শেয়ার বাজারে ইনভেস্টিং-এর বিষয়ে ওয়ারেন বাফেটের সেরা 5 টি পরামর্শ – যেগুলো বিনিয়োগে আপনার পথপ্রদর্শক হবে

5/5 - (2 জন রেটিং করেছেন)

আপনি শেয়ার বাজারে ইনভেস্টিং করুন বা না করুন ওয়ারেন বাফেটের কথা আশা করি শুনেছেন। এই মুহূর্তে বিশ্বের তৃতীয় ধনীতম ব্যক্তি ওয়ারেন বাফেটকে বিশ শতকের সবথেকে সফল ইনভেস্টার হিসেবে ধরা হয়।

বিগত 56-57 বছরে বাফেট বাবু ওনার ইনভেস্টমেন্ট থেকে বাৎসরিক 20%-এর থেকেও বেশি হারে রিটার্ণ উশুল করেছেন। সারা জীবন ধরে উনি কেবল তিনটেই কাজ করেছেন- ইনভেস্টিং, ইনভেস্টিং আর ইনভেস্টিং! ওনার এই সুদীর্ঘ ইনভেস্টিং জীবনের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার ঝুড়ি থেকে 5 টা সেরা টিপস বা শিক্ষণীয় বিষয় এই আর্টিকেলে শেয়ার করলাম।

1. শেয়ার বাজারে ইনভেস্টিং-এর ক্ষেত্রে আপনি কি করছেন সেটা না জানাটা সবথেকে বড় রিস্ক

আমরা যে কাজই করতে যাই না কেন, যদি না জেনে হঠাৎ করে লাফিয়ে পড়ি তাহলে কিন্তু তার ফল ভালো না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। আর এই জিনিসটা শেয়ার বাজারের জন্য ভীষণভাবে প্রযোজ্য। অনেক নতুন ইনভেস্টার – ট্রেডার ভালোভাবে না জেনে, না শিখে, না রিসার্চ করেই দুম করে শেয়ার বাজারে টাকাপয়সা লাগাতে শুরু করে। এবং তার ফলস্বরূপ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।

বাফেট বাবু বার বার বলেছেন চকচক করলেই সেদিকে না তাকাতে, এবং কেবলমাত্র ফোকাস করতে বলেছেন তার উপরই যা বোধগম্য।

বাফেটবাবু এতবড় ইনভেস্টার হয়েও টেকনোলজি কি বুঝতেন না তাই লম্বা সময় পর্যন্ত কোনও টেকনোলজি স্টকে ইনভেস্ট করেন নি। এবং টেকনোলজি স্টক অ্যাপেল-এর ব্যবসার ব্যাপারে বোঝার পর 2016 সাল থেকে এই স্টকে ইনভেস্ট করা শুরু করেন।

কিন্তু টেকনোলজি স্টকে ইনভেস্ট করেননি বলে ওনার ইনভেস্ট থেকে পাওয়া রিটার্ণে কোনও খামতি ছিল কি? মোটেও না! বরং দুর্বোধ্য জিনিস থেকে দূরে ছিলেন বলেই 2000 সালের ডট কম বাবল ওনার পোর্টফোলিওতে বিশেষ কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি।

তাই যে ধরণের ব্যবসা বোধগম্য বা যেসমস্ত কোম্পানি চেনাজানা সেধরনের ব্যবসা বা কোম্পানি খুঁজে এবং তাদের সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জেনে তবেই বিনিয়োগের ব্যাপারে ভাবা উচিৎ।

আরও পড়ুনঃ  বিনিয়োগে ডাইভারসিফিকেশন কী? কেন? কিভাবে? জানলে বেশ, নয়তো কেস!

2. সতর্ক থাকুন কিন্তু ইনভেস্টেড থাকুন

বাফেট বাবুর প্রধান ইনভেস্টমেন্ট ট্যাকটিক্স হলো হাই কোয়ালিটি স্টক খুঁজে বের করা এবং তাতে ইনভেস্ট করে লম্বা সময়ের জন্য হোল্ড করা। প্রফিট বুক করা এবং মার্কেট টাইম করতে যাওয়া উনি একদমই পছন্দ করেন না। সারা জীবনের জন্য হোল্ড করাই ওনার পছন্দ।

ওনার ইনভেস্ট করা কোকোকোলা এবং আমেরিকান এক্সপ্রেস এর শেয়ার উনি সত্যিই সারা জীবন ধরেই হোল্ড করে আছেন। তবে উনি কোনো কোনো শেয়ার যে বিক্রি করেননা তা না। যদি কোন কোম্পানির ফান্ডামেন্টালস বা কার্যপদ্ধতি বা নীতিগত দিক থেকে সেরকম কোন নেগেটিভ পরিবর্তন আসে তবে সেই শেয়ার থেকে বেরিয়ে আসার কথা ভাবা যেতেই পারে। 

তাই বিশাল লাভ পেতে হলে ভালো শেয়ার খোঁজার পর তার দামের ক্ষণিকের উপর-নিচে হওয়ার দিকে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে সেটা লম্বা সময়ের জন্য ধরে থাকতে হবে এবং সেই কোম্পানিতে সেরকম কোনো নেগেটিভ পরিবর্তন হচ্ছে কিনা সে দিকটাতে সতর্কভাবে খেয়াল রাখতে হবে। এবং সেই মতো মাঝপথে আলাদা কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সত্যিই কোন দরকার হলে নিতে হবে। 

3. শেয়ারহোল্ডার মানে অংশীদার মানে মালিক – এই জিনিসটা মাথায় রাখুন 

বাফেট বাবুর মতে শেয়ার কেনা মানে আসলে ব্যবসা কেনা বা ব্যবসার অংশীদার হওয়া। তাই কোনো ব্যবসার অংশীদার হওয়ার আগে বা কেনার আগে সেই ব্যবসা সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য ভালো করে যাচাই করে, বিশ্লেষণ করে তবেই সেই ব্যবসা কেনার কথা বা সেখানে বিনিয়োগ করার কথা ভাবা উচিত।

উদাহরণ স্বরূপ ধরা যাক স্বার্থবাবু আপনার কাছে তার চপ শিল্পের কোম্পানি 100 কোটিতে বিক্রি করার অফার দিলেন। তো আপনি কি কোনো কিছু না দেখে বা না জেনে বুঝে সঙ্গে সঙ্গেই সেই অফার গ্রহণ করে সেই কোম্পানিটা কিনে নেবেন? নাকি কেনার আগে সেই কোম্পানির লাভ কত হচ্ছে, রেভিনিউ কত জেনারেট হচ্ছে, কম্পিটিটিভ অ্যাডভান্টেজ কিরকম, ঝুঁকি কিরকম, লোন কত আছে ইত্যাদি বিষয়গুলো ভালো করে জেনে বুঝে তারপর কেনার কথা ভাববেন?

তাই বাফেট বাবুর মতে শেয়ার কেনার আগে শেয়ারের দামের সাম্প্রতিক ওঠানামার উপরে বেশি ফোকাস না করে ব্যবসাটাকে বোঝার উপর বেশি সময় ব্যয় করা উচিত।

আরও পড়ুনঃ  নিফটি ৫০ (Nifty 50) আসলে কী? এটা না জেনে শেয়ার বাজারে নামাই উচিৎ না!

একইভাবে আপনার নিজের কোম্পানি যদি কখনো ভালো না চলে আপনি সাথে সাথেই কি সেই কোম্পানিটা বেচে দেবেন বা বন্ধ করে দেবেন? নাকি যেকোনো উপায়ে সেই কোম্পানিটাকে ঘুরে দাঁড় করানোর চেষ্টা করবেন?

তাই বাফেট বাবু ভালো কোম্পানি বাছাই করে শেয়ার কেনার পর শেয়ারের দামের সাময়িক পতন হলেও কোম্পানির ফান্ডামেন্টালের দিকে নজর রেখে এবং সেই কোম্পানির উপর আস্থা রেখে তার শেয়ার হোল্ড করে থাকার পক্ষপাতী। 

4. সবাই লোভী হলে ভীত হন এবং সবাই যখন ভীত তখন লোভী হন

শেয়ারবাজার লোভ-ভয় এবং চাহিদা-যোগানের পরিবর্তনের চক্রে চলে। শেয়ার বাজারে অংশগ্রহণকারীরা যখন লোভী থেকে লোভীতর হতে থাকে তখন ইনডেক্স আরো আরো উঁচুতে উঠতে থাকে। এবং তারা একটা ব্যবসার শেয়ারের দাম এমনিতে যা হওয়া উচিত তার থেকে আরো আরো বেশি দাম দিয়ে কিনতে প্রস্তুত থাকে। ফলে ধীরে ধীরে যোগানের থেকে চাহিদা যত বাড়তে থাকে শেয়ারের দামও ততই বাড়তে থাকে।

আবার উল্টো হলে মানে যখন শেয়ার বাজারে ভয় বিরাজ করে তখন ভালো শেয়ারের চাহিদাও পড়ে যায় এবং তার ন্যায্য দামের থেকে অনেক কমে পাওয়া যায়। এবং বাফেট বাবু বলেন এইরকম সময়ই হল আদর্শ সময় শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার, মানে পছন্দের ভালো কোম্পানির শেয়ার বেশি বেশি করে কেনার।

মানে যেটা দাঁড়াচ্ছে সবাই যা করছে সেটা করলে চলবে না। বরং উল্টোটা করাই শ্রেয়। সবাই যখন বিক্রি করছে এবং ভালো ভালো শেয়ার যখন তার হিস্টোরিক্যাল লো দামে পৌঁছে যাচ্ছে তখন আরো আরো শেয়ার কিনতে হবে এবং সবাই যখন কিনতে চাইছে ও শেয়ারের দাম অত্যন্ত হাই জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে তখন সতর্ক হতে হবে, বেশি কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং কিছু বিক্রি করে প্রফিট বুকিং করা যায় কিনা সেদিকটাও ভেবে দেখতে হবে।

5. আর্থিক ক্ষতির ব্যাপারে ভীত সন্ত্রস্ত থাকুন

বাফেট বাবুর একটা বিখ্যাত উক্তি, “এক নম্বর নিয়মঃ কখনো টাকা হারিও না, দুই নম্বর নিয়মঃ এক নম্বর নিয়ম কখনো ভুলোনা।” টাকা হারাবার ব্যাপারে সব সময় ভীষণ ভাবে সতর্ক থাকতে হবে। কোম্পানির চয়ন থেকে শুরু করে শেয়ার কেনা এবং শেয়ার বেচা সবসময়ই এই সতর্কতা বজায় রাখতে হবে।

আরও পড়ুনঃ  শেয়ার ট্রেডিং শুরু করার ইচ্ছে? এগুলো না জেনে নিলে খুব হোঁচট খেতে হবে!

না কিছু জেনে শুনে আজেবাজে কোম্পানি কিনলে আর্থিক ক্ষতি হতে পারে, তাই সে ধরনের কাজ থেকে যেমন বিরত থাকতে হবে তেমনি আবার সবকিছু ঠিকঠাক করলেও কখনো কখনো কোনো কোনো শেয়ার কেনার পরে আশানুরূপ ফল না হলে বা কোনও কারনে দাম ক্রমাগত কমতে থাকলে এবং কোম্পানিটার কোনও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখা না গেলে লস যাতে আরও বড় না হয়ে যায় তার জন্য কখনোও কিছুটা লস সহ্য করে শেয়ার বেচে দিয়ে বেরিয়েও আসতে হবে। 

শেষ করার আগে—

শেয়ার বাজারে ইনভেস্টিং এর ব্যাপারে ওয়ারেন বাফেটের তরফে উপরের পাঁচটি টিপসের পর ওনার আরো একটি পরামর্শ আমি এখানে শেয়ার করতে চাইবো। বাফেট বাবু প্রচুর প্রচুর পড়শোনা করেন এবং উনি সমস্ত সিরিয়াস ইনভেস্টারদেরও তাদের দিনের একটা বড় অংশ পড়াশোনাতে ব্যয় করতে বলেন। উনি বলেন, “আমি শুধু অফিসে বসে থাকি আর সারাদিন পড়ি।” একমাত্র পড়াশোনা করলেই আপনি শেয়ার মার্কেট সম্পর্কে আরও জানতে পারবেন, নতুন শেয়ারের আইডিয়া পাবেন, কোনও কোম্পানির মধ্যে নতুন কি পরিবর্তন হচ্ছে সেগুলো সম্পর্কে অবগত থাকতে পারবেন, নতুন কি ট্রেন্ড আসছে সে সম্পর্কে ধারণা তৈরি করতে পারবেন এবং সেই নলেজের ভিত্তিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

সুতরাং শেয়ার মার্কেটে ইনভেস্টমেন্ট এর ব্যাপারে আপনি যদি সিরিয়াস হন তাহলে আজই পড়াশোনা শুরু করুন। আপনি চাইলে শেয়ার বাজার সংক্রান্ত কোনও বই পড়তে পারেন, বিভিন্ন কোম্পানির অ্যানুয়াল রিপোর্ট পড়তে পারেন বা নেটে বর্তমান হাজার হাজার ফ্রী আর্টিকেলও পড়তে পারেন। শেয়ার বাজার সম্পর্কে অনেক ফ্রি আর্টিকেল আপনি এই ব্লগেতেও পাবেন। সেগুলোতে ইন্টারেস্টেড হলে গুপ্তধন ডটকমের শেয়ার বাজার বিভাগ-এ যেতে পারেন।

আজ তাহলে এই পর্যন্তই। ভালো থাকবেন। টা টা 🙂

মন্তব্য করুন