শেয়ার বাজারের 5 স্বনামধন্য ট্রেডার – ইনভেস্টার – যারা এখানেই খুঁজে পেয়েছেন গুপ্তধন

5/5 - (3 জন রেটিং করেছেন)

আমরা অনেকেই শেয়ার বাজার-কে ভালো চোখে দেখিনা। হয়তো বা সেটা কিছুটা অজানার ভয় থেকে, কিছুটা গুজবে কান দিয়ে, আবার হয়তো বা বিশেষ কোনও অংশগ্রহণকারীর দিকে তাকিয়ে বা নিজে কিছু খুইয়ে… কিন্তু আমাদের ভালো চোখে দেখা বা না দেখায় তাদের কি এসে যায় যারা শেয়ার বাজারকে ভালবেসে, জেনে-বুঝে ও এখানে চলার নিয়ম নীতি শিখে এবং নিজেদের অভিজ্ঞতা ও দূরদৃষ্টি প্রয়োগ করে বিশাল সম্পদের অধিকারী হয়েছেন।

শেয়ার বাজারও যে উপায়ের একটা পন্থা হতে পারে, বা ঠিকঠাক পরিকল্পনা করলে শেয়ার বাজারই যে অসীম সম্পদের পথের দিশা হতে পারে সেই ব্যাপারে বিশ্বাস জন্মাবে এখানে যারা সেই পথ খুঁজে পেয়েছেন তাদের ব্যাপারে জানলে…

এই আর্টিকেলে থাকলো শেয়ার বাজারের 5 ট্রেডার – ইনভেস্টার-দের কথা যারা শেয়ার বাজারেই খুঁজে পেয়েছেন তাদের জীবনের ‘গুপ্তধন’।

1. ওয়ারেন বাফেট

এই তালিকাটায় ভারতীয়দের কথাই বলব ভেবেছিলাম। কিন্তু এই একজন মার্কিন বিনিয়োগকারীর কথা না বললেই নয়। ইনি হচ্ছেন দা লেজেন্ডারি ওয়ারেন বাফেট। তবে এনাকে আবার রেস্টুরেন্ট বা বিয়েবাড়ির বাফেট ভেবে যেন গুলিয়ে ফেলবেন না! ইনি ছাড়া এই তালিকা অসম্পূর্ণ কারণ বিংশ শতাব্দীর সবথেকে সফল বিনিয়োগকারী হিসাবে ধরা হয় এনাকেই।

শেয়ার বাজারে সাধারনত দুই ধরনের অংশগ্রহণকারী থাকে। এক দল হল ট্রেডার যারা অল্প সময়ে শেয়ার কেনাবেচা করে স্বল্প লাভের চেষ্টা করে আর এক দল হল ইনভেস্টার যারা ধৈর্যশীল এবং লম্বা সময়ের খেলোয়াড়। ইনভেস্টাররা কোনও শেয়ার কিনে লম্বা সময়ের জন্য সেটা হোল্ড করে কয়েক গুন মানে বিশাল লাভের চেষ্টা করেন। ওয়ারেন বাফেট বাবু এই দ্বিতীয় দলে পড়েন। এই বিষয়ে ওনার একটা বিখ্যাত উক্তি,- “চিরতরে হোল্ড করাই আমাদের পছন্দ”।

এখনকার গননা অনুযায়ী ওয়ারেন বাবুর সম্পত্তির পরিমাণ ভারতীয় কারেন্সিতে 89,37,00,54,00,000 টাকা। অঙ্কটা এতই বড় যে গুনতেই বেশ বেগ পেতে হয়, তাই না? উনি এই মুহূর্তে বিশ্বের তৃতীয় ধনীতম ব্যক্তি।

শৈশবের ব্যবসা – বিনিয়োগঃ 

বাফেট বাবুর বাবা একজন স্টক ব্রোকার ছিলেন। মাত্র 11 বছর বয়সে তিনি তাঁর জীবনের প্রথম স্টক কিনেছিলেন।

ছোটো থেকেই তাঁর ব্যবসায়িক মানসিকতা ছিল এবং খুব কম বয়স থেকেই খবরের কাগজ ডেলিভারি, কোকা কোলা, চুইং গাম বিক্রি ইত্যাদির মাধ্যমে আয় করতে সচেষ্ট ছিলেন। মাত্র 14 বছর বয়সেই তিনি এত টাকা জমিয়ে ফেলেন যে 40 একরের একটা জমি কিনতে সমর্থ হন। এটাই তাঁর প্রথম রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ছিল।

অল্প বয়সেই তিনি সেলুনে পিনবল গেম মেশিন বসানোর ব্যবসা শুরু করেন । মাত্র 25 ডলারে 1টা মেশিন দিয়ে শুরু হওয়ার খুব কম সময়ের মধ্যেই 3 জায়গায় আরও মেশিন বসিয়ে ব্যবসা বৃদ্ধি করেন। এভাবে  ব্যবসা সফল হয় এবং অবশেষে তিনি সেই ব্যবসা 1200 ডলারের বদলে বিক্রি করে দেন।

প্রাপ্তবয়সের বিনিয়োগ-গাথাঃ

তাঁর মেন্টর গ্রাহামের ইনভেস্টমেন্ট ফার্মে দু’বছর কাজ করার পরে তিনি নিজের ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি ‘বাফেট পার্টনারশিপ’ শুরু করেন। আগামী তিন বছরের মধ্যে তার টোটাল পার্টনারশিপের সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচ এবং তিনি ইনভেস্টরদের টাকা টাকা ডবল করে ফেলেন।

বার্কশায়ার হাথওয়ে

বাফেট পার্টনারশিপ গুলো ক্রমাগত বড় হতে থাকে এবং একসময় তিনি টেক্সটাইলের কোম্পানি বার্কশায়ার হাথওয়েতে ইনভেস্টমেন্ট শুরু করেন। এক বছরের মধ্যেই তিনি ওই কোম্পানির লার্জেস্ট শেয়ারহোল্ডারে পরিণত হন। এরপর কোম্পানির পুরো দায়িত্বভার নিজের হাতে তুলে নেন। আগামী কয়েক বছর ধরে এই কোম্পানিটিকে তিনি টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও অবশেষে এই কোম্পানির টেক্সটাইল বিজনেস পুরোপুরিভাবে বন্ধ করে এই কোম্পানির নামেই তিনি তার ইনভেসমেন্টের হোল্ডিং কোম্পানি বানিয়ে ইনভেস্টমেন্ট প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যান। এবং তখন থেকে বর্তমান পর্যন্ত তার সুদক্ষ পরিচালনায় বার্কশায়ার হাথওয়ে হোল্ডিং কোম্পানি আজ এক বিশাল কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। এই কোম্পানির মাধ্যমে তাঁর কয়েকটা উল্লেখযোগ্য ইনভেস্টমেন্ট হল কোকা-কোলা, অ্যাপল, ব্যাঙ্ক অফ আমেরিকা ও আমেরিকান এক্সপ্রেস।

আরও পড়ুনঃ  নিফটি ৫০ (Nifty 50) আসলে কী? এটা না জেনে শেয়ার বাজারে নামাই উচিৎ না!

তাঁর এই বিশাল সাম্রাজ্য কিন্তু একদিনে তৈরি হয়নি। সেই ছোট্ট বয়স থেকে শুরু করে আজকের তাঁর 92 বছর বয়স পর্যন্ত এই সুবৃহৎ সময় ধরে ধীরে ধীরে তিনি এই সম্পদ-সাম্রাজ্য বানিয়েছেন। অপেক্ষা আর ধৈর্যের ব্যপারে ওনার একটা উক্তি এখানে বলতেই হয়, “আপনি বিশাল প্রতিভাবান হন বা যতই প্রাণপণ চেষ্টা করুন না কেন, কিছু জিনিস তো সময় নেবেই। নয়জন মহিলাকে গর্ভবতী করে আপনি এক মাসে একটা সন্তানের জন্ম দিতে পারবেন না।”

ইনভেস্টিং-এর ব্যাপারে বাফেট বাবুর সেরা 5 পরামর্শ ← এই লিঙ্ক থেকে জানতে পারবেন।

2. রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা

যেমন ঝনঝনে নাম তেমনি তাঁর কাম! ভারতের শেয়ার বাজারের সাথে এনার নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ভারতের ওয়ারেন বাফেট বলা হয় রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা বাবুকেই। তবে শেয়ার বাজারে এনার যাত্রা শুরু হয়েছিল ট্রেডিং দিয়ে এবং পরে উনি ট্রেডিং-এর সাথে সাথে ইনভেস্টিং-ও শুরু করেন।

উনি যদিও এখন আমাদের মধ্যে নেই। 2022 সালের 14ই আগস্ট 62 বছর বয়সে তিনি পরলোকগমন করেন। কিন্তু উনি ভারতীয় শেয়ার বাজারের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে ইতিহাসের পাতায় চির অমলিন হয়ে থাকবেন। উনি চলে গেলেও পিছনে রেখে গেছেন সম্পদের এক বিশাল সাম্রাজ্য! ওনার মৃত্যুর সময় ওনার সম্পদের পরিমাণ ছিল 46000 কোটি।

শেয়ার বাজারের জার্নিঃ

1985 সালে তাঁর ভাইয়ের এক ক্লায়েন্টের থেকে 5000 টাকা ধার করে তাঁর শেয়ার বাজারের যাত্রা শুরু হয়।

1986 সালে প্রথম তাঁর সব থেকে বড় লাভ আসে যখন তিনি টাটা টি-এর 5000 শেয়ার কেনেন শেয়ার প্রতি 43 টাকায় এবং মাত্র ৩ মাসের মধ্যেই শেয়ার প্রতি 143 টাকায় বিক্রি করতে সমর্থ হন। এক্ষেত্রে তিনি তিন গুনের থেকেও বেশি লাভ পকেটে পোরেন।

এরপর সেসা গোয়া (এখন যার নাম বেদান্ত) কোম্পানির শেয়ার কেনেন মাত্র 25-26 টাকায় এবং এই শেয়ারের দাম 2200 হওয়া পর্যন্ত ক্রমে ক্রমে কেনাবেচা করে প্রচুর লাভ করেন।

টাটার শেয়ার-এর প্রতি ভালোবাসা

টাটার শেয়ারের প্রতি রাকেশ বাবুর বিশেষ ভালোবাসা ছিল। টাটা টি এর পর টাটা পাওয়ার থেকেও তিনি প্রচুর মুনাফা লাভ করেছিলেন। এছাড়াও টাটা মোটরস, টাটা কমিউনিকেশন্স ও ইন্ডিয়ান হোটেলস কোম্পানিতেও তিনি বিনিয়োগ করেছেন। তবে তাঁর শেয়ার বাজারের সবথেকে উল্লেখযোগ্য ইনভেস্টমেন্ট হল টাইটান। 2002-03 সালে তিনি যখন টাইটান শেয়ার কেনা শুরু করেন তখন এর দাম ছিল মাত্র 3 টাকা প্রতি শেয়ার। তিনি তখন থেকে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত টাইটানের 4.4 কোটিরও বেশি শেয়ার হোল্ড করে থেকেছেন যার এখনকার ভ্যালু 11000 কোটি!

টাইটান শেয়ার প্রাইস চার্ট
টাইটান শেয়ারের দামের গ্রাফ

বিশেষ ঘটনা

1989 তে বাজেটের ঠিক আগে মার্কেট যখন ডাউন ছিল তখন তিনি সম্ভাবনা দেখতে পান এবং মার্কেটে টাকা ঢালতে শুরু করেন। ওনার অনুমান ঠিক হয় এবং বাজেটের পর মার্কেট চাঙ্গা হতে আরম্ভ করে এবং মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই উনি ওনার ক্যাপিটাল কুড়ি গুন করে ফেলেন। একইভাবে 1992 তে হর্ষদ মেহতা স্ক্যাম যখন প্রকাশ্যে আসে সেসময়ে একগ্রেসিভলি শর্ট সেল করে তিনি প্রচুর মুনাফা অর্জন করেন।

আরও পড়ুনঃ  শেয়ার বাজারে ধস নামলে কী করা উচিৎ?

প্রাইভেট মার্কেট ইনভেস্টমেন্ট

লিস্টেড স্টক ছাড়াও প্রাইভেট মার্কেট ইনভেস্টমেন্ট থেকেও তিনি বিশাল লাভ করেছেন। এইরকম তাঁর ইনভেস্ট করা তিনটে উল্লেখযোগ্য কোম্পানি হল নাজারা টেকনোলজিস, মেট্রো ব্র্যান্ডস আর স্টার হেলথ এন্ড এলাইড ইন্সুরেন্স যেগুলো আইপিও-র পর বিশাল ভ্যালুয়েশনের কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। 

এছাড়াও তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটা ইনভেস্টমেন্ট হল ফেডেরাল ব্যাংক, ক্রিসিল, অ্যাপটেক, ফরটিস হেলথকেয়ার, লুপিন, এমসিএক্স, ইন্ডিয়াবুলস হাউসিং ফাইনান্স ইত্যাদি।

তাঁর এক বিখ্যাত উক্তি, “শেয়ার বাজার মহিলাদের মতো – সর্বদা কমান্ডিং, রহস্যময়, অপ্রত্যাশিত এবং অস্থির।” কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি এখানে সফল হয়েছিলেন ঠিক সময়ে ঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ও সেইমত ঝুঁকি নেওয়ার সাহস থাকার জন্য।

3. রাধাকৃষ্ণাণ দামানি

সুপারমার্কেটে যাওয়ার অভ্যাস যদি আপনার থাকে তাহলে ডি-মার্ট এর কোনো এক শাখায় কখনো না কখনো গিয়ে থাকবেন বা অন্তত এই নাম টা নিশ্চয়ই শুনে থাকবেন! ওই ডি মার্টেরই ফাউন্ডার হলেন রাধাকৃষ্ণাণ দামানি। ডি মার্টের ডি ইজ ফর দামানি। তবে তিনি এখন আদ্যোপান্ত বড়সড়ো একজন বিজনেসম্যান হলেও এক সময় তিনি শেয়ার বাজারের ট্রেডার – ইনভেস্টার ছিলেন। 

একটা মজার ব্যপার হচ্ছে, তিনি সাদা জামা সাদা প্যান্ট পেয়ার করে পরতেন আর এজন্য তিনি ‘মিস্টার হোয়াইট এন্ড হোয়াইট’ নামে পরিচিত।

শেয়ার বাজারের জার্নিঃ

দামানি বাবুর বাবা একজন স্টক ব্রোকার ছিলেন। কিন্তু তাঁর কর্ম জীবন শুরু হয়েছিল বল বিয়ারিং এর ব্যবসা দিয়ে। কিন্তু বাবা অকস্মাৎ মারা যাবার পর পারিবারিক ব্যবসায় তার দাদাকে সাহায্যের জন্য বাধ্য হয়ে নিজের ব্যবসা ছেড়ে পারিবারিক স্টক-ব্রোকিং ব্যবসায় নামতে হয়েছিল।

শুরু

কিন্তু শুরুতে তিনি শেয়ার বাজারের ব্যাপারে একদমই অনভিজ্ঞ ছিলেন। কিন্তু নিজে সরাসরি ইনভল্ভ না হয়ে শেয়ার বাজারে শেয়ারের দাম কিভাবে ওঠানামা করে বা কোনো স্ট্র্যাটেজি এপ্লাই করলে তার কিরকম ফলাফল হয় এবং এখানের অন্যান্য অভিজ্ঞরা কি করছে সেটা লক্ষ্য রাখতেন। তিনি তাঁর জীবনের প্রথম ইনভেস্ট করেন 32 বছর বয়সে। 

বিশেষ ঘটনা

রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালার মত হর্ষদ মেহেতা স্ক্যাম যখন প্রকাশ্যে আসে তিনিও শর্ট সেলিং-এর মাধ্যমে প্রচুর মুনাফা লোটেন। 

1995 তে যখন পিএসসি ব্যাংকগুলোর শেয়ারের দাম চড়চড় করে বাড়ছিল তখন তিনি এইচডিএফসি ব্যাংকের শেয়ার কিনেছিলেন। এবং যথা সময়ে প্রচুর লাভ পেয়েছিলেন। 2000 সালে ভিএসটি ইন্ডাস্ট্রিজ-এর শেয়ার কিনেছিলেন 85 টাকায় যার এখন দাম 3000 টাকারও বেশি।

ভিএসটি ইন্ডাস্ট্রিজ শেয়ার প্রাইস চার্ট
ভিএসটি ইন্ডাস্ট্রিজ শেয়ারের দামের গ্রাফ

তাঁর কয়েকটা উল্লেখযোগ্য বড় বড় ইনভেস্টমেন্ট হল গতি, ব্লুডার্ট, সুন্দরাম ফাইনান্স, জিলেট, ইন্ডিয়া সিমেন্ট, সিমপ্লেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার, স্পেনসার্স রিটেল, 3এম ইন্ডিয়া ইত্যাদি।

ভালো শেয়ার কম দামে বাল্কে কেনা দামানি বাবুর স্পেশালিটি ছিল। তার দূরদর্শিতা, শেয়ারবাজার সম্পর্কে গভীর ধারণা এবং তার সহজাত প্রবৃত্তি কাজে লাগিয়ে তিনি ট্রেডিং ও ইনভেস্টিং-এর মাধ্যমে শেয়ার বাজার থেকে প্রচুর আয় করতে সমর্থ হয়েছিলেন। 

4. বিজয় কেদিয়া

বিজয় কেদিয়ার গল্প সাধারণ থেকে অসাধারন হওয়ার গল্প। তিনি অনেক ইনভেস্টার দের কাছেই একজন ইন্সপিরেশন এবং রোল মডেল। শেয়ার বাজারের খুঁটিনাটিতে মাস্টারির জন্য তিনি ‘মার্কেট মাস্টার’ নামে পরিচিত।

শেয়ার বাজারের জার্নিঃ

মাত্র 19 বছর বয়সেই তিনি তাঁর শেয়ার বাজারের জার্নি শুরু করেন। দামানি বাবুর মতো তিনিও এক স্টকব্রোকিং পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন। তবে কেদিয়া বাবুর জন্ম কল্লোলিনী কলকাতায়। শেয়ার বাজার সম্পর্কে তাঁর আগ্রহ ছিল ছোটবেলা থেকেই। বাবার মৃত্যুর পর দামানি বাবুর মতোই তিনিও পারিবারিক স্টক-ব্রোকিং ব্যবসায় যোগদান করেন। কিন্তু তাঁর আসল আগ্রহ ছিল ট্রেডিং -এ। তাই তিনি তিন বছর পর ব্যবসা ছেড়ে পুরোপুরিভাবে ট্রেডিং-এ ফোকাস করেন।

আরও পড়ুনঃ  শেয়ার বাজারের 10 টা অপ্রিয় সত্য, যেগুলোর ব্যাপারে কেউ বলে না!

ট্রেডিং

কলকাতা থেকেই আগামী 8 বছর তিনি ট্রেডিং করেন। কিন্তু আশানুরূপ ফল না পাওয়ায় সাইড বিজনেস হিসাবে চা-এর ব্যবসাও করেন। এসময়ে ট্রেডিং এর পাশাপাশি তাঁর এক বন্ধুর পরামর্শে অল্প অল্প করে ইনভেস্টিং ও করতেন, এবং এক্ষেত্রে ভালো ফল হয় ও তিনি লং-টার্ম ইনভেস্টিং-এর পোটেনশিয়ালটা বুঝতে পারেন। 

ইনভেস্টিং

1990-তে তিনি মুম্বাইতে শিফট করেন এবং লং-টার্ম ইনভেস্টিং এর দিকে ফোকাস করেন। এর জন্য সে সময় তার কাছে 35000 টাকা ছিল। তিনি তার এই পুরো ক্যাপিটাল দিয়ে শুধুমাত্র পাঞ্জাব ট্রাক্টরস-এর শেয়ার কেনেন। তিন বছরের ভেতরে এই বিনিয়োগ থেকে তিনি চার-পাঁচ গুন লাভ করেন। পাঞ্জাব ট্রাক্টরসের শেয়ার বিক্রি করার পর তিনি এসিসি সিমেন্ট কোম্পানির শেয়ার কেনেন 300 টাকায়। খুব কম সময়ের মধ্যেই এই শেয়ারের দাম 3000 টাকায় চলে যায় এবং তিনি প্রফিট বুক করে নেন।

এরপরে কখনো কখনো তার কোনো কোনো ইনভেস্টমেন্টে লস হয়েছে বটে তবে তাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। একবার তিনি এজিস লজিস্টিকসের শেয়ার 14 টাকায় কেনেন এবং পরে 500 টাকায় বিক্রি করে 4000% এরও বেশি রিটার্ন পান। তিনি অতুল অটো লিমিটেডের শেয়ার কেনেন 5-10 টাকায়। প্রথম চার পাঁচ বছর এর দামে সে রকম কোনো মুভমেন্ট হয়নি। কিন্তু তিনি তার ট্র্যাটেজির উপর বিশ্বাস এবং ধৈর্য হারাননি। আরো কয়েক বছর পর এই শেয়ারের দাম 500 তে পৌঁছে যায়। এভাবেই বহু বিনিয়োগেই তিনি কয়েক গুণ রিটার্ন পেয়েছেন।

ইনভেস্টিং এর জন্য ভালো কোম্পানি খুঁজতে অন্যান্য বিষয়ের পাশে তিনি ম্যানেজমেন্টের কোয়ালিটির ওপরে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। আর তার মতে ভালো ইনভেস্টার হতে গেলে তিনটি গুন যথাঃ জ্ঞান, সাহস এবং ধৈর্য থাকা খুবই জরুরী।

5. আশীষ কাচোলিয়া

ভারতীয় শেয়ার বাজারের ‘বিগ হোয়েল’ বলা হয় আশীষ কাচোলিয়াকে। তার বর্তমান সম্পত্তির পরিমাণ 17000 কোটি। মাল্টিব্যাগার স্মল আর মিডক্যাপ স্টক খুঁজতে তিনি খুবই পারদর্শী। রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালার সাথে এনার একটা কানেকশন ছিল। এই দুজনে আরও কয়েকজনের সাথে পার্টনারশিপ করে হাঙ্গামা ডিজিটাল শুরু করেছিলেন।

কর্মজীবনের প্রথমে প্রাইম সিকিউরিটিজ এবং এডেলওয়েসিস ইকুইটি রিসার্চ ডেস্কে কাজ করার পর তিনি 2003 সালে নিজের ইনভেস্টমেন্ট ফার্ম লাকি সিকিউরিটিজ শুরু করেন।

কয়েকটা দারুন ইনভেসমেন্টঃ

পৌষক শেয়ারে এক মাসে 100% রিটার্ন পেয়েছেন।

ম্যাজিসকো শেয়ারে নয় মাসে 400% রিটার্ন পেয়েছেন।

বোদাল কেমিকালে পাঁচ বছরে 2000% রিটার্ন পেয়েছেন।

পোকারণা তে দুই বছরে 300% রিটার্ন পেয়েছেন। 

এছাড়াও ভ্যালিডাল ইন্ডাস্ট্রিজ, ক্যামলিন ফাইন, লোকেশ মেশিনস, যেন টেকনোলজিস, আশিয়ানা হাউসিং, ইক্লারেক্স ইত্যাদি কোম্পানির শেয়ারে তিনি অনেক লাভ পেয়েছেন।

শেষ করার আগে…

সংক্ষিপ্ত করে বলতে গিয়েও অনেকটা সময় খরচ করে দিলাম। তবে এতগুলো বড় বড় লোকের কথা একসাথে বলতে গেলে একটু সময় তো লাগবেই। সাকসেসফুল লোকেদের কথা জানার মাধ্যমে আমরা তাদের থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি। এই পাঁচ জনের থেকেও অনেক কিছু জানার শেখার আছে। আর শেয়ার বাজারের রথী মহারথী এই পাঁচজন বাদেও আরও অনেকেই আছেন। তাদের মধ্যে আরও কিছুজনের কথা না হয় অন্য কোন আর্টিকেলে হবে। তো আজ তাহলে এখানেই শেষ করি। আবার দেখা হবে অন্য কোন আর্টিকেলে। ভালো থেকো। টা টা 🙂

মন্তব্য করুন