আধার কার্ড দিয়ে পেমেন্ট? ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড ছাড়াই? কিভাবে…?

5/5 - (2 জন রেটিং করেছেন)

এই যুগটা টেকনোলজির, ইন্টারনেটের, স্মার্টফোনের এবং ডিজিটাল পেমেন্টের। হাই স্পিড ইন্টারনেট এবং চলনসই স্মার্টফোন যত সস্তা হয়েছে ততই ভারতের আপামর জনগন আধুনিক যুগের এইসব সুবিধেগুলো ব্যবহার করে তাদের জীবন আরও সহজ করে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে।

অফলাইনে যেকোনো দোকান, রেস্তোরাঁ বা অন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে কেনাকাটা বা খাওয়াদাওয়ার পর কিংবা আলাদা কোনো কারণে ডিজিটাল উপায়ে বিল মেটানোর সময় যেমন পিওএস টার্মিনালে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড ঘষে (সোয়াইপ করে), ঢুকিয়ে (চিপ কার্ড) বা ঠেকিয়ে (কন্টাক্টলেস ট্রানজাকশন) টাকা ট্রান্সফার করা যায় তেমনই আবার স্মার্টফোনের বিবিধ অ্যাপের মাধ্যমে ইউপিআই কিউআর কোড স্ক্যান করেও পেমেন্ট করা যায়।

কিন্তু যার কাছে ডেবিট, ক্রেডিট কার্ড কিংবা ইন্টারনেট সহ স্মার্টফোনের কোনোটাই নেই কিংবা যে এসব টেকনোলজির ব্যবহার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়, সে যদি ডিজিটাল ক্যাশলেস উপায়ে বিল পে করতে চায়, কী করবে? সে কি নতুন যুগের এই সুবিধা উপভোগ করতে পারবে না? আসলে তেমনটা মোটেও নয়, ঐসবের মধ্যে কোনোটা না থাকলেও বা ব্যবহার না করতে চাইলেও একজন ভারতবাসী তার আধার কার্ড ব্যবহার করেও ডিজিটাল পেমেন্টের সুবিধা গুলো নিতে পারবে। কিভাবে? চলুন সেটাই বিস্তারিত আলোচনা করা যাক এই নিবন্ধে।

ভিম আধার পে

ন্যাশনাল পেমেন্ট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া বা এনপিসিআই ডিজিটাল লেনদেন করার জন্য অন্যান্য বিভিন্ন ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি ‘ভিম আধার পে’ নামে একটা সিস্টেম চালু করেছে। এর মাধ্যমে দোকান, রেস্টুরেন্ট বা অন্য যেকোনো একক মালিকানার প্রতিষ্ঠান কাস্টমারের থেকে কেবলমাত্র আধার নম্বর ও বায়োমেট্রিকের মাধ্যমে পেমেন্ট নিতে পারে। এটা এনপিসিআই দ্বারা জনসাধারনের জন্য প্রবর্তিত আরও একটা আধার নির্ভর ব্যাংকিং ও পেমেন্ট সিস্টেম, ‘আধার এনাবেল্ড পেমেন্ট সিস্টেম’ বা এইপিএস-এর ব্যবসাদারদের ব্যবহার্য সংস্করণ।

আরও পড়ুনঃ  ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের মধ্যে পার্থক্য কী? কোনটা বেশি ভালো?

এর বৈশিষ্ট্য

  • ক্যাশলেস ট্রানজাকশন প্রোমোট করতে এই সিস্টেমটার প্রবর্তন করা হয়েছে।
  • এই ব্যবস্থাপনা একক মালিকানার বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কারণ যে দোকান বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এভাবে পেমেন্ট নেওয়ার ব্যবস্থা করতে চাইবে, সেই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টেও আধার লিঙ্ক থাকতে হবে।
  • এই ব্যবস্থায় বিল মেটানোর জন্য ক্রেতার আধার নম্বর আর নিজের ফিঙ্গারপ্রিন্ট ছাড়া অন্য কোনোকিছুর প্রয়োজন পড়ে না।
  • কাস্টমার তার আধারের সাথে লিংক করা যেকোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকেই টাকা ট্রান্সফার করতে পারে।
  • এই ব্যবস্থাপনা ক্যাশ ও কার্ড বহন করার প্রয়োজনীয়তা বা ঝুঁকি কমায় এবং আপামর জনগণের জন্য সব থেকে সহজে ক্যাশলেস পেমেন্ট করার সুযোগ করে দেয়।

এভাবে টাকা শোধ করতে হলে কাস্টমারের কী করণীয়?

এভাবে পেমেন্ট শুরু করার আগে কাস্টমারের কিছু পূর্বশর্ত পূরণ করা জরুরী। যেমন,

  • প্রথমতঃ যেহেতু পুরো বিষয়টা আধার নম্বরের সাথে সম্পর্কিত তাই এই সিস্টেমের সুবিধে নিতে হলে সবার প্রথমে কাস্টমারের আধার কার্ড থাকা জরুরী।
  • দ্বিতীয়তঃ এটা এক ধরনের ডিজিটাল পেমেন্ট তাই যেকোনো ব্যাংকে একটা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং সেই অ্যাকাউন্টে কেওয়াইসি করা থাকতে হবে। 
  • তৃতীয়তঃ উক্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার নম্বর লিঙ্ক লিংক করতে হবে।
  • চতুর্থতঃ ট্রানজাকশন করার সময় কাস্টমারকে নিজেকে উপস্থিত থাকতে হবে।

পেমেন্টের সময় কী করতে হয়?

বিল মেটানোর সময় যা যা করতে হয় সেগুলো নিম্নরূপঃ

  • ১) দোকানদার তার মোবাইলে পেমেন্ট গ্রহণ করার অ্যাপ চালু করে বা পিওএস মেশিনে বিলের অ্যামাউন্টটা এন্ট্রি করার পর হয় কাস্টমারকে আধার নম্বর এন্ট্রি করতে বলে বা জিজ্ঞেস করে নিজেই এন্ট্রি করে দেয়।
  • ২) এরপর ওই আধার নম্বরের সাথে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যুক্ত থাকলে সেই সমস্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মধ্যে থেকে একটা অ্যাকাউন্ট বেছে নিতে হয়।
  • ৩) সবশেষে মোবাইল বা পিওএস মেশিনের সাথে যুক্ত ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানারে নিজের যেকোনো আঙুল রেখে ট্রানজাকশন সম্পূর্ণ করতে হয়।
  • ৪) ট্রানজাকশন সম্পূর্ণ করা মাত্র বেছে নেওয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে সরাসরি দোকানদারের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে যায়।
আরও পড়ুনঃ  সেরা 9 লাইফটাইম ফ্রি রুপে ক্রেডিট কার্ড। এখন ইউপিআই-তেও ক্যাশব্যাক!

এই সিস্টেমের নিরাপত্তা

  • নিজস্ব ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করে ট্রানজাকশন কমপ্লিট হয় বলে এটা অন্য সমস্ত রকম পেমেন্টের উপায় থেকে সুরক্ষিত। কার্ড বা মোবাইল খোয়া যাওয়ার ক্ষেত্রে আনঅথরাইজড ট্রানজাকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও এক্ষেত্রে কিন্তু সেই সম্ভাবনা নেই।
  • এই ব্যবস্থাপনায় ফিঙ্গারপ্রিন্ট ম্যাচ করার জন্য আধারের ডেটাবেস ব্যবহৃত হয় যা ভারত সরকারের ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়া বা ইউআইডিএআই-এর কাছে সুরক্ষিত থাকে। আর ট্রানজাকশন অনুমোদন করার ক্ষেত্রেও এই সংস্থা জড়িত বলে এক্ষেত্রে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।
  • নিজের আধার নম্বর দোকানদারকে দেওয়ার ব্যাপারে ভরসা না করতে পারলে সরাসরি ঐ নম্বর না দিয়ে আধারের ভার্চুয়াল আইডিও দেওয়া যেতে পারে।
  • আধার নম্বরের গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য রসিদে পুরো নম্বরের উল্লেখ থাকে না।

এই সিস্টেমের অসুবিধা

সবাইকে ডিজিটাল ও ক্যাশলেস পেমেন্টের সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে এটা দারুণ একটা সিস্টেম হলেও এই সম্পর্কিত কিছু অসুবিধাও আছে। যেমন,

  • নিজে স্বশরীরে উপস্থিত না থাকলে কোনোভাবেই পেমেন্ট করা সম্ভব নয়।
  • কার্ড সঙ্গে না রাখলে আধার নম্বর মনে রাখা বেশি কঠিন।
  • দোকানদার এবং কাস্টমার উভয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আধার নম্বর লিংক করা ছাড়া এই সিস্টেম কার্যকর হওয়া সম্ভব নয়।
  • সারাদিনে ১০০০০ টাকার বেশি এবং মাসে ৫০০০০ টাকার বেশি পেমেন্ট করা যায় না।
  • যে দোকানে বিল মেটাতে চাওয়া হবে সেই দোকানদার ব্যাংকে অ্যাপ্লাই করে এভাবে পেমেন্ট নেওয়ার সুবিধা না নিয়ে রাখলে এভাবে বিল মেটানো যাবেনা।
  • এভাবে পেমেন্ট করতে কাস্টমারের কোনো কিছুর প্রয়োজন না পড়লেও এই সুবিধা দেওয়ার জন্য দোকানদারের একটা স্টেবল ইন্টারনেট কানেকশন, ওটিজির সুবিধাযুক্ত স্মার্টফোন বা অন্য পেমেন্ট ডিভাইস এবং একটা বায়োমেট্রিক ডিভাইসের দরকার পড়ে। আবার এভাবে পেমেন্ট নিতে হলে দোকানদারকে 0.25% এমডিআর ফি-ও বহন করতে হয়।

শেষ কথা 

উপরিক্ত অসুবিধা গুলো সত্বেও নতুন ভারতের ক্যাশলেস ইকোনমির পথে এটা একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ। যত বেশি সংখ্যায় ছোট ব্যবসা গুলো এই সিস্টেম এডপ্ট করবে সাধারণ মানুষ তত বেশি ক্যাশলেস লেনদেনে অংশ নিতে পারবে। আর তাতে লাভ সবারই হবে।

আরও পড়ুনঃ  ক্রেডিট কার্ডের ব্যাপারে 7 টা ভুল ধারণা বা মিথ - না জানলেই বিপদ

আজ তাহলে এখানেই শেষ করি। ভালো থাকবেন।

মন্তব্য করুন