9 টা লার্জ ক্যাপ স্টক যাদের ডিভিডেন্ড ইল্ড ব্যাংকের সুদের বেশি।

5/5 - (4 জন রেটিং করেছেন)

শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে দুই ভাবে লাভ করা যায়। এক, মূলধনের মান বাড়ার মাধ্যমে আর দুই ডিভিডেন্ড পাওয়ার মাধ্যমে। মূলধনের মান বাড়া মানে যে ইন্সট্রুমেন্ট বা শেয়ারে বিনিয়োগ করা হয়েছে তার দাম বাড়া। আর ডিভিডেন্ড হচ্ছে কিছু কিছু কোম্পানি দ্বারা তাদের ব্যবসায় বিনিয়োগ করার জন্য শেয়ারহোল্ডারদের দেওয়া পুরস্কার।

সমস্ত ট্রেডার এবং বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীই শেয়ারের দাম বাড়ার উপর ভিত্তি করে ট্রেড বা বিনিয়োগের পরিকল্পনা করলেও কিছু কিছু বিনিয়োগকারী তাদের লং-টার্ম বিনিয়োগের পরিকল্পনায় ডিভিডেন্ডকেও একটা বিশেষ জায়গা দিয়ে থাকে।

এই নিবন্ধে আমরা জেনে নেব ভারতীয় শেয়ার বাজারের এমন ৯ টা লার্জ ক্যাপ স্টক বা কোম্পানির (যাদের মার্কেট ক্যাপ ২০০০০ কোটির বেশি) ব্যাপারে যেগুলোর দেওয়া ডিভিডেন্ডের হার ব্যাংকের ফিক্সড ডিপোজিটের সুদকেও হারিয়ে দেয়।

তবে আসল বিষয়ে আসার আগে কয়েকটা বিষয় জেনে নেওয়া খুবই জরুরী…

ডিভিডেন্ড কী?

ভালো ভালো কোম্পানি তাদের ব্যবসা থেকে নিয়মিত লাভ করে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই সেই লাভ ব্যবসা সম্প্রসারনের কাজে বা ধার মেটানোর কাজে ব্যবহার করে। তবে কিছু কিছু কোম্পানি তাদের অতিরিক্ত লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে শেয়ার পিছু সম হারে বণ্টন করে দেয়। একেই ডিভিডেন্ড দেওয়া বলে।

ডিভিডেন্ডের গুরুত্ব কী?

যেকোনো কোম্পানি কেবলমাত্র লাভ হলে তবেই ডিভিডেন্ড দিতে সক্ষম হয়, তাই সাধারণত নিয়মিত ডিভিডেন্ড দেওয়াটা তার একটা ভালো বৈশিষ্ট্য হিসাবে ধরা হয়। এবং প্রতিবার ঘোষিত ডিভিডেন্ডের পরিমান দেখে ব্যবসা বাড়ছে না কমছে সেটাও বুঝতে পারা যায়। তাই অনেকসময় এটাকে একটা কোম্পানির সামগ্রিক অবস্থার ব্যারোমিটার হিসাবে ধরা হয়।

আরও পড়ুনঃ  ভারতীয় শেয়ার বাজারের 10 চমকপ্রদ তথ্য। #5 আমার সবথেকে প্রিয়

বাৎসরিক ডিভিডেন্ড ইল্ড কী?

একটা শেয়ারের দামের পরিপ্রেক্ষিতে ঐ শেয়ার পিছু বাৎসরিক ডিভিডেন্ডের হারকেই ঐ শেয়ারের ডিভিডেন্ড ইল্ড বলে।

ডিভিডেন্ড ইল্ড = (শেয়ারপ্রতি বাৎসরিক ডিভিডেন্ড / শেয়ারের দাম) * ১০০

উদাহরণস্বরূপ, একটা ১০০ টাকা দামের শেয়ারে সারা বছরে যদি ১০ টাকা ডিভিডেন্ড পাওয়া যায় তাহলে ঐ শেয়ারের ডিভিডেন্ড ইল্ড হয় (১০/১০০)*১০০= ১০%।

এটা অনেকটা সুদ হিসেব করার মতোই। এই নজরে দেখলে এটা মানে আসলে শেয়ার কিনতে ব্যয় হওয়া খরচের পরিপ্রেক্ষিতে (ডিভিডেন্ড হিসাবে) পাওয়া রিটার্নের হার।

এবারে চলুন ফেরা যাক আমাদের আলোচ্য কোম্পানিগুলোর কথায়…

#১ বেদান্ত (Vedanta)

এটা একটা ভারতীয় বহুজাতিক খননকারী প্রতিষ্ঠান (Indian Multinational Mining Company)। উড়িষ্যা, রাজস্থান, গোয়া, কর্ণাটক ইত্যাদি রাজ্যের বিবিধ খনিতে এটা লোহা, তামা, অ্যালুমিনিয়াম, জিংক, সোনা, খনিজ তেল ইত্যাদি উত্তোলনের সাথে যুক্ত। খননের পাশাপাশি ব্যবসায়িক বিদ্যুৎ উৎপাদনও এই কোম্পানির কর্মকাণ্ডের মধ্যে পড়ে।

আগের অর্থবর্ষে ৫ বারে মোট ১০১.৫০ টাকা ডিভিডেন্ড দিয়ে এর ডিভিডেন্ড ইল্ড পৌঁছেছে ৩৬.০৪% -এ। বুঝতেই পারছেন এই শেয়ারের ক্ষেত্রে এই হার ব্যাংকের ফিক্স ডিপোজিটের ইন্টারেস্ট কে ছাপিয়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছে।

#২ হিন্দুস্তান জিংক

জিংক, লেড, রুপা আর ক্যাডমিয়ামের খনন, উত্তোলন এবং সাথে গলন ও উৎপাদন করে এই হিন্দুস্তান জিংক। এটা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম জিংক উৎপাদনকারী। একসময় এটা একটা পাবলিক সেক্টর আন্ডারটেকিং কোম্পানি হলেও ২০০৩ সালে বেদান্ত এর বেশীরভাগ শেয়ার কিনে নেওয়ায় ঐ সময় থেকে এটা বেদান্তের একটা সাবসিডিয়ারিতে পরিণত হয়েছে।

আগের অর্থবর্ষে ৪ বারে মোট ৭৫.৫০ টাকা ডিভিডেন্ড দিয়ে বর্তমানে এর ইল্ড ২৩.৩০%। 

#৩ ন্যাশনাল মিনারেল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন বা এনএমডিসি

এটা একটা পাবলিক সেক্টর আন্ডারটেকিং বা পিএসইউ কোম্পানি। লোহার আকরিক, তামা, ফসফরাইট, চুনাপাথর, ডলোমাইট, জিপসাম, বেন্টনাইট, ম্যাগনেসাইট, হীরে, টিন, টাংস্টেন, গ্রাফাইট, কয়লা ইত্যাদি উত্তোলনের সাথে এটা জড়িত। ভারতের সবথেকে বড় লৌহ আকরিক উত্তোলক ও রপ্তানিকারক হিসেবে ছত্রিশগড় ও কর্নাটকের বিভিন্ন খনি থেকে এনএমডিসি প্রতিবছর সাড়ে তিন কোটি টন লৌহ আকরিক উত্তোলন করে।

আরও পড়ুনঃ  শেয়ার বাজারে বিনিয়োগে ঝুঁকি কমানোর 10 উপায়। #3 সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ

এর ডিভিডেন্ড ইল্ড ১৩.০৫%।

#৪ ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন বা আইওসি

এটাও একটা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বা পিএসইউ কোম্পানি। আইওসি ক্রুড ওয়েল ও ন্যাচারাল গ্যাসের অন্বেষণ ও উৎপাদনের পাশাপাশি পরিশোধন, পরিবহন ও মার্কেটিং-এর সাথে যুক্ত। 2022 এর ফরচুন গ্লোবাল ৫০০ লিস্টের 142 তম স্থানাধিকারী এটা।

বর্তমানে এর ডিভিডেন্ড ইল্ড ১০.৬৯%।

#৫ স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া বা সেল

আরেকটা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া। নাম থেকেই পরিষ্কার, এই কোম্পানি স্টিল প্রোডাকশনের সঙ্গে জড়িত। ভিলাই, রাউরকেল্লা, দুর্গাপুর, বোকারো আর বার্নপুরে এদের পাঁচটা ইন্টিগ্রেটেড স্টিল প্ল্যান্ট আর সালেম, দুর্গাপুর ও ভদ্রাবতীতে তিনটে স্পেশাল স্টিল প্ল্যান্ট আছে। ভারতের সবথেকে দ্রুত গতিতে বেড়ে চলা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মধ্যে একটা এটা।

এই স্টকের ডিভিডেন্ড ইল্ড ১০.৫৯%।

#৬ আরইসি (পূর্ব নাম রুরাল ইলেক্ট্রিফিকেশন কর্পোরেশন)

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা পাওয়ার ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের একটা সাবসিডিয়ারি হল আরইসি। সারা ভারতব্যাপী বিদ্যুৎ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রজেক্টে প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান দেয় ও প্রোমোট করে এই কোম্পানি।

আরইসি-র ডিভিডেন্ড ইল্ড ৯.৩৪%।

#৭ কোল ইন্ডিয়া

এটাও সুপরিচিত একটা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। এর সদর দপ্তর অবস্থিত আমাদের কল্লোলিনী কলকাতায়। সারা পৃথিবীর মধ্যে সরকারি মালিকানাধীন সবথেকে বড় কয়লা উৎপাদনের কোম্পানি এটা। ভারতবর্ষে যত কয়লা উৎপাদন হয় তার মধ্যে ৮২%-ই আসে এর মাধ্যমে।

এর ডিভিডেন্ড ইল্ড ৮.৭৯%।

#৮ ইন্ডাস টাওয়ারস

এটা একটা টেলিকম টাওয়ার কোম্পানি। ইন্ডাস টাওয়ারস টেলিকম অপারেটর, ব্রডব্যান্ড সার্ভিস প্রোভাইডার ও অন্যান্য ওয়্যারলেস সার্ভিস প্রোভাইডারদের জন্য ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রোভাইড করে। এটা পৃথিবীর সবথেকে বড় টেলিকম টাওয়ার কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটা। এর কয়েকটা বড় বড় ক্লায়েন্ট হলো এয়ারটেল, জিও এবং ভি।

এই কোম্পানির বর্তমান ডিভিডেন্ড ইল্ড ৮.০৪%।

#৯ পাওয়ার ফাইন্যান্স কর্পোরেশন বা পিএফসি

আগেই বলেছি, এটা হল আরইসি-র পেরেন্ট পিএসইউ কোম্পানি। তাই এটা ঐ কোম্পানিটারই সমকক্ষ। তবে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত প্রোজেক্টের পাশাপাশি এটা শক্তি ক্ষেত্রের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য ক্ষেত্র যেমন কয়লা খনি, জ্বালানী পরিবহন ইত্যাদি ক্ষেত্রের ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রজেক্টেও প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান দেয়।

আরও পড়ুনঃ  শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ আর জীবনবীমা একইসাথে। 2 ইন 1 ইউলিপ

এর ডিভিডেন্ড ইল্ড ৭.৪৩%। 

লার্জ ক্যাপ হাই ডিভিডেন্ড ইল্ড কোম্পানির তালিকা
লার্জ ক্যাপ উচ্চ ডিভিডেন্ড ইল্ড যুক্ত কোম্পানির তালিকা। সুত্রঃ স্ক্রীনার

শেষ কথা

২০০০০ কোটির বেশি মার্কেট ক্যাপের যে সমস্ত কোম্পানির ডিভিডেন্ড ইল্ড ৭% এর থেকে বেশি সেসমস্ত কোম্পানি নিয়েই উপরের তালিকাটা তৈরি। শেয়ারগুলো সম্পর্কিত অন্য কোনো কিছুই এক্ষেত্রে ধরতব্যের মধ্যে রাখা হয়নি। এবং এক্ষেত্রে সাম্প্রতিক তথ্যসমূহ ব্যবহার করা হয়েছে। মানে ভবিষ্যতে এই তালিকা বা এখানে দেওয়া তথ্যের পরিবর্তনও হতে পারে। এছাড়া যেহেতু কেবলমাত্র এই দুই ধরনের তথ্যের উপর ভিত্তি করে এই তালিকাটা তৈরি হয়েছে, তাই এটা মোটেও বিনিয়োগ করার জন্য কোনো রেকমেন্ডেশান নয়। উচ্চ ডিভিডেন্ড প্রদানকারী কোনো স্টকে যদি আপনি বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক হন সেক্ষেত্রে এটা বাদেও শেয়ার বাছাইয়ের অন্যান্য বিষয়গুলোও দেখে নেওয়া প্রয়োজন।

এটুকু বলেই আজকের নিবন্ধ এখানেই শেষ করছি। এতখানি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

মন্তব্য করুন