সঠিক স্টক ব্রোকার কিভাবে বেছে নেবেন? ট্রেড-ইনভেস্ট শুরুর আগেই জানুন!

5/5 - (3 জন রেটিং করেছেন)

শেয়ার বাজারে সরাসরি শেয়ার কেনাবেচা করতে গেলে দরকার পড়ে একটা ডিম্যাট (কাম ট্রেডিং) অ্যাকাউন্টের। এধরণের অ্যাকাউন্ট খুলতে চাইলে যেকোনো একটা স্টক ব্রোকারের কাছে আবেদন করতে হয়। সমস্ত ব্রোকারের ডিম্যাট কাজের ক্ষেত্রে একই রকম হলেও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কিছুটা আলাদা হয়। আর আমাদের তার মধ্যে থেকে নিজের পছন্দমত যেকোনো একটা বেছে নিতে হয়।

কিন্তু যেহেতু স্টক ব্রোকারের সংখ্যা একটা দুটো নয় বরং কয়েকশ, তাই তাদের মধ্যে থেকে সবথেকে ভালো ও নিজের জন্য উপযুক্ত সঠিক ব্রোকার বেছে নেওয়া বেশ একটা ঝক্কির কাজ হয়ে যায়। আমরা শেয়ার বাছাই করার ক্ষেত্রে যেখানে অনেককিছু দেখে এবং রিসার্চ করে তবে সিদ্ধান্ত নিই সেখানে এই ব্রোকার বেছে নেওয়ার বিষয়টা সাধারণত ততটা গুরুত্ব দিইনা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ব্যাপারটা অতটাও গুরুত্বহীন নয়। ট্রেডিং বা ইনভেস্টিং শুরু করার আগে বাছাইয়ের এই কাজটাও সঠিকভাবে করা খুবই জরুরী।

ডিম্যাট কাম ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট কী?

শেয়ার বাজারে উপলব্ধ কোম্পানিগুলো লিস্টেড বা তালিকাভুক্ত থাকে স্টক এক্সচেঞ্জে (যেমনঃ এনএসই বা বিএসই)। আর শেয়ার কেনাবেচা করতে গেলে যেকোনো একটা এক্সচেঞ্জেই অর্ডারটা দিতে হয়। কিন্তু আমরা চাইলেই সরাসরি এক্সচেঞ্জে অর্ডার প্লেস করতে পারি না। কাজটা আমাদের একটা স্টক ব্রোকারের মাধ্যমে করতে হয়।

শেয়ার কেনাবেচা ও স্টোর করার জন্য স্টক ব্রোকার গুলো আমাদের ডিম্যাট কাম ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট প্রোভাইড করে। ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট কথাটা ‘ডিমেটেরিয়ালাইজড অ্যাকাউন্ট’- এর সংক্ষিপ্ত রূপ। কোনো কোম্পানির শেয়ার কিনলে সেটা ডিমেটেরিয়ালাইজড বা কাগজবিহীন ডিজিটাল ফর্মে ডিম্যাট অ্যাকাউন্টে স্টোর হয়। আর ট্রেডিং অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে শেয়ার কেনাবেচা করা যায় বা কেনাবেচার অর্ডার এক্সচেঞ্জে পাঠানো যায়।

এমনিতে আমরা ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট বলতে যা বুঝি বা ব্রোকারের কাছে আবেদন করে যেটা পাই সেটা আসলে এই টু-ইন-ওয়ান ডিম্যাট কাম ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট-ই।

ভুল ব্রোকার বেছে নিলে কী সমস্যা হতে পারে?

আমাদের জীবনের এক-একটা পছন্দই ঠিক করে দেয় আমাদের ভবিষ্যৎ জীবন কেমন হবে। ব্যাক্তিগত জীবনে যেমন বউ (বা বর) বেছে নেওয়া একটা বড় সিদ্ধান্ত এবং সেটা ভুলভাল হয়ে গেলে জীবনের মোড় ঘুরে যেতে পারে, ঠিক তেমনই ভুল ব্রোকার আমাদের ইনভেস্টিং বা ট্রেডিং কেরিয়ারে অনেক সমস্যা ডেকে আনতে পারে। যেমন,

  • অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য, বাৎসরিক মেন্টেনেন্সের জন্য, সাধারণ কিছু সুযোগ সুবিধা পেতে এবং প্রতি অর্ডারে অতিরিক্ত খরচ হতে পারে।
  • বৈধ খরচের বাইরে বিভিন্ন ছুতোয় অবৈধ চার্জ কাটা হতে পারে!
  • ট্রেডিং সফটওয়্যার বা প্ল্যাটফর্মে প্রয়োজনীয় সুবিধা না পাওয়া যেতে পারে।
  • ট্রেড এক্সিকিউশনে দেরি হতে পারে এবং ফাস্ট ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হতে পারে।
  • খুব দরকারের সময় সিস্টেম হ্যাং করতে পারে এবং তার খেসারত লস দিয়ে চোকাতে হতে পারে।
  • যে কোনো রকম সমস্যা হলে যথার্থ সাহায্য (কাস্টমার সার্ভিস) না পাওয়া যেতে পারে।
  • ব্রোকার কোনো রকম অনৈতিক কাজকর্মে লিপ্ত থাকলে তার ব্যবসা উঠে যেতে পারে বা লাইসেন্স বাতিল হতে পারে এবং সেক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের আর্থিক ক্ষতি হতে পারে বা অন্যান্য সমস্যায় পড়তে হতে পারে। এই যেমন ধরুন হালফিলেই (২০২০ তে) ব্রোকারদের মধ্যে সুপরিচিত নাম কারভী বিনিয়োগকারীদের ফান্ড ও শেয়ারের অবৈধ ব্যবহারের জন্য ব্রোকিং লাইসেন্স হারায়। আর এর ঝামেলাটা পোহাতে হয় ওদের ডিম্যাট হোল্ডারদের।

প্রথমবারের জন্য স্টকব্রোকার বেছে নেওয়া…

নিজের জন্য সঠিক ব্রোকার বেছে নেওয়ার কথা বলার আগে একটা কথা উল্লেখ করতে চাইব যে, বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর বউ / বর পাল্টানো যতটা কঠিন, লাইফের প্রথম ব্রোকার বেছে নেওয়ার পরে যদি কখনো মনে হয় ভুল হয়ে গেছে সেক্ষেত্রে কিন্তু পরে অন্য ব্রোকারের কাছে যাওয়া ততটাও কঠিন নয়!

হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। এমনিতে চাইলে যেমন খুব সহজেই দ্বিতীয় ডিম্যাট খুলে পুরানো অ্যাকাউন্টটাকে ডাম্প করা যায় তেমনই আবার কেনা শেয়ার সহ ডিম্যাট অন্য ব্রোকারের কাছে ট্রান্সফারও করা যায়। কিন্তু পরিবর্তন সম্ভব বলেই প্রথমে যেকোনো একটা ব্রোকারের কাছে যাওয়াও সমীচীন নয় কারণ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ঝামেলা আছে আর সময় ও টাকাপয়সা খরচেরও ব্যাপার আছে।

তাই সবসময়ই চেষ্টা থাকা উচিৎ প্রথমেই ঠিক ব্রোকার বেছে নেওয়া!

কিভাবে সঠিক স্টক ব্রোকার বেছে নেবেন?

সঠিক ব্রোকার বেছে নেওয়ার আগে সবার প্রথমে আপনাকে স্থির করে নিতে হবে আপনি কী কারণে ডিম্যাট অ্যাকাউন্টটা ব্যবহার করবেন এবং কোন কোন বৈশিষ্ট্যগুলো আপনার প্রয়োজন… আপনার নিজস্ব প্রয়োজন অনুযায়ী আপনার জন্য কোনো বিশেষ ব্রোকারের ডিম্যাট সবথেকে বেশী উপযুক্ত হতে পারে।

আরও পড়ুনঃ  শেয়ার বাজারের 10 টা অপ্রিয় সত্য, যেগুলোর ব্যাপারে কেউ বলে না!

যেমন ধরুন আপনি যদি ট্রেড করেন সেক্ষেত্রে আপনার যা প্রয়োজন পড়বে, ইনভেস্টিং-এর ক্ষেত্রে প্রয়োজনটা খানিকটা আলাদা হবে। আবার শেয়ার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বা ট্রেড নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনি নিজেই রিসার্চ করবেন নাকি অন্যজনের সাহায্য নেবেন সেটাও ব্রোকার বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে একটা ফ্যাক্টর হিসাবে ধরতে হবে।

ব্রোকার বাছাই শুরু করার আগে এধরণের ব্যক্তিগত আরও অন্যান্য যেকোনো প্রয়োজনের একটা তালিকা আগে থেকেই তৈরি করে নিতে হবে। অতঃপর যে যে বিষয়গুলো দেখে নিতে হবে সেগুলো হল,

ব্রোকারের রেপুটেশন ও ট্র্যাক রেকর্ড

সবার প্রথম কাজ হচ্ছে ব্রোকারগুলোর রেপুটেশন আর ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করা। সবার প্রথমে দেখা যেতে পারে ব্রোকারগুলো কত বছরের পুরানো। যে সমস্ত ব্রোকার বহু বছর ধরে সফলভাবে ব্যবসা করে আসছে বা ব্যবসা বাড়িয়ে আসছে তাদের রেপুটেড বলেই গণ্য করা যেতে পারে।

এর পাশাপাশি বিভিন্ন ওয়েবসাইটে তাদের সম্পর্কে রিভিউ, প্লে স্টোরে তাদের মোবাইল অ্যাপের রেটিং, বিভিন্ন ফোরামে ব্যবহারকারীদের প্রতিক্রিয়া, সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের নিয়ে চর্চার ধরণ ইত্যাদি বিষয়গুলোও পরখ করে দেখা যেতে পারে। ব্রোকার ভরসাযোগ্য হলে এসব ক্ষেত্রে ওভারঅল একটা পজিটিভ ভাইব থাকবেই।

এছাড়া এক্ষেত্রে মার্কেট শেয়ার বা ক্লায়েন্টের সংখ্যার বিচারে ব্রোকার কত বড় সেটাও চেক করা যেতে পারে। যে ব্রোকারের ডিম্যাট ব্যবহারকারীর সংখ্যা যত বেশি সে তত ভরসাযোগ্য বা তাদের প্ল্যাটফর্ম ততটাই স্থিতিশীল বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে।

মার্কেট শেয়ারের বিচারে ভারতের সবথেকে বড় ব্রোকার গুলো হল,

ক্রমাঙ্কব্রোকারমার্কেট শেয়ার
জিরোধা১৯.০৯%
গ্রো১৪.৯৬%
অ্যাঞ্জেল ওয়ান১২.২৯%
আপস্টক্স১১.১৯%
আইসিআইসিআই সিকিউরিটিস৭.৭৮%
এইচডিএফসি সিকিউরিটিস৩.২৬%
৫পয়সা৩.১২%
কোট্যাক সিকিউরিটিস ৩.০৬%
মোতিলাল অসওয়াল ২.৬১%

ব্রোকারেজ

ব্রোকার গুলোর লাভের প্রধান উৎস ব্রোকারেজ কমিশন। সমস্ত ব্রোকার তাদের প্ল্যাটফর্মে দেওয়া প্রত্যেক বাই ও সেল অর্ডারের উপর ব্রোকারেজ সংগ্রহ করে। আর এর হার আলাদা আলাদা ব্রোকারের জন্য আলাদা আলাদা হয়।

এর উপর ভিত্তি করে দুই ধরনের ব্রোকার হয়। যথা,

  1. ট্র্যাডিশনাল ফুল সার্ভিস ব্রোকার
  2. ডিসকাউন্ট ব্রোকার

#১ ফুল সার্ভিস ব্রোকার

সাধারণত বড় বড় ব্যাংক গুলো এবং আরও কিছু স্বতন্ত্র পুরানো বড় বড় ব্রোকার ফুল সার্ভিস ব্রোকিং পরিষেবা দেয়। এক কথায় বললে এগুলো পুরানো দিনের ট্র্যাডিশনাল ব্রোকার। এই ধরনের ব্রোকারগুলো সাধারণত ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মের পাশাপাশি আরো কিছু প্রিমিয়াম ফেসিলিটি যেমন রিসার্চ অ্যাডভাইজারি, রিসার্চ রিপোর্ট ইত্যাদি দিয়ে থাকে। আর সেসবের জন্য এদের ব্রোকারেজ তুলনায় অনেক বেশি হয়। এছাড়া এদের প্ল্যাটফর্ম সাধারণত একটু সেকেলে হয়।

তবে এক্ষেত্রে চার্জ বেশি লাগলেও এগুলো সাধারণত বড় কোম্পানি হওয়ায় বা বড় কোম্পানির সাথে যুক্ত থাকায় ফ্রড-এর সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। এধরণের কয়েকটা ব্রোকার হল আইসিআইসিআই সিকিউরিটিস, এইচডিএফসি সিকিউরিটিস, অ্যাঞ্জেল ইত্যাদি।

#২ ডিসকাউন্ট ব্রোকার

অন্যদিকে নতুন যুগের কেবলমাত্র ট্রেডিং ফেসিলিটি সহ অনেক কম খরচে ব্রোকিং সার্ভিস দেওয়া ব্রোকারদের ডিসকাউন্ট ব্রোকার বলে। নামটা থেকেই বোঝা যাচ্ছে এদের ব্রোকারেজ ট্র্যাডিশনাল ফুল সার্ভিস ব্রোকারদের থেকে অনেক কম বা ‘ডিসকাউন্টেড’ হয়। আর নতুন যুগের ব্রোকার হওয়ায় এদের প্ল্যাটফর্ম দেখতে এবং কাজে সাধারণত আধুনিক হয়।

তবে এধরণের অনেক ব্রোকারই খুব ছোটো হওয়ায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্যতা কম হতে পারে। এধরণের সুপরিচিত কয়েকটা ব্রোকার হল, জিরোধা, গ্রো, আপস্টক্স ইত্যাদি।

>> তবে ইদানিংকালে একদিকে যেমন অনেক ফুল সার্ভিস ব্রোকার ডিসকাউন্ট ব্রোকিং প্ল্যান চালু করছে অন্যদিকে অনেক ডিসকাউন্ট ব্রোকারও ফুল সার্ভিস ব্রোকারদের মত বিভিন্ন প্রিমিয়াম সার্ভিসও অফার করছে।

দুই ধরনের ব্রোকারের ব্রোকারেজঃ

  • ফুল সার্ভিস ব্রোকারঃ ডেলিভারি ট্রেডে টার্ন-ওভারের ০.৩-০.৫% , ইন্ট্রা-ডে ট্রেডে টার্ন-ওভারের ০.১-০.২৭৫%।
  • ডিসকাউন্ট ব্রোকারঃ ডেলিভারি ট্রেডে সাধারণত কোনো ব্রোকারেজ লাগে না। বাকি ট্রেডের জন্য বাঁধা চার্জ ১০ থেকে ২০ টাকা।

>> আজকের দিনে বেশীরভাগ ট্রেডার ইনভেস্টার-রাই ডিসকাউন্ট ব্রোকারের ডিম্যাট অ্যাকাউন্টই বেছে নিচ্ছেন কারণ এর মাধ্যমে ব্রোকারেজে হাজার হাজার টাকা বেঁচে যাচ্ছে। 

প্ল্যাটফর্ম

ব্রোকার বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টের মধ্যে একটা হচ্ছে প্ল্যাটফর্ম। বিশেষ করে ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে প্ল্যাটফর্ম ফাস্ট এবং ত্রুটিমুক্ত হওয়া খুবই জরুরী। এছাড়া সবার ক্ষেত্রেই প্ল্যাটফর্ম যত ইউজার ফ্রেন্ডলি ও সহজে ব্যবহারযোগ্য হয় ততই ভালো।

বেশিরভাগ ট্রেডার কম্পিউটারে বসে ট্রেড করেন। কম্পিউটার থেকে শেয়ার কেনাবেচা করার জন্য সফটওয়্যার বেসড আর ওয়েব বেসড, দুই ধরনের প্ল্যাটফর্ম হয়। দুই ক্ষেত্রেই কিছু সুবিধা এবং কিছু অসুবিধা আছে।

আরও পড়ুনঃ  সোনায় বিনিয়োগ করার 7 টা উপায়। আমার পছন্দ #6

সফটওয়্যার বেসড প্ল্যাটফর্ম অনেক আগে থেকেই চলে আসছে, তাই এগুলোর ইন্টারফেস সাধারণত একটু সেকেলে হয়। তবে এগুলোয় এমন কিছু সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায় যেগুলো ওয়েব বেসড প্ল্যাটফর্মে পাওয়া যায় না। আর এক্ষেত্রে তুলনামূলক ফাস্ট কম্পিউটারের প্রয়োজন পড়ে।

আর অন্যদিকে ওয়েব বেসড প্ল্যাটফর্মে একসময় অনেক কম ফিচার থাকলেও ইদানিং কালে এগুলো অনেক বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ হয়েছে। তাছাড়া এগুলো তুলনায় অনেক পরে এসেছে বলে এগুলোর ইন্টারফেস অনেক আধুনিক হয়। আর এক্ষেত্রে খুব শক্তিশালী কম্পিউটার না থাকলেও চলে।

এই দুই ধরনের প্ল্যাটফর্ম ছাড়াও এই স্মার্টফোনের যুগে স্মার্টফোন অ্যাপ হিসাবে আরও এক ধরণের নতুন প্ল্যাটফর্মের উদ্ভব হয়েছে। যাদের কাছে কম্পিউটার নেই বা যখন কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ নেই তখন এই স্মার্টফোন অ্যাপের সাহায্যেও শেয়ার কেনাবেচা চালিয়ে যাওয়া যায়।

ডিম্যাট অ্যাকাউন্টের সাথে আমাদের সব রকম ইন্টার‍্যাকশন এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেই হয়। বিশেষ করে  ট্রেডারদের ক্ষেত্রে এই প্ল্যাটফর্মের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই আপনার প্রয়োজন এবং আপনি কোন ধরনের প্ল্যাটফর্মের সাথে বেশি কমফোর্টেবল সেই অনুযায়ী আপনাকে আপনার প্ল্যাটফর্ম তথা সেই প্ল্যাটফর্ম সরবরাহকারী ব্রোকার বেছে নিতে হবে। 

স্বচ্ছতা

যে ব্রোকার তার কর্মকাণ্ডে যত স্বচ্ছতা বজায় রাখে তার কাছে ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খোলা ততটাই শ্রেয়। খেয়াল রাখতে হবে অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করার ক্ষেত্রে যেন কোনো গুপ্ত চার্জ না থাকে। যে ব্রোকার প্রতি পদে যা যা চার্জ কাটতে পারে তা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করে দেয় তাকে বেশি ভরসা করা যায়।

ইদানিংকালে অনেক ব্রোকারই তাদের ব্রোকারেজ ক্যালকুলেটর ব্যবহার করার সুযোগ দেয়। সেখান থেকে দেখে নেওয়া যেতে পারে কোন ধরনের ইন্সট্রুমেন্ট কেনাবেচা করলে কি কি খাতে কত চার্জ পড়তে পারে। এবং এটা ব্রোকার বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও তুলনামূলক বাছবিচার করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

>> অ্যাকাউন্ট খোলার পর যেকোনো ট্রানজেকশন করার সময় ঘোষিত চার্জের সঙ্গে বাস্তব চার্জ যেন মেলে সেটা খেয়াল করে দেখতে হবে। এবং যদি কখনো কোনো অসঙ্গতি পাওয়া যায় তখন সেই ব্রোকারকে ত্যাগ করাই উচিৎ হবে।

ফেসিলিটি

এটা নিয়ে আগেই বলা হয়ে গেছে। বিভিন্ন ব্রোকার তাদের ডিম্যাটে বিভিন্ন রকম ফেসিলিটি দিয়ে থাকে। এগুলো সব ব্রোকারের ক্ষেত্রে সমান হয় না। যেমন আপনি যদি শেয়ারের পাশাপাশি ডেরিভেটিভ, কারেন্সি, কমডিটি ইত্যাদিতে ট্রেড করতে চান কিংবা মিউচুয়াল ফান্ড, বন্ড ইত্যাদিতেও বিনিয়োগ করতে চান তবে আপনাকে এই সমস্ত সুবিধাগুলো আছে এমন কোনো ডিম্যাট বেছে নিতে হবে।

কাস্টমার সার্ভিস

ভালো সার্ভিস দারুণ হয়ে যায় ভালো কাস্টমার সার্ভিসের দৌলতে। প্রথমবার ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খোলার বা ব্যবহারের সময় একটু সাহায্যের দরকার হতেই পারে। তাছাড়া অনেক সময়েই অনেক টেকনিক্যাল সমস্যা দেখা দিতে পারে যখন কাস্টমার সার্ভিস এক্সিকিউটিভের সাহায্য ছাড়া চলেই না। তাই ভালো কাস্টমার সার্ভিস থাকা মাস্ট।

এ ব্যাপারে পরীক্ষা করার জন্য যেকোনো ব্রোকারের কাস্টমার সার্ভিস নাম্বারে ফোন করলেই তাদের কাস্টমার সার্ভিস কেমন সে ব্যাপারে একটা ধারণা পেতে পারবেন। ফোন করার সাথে সাথেই যদি আপনি এক্সিকিউটিভ-এর সঙ্গে কথা বলতে সমর্থ হন তাহলে ধরে নেওয়া যেতে পারে তাদের কাস্টমার সার্ভিস ভালো আর ফোন করার পর যদি অনন্তকাল ধরে অপেক্ষা করতে হয় তাহলে সেক্ষেত্রে কাস্টমার সার্ভিস কেমন সে ব্যাপারেও আর কোনো সন্দেহের অবকাশ থাকে না!

ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সাথে লিংক বা ফান্ড ট্রান্সফার

এমনিতে এখন প্রায় সমস্ত ব্রোকারের ক্ষেত্রেই ইউপিআই ব্যবহার করে খুব সহজেই ফান্ড ট্রান্সফার করা যায়। তবে যে সমস্ত বড় বড় ব্যাংক ব্রোকিং সার্ভিস প্রোভাইড করে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সাথে ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট এর এত সুন্দরভাবে লিঙ্ক থাকে যে ফান্ড ট্রান্সফার নিয়ে কোনো চিন্তাই করতে হয় না এবং পুরো বিষয়টা একদম সিমলেস হয়ে যায়।

অনেক স্বতন্ত্র ব্রোকারও বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে টু-ইন-ওয়ান ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট প্রোভাইড করে। এবং এক্ষেত্রেও অনেকটা ঐ একই ধরণের সুবিধা পাওয়া যায়।

আপনারও যদি এ ধরনের অ্যাকাউন্টের দরকার পড়ে তবে আপনাকে এই সুবিধা দেয় এমন ব্রোকারের কাছেই যেতে হবে।

অ্যাডভাইজারি ও রিসার্চ

যদিও বিনিয়োগ বা ট্রেডিং দুই ক্ষেত্রেই নিজে রিসার্চ করা ছাড়া অন্যের রিসার্চের উপর নির্ভর করা খুব একটা ভালো আইডিয়া না, তবুও নতুন হিসেবে যদি আপনি এক্সপার্ট রিসার্চ ও এডভাইজারি ফেসিলিটির সুবিধা নিতে চান তবে আপনাকে এই সুবিধা দেয় এমন ব্রোকারের কাছেই ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।

আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা

প্রথম ফুল সার্ভিস ব্রোকার

আমার প্রথম ব্রোকার এইচডিএফসি সিকিউরিটিস। তখন এ ব্যাপারে আমার কোনো কিছুই জ্ঞান ছিল না।  এইচডিএফসি ব্যাংকে আমার সেভিংস অ্যাকাউন্ট ছিল এবং বড় ব্যাংক হিসাবে এই এইচডিএফসি নামটায় ভরসাও ছিল। আর সেই সুত্রেই ব্যাংকের রিলেশনশিপ ম্যানেজারের মাধ্যমে আমার প্রথম ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খোলা।

আরও পড়ুনঃ  শেয়ার বাজারে কেরিয়ারের বিকল্প, ট্রেডিং ও ইনভেস্টিং ব্যতীত।

প্রথমেই অ্যাকাউন্ট ওপেনিং এর সময় বেশ একটা মোটা চার্জ কেটেছিল। মনে করেছিলাম ওটাই হয়তো স্ট্যান্ডার্ড। যাইহোক যখন শেয়ার কেনাবেচা শুরু করি বুঝতে পারতাম বেশ ভালোই চার্জ কাটছে কিন্তু ওই যে ভাবতাম ওটাই হয়তো স্ট্যান্ডার্ড। এর পরে মাঝে মাঝে দেখতাম ডিপোজিটরি চার্জও কাটছে। প্রথম দিকে মোটামুটি একটা ভালো লাভ পেয়েছিলাম বলে এই চার্জ গুলো নিয়ে তখন ততটা মাথা ঘামাইনি।

যাই হোক কয়েক বছর পরে অন্যান্য ব্রোকার কেমন হয় সেটা বোঝার জন্য অন্য আরো কয়েকটা ব্রোকার যেমন জিরোধা, আপস্টক্স এবং ফায়ারসেও ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলি। বুঝতেই পারছেন এই তিনটেই ছিল ডিসকাউন্ট ব্রোকার। যাইহোক এই নতুন ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট গুলো খোলার পরে বুঝতে পারি এইচডিএফসির বেসিক প্ল্যানে আমি কতকিছু ফিচার মিস আউট করছিলাম। আর অন্যদিকে চার্জও অনেক বেশি যাচ্ছিল।

ডিসকাউন্ট ব্রোকারগুলোর কাছে যে সমস্ত ফিচারগুলো ফ্রিতে পাচ্ছিলাম সেগুলোই ওই ফুল সার্ভিস ব্রোকারের কাছে পেতে হলে আমাকে আরো বেশি এক্সট্রা চার্জ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ত। স্বাভাবিকভাবেই একবার ডিসকাউন্ট ব্রোকারের স্বাদ পাওয়ার পর আর পিছন ফিরে তাকাইনি।

যাইহোক আপাতত আমি এইচডিএফসি সিকিউরিটিজ এর ব্যবহার বন্ধ করে ডিসকাউন্ট ব্রোকার গুলোর ব্যবহার শুরু করলাম। তবে তখনও এইচডিএফসির অ্যাকাউন্টটা ক্লোজ করিনি। আর সেজন্যই জানতে পারলাম এই অ্যাকাউন্টে যত কম ট্রেড নেওয়া হয় তত বাৎসরিক মেনটেনেন্স ফি বা ডিপোজিটরি ফি টা বেশি চার্জ করা হয়! বুঝতে পারছেন তো, কতটা জ্বালা!

তবে এইচডিএফসি সিকিউরিটিস-এর অ্যাকাউন্টটায় একটা সুবিধে দারুন ছিল সেটা হচ্ছে ফান্ড অ্যাড করা বা উইথড্র করা নিয়ে কোন কিছু ভাবতে হতো না। ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডিম্যাট অ্যাকাউন্টটা লিংক করা ছিল। এবং শেয়ার কেনা বেচার সময় নিজে নিজেই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ডিম্যাট অ্যাকাউন্টে কিংবা ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট থেকে ব্যাংক একাউন্টে টাকা চলে যেত।

ডিসকাউন্ট ব্রোকার ফেজ

তিনটে ডিসকাউন্ট ব্রোকারের মধ্যে ফায়ারসের ইন্টারফেস টা একদম ট্রেডিংভিউ এর মত হওয়ায় কিছু কিছু ফিচার খুব ভালো লাগত। কিন্তু ওদের ইন্টারফেস স্টেবল ছিল না, অর্ডার করতে গিয়ে মাঝে মাঝে হ্যাং করে যেত এবং মাঝে মাঝে এমনভাবে স্টপলস হিট হতো, আমার কেমন যেন সন্দেহ হতো। এছাড়া যখন ওদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার কিছুদিন বন্ধ রাখি তখন আমার অ্যাকাউন্টে নেগেটিভ চার্জ বাড়া কমাটাও আমার পছন্দ হয়নি। আর ওদের ট্রেডিং ইন্টারফেস ছাড়া এই সম্পর্কিত অন্যান্য পেজগুলো ঠিকঠাক রিফাইন্ড ছিল না। তাই আমি অবশেষে এটা ব্যবহার করাও পুরোপুরি বন্ধ করে দিই।

আপস্টক্স এর ইন্টারফেসটা আধুনিক হলেও আমার ঠিক পছন্দ হয়নি। এছাড়া এদের চার্জের ব্যাপারে সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু নেগেটিভ খবর চোখে পড়ে তাই অবশেষে এটাও ত্যাগ করি।

অবশেষে জিরোধার কাইট ওয়েব তথা মোবাইল অ্যাপ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বুঝতে পারি প্ল্যাটফর্ম টা খুবই ফাস্ট এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি। এতে ট্রেড এক্সিকিউশন হয় তড়িৎগতিতে এবং প্রায় কখনোই কোনো সমস্যা দেখা যায়না বললেই চলে। তবে প্রথম প্রথম মনে হতো আরও কিছু ফিচার থাকলে ভালো হতো। কিন্তু অবশেষে ওদের যা ফিচার ছিল সেগুলোর সাথেই ধীরে ধীরে ধাতস্থ হয়ে যাই। এবং পরে উপলব্ধি করি ওই ফিচারগুলোই আমার জন্য যথেষ্ট।

জিরোধার আরও একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কথা না বললেই নয় সেটা হচ্ছে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কোথাও কোনো রকম ঝুঁকি থাকলে সেটা একটা হিন্টের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়। এছাড়া জিরোধায় আমাকে কখনো কোনো রকম চার্জ সংক্রান্ত সমস্যাতেও পড়তে হয়নি। সোশ্যাল মিডিয়াতে এর রেপুটেশনও খুবই ভালো। আর এর প্রতিষ্ঠাতা নিখিল কামাথ এবং নীতিন কামাথকেও আমার খুবই বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়।

তাই আপাতত ভারতের ১৯% ট্রেডার ইনভেস্টারদের মতো আমিও বর্তমানে জিরোধাই ব্যবহার করছি।

শেষ কথা

এই নিবন্ধ পড়ে মনে হতে পারে যে, ডিসকাউন্ট ব্রোকার মানেই ভালো, বা জিরোধাই সেরা। কিন্তু আসলে সেটা সব সময় সবার ক্ষেত্রে নাও হতে পারে। আমি যখন প্রথম ডিম্যাট খুলেছিলাম তখন আজকের মতো এত তথ্য উপলব্ধ ছিলনা। তাই আমাকে ট্রায়াল আর এররের মধ্যে দিয়ে আমার পছন্দের অ্যাকাউন্ট বেছে নিতে হয়েছিল। এখন ইন্টারনেটের বাড়বাড়ন্তের সময়ে আপনি চাইলেই আপনার হাতে তথ্যের ভান্ডার পেয়ে যাবেন। আর আশা রাখি উপরের বিষয়গুলো মাথায় রেখে সেই তথ্য অনুসন্ধান করার মাধ্যমে আপনি আপনার নিজের জন্য সঠিক ব্রোকার ঠিকই খুঁজে নিতে পারবেন।

মন্তব্য করুন