকশন খরচটাও অনেক বেশি হয়।

এক্ষেত্রে প্রচুর ট্রেডিং এর সুযোগ পাওয়া যায় তবে ছোট ছোট মুভমেন্টে পজিশন নেওয়া হয় বলে প্রতি ট্রেডে লাভের অংকটাও ছোট হয়। আবার ছোট ছোট মুভমেন্ট কে টার্গেট করা হয় বলে বাজারে হঠাৎ কোনো অপ্রত্যাশিত বড় রিঅ্যাকশন এই ধরনের ট্রেডে সাধারণত খুব একটা প্রভাব ফেলে না।

সুইং ট্রেডিং

স্ক্যাল্পিং বা ডে-ট্রেডিং এর থেকে বেশি সময়, মানে কয়েকদিন থেকে কয়েক সপ্তাহের জন্য হোল্ড করে যে ধরনের ট্রেড করা হয় সেটাকে সুইং ট্রেডিং বলে।

এক্ষেত্রে পজিশন একদিনের বেশি হোল্ড করে রাখা হয় বলে ওভারনাইট রিস্ক থাকে। কোনো খবরের প্রতিক্রিয়ায় দামের ঝোড়ো কোনো পরিবর্তন এ ধরনের ট্রেড-এ বড় প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এভাবে ট্রেড করতে হলে বাজারের ট্রেন্ড ও খবরা খবর সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল থাকতে হয়।

ডে ট্রেড-এর তুলনায় এক্ষেত্রে অনেক কম ট্রেড নেওয়া হয় বলে ট্রানজ্যাকশন খরচ অনেক কম হয়। আর তুলনায় এটা অনেক স্লো গতিতে চলে বলে অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, আবেগ তাড়িত সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকা যায় এবং চাপটাও অনেক কম থাকে।

পজিশন ট্রেডিং 

সুইং ট্রেডিং-এর থেকেও বেশি সময় ধরে হোল্ড করে যে ট্রেড করা হয় তাকে পজিশন ট্রেডিং বলে। এর নাম দেখেই বোঝা যাচ্ছে এক্ষেত্রে এমন পজিশনে এন্ট্রি নেওয়া হয় যেখান থেকে লম্বা সময়ের বিচারে দাম বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। লম্বা সময়টা কয়েক মাস, এমনকি কয়েক বছরও হতে পারে। অতঃপর কাঙ্খিত টার্গেটে পৌঁছে গেলে স্কয়ার অফ করে প্রফিট বুক করতে হয়।

আরও পড়ুনঃ  শেয়ার বাজার আসলে কী?

এটা অনেকটা ইনভেস্টিং-এর মতই কিন্তু সক্রিয়। তবে সক্রিয় হলেও দামের ছোট ছোট পরিবর্তনকে এক্ষেত্রে কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয় না। লম্বা সময়ে দামের বড় মুভমেন্ট থেকে লাভ করাই এই ধরনের ট্রেডিং-এর লক্ষ্য থাকে। আর তাই এক্ষেত্রে তুলনায় অনেক কম সক্রিয় থাকার প্রয়োজন পড়ে।

অনেক লম্বা সময়ের জন্য হোল্ড করে থাকা হয় বলে অনেকসময় এক্ষেত্রে ট্রেডারের লিকুইডিটির সমস্যা হয় এবং ফলে নতুন পজিশন যোগ করতে সমস্যা হয়।

শেষ কথা

তাহলে ট্রেডিং মোটামুটি কত ধরনের হয় সেটা তো জানতে পারলেন… এরমধ্যে প্রত্যেকটারই কিছু সুবিধা ও অসুবিধা আছে। আর ভালোভাবে আয়ত্ত করা গেলে প্রত্যেকটার ক্ষেত্রেই লাভ করার সুযোগও আছে। তবে কোনটা আপনার জন্য উপযুক্ত হবে সেটা আপনাকেই স্থির করতে হবে নিজের মানসিকতা ও পরিস্থিতির উপর বিচার করে।

>> আর্টিকেলে ব্যবহৃত যেকোনো টার্ম বা পরিভাষার জন্য পরিভাষার তালিকা-টা দেখে নিতে পারেন। 

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)

কোন ধরনের ট্রেডিং-এ সব থেকে বেশি সক্রিয় হওয়ার প্রয়োজন পড়ে?

স্ক্যাল্পিং-এ।

কোন ধরনের ট্রেডিং-এ ঝুঁকি সবথেকে কম?

সব ধরনের ট্রেডিং-এই কিছু না কিছু ঝুঁকি থাকেই। ঝুঁকি কম হয় অভিজ্ঞতায়, রিস্ক ম্যানেজমেন্টে এবং স্টপলসের ব্যবহারে।


মন্তব্য করুন