কোটি কোটি টাকা আজকাল বন্ধ ফ্ল্যাটের ভেতরে, গাড়ির ভেতরে কিংবা অফিসের ভেতরে গচ্ছিত অবস্থায় পাওয়া গেলেও সৎভাবে কোটি টাকা আয় করা সাধারণ মানুষের পক্ষে মোটেও সহজ নয়। তবে কোটিপতি হওয়ার রঙিন স্বপ্ন দেখার বা ধরার ইচ্ছে কার না হয়! একজন সাধারন মধ্যবিত্ত মানুষের পক্ষে কোনো ভাবে ১০ বছরের ভিতরে কোটি টাকার মালিক হওয়া কি সত্যিই সম্ভব?
চলুন সেটাই আমরা খুঁজে দেখি এই নিবন্ধে…
সাধারণ আয় থেকে সাধারনভাবে কোটিপতি?
এক কোটি টাকা মানে ১০০ লাখ টাকা। এমনিতে সাধারণ নিম্ন মধ্যবিত্ত মানে যদি মাসিক আয় ১০০০০ থেকে ২০০০০ ধরে নিই, তাহলে আয়ের সমস্ত টাকা এক করলে ৫ থেকে ১০ মাসে মোট আয় হবে ১ লাখ টাকা। এই হিসাবে ১ কোটি টাকা আয় করতে এই রেঞ্জের সর্বাধিক মানে ২০০০০ আয় ধরে ৪১ বছর লেগে যাবে। রেঞ্জের নীচের দিকের টা আর না হিসাবে যাওয়াই ভালো!
যাইহোক, এটা তো গেলো শুধুমাত্র আয়ের কথা। কিন্তু কোটি টাকার মালিক হতে গেলে একটা সময়ে হাতে কোটি টাকা থাকতে হবে বা অন্তত ১ কোটির সম্পদ থাকতে হবে। আর তার জন্য আয়ের টাকা জমাতে হবে। কিন্তু জমানোর কথা তো আসে খরচের পরে। আর খরচের পর এই সামান্য আয় থেকে কতটুকুই বা জমবে? ২০০০০ থেকে কষ্টে সৃষ্টে যদি ১০০০০ জমানোও যায়, সেটা যোগ করে ১ কোটি হতে ৮৩ বছর। সুতরাং এই বুদ্ধিতে বেঁচে থাকতে তো আর কোটিপতি হওয়া হবে না! তাছাড়া এক্ষেত্রে ১০০০০ টাকা জমানোর কথা মুখে বললেও বাস্তবে সম্ভব করা প্রায় অসম্ভব।
উপরের হিসেবগুলো আবার মাসে ২০০০০ আয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আয় এর থেকে কম হলে অবস্থা যে আরো শোচনীয় সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আয় সামান্য বেশি হলে পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হবে তবে কোটির টার্গেট ছোঁয়া সম্ভব হবে না।
তবে একটা পজিটিভ দিক আছে, যত সময় পার হবে তত অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে সাথে সাধারণভাবে আয় বাড়বে। এছাড়া মুদ্রাস্ফীতির জন্য সময়ের সাথে টাকার ভ্যালু কমবে এবং একই কাজের জন্য ভবিষ্যতে অনেক বেশি টাকা আয় করা সম্ভব হবে। এবং যখন বেশি আয় হবে তখন বেশি পরিমাণে জমানোও সম্ভব হবে।
কিন্তু যত যাই হোক, আয়ের পরিমাণ অসাধারণ না হলে এবং বিশেষভাবে পরিকল্পনামাফিক না চললে এভাবে শুধুমাত্র সাধারণ ভাবে টাকা জমিয়ে ১০ বছরে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করা বেশিরভাগ মানুষের জন্যই প্রায় অসম্ভব।
একটা জরুরী পরিসংখ্যান
কোটিপতি হওয়ার উপায় খোঁজার আগে একটা পরিসংখ্যান দেখে নেওয়া জরুরী। ভারতের মোট জনসংখ্যার আয় ও সম্পদের তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি নীচের টেবিল টা দেখুন…
জনসংখ্যার ভাগ | গড় মাসিক আয় (টাকায়) | গড় সম্পদ (টাকায়) |
---|---|---|
নীচের ৫০% | ৪৬০০ | ১১৫৫০০ |
মাঝের ৪০% | ১২৬০০ | ৭২৬০০০ |
উপরের ১০% | ৯৭৪০০ | ৬৩৬০৭৫০ |
সবথেকে উপরের ১% | ৩৭০৩০০ | ৩২৪৮৮৫০০ |
উপরের টেবিলটা ভারতবর্ষের কঠিন সত্য। সমগ্র ভারতবাসীর আয় অনুযায়ী নীচের ৫০%-এর মাসিক গড় আয় মাত্র ৪৬০০ টাকা। আপনার আয় যদি এই জায়গায় থাকে এবং আপনি যদি কোনোভাবে আয় বাড়ানোর চেষ্টা না করেন বা চেষ্টা করতে সফল না হন তাহলে শুনতে খারাপ লাগলেও কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন না দেখাই ভালো।
আমি আগের পয়েন্টে দশ থেকে কুড়ি হাজারের যে মাসিক ইনকামের কথা বলেছি সেটা ভারতবর্ষের যত লোক আয় করেন তাদের মধ্যে মাঝের ৪০% এর মধ্যেই পড়বে। এবং টেবিলটায় এই গ্রুপের সারিতে (দ্বিতীয়) এদের গড় সম্পদের পরিমাণ দেখা যাচ্ছে ৭ লাখের কিছু উপরে, যেটা কোটি থেকে অনেক দূরে। আমি বলতে চাইছি যে, এই ভাগে থাকলেও কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করা খুবই কঠিন (তবে অসম্ভব না – পড়তে থাকুন…)।
এবারে আসি টপ টেন পার্সেন্ট এর কথায়। এদের দিকেও যদি তাকান দেখতে পাবেন যদিও এদের গড় মাসিক আয় প্রায় এক লাখের কাছাকাছি তবুও এদের গড় সম্পদ ৬৩ লাখ, মানে গড় সম্পদের দিক দিয়ে এরাও সকলে ১ কোটি ছুঁতে ব্যর্থ (যেহেতু গড় তাই এদের মধ্যে কারো সম্পদ ৬৩ লাখের বেশি আবার কারো কম)। মাসে গড় আয় ১ লাখের কাছাকাছি হলে ১ কোটির সম্পদ তৈরি করা অনেক সহজ হলেও অনেকেই সেটা করতে ব্যর্থ হন খরচের পরিমাণ বেশি হওয়ার জন্য বা অর্থের সঠিক ব্যবহার না করার জন্য।
সব থেকে উপরের ১% স্বাভাবিকভাবেই কোটিপতি এবং এই ভাগটাকে হিসেবের বাইরেই রাখছি কারণ এই ১%-এ যাওয়া সব থেকে কঠিন ১% কাজের মধ্যেই পড়বে এবং আপনার আমার মত সাধারন মানুষের জন্য ওই ১%-এ যাওয়ার বিতর্কের মধ্যে আমি আপাতত এই নিবন্ধে যেতে চাইছি না।
পরিসংখ্যান থেকে সিদ্ধান্ত
উপরের পরিসংখ্যান থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে, কোটিপতি হতে গেলে অন্ততপক্ষে সমস্ত ভারতবাসীর উপরের ১০% এর মধ্যে আসা জরুরী। কিন্তু পরিসংখ্যান আবার এও বলছে উপরের ১০% এরও অনেকেই কোটি টাকার সম্পদ বানাতে ব্যর্থ। সুতরাং এই গোত্রে আসার পরও জরুরী হচ্ছে একটা পোক্ত পরিকল্পনা তৈরি করার।
আয় যদি কম হয়…
কিন্তু উপরের ১০% এর গড় আয় ১ লাখের কাছাকাছি। আর যেখানে এত আয় হওয়া সত্বেও অনেকে কোটিপতি হতে ব্যর্থ হচ্ছেন সেখানে এই গড় আয়ের থেকে কম আয়ে কোটিপতি হওয়া কি সম্ভব নয়?
এতক্ষণ খানিকটা নেতিবাচক কথা শোনার পরে এবার একটু আশার কথা শুনুন…
এযাবৎ আমি যা যা বলেছি সবই আয় সংক্রান্ত। আয়ের পরে টাকা জমানোর কথা বলেছি বটে কিন্তু কোটিপতি হওয়ার বা আর্থিক স্বচ্ছলতা অর্জন করার উদ্দেশ্যে সবথেকে বড় অস্ত্র হচ্ছে শুধুমাত্র নিজে কাজ না করে নিজের আয় করা টাকাকে কাজে লাগিয়ে তাদের মাধ্যমে আরও টাকা আয় করা।
মানে টাকা থেকে টাকা বানানোর কথা বা বিনিয়োগের কথা বলতে চাইছি। হ্যাঁ, প্রাথমিক আয় কম হলে টাকা যতটা সম্ভব বাঁচানো যায় বাঁচানোর পর সেই বাঁচানো টাকা সঠিক জায়গায় সঠিক পরিকল্পনার সাথে বিনিয়োগ করলে কোটিপতি হওয়া অসম্ভব মোটেও না।
আর কোটিপতি হওয়ার জন্য এই বিনিয়োগ করা শুধু কম আয় যাদের তাদের নয়, যাদের বেশি আয় তাদের ক্ষেত্রেও জরুরী।
কোটিপতি হওয়ার প্রধান শর্ত
সুতরাং উপরের আলোচনা থেকে এখনো পর্যন্ত যে সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে তা হচ্ছে,
- কোটিপতি হওয়ার জন্য প্রথমত আয় যত বেশি হবে তত ব্যাপারটা সহজ হবে। আয় খুব কম হলে অসম্ভব না হলেও বাস্তবে কোটিপতি হওয়াটা খুবই কঠিন কাজ হবে। তবে যেহেতু আমাদের মত সাধারন গড়পড়তা মানুষের গড় আয় সাধারণত খুব কমই, তাই প্রধান চাকরি বা কাজ থেকে আসা আয় কোটিপতি হওয়ার জন্য অপ্রতুল হলেও তার পাশাপাশি অন্য উপায় অবলম্বন করে কিভাবে এই আয় বাড়ানো যেতে পারে সে ব্যাপারে পরে আসছি।
- আয় কম হোক বা বেশি, খরচের পর যতটা বেশি সম্ভব টাকা বাঁচাতে হবে। বেশি টাকা বাঁচানোর নানান পন্থার ব্যাপারে বিশদে জানতে এই লিঙ্কে দেওয়া নিবন্ধ পড়ে নিতে পারেন।
- বাঁচানো টাকাকে বিনিয়োগ করতে হবে।
বিনিয়োগের মাধ্যমে কোটিপতি
আমাদের আয় স্থির ধরে নিয়ে সবার প্রথমে আমি বিনিয়োগের মাধ্যমে কিভাবে কোটিপতি হওয়া যেতে পারে সেটা সামনে আনার চেষ্টা করব। তবে আগেই বলে রাখি বিনিয়োগের কথা যেখানে আসছে সেখানে ঝুঁকি কিন্তু থাকবেই। আর কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখলে একটু ঝুঁকি তো নিতে হবেই। একটু পরিকল্পিত ঝুঁকি নেওয়া ছাড়া কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন তো পূরণ হবে না…
যাইহোক, বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকে ফিক্স ডিপোজিট করার কথা মনে আসতে পারে, কারণ এক্ষেত্রে ঝুঁকি প্রায় নেই বললেই চলে। আর ঝুঁকি নেই বলেই এক্ষেত্রে টাকা থেকে টাকা পাওয়ার পরিমাণ বা বিনিয়োগে রিটার্নের পরিমাণও খুবই কম হয়। এবং এতটাই কম হয় যা সাধারণ গড়পড়্তা মানুষের সাধারণ আয়ে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়। তাই ব্যাঙ্কে ফিক্স ডিপোজিট করা বিনিয়োগের আদর্শ উপায় নয়।
বিনিয়োগের জন্য প্রকৃত বিনিয়োগ করার বিবিধ উপায় (← এই লিংক থেকে জানতে পারবেন) থেকে যেকোনো এক বা একাধিক উপায় অনুসরণ করা যেতে পারে। তবে আমি এখানে এমন একটা উপায় এর কথা বলব যেটা কোটিপতি হওয়ার জন্য আদর্শ।
আমি কোন দিকে যেতে চাইছি সেটা আশা করি এতক্ষণে বুঝে গেছেন। হ্যাঁ আমি শেয়ার বাজারের কথাই বলতে চাইছি। শেয়ারবাজারে সঠিকভাবে বিনিয়োগ করে প্রাথমিকভাবে আয় অনেক কম হলেও সম্পদের পরিমাণে কোটির গণ্ডি পেরোনো অসম্ভব নয়। তবে এই লক্ষ্যভেদের জন্য দরকার একটা পোক্ত পরিকল্পনার।
উদাহরণঃ
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য আমাদের পরিকল্পনার উপকরণ হিসেবে আমি শেয়ার বাজারের সবথেকে কম ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তাটাই বেছে নেব। কারণ, বেশি ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তায় আমাদের লক্ষ্যভেদের বা বিনিয়োগের রিটার্নের সম্ভাবনা অনেক বেশি হলেও যেহেতু রাস্তাটা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ সে ক্ষেত্রে লক্ষ্যভেদে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি হবে।
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সেই সব থেকে কম ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা যেটা সবার জন্য অনুসরণ করাও সহজ সেটা হচ্ছে যে কোনো মিউচুয়াল ফান্ড বা ইনডেক্স ফান্ডে এসআইপির মাধ্যমে বিনিয়োগ করা।
এই নিবন্ধের শিরোনাম অনুযায়ী আমাদের কোটিপতি হওয়ার লক্ষ্যের সময়কাল ১০ বছর। আর এই লিংক থেকে জানতে পারবেন যেকোনো কম ঝুঁকির লার্জ ক্যাপ মিউচুয়াল ফান্ডে বা ইনডেক্স ফান্ডে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বিগত ১০ বছরে কমপক্ষে ১২% বা তার বেশিই রিটার্ন পাওয়া গেছে। আর একটু বেশি ঝুঁকি নিলে বিভিন্ন মিডক্যাপ বা স্মলক্যাপ ফান্ডে ১৫ থেকে ২০% এমনকি তার বেশি রিটার্নও খুব একটা বিরল নয়। সুতরাং এ ধরনের যেকোনো ফান্ডে এসআইপির মাধ্যমে বিনিয়োগ করে কিভাবে কোটিপতি হওয়া যায় তার উদাহরণস্বরূপ কয়েকটা পরিস্থিতি এখানে তুলে ধরব…
১) প্রথম উদাহরণ হিসেবে আয় ধরব ৬০০০০ টাকা। যেহেতু আমাদের লক্ষ্য কোটি টাকার সম্পদ বানানো, সেজন্য যেন তেন প্রকারে সঞ্চয় তো বেশি করতেই হবে। তো এই ৬০০০০ টাকার মধ্যে ৩১৫০০ টাকা বাঁচাতে হবে। এবং যেহেতু প্রতিবছর ইনক্রিমেন্ট হবে তাই সেই অনুযায়ী প্রতিবছর এই সঞ্চয়ের পরিমাণটা ১০% বাড়াতে হবে।
এই হিসাব অনুযায়ী প্রতি মাসে কম ঝুঁকির যেকোনো মিউচুয়াল ফান্ডে ৩১৫০০ টাকার একটা এসআইপি যদি করা হয় এবং প্রতিবছর এর পরিমাণ যদি ১০% করে বাড়ানো যায় তাহলে মিউচুয়াল ফান্ডের প্রত্যাশিত নূন্যতম রিটার্ন ১২% ধরে নিলে দশ বছরের শেষে ১ কোটি টাকা জমে যাবে।
২) বয়স কম হলে অনেক বেশি ঝুঁকি নেওয়া যায়। কম বয়সী কারো উপরের উদাহরণের থেকে আয় বা সঞ্চয় যদি কিছুটা কমও হয়, একটু বেশি ঝুঁকির মিউচুয়াল ফান্ডে যদি বিনিয়োগ করা যায় তাহলে,
এধরণের মিউচুয়াল ফান্ডে রিটার্ন ১৮% ধরে নিয়ে প্রথম বছর ২৩৩০০ টাকা দিয়ে এসআইপি শুরু করে এবং প্রতি বছর ১০% করে এর পরিমাণ বাড়ালে ১০ বছর শেষে সঞ্চয়ের পরিমাণ ১ কোটি ছোঁবে।
৩) নিপ্পন ইন্ডিয়া স্মল ক্যাপ মিউচুয়াল ফান্ডে বিগত ১০ বছরের রিটার্ন ২৬%-এরও বেশি। যদি একটু কপাল ভালো থাকে আর নিজের বিনিয়োগ করা ফান্ডে এ ধরনের রিটার্ন পাওয়া যায় তাহলে, ১৫ হাজার টাকা দিয়ে এসআইপি শুরু করে এবং প্রতিবছরে এর পরিমাণ ১০% করে বাড়াতে থাকলেই ১০ বছরের শেষে ১ কোটির সম্পদ তৈরি হয়ে যাবে।
— উপরের উদাহরণগুলোতে যে যে শর্ত বা রিটার্নের পার্সেন্টেজের কথা ধরা হয়েছে সেগুলো বাস্তব উদাহরণ থেকেই নেওয়া। তাই ঘটনাগুলো বাস্তবে হওয়াও অসম্ভব মোটেও নয়। উদাহরণগুলোতে শর্তগুলো নিজের সুবিধেমত একটু আধটু বদলে নিলে সেইমত ফলাফল অন্য রকম হবে, তবে আশা করছি এ ব্যাপারে সামগ্রিক একটা ধারণা আপনি পেয়ে গেছেন।
আর বেশি রিটার্ন পাওয়ার জন্য এবং তার সাথে ঝুঁকিও তুলনামূলক কম রাখতে একসাথে একটাই মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ না করে একাধিক মিউচুয়াল ফান্ডেও বিনিয়োগ করা যেতে পারে।
কিন্তু উপরের উদাহরনে আয় বা সঞ্চয়ের পরিমাণ তো অনেক বেশি!
এই নিবন্ধের প্রথমে আমাদের গড় আয় খুব কম দিয়ে শুরু করে এসআইপির কথা বলার সময় আয় ও সঞ্চয়ের পরিমাণটা অনেক বেশি দিয়ে শুরু করেছি। আগেই বলেছি আয় যদি খুব কম হয় সেক্ষেত্রে কিন্তু কোটিপতি হওয়া বা কম সময়ে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন না দেখাই ভালো।
তাই এবার ফিরে আসি কোটিপতি হওয়ার প্রথম শর্তে মানে বেশি পরিমাণে আয়ের কথায়। ভারতবর্ষের বেশিরভাগ সাধারণ মানুষের মধ্যে পড়ার জন্য আমাদের আয় সাধারণভাবে এমন নয় যাতে মাসের শেষে উপরের উদাহরণ মতো মোটা অঙ্কের সঞ্চয় করা যায়। আমাদের মধ্যে বেশিরভাগের জন্যই ৩০০০০ কেন, ১৫০০০ সঞ্চয় করাও বেশ কঠিন বা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভবই নয়।
সুতরাং কোটিপতি হওয়ার জন্য সবার প্রথমে নিজের আয় বাড়ানোটা খুবই জরুরী। আর এই কাজটা আজকের এই ইন্টারনেটের যুগে নিজের প্রধান চাকরি বজায় রেখে তার পাশাপাশি বাড়িতে বসেই ইন্টারনেটে কিছু একটা করে সম্ভব করাটা খুব কঠিন কিন্তু নয়।
তবে কাজটা সহজ বললেও ভুল হবে। কিন্তু চাকরি ক্ষেত্রে যাওয়ার আগে এবং চাকরি ক্ষেত্র থেকে ফেরার পর এবং ছুটির দিনে নিজের অবসর সময় গুলোকে কাজে লাগিয়ে যদি সত্যিকারের চেষ্টা করা যায় তাহলে কিন্তু চাকরির পাশাপাশি ইনকামের আরও একটা উৎস তৈরি করে মোট আয়ের পরিমাণটা বাড়িয়ে নেওয়া খুব জটিল কাজও নয়।
কি কি উপায়ে প্রধান চাকরি বজায় রেখে পাশাপাশি কিছু করে আয় বাড়ানো যেতে পারে?
বাড়িতে বসে অনলাইনে ইনকাম করার প্রধান রাস্তা তিনটে,
- কনটেন্ট তৈরিঃ আপনার নিজের পছন্দমত লিখিত কনটেন্ট তৈরি করে ব্লগ (বা ই-বুক) বানাতে পারেন, ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে ভ্লগ বানাতে পারেন, অডিও কনটেন্ট তৈরি করে পডকাস্ট বানাতে পারেন কিংবা ক্যামেরা বা কম্পিউটারের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ছবি তুলতে পারেন বা ডিজাইন করতে পারেন। এরপর এ ধরনের কনটেন্ট আপনি বিবিধ উপযুক্ত ওয়েবসাইটে দেওয়ার পর সেখানে অ্যাড দেখিয়ে, স্পন্সরশিপের মাধ্যমে কিংবা সরাসরি বা বিবিধ অনলাইন কোর্সের আকারে বিক্রি করে আয় করতে পারেন।
- ফ্রিল্যান্সিংঃ ফাইবার বা আপওয়ার্কের মত বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটে গিয়ে নিজের দক্ষতা অনুযায়ী ক্লায়েন্টের প্রয়োজন মত কাজ করে আয় করতে পারেন।
- ই-কমার্সঃ বিবিধ ই-কমার্স সাইটে নিজস্ব ফিজিক্যাল বা ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রি করে বা বিবিধ অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম বা ড্রপশিপিং-এর মাধ্যমে অন্যের প্রোডাক্ট বিক্রি করতে সাহায্য করে আয় করতে পারেন।
খুব ছোট করে বললাম। বিষয়গুলো এতটাও ছোট নয়। আর প্রধান এই বিষয়গুলো ছাড়াও আরো অনেক উপায় আছে অনলাইনে একটা সাইড ইনকাম শুরু করার।
শেষ কথাঃ
মেরি ম্যাকলিওড বেথুন বলেছেন, “বিশ্বাস ছাড়া কোনো কিছুই সম্ভব নয়। বিশ্বাস রাখলে কোন কিছুই অসম্ভব নয়।” ১০ বছরে কোটিপতি হওয়া কঠিন, কিন্তু অসম্ভব মোটেও নয়। এটা যে সম্ভব সে বিষয়ে বিশ্বাস বিশ্বাস রেখে নিজের পরিস্থিতি মত সঠিক পরিকল্পনা তৈরি করে এবং সেটা সঠিকভাবে মেনে চললে লক্ষ্য পূরণ শুধু সময়ের অপেক্ষা।
আজ এখানেই শেষ করি। ভালো থাকবেন।