আমরা যখন নতুন কোনো কাজে নামি, ভুল হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না। ভুল করা যে কোনো বিষয়ে শিক্ষণের একটা অংশ। ট্রেডিং শুরু করার সময়ও নতুন ট্রেডাররা ছোট-বড় কিছু ভুল করেই থাকে। তবে সমস্যা হচ্ছে এক্ষেত্রে ভুল করা মানে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া। এখানে একটা বড় ভুল পুরো ক্যাপিটাল শূন্য করে দিতে পারে কিংবা একজন নতুন ট্রেডারের ট্রেডিং কেরিয়ার চিরকালের জন্য শেষ করে দিতে পারে। তাই এক্ষেত্রে প্রত্যেকটা পদক্ষেপ খুব সাবধানে অনেক ভেবেচিন্তে তবে ফেলতে হয়। আর নতুন ট্রেডারদের জন্য এই সাবধানতা বজায় করার প্রয়োজনীয়তা পোড় খাওয়া পাকা ট্রেডারদের থেকে অনেক বেশি।
এই নিবন্ধে নতুন ট্রেডারদের করা খুবই কমন 15 টা ভুলের কথা তুলে ধরলাম যাতে আপনি অন্যের করা এই ভুল গুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজে এগুলো করা থেকে বিরত থাকতে পারেন।
ভুল #1 ‘টিপস’-এর উপর ভিত্তি করে ট্রেড করা
এটা নতুন ট্রেডারদের সবথেকে বড় ভুলের মধ্যে একটা। যখন প্রথম কেউ শেয়ার বাজারে আসে এবং এখানে ট্রেডিং করতে চায় তখন তাদের একটা স্বাভাবিক প্রবণতা থাকে অন্যের টিপসের উপর নির্ভর করে বা অন্যের পরামর্শ অনুযায়ী শেয়ার কেনা বেচা করে সহজেই লাভ করা। নিজে সবকিছু জানার বোঝার ও শেখার সময় এবং ধৈর্য কোনোটাই তাদের থাকে না।
কিন্তু বড় কিছু প্রাপ্তি কখনো এত সহজে তো আর হতে পারে না। এই দুনিয়ায় কোনো কিছুই ফ্রিতে পাওয়া যায় না। সোশ্যাল মিডিয়ার আনাচে-কানাচে বিশেষ করে বিভিন্ন টেলিগ্রাম চ্যানেলে যে সমস্ত টিপ বা কল দেওয়া হয় সেগুলো বেশিরভাগই যারা কল দিচ্ছে তাদের নিজেদের স্বার্থে। আসলে তারা নিজেরা আগে কোনো ইন্সট্রুমেন্টে পজিশন নিয়ে তারপর কল দিয়ে থাকে যাতে সেই কল অনুযায়ী অনেকেই পজিশন নেয় আর সেই ইন্সট্রুমেন্টের দামের মুভমেন্ট তাদের চাহিদামত হয়। তারপর তারা লাভ নিয়ে এক্সিট করে যায় আর ট্র্যাপে পড়ে যায় কল অনুযায়ী অংশ নেওয়া আপনার আমার মত সাধারন রিটেল ট্রেডাররা।
এভাবে কল দেওয়া কিন্তু বেআইনি। সেবির রুলস এন্ড রেগুলেশন্স অনুযায়ী রেজিস্টার্ড কোনো পরামর্শদাতা ছাড়া যে কেউ কিন্তু এভাবে কল দিতে পারেনা। কিন্তু আরও অনেক বেআইনী কাজের মতো আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এগুলোও ঘটে চলেছে।
#2 আসল ট্রেড শুরু করার আগে যথেষ্ট পরিমাণ প্র্যাকটিস না করা
কথায় আছে ‘প্র্যাকটিস মেকস এ ম্যান পারফেক্ট’। আর এটা শুধু ট্রেডিং কেন যে কোনো ক্ষেত্রেই সত্যি। যথেষ্ট প্র্যাকটিস না করে পরীক্ষা দিলে যেমন নম্বর কম আসে, তেমন যথেষ্ট প্র্যাক্টিস না করে ট্রেডিং শুরু করে দিলে ছোট থেকে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।
ট্রেডিং মানে সাদামাটা শুধু শেয়ার কেনাবেচা করা ভাবলে কিন্তু ভুল ভাবা হবে। সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় সঠিক এন্ট্রি নেওয়া এবং একইভাবে সঠিক সময়ে এক্সিট করা, নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করা, রিস্ক ম্যানেজ করা, উপযুক্ত স্ট্রাটেজি বাছাই করা ইত্যাদি বিষয়গুলোতে পারদর্শী হওয়ার জন্য প্রচুর প্রচুর অনুশীলন করা দরকার। এর অন্যথায় বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী।
বেশিরভাগ নতুন ট্রেডাররাই যথেষ্ট অনুশীলন বা পেপার ট্রেড না করেই সরাসরি আসল টাকা নিয়ে শেয়ার বাজারে ঝাঁপিয়ে পড়ে আর ফলস্বরূপ বিপর্যয় ডেকে আনে। শেষপর্যন্ত তাদের এই ভুলের মাশুল দিতে হয় বিশাল টাকা লস করে।
#3 অল্প ক্যাপিটালে ট্রেড করা বা সর্বস্ব নিয়ে ট্রেড করা
ক্যাপিটাল শেয়ার মার্কেটে ইনভেস্টিং এবং ট্রেডিং দুই ক্ষেত্রেই ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বেশীরভাগ সময়েই সাধারণত নতুন ট্রেডারদের ক্যাপিটাল কমই থাকে।
কিন্তু যৎসামান্য ক্যাপিটাল দিয়ে ট্রেডিং প্র্যাকটিস করা বা শেখার ক্ষেত্রে কাজ চলে গেলেও প্রকৃত ট্রেড করতে কিন্তু বেশ ভালো ক্যাপিটালের দরকার পড়ে। অল্প ক্যাপিটলে ট্রেড করা গেলেও অনেক স্ট্রাটেজি প্রয়োগই করা যায় না। তাছাড়া অল্প ক্যাপিটালে ছোট ছোট পজিশন নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্রোকারেজ এবং ট্যাক্সেও আনুপাতিক হারে অনেক বেশি খরচ হয়ে যায়। তাই লাভ করাটা কঠিন হয়ে যায়।
খুব অল্প কোয়ান্টিটিতে যারা ট্রেড করে তাদের ক্ষেত্রে হামেশাই দেখা যায় লসের ক্ষেত্রে ব্রোকারেজ ও ট্যাক্সের খরচ মিলিয়ে লসের হার অনেক বড় হয়ে যায় আর যখন লাভ হয় লাভের বেশিরভাগটাও ঐ খাতেই চলে যায়, এমনকি অনেকসময় এই খরচের পরিমাণ লাভ এর থেকে বেশিও হয়ে যায়।
আবার নিজের সর্বস্ব বা নিজের পুরো সেভিংস নিয়ে প্রথমেই ট্রেড করতে যাওয়াও একটা বিশাল বড় ভুল। এতে যেমন নিজের সবকিছু হারিয়ে সর্বশান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তেমনি স্ট্রেসও বেশি হয়ে যায় এবং ফ্রি ভাবে ট্রেড করা যায় না। সব হারাবার ভয়ে সঠিকভাবে এন্ট্রি বা এক্সিটের সিদ্ধান্ত গুলো নেওয়া যায় না, তাই আদপে ট্রেডিং-এ ভুল হওয়ার সম্ভাবনাগুলো বেড়ে যায়।
#4 প্রথমেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে পুরোপুরি ট্রেডিং-এ ঝাঁপিয়ে পড়া
ট্রেডিং একটা সফল কেরিয়ারের বিকল্প হতে পারে। কিন্তু এটাও দেখতে হবে কাজটা মোটেও সহজ না, এবং এখানে সফলতার হার 5%-এর থেকেও কম। আবার এমনও অনেক সময় দেখা যায় কিছু দিন বা কিছুমাস ভালো ফল বা লাভ হলেও কখনও আবার তার পরেও লসের ফেজ আসতে পারে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় যেসমস্ত সফল ট্রেডারদের দেখা যায় ভালোভাবে খোঁজ নিলে দেখা যাবে হয়তো তাদের মধ্যে প্রকৃত সফল খুব কমই। আর যারা সত্যিই সফল তাদের ক্ষেত্রেও দেখা যাবে যে তাদের সফলতার পিছনে ট্রেডিং এর পাশাপাশি তাদের সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাকটিভিটি থেকে বা অন্য সোর্স থেকে পাওয়া ক্যাপিটালের সাপোর্ট তাদের ট্রেডিং এর সফলতা পেতে সাহায্য করেছে।
“যে সমস্ত ট্রেডারদের অন্য কোনো ইনকামের সোর্স থাকে, ট্রেডিং-এ তাদের সফলতার সম্ভাবনা যারা জীবনধারণের জন্য শুধুমাত্র ট্রেডিং করেন তাদের থেকে বেশি হয়।”
–জিরোধার প্রতিষ্ঠাতা নীতিন কামাথ
তাই শুরুতেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে পুরোপুরি ট্রেডিং-এ ঝাঁপিয়ে পড়া খুবই বাজে একটা সিদ্ধান্ত যা জীবন ওলটপালট করে দিতে পারে। কয়েক বছর চাকরির পাশাপাশি সফলভাবে ট্রেডিং করার পর ও জিনিসটা ভালোভাবে বুঝে নিয়ে এবং যথেষ্ট পরিমাণ ক্যাপিটাল জমিয়ে তবেই চাকরি ছাড়ার ব্যাপারে ভেবে দেখা উচিত।
#5 কোনো ঠিকঠাক ট্রেডিং পরিকল্পনা না থাকা
এখানে সাফল্য পেতে একটা ঠিকঠাক স্ট্র্যাটেজি বা পরিকল্পনা থাকা এবং সেটা যথাযথভাবে ফলো করা ভীষণভাবে আবশ্যক। কখন এন্ট্রি নেওয়া হবে, কোথায় গেলে এক্সিট করা হবে, কত স্টপ লস হবে, কত কোয়ান্টিটি কেনা হবে ইত্যাদি সবকিছুই ট্রেডিং শুরু করার আগেই সুনির্দিষ্ট থাকা উচিৎ। কিন্তু নতুন ট্রেডাররা অনেক সময়েই কোনোরকম পোক্ত পরিকল্পনা ছাড়াই ট্রেড করতে উদ্যত হয়।
ঠিকঠাক অগ্রিম পরিকল্পনা ছাড়া ট্রেডিং করতে যাওয়া মানে বিপর্যয় না হওয়াটাই অস্বাভাবিক। বিনা পরিকল্পনায় ট্রেড করলে অনেক সময়েই যে ট্রেড নেওয়া উচিৎই নয় সেই ট্রেড নেওয়া হয়ে যায়, তাছাড়া লাইভ মার্কেটে পরিস্থিতি অনুকূল হলে কখন কত লাভে এক্সিট করা উচিত হবে কিংবা পরিস্থিতি প্রতিকূল হলে কখন কত লসে ট্রেড ক্লোজ করে দিতে হবে সেই সিদ্ধান্তগুলো ঠিকভাবে নেওয়া যায় না। আর এর ফল ভালো হয় না।
#6 লস বড় হতে দেওয়া
ট্রেডিং-এর দুনিয়ায় এটাই হয়তো সবথেকে বড় ভুল। একটা ট্রেডের একটা ভুলে একটা বড় লস কয়েক মাসের লাভের টাকা খেয়ে ফেলতে পারে। ‘লস কেন খামকা বড় হতে দেব’, এটা ভাবা যত সহজ বাস্তবে মেনে চলা ততই কঠিন।
লাইভ ট্রেড চলাকালীন যখন কোনো নতুন ট্রেডার প্রত্যাশার বিপরীতে ট্রেডিং টার্মিনালে সামান্য লস দেখে তখন মনে করে, ‘কিছুক্ষণ অপেক্ষা করা যাক আবার লাভে ফিরে আসবে’। লস আরেকটু বড় হলে তখন মনে করে, ‘এতক্ষন যখন ওয়েট করলাম, আর একটু ওয়েট করে দেখি কি হয়।’ লস আরো বড় হয়ে গেলে তখন মনে করে, ‘লস অনেকটা বড় হয়ে গেছে, একটু কমে আসুক, তারপর না হয় এক্সিট করা যাবে।’ এরপর যখন লসের পরিমাণ হাতের বাইরে চলে যায় তখন মনে করে, ‘এত টাকা লস কিছুতেই নেওয়া যাবেনা, যা হয় হোক যতক্ষণ না লস কমছে ততক্ষণ এক্সিট করবো না।’ কিন্তু শেষপর্যন্ত আর চাপ সহ্য করতে না পেরে বিশাল একটা লস হজম করে তবে ট্রেড ক্লোজ করে।
এই রকমই বা সমকক্ষ ঘটনা অনেক নতুন এমনকি কখনও কখনও পুরানো ট্রেডারের সাথেও ঘটে থাকে।
#7 নামমাত্র লাভেই ট্রেড ক্লোজ করা
লস বড় করার বিপরীত ধর্মী কিন্তু একই ধরণের একটা ভুল হচ্ছে অতি সামান্য লাভ দেখতে পেলেই ট্রেড ক্লোজ করে দেওয়া।
আমরা স্বভাবগতভাবে ভীতু। কোনো এন্ট্রি নেওয়ার পর নতুন ট্রেডাররা যদি সামান্য লাভ দেখতে পায় তাহলেই আবার ঘুরে লাভ টা লস হয়ে যাওয়ার ভয়ে অল্প লাভেই ট্রেড ক্লোজ করে দেয় সমস্ত পূর্ব পরিকল্পনা ভুলে গিয়ে।
কিন্তু পূর্ব-পরিকল্পনামাফিক রিস্ক-রিওয়ার্ড রেশিও অনুযায়ী উইনিং (Winning) ট্রেডগুলোতে যতটা লাভের আগে ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিলনা, তার আগে ছেড়ে দিলে রিস্ক-রিওয়ার্ড রেশিও ঘেঁটে যায়। লুজিং (Losing) ট্রেডে কিন্তু নির্দিষ্ট লেভেলের আগে বা স্টপলস এর আগে ট্রেড ক্লোজ করা যায় না, বা উচিতও নয়। ফলস্বরূপ ওভারঅল দেখা যায় লুজিং ট্রেডে লস বড় হয়ে যায় আর উইনিং ট্রেডে লাভটা ছোট হয়ে যায় এবং এই অবস্থা থেকে না বেরোতে পারলে প্রফিটেবল ট্রেডার হয়ে ওঠা সম্ভবপর হয়না।
#8 অতিরিক্ত ট্রেড করা
প্রফেশনাল ট্রেডাররা কিন্তু তাদের মনের মত পরিস্থিতি এলে তবেই ট্রেড নেয় এবং যতটা সম্ভব কম ট্রেড করে। অল্প সংখ্যক ট্রেডেই তারা বড় বড় লাভ তুলে নেওয়ার চেষ্টায় থাকে।
কিন্তু নতুন ছোট ট্রেডাররা পরিস্থিতি যেমনই হোক বা সেটআপ যেমনই পাওয়া যাক। সাধারণত প্রচুর ছোট ছোট ট্রেড নিতে অভ্যস্ত থাকে। এর ফলে যেটা হয় কিছু কিছু ট্রেডে লাভ করলেও অন্য ট্রেডের লসে অথবা প্রচুর ট্রেড নেওয়ার জন্য যে অতিরিক্ত ব্রোকারেজ ও ট্যাক্স খরচ হয় তাতে ওই লাভের টাকাটা হাতছাড়া হয়ে যায়।
নতুন ট্রেডারদের মেনে নিতে অসুবিধা হয় যে ট্রেডিং একটা সম্ভাবনার খেলা এবং এখানে বার বার সমস্ত পরিস্থিতিতে ঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয় তাই ট্রেডের সংখ্যায় সীমাবদ্ধতা থাকাটা জরুরী।
#9 অ্যাভারেজিং
নতুন ট্রেডারদের আরও একটা বড় ভুল হচ্ছে অ্যাভারেজিং। অ্যাভারেজিং মানে হচ্ছে একটা ট্রেড চলাকালীন সময়ে আরো টাকা ঢেলে পজিশন আরো বড় করা এবং অ্যাভারেজ দাম বাড়িয়ে বা কমিয়ে নেওয়া। নতুনরা সাধারণত লুজিং (Losing) ট্রেডকে বাঁচানোর অভীপ্রায়ে আরও টাকা ঢেলে প্রথম এন্ট্রির দামটাকে এভারেজিং-এর মাধ্যমে নামিয়ে আনতে চায় যাতে মার্কেট সামান্য ফরে গেলেও সামান্য লাভে বা লসটাকে কমিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে।
কিন্তু অনেক সময় ট্রেডেড ইন্সট্রুমেন্টের দাম অভিপ্রেত জায়গায় কখনোই পৌঁছায় না এবং লুজিং ট্রেডে অতিরিক্ত পজিশন নেওয়ার জন্য শেষ পর্যন্ত লসটা বিশাল বড় হয়ে যায়।
#10 স্টপ লস না ব্যবহার করা বা ঠিকভাবে না ব্যবহার করা
ট্রেডিং এর লস সীমিত রাখার সবথেকে ভালো উপায় হল হার্ড স্টপ লস ব্যবহার করা। মানে স্টপ লসটা মনে মনে নয়, স্টপ লস অর্ডার দিয়ে রাখা। স্টপ লস অর্ডার দিয়ে রাখলে পরিস্থিতি যেমনই হোক লুজিং ট্রেড পূর্ব নির্ধারিত লসে এক্সিট হয়ে যায়। ফলে লস বিশাল বড় হওয়ার সুযোগই পায়না।
কিন্তু নতুন ট্রেডাররা লসের ভয়ে অনেক সময় স্টপ লস অর্ডার দেওয়া থেকে বিরত থাকে কিংবা অনেক সময় মনে মনে স্টপ লস ম্যানেজ করার চেষ্টা করে কিংবা স্টপ লস অর্ডার দিয়েও সেটা এক্সিকিউট হয়ে লস হওয়ার ভয়ে এবং মার্কেট ঘুরে যাওয়ার আশায় ঠিক সময়ে আরো দূরে সরিয়ে দেয়। ফলস্বরূপ যেখানে কোন রকম কমপ্লিকেশনে না গিয়ে সহজেই লসটাকে সীমিত রাখা যেত সেখানে লস টা অনেক বড় হয়ে যায়।
#11 মাত্রাতিরিক্ত বড় পজিশন নেওয়া
ট্রেডিং কেরিয়ারে সঠিকভাবে এগিয়ে যেতে নিজের অ্যাকাউন্টের সাইজ অনুযায়ী যথার্থ পজিশন নেওয়া জরুরী। কিন্তু নতুন ট্রেডাররা অনেক সময়ই একবারে বেশি লাভের আশায় বড় পজিশন নিয়ে ফেলে। আর আয়ত্তের বাইরে পজিশন নেওয়ার পর মার্কেট লসের দিকে গেলে বড় লসের পরিমাণ দেখে নিজের স্ট্রাটেজি মেন্টেন করা ইমোশনালি যেমন কঠিন হয়ে যায় তেমনি একটা বড় লস পুরো ট্রেডিং একাউন্টের উপর অনেকটা প্রভাব ফেলে।
এক্ষেত্রে রুল অফ থাম্ব হচ্ছে একটা ট্রেডে কোনোভাবেই যেন অ্যাকাউন্টের 1-2%-এর বেশি লস না হয়। কিন্তু নতুন ট্রেডাররা অনেক সময়ই এই নিয়ম মেনে চলতে ব্যর্থ হয়।
#12 কম ভলিউমের ইন্সট্রুমেন্টে ট্রেড করা
যেসব ইন্সট্রুমেন্টে ভলিউম কম থাকে মানে কেনাবেচা কম হয় সে ক্ষেত্রে ট্রেড করতে যাওয়া মানে এক্সিট করতে প্রবলেম হতে পারে অথবা এক্সিট অর্ডার প্লেস করার পর যে দামে এক্সিট করতে চাওয়া হচ্ছে তার থেকে অনেক বেশি বা কম দামে এক্সিট হতে পারে, মানে স্প্রেড বেশি হওয়ার জন্য সবকিছু ঠিকঠাক করলেও লাভ-ক্ষতির অংকে তারতম্য হতে পারে।
নতুন ট্রেডাররা আবার সাধারণত দাম কম হয় বলে অনেক সময় এ ধরনের কম ভলিউমযুক্ত ইন্সট্রুমেন্টে ট্রেড করতে যায় এবং এই ফালতু সমস্যার সম্মুখীন হয়।
#13 শুরুতেই ডেরিভেটিভ ট্রেড করতে যাওয়া
ডেরিভেটিভ মানে ফিউচার এবং বিশেষ করে অপশন উচ্চ লেভারেজ যুক্ত সবথেকে ঝুঁকিপূর্ণ ইন্সট্রুমেন্ট। এক্ষেত্রে ট্রেড করার জন্য তুলনামূলক কম ক্যাপিটাল লাগলেও আন্ডারলাইনিং ইন্সট্রুমেন্টের সামান্য উপরনিচ এক্ষেত্রে দামের অনেক তফাৎ করে দেয়।
এ ধরনের ইন্সট্রুমেন্টে ট্রেড করলে খুব কম সময়ের মধ্যে শতাংশের হিসেবে যেমন অবিশ্বাস্য লাভ হতে পারে আবার উল্টো দিকে গেলে খুব সহজেই পুরো ক্যাপিটাল ফাঁকাও হয়ে যেতে পারে।
তাই নতুন ট্রেডারদের ডেরিভেটিভ ট্রেডিং থেকে দূরে থাকাই উচিত।
#14 সবাই যা করছে তাই করতে যাওয়া
নতুন ট্রেডারদের মধ্যে সবাই যা করছে তাই করতে যাওয়ার একটা প্রবণতা থাকে। কিন্তু ট্রেডিং তো নিজের বিজনেস। সেখানে টাকা নিজেরই লাগে। লস হলে সেটা নিজেকেই হজম করতে হয় আর লাভ হলে সেটাও নিজের কাছেই থাকে। সুতরাং নিজের ব্যবসার সিদ্ধান্তটা নিজে নেওয়াই বাঞ্ছনীয়। সবাইকে ফলো করতে গিয়ে লস হলে সেটা তো আর সবার হবে না।
সবার মতো ট্রেড করতে গেলে লাভের থেকে লসের সম্ভাবনাই বেশি হয়। কারণ এখানে ‘সবাই’ মানে হচ্ছে 95% অসফল ট্রেডার। তাই সফল হতে হলে এটা না করে পরিস্থিতির উপর বিচার করে নিজের ট্রেডের সিদ্ধান্ত স্বতন্ত্রভাবে নিজেকেই নিতে হয়।
#15 আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা
আমরা স্বাভাবিকভাবে খুবই আবেগপ্রবণ। আর ট্রেডিং-এর সময় সমস্তরকম আবেগের চরম পরীক্ষা দিতে হয়। এন্ট্রির সঠিক মুহূর্ত আসা পর্যন্ত বা এন্ট্রির পর মার্কেট ফরে গেলে সঠিক পরিমাণ লাভ হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরা, লস হলে বা কোনো ভুল করলে সেটা স্বাভাবিকভাবে মেনে নেওয়া, শান্ত ও সজাগ মনে ট্রেড করা, লাভ হলে বেশি উচ্ছসিত না হওয়া, ভয়ে আড়ষ্ট না হয়ে সঠিক সময়ে ট্রেড নেওয়া, বেশি লোভ না করা, রিভেঞ্জ ট্রেড না করা, ‘ফিয়ার অফ মিসিং আউট’ (FOMO) বা অন্য আবেগের বশবর্তী হয়ে কোনো ভুল ট্রেড না নেওয়া ইত্যাদি ট্রেডিং-এ সফল হওয়ার জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। আর এগুলোর জন্য আবেগের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ খুবই দরকার।
নতুন অনভিজ্ঞ ট্রেডারদের সাধারণত আবেগের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকেনা তাই উপরের বিষয়গুলোতে আসলে যা করা উচিত তার উল্টোটাই করে বসে।
শেষ কথা
সুতরাং এই হল নতুন ট্রেডারদের করা অনেক অনেক ভুলের মধ্যে হামেশাই ঘটা কিছু ভুলের তালিকা। সফল ট্রেডার হতে এই ভুলগুলো এড়িয়ে চলা মাস্ট!
পল বিয়ার ব্রায়ান্টের একটা উক্তি দিয়ে নিবন্ধটা শেষ করব…
“যখন আপনি কোনো ভুল করেন, তখন সে ব্যাপারে আপনার কেবলমাত্র তিনটি জিনিসই করার থাকেঃ ভুলটা স্বীকার করুন, তা থেকে শিখুন এবং পুনরাবৃত্তি করা থেকে বিরত থাকুন।”