মিউচুয়াল ফান্ড কত ধরণের হয়? জানুন আর সঠিক ফান্ড বেছে নিন।

5/5 - (1 জন রেটিং করেছেন)

বিনিয়োগ করার খুবই জনপ্রিয় একটা উপায় হচ্ছে মিউচুয়াল ফান্ড। এক্ষেত্রে আলাদা আলাদা প্রয়োজন এবং স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী বিভিন্ন ধরণের অ্যাসেটে বিনিয়োগের অনেক বিকল্প পাওয়া যায় আর বিনিয়োগ করাটাও খুবই সহজ।

তাছাড়া এভাবে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগের খুঁটিনাটি নিয়ে খুব একটা চিন্তাভাবনা করার প্রয়োজন পড়ে না, কারণ প্রফেশনাল ফান্ড ম্যানেজাররা এগুলো ম্যানেজ করে থাকে। তাই নিজের প্রয়োজন মত একটা মিউচুয়াল ফান্ড বেছে নিয়ে সেখানে এককালীন কিংবা এসআইপি রুটে টাকা ঢোকালেই মোটামুটি কাজ শেষ হয়ে যায়।

কিন্তু মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে চাইলে নিজের জন্য সঠিক ফান্ড বেছে নেওয়া এবং তারও আগে কত ধরণের ফান্ডের অস্তিত্ব আছে এবং সেগুলোর পিছনে অ্যাসেট অ্যালোকেশনের লজিকটা কী, সেটা জানা প্রয়োজন।

আর এই নিবন্ধে সেই বিষয়েই জানতে পারবেন।

সূচীপত্র দেখান

গঠন অনুযায়ী বিভাগ

মিউচুয়াল ফান্ডের গঠনই ঠিক করে দেয় সেটায় কত সহজে বা কখন টাকা ঢালা বা তুলে নেওয়া যাবে। গঠনের উপর ভিত্তি করে এগুলো ৩ ধরণের হয়। যথাঃ

ওপেন এন্ডেড স্কিম

এধরণের স্কিমে যখন খুশি (এনএভি তে) ইউনিট কেনা বা বেচা যায়। এছাড়া এগুলোর কোনো নির্দিষ্ট ম্যাচুরিটি পিরিয়ডও থাকেনা। তাই এগুলো খুবই লিকুইড হয়। বেশীরভাগ মিউচুয়াল ফান্ডই (~৫৯%) এধরণের ওপেন এন্ডেড ফান্ডই হয়।

ক্লোজ এন্ডেড স্কিম

এগুলো ওপেন এন্ডেড ফান্ডের ঠিক উল্টো। এগুলোর একটা নির্দিষ্ট ম্যাচুরিটি পিরিয়ড থাকে এবং কেবলমাত্র ফান্ড শুরুর সময়ই (নিউ ফান্ড অফার- এনএফও) এগুলোয় বিনিয়োগ করা যায়।

এমনিতে ম্যাচুরিটির আগে সাধারনভাবে যখন তখন এধরণের ফান্ডের ইউনিট রিডিম করা যায় না। তবে এধরণের কিছু কিছু ফান্ড এক্সচেঞ্জে লিস্টেড থাকে এবং সেক্ষেত্রে ইউনিট অন্য বিনিয়োগকারীদের বিক্রি করে দেওয়া যায়। তবে সেক্ষেত্রে লাভ হবে না লস সেটা বাজারের চাহিদার উপর নির্ভর করে।

আর কিছু কিছু ফান্ডের ক্ষেত্রে ফান্ড হাউস মাঝে মাঝে বিনিয়োগকারীদের সুযোগ দেয় সরাসরি তাদের কাছে ইউনিট বিক্রি করে দেওয়ার। এবং কোনো বিনিয়োগকারী চাইলে এভাবেও ম্যাচুরিটির আগে টাকা ফেরত পেতে পারে।

ইন্টারভাল স্কিম

এই ধরনের ফান্ডগুলো ওপেন আর ক্লোজ এন্ডেড স্কিমের কম্বিনেশন বলা যেতে পারে। এগুলো আসলে নির্দিষ্ট সময়ে পিরিওডিক্যাল এন্ট্রি বা এক্সিট করার সুযোগ সহ ক্লোজ এন্ডেড ফান্ড। 

অ্যাসেট ক্লাস বা সম্পদের শ্রেণী অনুযায়ী বিভাগ

বিভিন্ন ফান্ডে বিভিন্ন ধরণের অ্যাসেট বা সম্পদে বিনিয়োগ করা হয়। প্রধানত যে ধরণের অ্যাসেটে টাকা যায়, অর্থাৎ অ্যাসেট অ্যালোকেশন বা সম্পদ বণ্টন অনুযায়ী ফান্ডগুলোকে নিম্নলিখিত বিভাগে ভাগ করা যায়…

  1. ইকুইটি স্কিম
  2. ডেট স্কিম
  3. হাইব্রিড স্কিম
  4. সল্যুশন ওরিয়েন্টেড বা সমাধান ভিত্তিক স্কিম
  5. অন্যান্য স্কিম
আরও পড়ুনঃ  শেয়ার বাজার কেন আছে? এর প্রয়োজন কী? না থাকলেই বা কী হত?

1) ইকুইটি স্কিম

যে স্কিমে প্রধানত ইকুইটি শেয়ারে বিনিয়োগ করা হয় তাকে ইকুইটি স্কিম বলে। এধরণের স্কিম লং টার্মের বিনিয়োগের জন্য আদর্শ এবং শর্ট টার্মে ভোলাটাইলিটির সম্ভাবনা থাকে। যারা বেশি দিনের জন্য বিনিয়োগ করতে চায় বা বেশি ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত থাকে তাদের জন্য এই ধরনের স্কিম উপযুক্ত। গঠন অনুযায়ী এই স্কিমের সবধরনের ফান্ডই সাধারণত ওপেন এন্ডেড হয়।

কোম্পানির সাইজ অনুযায়ী বিভাগ

শেয়ার বাজারে লিস্টেড কোম্পানিগুলোর সাইজ অনুযায়ী সেগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। এক্ষেত্রে সেবির গাইডলাইন অনুযায়ী সবথেকে বড় (মার্কেট ক্যাপের) ১০০ কোম্পানিকে লার্জ ক্যাপ কোম্পানি, ১০১ থেকে ২৫০ তম কোম্পানিকে মিডক্যাপ কোম্পানি আর ২৫১ তম কোম্পানির পরের কোম্পানিগুলোকে স্মল ক্যাপ কোম্পানি ধরা হয়। কোন সাইজের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে ফান্ডগুলোকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যথাঃ

  • লার্জ ক্যাপ ফান্ড – যেখানে কমপক্ষে ৮০% বিনিয়োগ করা হয় লার্জ ক্যাপ স্টকে।
  • মিড ক্যাপ ফান্ড – যেখানে কমপক্ষে ৬৫% বিনিয়োগ করা হয় মিড ক্যাপ স্টকে।
  • লার্জ এবং মিড ক্যাপ ফান্ড – যেখানে কমপক্ষে ৩৫% বিনিয়োগ করা হয় লার্জ ক্যাপ এবং ৩৫% মিড ক্যাপ স্টকে। 
  • স্মল ক্যাপ ফান্ড – যেখানে কমপক্ষে ৬৫% বিনিয়োগ করা হয় স্মল ক্যাপ স্টকে।
  • মাল্টি ক্যাপ ফান্ড – এই ফান্ডে সব ধরনের, সব সাইজের কোম্পানি ধরে ইকুইটি অংশে কমপক্ষে ৬৫% বিনিয়োগ করা হয়। একে অনেকসময় ডাইভারসিফায়েড ইকুইটি ফান্ডও বলে।

বিনিয়োগের স্ট্র্যাটেজি, স্টাইল বা থিম অনুযায়ী বিভাগ

কোম্পানির সাইজের বদলে অনেক ইকুইটি ফান্ডে বিভিন্ন স্ট্র্যাটেজি, স্টাইল বা থিম অনুযায়ী অ্যাসেট অ্যালোকেশন করা হয়। এধরণের ফান্ডগুলোকে ছয় ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যথাঃ

  • ডিভিডেন্ড ইল্ড ফান্ড – এধরণের ফান্ডে বেশী ডিভিডেন্ড দেয় এমন স্টকে কমপক্ষে ৬৫% অ্যাসেট অ্যালোকেট করা হয়।
  • ভ্যালু (ভ্যালুয়েশন) ফান্ড## – কোম্পানির ভ্যালুয়েশনের উপর নির্ভর করে এই ধরণের ফান্ডের জন্য স্টক বেছে নেওয়া হয়। আন্ডারভ্যালুড স্টক (কমপক্ষে ৬৫%) বেছে নিয়ে ভ্যালু ইনভেস্টিং-এর নীতি অনুযায়ী যে ফান্ড তৈরি হয় তাকে ভ্যালু ফান্ড বলে। আর যে ধরণের স্টকের ভ্যালুয়েশন হাই হলেও বৃদ্ধির সম্ভাবনা বেশী থাকে সেই ধরণের স্টকে কমপক্ষে ৬৫% অ্যাসেট অ্যালোকেট করে গ্রোথ ইনভেস্টিং-এর নীতি অনুযায়ী যে ফান্ড তৈরি হয় তাকে গ্রোথ ফান্ড বলে।
  • কন্ট্রা ফান্ড## – বাজার সম্পর্কে উল্টো মনোভাব রেখে যে ফান্ড তৈরি হয় তাকে কন্ট্রা ফান্ড বলে। এ ধরনের ফান্ডে আন্ডার পারফর্মিং সেক্টর থেকে কম দামের স্টক বেছে বিনিয়োগ করা হয় (৬৫%) এই মনে করে যে লম্বা সময়ের বিচারে ভালো রিটার্ন পাওয়া যাবে। ট্রেন্ডের উল্টো দিকে যাওয়া হয় বলে এ ধরনের ফান্ডে ঝুঁকি বেশি থাকে এবং সাধারণত যখন বুল মার্কেট চলে তখন এ ধরনের ফান্ডগুলো ভালো পারফর্ম করে না। তবে বাজারের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এগুলোয় ভালো লাভ পাওয়া যায়।
## সেবির গাইডলাইন অনুযায়ী একটা ফান্ড হাউস ভ্যালু এবং কন্ট্রা ফান্ডের মধ্যে যেকোনো এক ধরনের ফান্ড অফার করতে পারে।
  • সেক্টরাল ফান্ড – এগুলো ইকোনমির যেকোনো একটা সেক্টর যেমন ব্যাংকিং, ফার্মা, টেকনোলজি ইত্যাদি ক্ষেত্রের বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে থাকে (কমপক্ষে ৮০%)। কেবলমাত্র একটা সেক্টরের ওপর ফোকাস করার জন্য এগুলোতে বেশি ডাইভারসিফিকেশন হয় না এবং ঝুঁকিটাও বেশী থাকে। কখন বিনিয়োগ করা হচ্ছে সেটা এ ধরনের ফান্ডের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কারণ সেক্টর সাধারণত সাইক্লিক্যাল হয়।
  • থিম্যাটিক ফান্ড – এগুলোতে একটা থিম যেমন ইনফ্রাস্ট্রাকচার, সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রিজ, পিএসইউ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ৮০% বিনিয়োগ করা হয়। সেক্টরাল ফান্ডের থেকে এক্ষেত্রে ডাইভারসিফিকেশন বেশি হয় ফলে ঝুঁকিটাও তুলনায় কম হয়।
  • ফোকাস্‌ড ফান্ড – কতগুলো স্টকে বিনিয়োগ করা হবে সেটা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ ধরনের ফান্ডে সর্বাধিক ৩০ টা স্টকে এবং অ্যাসেটের কমপক্ষে ৬৫% বিনিয়োগ করা হয়।
  • ইএলএসএস ফান্ড – ইকুইটি লিঙ্কড সেভিংস স্কিম ২০০৫ অনুযায়ী এ ধরনের ফান্ডে কমপক্ষে ৮০% ইকুইটিতে বিনিয়োগ করা হয়। এই ফান্ডে তিন বছরের লকিং পিরিয়ড থাকে এবং ইনকাম ট্যাক্সের ৮০সি সেকশনে ১.৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ট্যাক্সে ছাড় পাওয়া যায়।
আরও পড়ুনঃ  বিদেশী কোম্পানির শেয়ারে কিভাবে বিনিয়োগ করা যেতে পারে?

2) ডেট (Debt) স্কিম

ডেট ফান্ডে প্রধানত বন্ড, মানি মার্কেট ইন্সট্রুমেন্ট বা অন্যান্য ডেট সিকিউরিটিতে বিনিয়োগ করা হয়। এগুলোকে ইনকাম ফান্ডও বলে। এ ধরনের ফান্ডে ঝুঁকি কম থাকে এবং ইকুইটির তুলনায় কম (তবে অনেকটাই গ্যারান্টেড) রিটার্ন পাওয়া যায়। ইকুইটির মতোই এই ফান্ডগুলোও সাধারণত ওপেন এন্ডেড হয়। সেবির গাইডলাইন অনুযায়ী এগুলো নিম্নলিখিত ধরণের হয়ঃ

ফান্ডের নামসিকিউরিটিসিকিউরিটির ম্যাচুরিটি / ফান্ডের ম্যাকওলে ডিউরেশন
ওভার নাইট ফান্ডওভার নাইট সিকিউরিটি১ দিন
লিকুইড ফান্ডডেট ও মানি মার্কেট সিকিউরিটি91 দিন পর্যন্ত
আল্ট্রা শর্ট ডিউরেশন ফান্ড৩ মাস থেকে ৬ মাস
লো ডিউরেশন ফান্ড৬ মাস থেকে ১২ মাস
মানি মার্কেট ফান্ডমানি মার্কেট ইন্সট্রুমেন্ট১ বছর পর্যন্ত
শর্ট ডিউরেশন ফান্ডডেট ও মানি মার্কেট সিকিউরিটি১ থেকে ৩ বছর
মিডিয়াম ডিউরেশন ফান্ড৩ থেকে ৪ বছর
মিডিয়াম থেকে লং ডিউরেশন ফান্ড৪ থেকে ৭ বছর
লং ডিউরেশন ফান্ড৭ বছরের বেশি
ডায়নামিক বন্ডবিভিন্ন বন্ডপরিবর্তনশীল
কর্পোরেট বন্ড ফান্ডএএ+ বা বেশি রেটের কর্পোরেট বন্ডে ন্যুনতম ৮০%
ক্রেডিট রিস্ক ফান্ডএএ বা এর থেকে কম রেটের কর্পোরেট বন্ডে ন্যুনতম ৬৫%
ব্যাংকিং ও পিএসইউ ফান্ডব্যাংক, পিএসইউ, পাবলিক ফিনান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন ও মিউনিসিপাল বন্ডে নূন্যতম ৮০% 
গ্লিট ফান্ডগভমেন্ট সিকিউরিটিতে ন্যুনতম ৮০% বিবিধ
দশ বছরের স্থির ডিউরেশনসহ গ্লিট ফান্ডএকই১০ বছর
ফ্লোটার ফান্ড ফ্লোটিং রেট ইন্সট্রুমেন্টে ন্যুনতম ৬৫% 

ক্লোজ এন্ডেড ডেট স্কিম

  • ফিক্সড ম্যাচিউরিটি প্ল্যান (এফএমপি) ফান্ড – এগুলোতে এমন ধরনের সিকিউরিটিতে বিনিয়োগ করা হয় যেগুলোর ম্যাচুরিটি ফান্ডের ম্যাচুরিটির সঙ্গে সমান হয়। এতে লিকুইড বা আল্ট্রা শর্ট টার্ম ফান্ডের থেকে বেশি রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ক্লোজ এন্ডেড স্কিম হওয়ায় ম্যাচুরিটির আগে ইউনিট রিডিম করা যায় না। তবে এগুলো এক্সচেঞ্জে লিস্টেড থাকে এবং চাইলে ম্যাচুরিটির আগে যেকোনো সময়ে ইউনিট বেচা (কিংবা কেনা) যায়।
  • ক্যাপিটাল প্রোটেকশন ফান্ড – এই ধরনের ক্লোজ এন্ডেড ফান্ডে অ্যাসেটের ৮০% উঁচু মানের / রেটিং-এর ডেট ইন্সট্রুমেন্টে এবং ২০% ইকুইটি-তে বিনিয়োগ করা হয়। এটা আসলে একধরণের হাইব্রিড ফান্ড। এক্ষেত্রে বিনিয়োগের ঝুঁকি তুলনায় কম হয় এবং ইকুইটি অংশের জন্য রিটার্নও অন্যান্য ডেট ফান্ডের তুলনায় বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে এই ফান্ডের নামে ‘ক্যাপিটাল প্রোটেকশন’ হলেও আসলে কিন্তু এতে ১০০% ক্যাপিটাল প্রোটেকশনের গ্যারান্টি থাকেনা!
আরও পড়ুনঃ  শেয়ার বাজারে বিনিয়োগে ভালো রিটার্ন পাওয়ার সহজ সূত্র। জেনে নিলেই বাজিমাত!

3) হাইব্রিড স্কিম

এই স্কিমে ইকুইটি এবং ডেট এই দুই ধরনের অ্যাসেট ক্লাসেই বিনিয়োগ করা হয়। বিভিন্ন ধরনের অ্যাসেটের পার্সেন্টেজ এবং স্ট্র্যাটেজির উপর ভিত্তি করে এই স্কিমের অন্তর্গত বিভিন্ন ফান্ডগুলো হল,

ফান্ডের নামইকুইটি %ডেট %বিশেষ বৈশিষ্ট্য
কনজারভেটিভ হাইব্রিড ফান্ড১০-২৫%৭৫-৯৫%
ব্যালেন্সড হাইব্রিড ফান্ড**৪০-৬০%৪০-৬০%
অ্যাগ্রেসিভ হাইব্রিড ফান্ড**৬৫-৮০%২০-৩৫%
ডায়নামিক অ্যাসেট অ্যালোকেশন ফান্ড বা ব্যালেন্সড অ্যাডভান্টেজ ফান্ডডায়নামিক ভাবে ম্যানেজ করা হয়। দুই ক্ষেত্রেই ০-১০০% পর্যন্ত অ্যালোকেট হতে পারে।
মাল্টি অ্যাসেট অ্যালোকেশন ফান্ড ন্যুনতম ১০%ন্যুনতম ১০%তৃতীয় অ্যাসেট ক্লাসে ন্যুনতম বিনিয়োগ ১০%
আর্বিট্রেজ ফান্ড ন্যুনতম ৬৫%আর্বিট্রেজ স্ট্র্যাটেজি অনুসৃত
ইকুইটি সেভিংস ফান্ড ন্যুনতম ৬৫%ন্যুনতম ১০%
** সেবির গাইডলাইন অনুযায়ী একটা ফান্ড হাউস ব্যলেন্সড ও অ্যাগ্রেসিভ ফান্ডের মধ্যে যেকোনো এক ধরনের ফান্ড অফার করতে পারে।

4) সল্যুশন ওরিয়েন্টেড বা সমাধান ভিত্তিক স্কিম

রিটায়ারমেন্ট ফান্ড

এগুলো এক ধরনের হাইব্রিড ফান্ড এবং এক্ষেত্রে বিনিয়োগের একটা বড় অংশ যায় ইকুইটিতে। এধরনের ফান্ডের লক্ষ্য হচ্ছে রিটায়ারমেন্টের জন্য লম্বা সময়ের বিচারে ক্যাপিটালের বৃদ্ধি ও ইনকাম। এগুলোকে পেনশন ফান্ডও বলে। এই ফান্ডগুলো রিটায়ারমেন্টের পরে টাকা তোলার জন্য অনেক ধরনের অপশন দেয়।

এগুলো এক ধরনের ওপেন এন্ডেড স্কিম তবে এর লক ইন পিরিয়ড হয় নূন্যতম পাঁচ বছর বা রিটায়ারমেন্টের বয়স পর্যন্ত। 

চিলড্রেন্স ফান্ড

এটা খানিকটা রিটায়ারমেন্ট ফান্ডেরই সমতুল্য। এক্ষেত্রেও লকিং পিরিয়ড পাঁচ বছর অথবা সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত। সন্তানের উচ্চশিক্ষা, বিয়ে ইত্যাদি লক্ষ্য নিয়ে এধরনের ফান্ডে বিনিয়োগ করা হয়।

5) অন্যান্য স্কিম

ইনডেক্স ফান্ড

বাজারের বিভিন্ন ইনডেক্সকে ফলো করে এবং সেই অনুযায়ী অ্যাসেট অ্যালোকেট করে (ন্যুনতম ৯৫%) যে ফান্ড তৈরি হয় তাকে ইনডেক্স ফান্ড বলে। এগুলো ইনডেক্সের উপাদানের পরিবর্তন অনুযায়ী প্যাসিভ ভাবে ম্যানেজ করা হয় এবং ফান্ড ম্যানেজার অ্যাক্টিভ ভাবে এতে কখনো কোনো রিব্যালেন্স করে না। আর এই কারণে এক্ষেত্রে এক্সপেন্স রেশিও ১.৫% এর বেশি হয় না।

ফান্ড অফ ফান্ড

যে ফান্ড অন্য (দেশীয় বা বিদেশী) একাধিক মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটে বিনিয়োগ করে (ন্যুনতম ৯৫%) তাকে ফান্ড অফ ফান্ড বলে। বিবিধ ফান্ডে বিনিয়োগ করা হয় বলে এক্ষেত্রে ডাইভারসিফায়েড ফোর্টফোলিও তৈরি হয় এবং ঝুঁকিটা কমে।

শেষ কথা

সুতরাং দেখতেই পাচ্ছেন, মিউচুয়াল ফান্ড তো অনেক ধরনেরই হয়। কিন্তু এত ধরণের ফান্ডের মধ্যে কোনটা আপনার জন্য উপযুক্ত হবে সেটা আপনাকে আপনার লক্ষ্য ও ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতার উপর নির্ভর করে বেছে নিতে হবে।

মিউচুয়াল ফান্ডের গল্প আজ এখানেই ফুরালো। নটে গাছটাও মুড়ালো! 🙂 ভালো থাকবেন।


সূত্রঃ সেবিএএফএমআই


প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)

কোন ধরনের মিউচুয়াল ফান্ড সেরা?

কোন মিউচুয়াল ফান্ড সেরা সেটা বিনিয়োগকারীর উপর নির্ভর করছে। একটা ফান্ড সবার জন্য সেরা হতে পারে না। কোনো বিশেষ বিনিয়োগকারীর লক্ষ্য ও ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতার সাথে যে ধরনের ফান্ড সব থেকে ভালো খাপ খায় সেটাই তার জন্য সেরা ফান্ড।

কোন ধরনের মিউচুয়াল ফান্ডে কোনো ঝুঁকি নেই?

এরকম ধরনের কোনো ফান্ডের অস্তিত্বই নেই। সব মিউচুয়াল ফান্ডেই কিছু না কিছু ঝুঁকি থাকেই। তবে যেকোনো ডেট ফান্ডে তুলনামূলক কম ঝুঁকি থাকে।

বিনিয়োগ শুরু করার জন্য কোন ধরনের ফান্ড ভালো?

আমার মতে বিনিয়োগ শুরু করার জন্য যে কোন লার্জ ক্যাপ ফান্ড বা ইনডেক্স ফান্ড সবথেকে ভালো বিকল্প।

কোন ধরনের মিউচুয়াল ফান্ডে ভালো রিটার্নের পাশাপাশি ট্যাক্সেও ছাড় পাওয়া যায়?

ইএলএসএস ফান্ড।

কোন ধরনের ফান্ডে সবথেকে বেশি রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে?

সেক্টরাল বা থিম্যাটিক ফান্ডে উপযুক্ত সময়ে বিনিয়োগ করলে সবথেকে বেশি রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া বুলিশ বাজারে স্মল ক্যাপ ফান্ডেও ভালো রিটার্ন আসতে পারে। তবে এই দুই ক্ষেত্রেই সাধারণ নিয়মে ঝুঁকিটাও বেশি থাকে।

মিউচুয়াল ফান্ডে সবথেকে বেশি কত টাকা বিনিয়োগ করা যেতে পারে?

এক্ষেত্রে কোনো উর্ধ্বসীমা নেই।

মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা টাকা যখন খুশি তোলা যায় কি?

ক্লোজ এন্ডেড বা ইএলএসএস ফান্ড ছাড়া সব ওপেন এন্ডেড ফান্ডের ক্ষেত্রেই যখন খুশি ইউনিট রিডিম করে টাকা তুলে নেওয়া যায়।

কিভাবে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা যায়?

অনলাইনে বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে আর অফলাইনে ব্যাংক বা এএমসির অফিসে গিয়ে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা যায়। বিষদে জানতে ‘মিউচুয়াল ফান্ডে কী কী উপায়ে বিনিয়োগ করা যায়?‘- এই আর্টিকেলটা পড়ে নিতে পারেন।


মন্তব্য করুন