লোন নিয়ে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ বা ট্রেডিং – চালাকি নাকি বোকামি?

5/5 - (3 জন রেটিং করেছেন)

শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ ও ট্রেডিং দুই ক্ষেত্রেই সবথেকে বেশি প্রয়োজন যেটার সেটা হচ্ছে পুঁজি বা টাকা। কিন্তু বেশিরভাগ ট্রেডার ইনভেস্টার রিটেল বা সাধারণ মানুষ হওয়ায় তাদের কাছে ওই প্রধান জিনিসটারই তো অভাব!… আর তাই ঐ অভাব ঘোচাতে এবং শেয়ার বাজারের বিবিধ অ্যাক্টিভিটিতে ভালোভাবে অংশ নিতে অনেকেই যে ভয়ানক পথ ধরে বসে সেটা হচ্ছে লোন নিয়ে ট্রেডিং বা ইনভেস্টিং।

এই পথটাকে আমি ভয়ানক কেন বললাম, এভাবে লোন নিয়ে শেয়ার বাজারে টাকা লাগানো কতটা সঠিক বা কতটা যুক্তিযুক্ত সেই নিয়েই আলোচনা করব এই নিবন্ধে।

সূচীপত্র দেখান

এই প্রসঙ্গটা অর্থাৎ লোন নিয়ে শেয়ার বাজারে খাটানোর কথা আসে কেন?

লোনের টাকা শেয়ার বাজারে — আগেও বলেছি, আবারো বলছি বিষয়টা ভয়ানক, সর্বনাশা। কেন সে ব্যাপারে একটু পরে আসছি। কিন্তু কথাটা হচ্ছে ভয়ানক হলেও প্রসঙ্গটা কিন্তু চলেই আসে। কারণ, লোন করা মানে বিনিয়োগ বা ট্রেডিং-এর জন্য বেশি টাকা হাতে পাওয়া। আর শেয়ার বাজারে কিছু ক্ষেত্রে হাতে বেশি টাকা থাকলে যেমন অনেকগুলো অতিরিক্ত সুবিধা পাওয়া যায় তেমনই আবার কিছু ক্ষেত্রে বেশি টাকা হলে তবেই অংশ নেওয়া যায়।

#১ পুঁজি বেশি থাকার সুবিধা

বেশি টাকা মানে বেশি লাভ

শেয়ার বাজারে লাভের পরিমাণ পুঁজির পরিমাণের সমানুপাতিক। অর্থাৎ পুঁজি যত বেশি থাকে বা ট্রেডিং ইনভেস্টিং-এর ক্ষেত্রে যত বেশি টাকা লাগানো যায় লাভের (বা লসের) পরিমাণ তত বাড়ে।

তুলনামূলক কম চার্জ লাগে

ট্রেডিং বা ইনভেস্টিং – উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন, পুঁজি বেশি না থাকলে বেশি কোয়ান্টিটি কেনাবেচা করা যায় না। আর যত কম কোয়ান্টিটি বা যত কম টাকায় কেনাবেচা করা হয় তুলনামূলকভাবে চার্জ তত বেশি পড়ে। অন্যদিকে টাকা বেশি থাকলে একসাথে যত বেশি বেশি কোয়ান্টিটি কেনাবেচা করা হয়, তত তুলনামূলকভাবে চার্জ গুলো কম পড়ে। ফলে বেশি পুঁজিতে লাভের পার্সেন্টেজ বেশি হয়।

মানসিক সাপোর্ট পাওয়া যায়

মানসিক স্থিরতা ছাড়া ট্রেডিং-এ সফল হওয়া সম্ভব নয়। পজিশন নেওয়ার আগে ভয় না করা আর পজিশন নেওয়ার পর উদ্বিগ্ন না হওয়া এক্ষেত্রে মানসিক স্থিরতার দুই লক্ষণ। এ ধরনের মানসিকতা তৈরি হওয়ার পিছনে একটা বড় ভূমিকা পালন করে পুঁজি। হাতে বেশি টাকা থাকলে তার তুলনায় ঝুঁকির পরিমাণটা কম হয় এবং লস হলেও তার হার-টা কম হয়। ফলে মানসিকভাবে অনেক সহজে বিষয়গুলোর সাথে মানিয়ে নেওয়া যায়। এবং আল্টিমেটলি ট্রেডিং-এ পারফরম্যান্স ভালো হয়।

কিছু স্ট্র্যাটেজির প্রয়োগ ভালোভাবে করা যায়

কিছু কিছু স্ট্র্যাটেজি বেশি পুঁজি বা বেশি কোয়ান্টিটি কেনার ক্ষমতা সহ প্রয়োগ করলে ফল ভালো হয়। যেমন ধরুন যদি এন্ট্রি এবং এক্সিট প্ল্যান একটা রেঞ্জের মধ্যে ধাপে ধাপে করার প্ল্যান করা হয় তাহলে সেটা যৎসামান্য কোয়ান্টিটিতে ভালোভাবে প্রয়োগ করা যায়না।

বড় টার্গেট ও স্টপলস নেওয়া যায়

পুঁজি যখন কম থাকে তখন সব সময় চেষ্টা রাখতে হয় যাতে লসটা যত সম্ভব কম হয়। আর সেই কারণে  বেশি বড় স্টপলস বা টার্গেটের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া যায় না। এবং কখনও কখনও খুব কাছাকাছি স্টপলস সেট করার জন্য ভালো ট্রেডও বিগড়ে যায়।

আরও পড়ুনঃ  ইনভেস্টিং বনাম ট্রেডিং - আলাদা কোথায়? শেয়ার বাজারে কোন পথে যাবেন?

পুঁজি বেশি থাকলে পর্যাপ্ত স্টপলস এবং টার্গেট নেওয়ার ফ্লেক্সিবিলিটি পাওয়া যায় যাতে প্রাইস মুভমেন্ট করার জন্য যথেষ্ট রুম পায়। আর এতে ট্রেড সফল হওয়ার সম্ভাবনাটা বেড়ে যায়।

ভালোভাবে রিস্ক ম্যানেজমেন্ট করা যায়

কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভালোভাবে রিস্ক ম্যানেজমেন্ট করার জন্যও বেশি পুঁজির দরকার পড়ে। এমনিতে যেকোনো ট্র্রেড নেওয়ার সময় সাধারণ নিয়ম হচ্ছে ২-৩%-এর বেশি ঝুঁকি না নেওয়া। পুঁজি কম থাকলে কম ঝুঁকিপূর্ণ ইন্সট্রুমেন্ট যেমন যেকোনো শেয়ারের উপর ট্রেড করার সময় কম টাকায় কম কোয়ান্টিটি কিনে এটা ম্যানেজ করা গেলেও সব ধরণের অ্যাসেটের ক্ষেত্রে কম টাকায় ভালোভাবে রিস্ক ম্যানেজ করা যায়না।

যেমন, ভীষণভাবে লিভারেজড ইন্সট্রুমেন্ট অপশন এর উপর ট্রেড করতে হলে কম টাকায় ট্রেড নেওয়া গেলেও রিস্ক ম্যানেজ করার জন্য বেশি পুঁজি থাকার দরকার পড়ে। অপশনে ট্রেড করা মানে আসলে শেয়ার বা ইন্ডেক্সের ছোটো ছোটো মুভমেন্টকে অ্যামপ্লিফাই করে লাভের চেষ্টা করা। অপশনের ক্ষেত্রে পার্সেন্টের বিচারে দেখলে দেখা যাবে খুব কম সময়ে ঝটপট ১০-২০-৩০% এমন কি ১০০-২০০% রিটার্নও পাওয়া যায়। কিন্তু রিটার্নের মতো ঝুঁকির সম্ভাবনাও এক্ষেত্রে অনেক বেশি থাকে।

তাই অপশন বা এই জাতীয় হাই রিস্ক ইন্সট্রুমেন্ট কেনার ক্ষেত্রে মার্জিন কম প্রয়োজন পড়লেও ক্যাপিটাল বেশি হলে এবং তার মধ্যে খুব সামান্য পরিমাণ ব্যবহার করলে তবেই রিস্ক রিওয়ার্ডের রেশিওটা ঠিক রাখা যায়।

বেশীক্ষণ ময়দানে টিকে থাকা যায়

ট্রেডার অনভিজ্ঞ হোক বা অভিজ্ঞ, সবাই-ই যেমন কখনো কখনো উইনিং স্ট্রিকের মধ্যে দিয়ে যায় তেমনি কখনো কখনো লুজিং স্ট্রিকের মধ্যে দিয়েও যায়। পুঁজি কম থাকলে লম্বা একটা লুজিং স্ট্রিক আবার উইনিং স্ট্রিকে ফেরার সুযোগটা আসার আগেই সবকিছু ঘেঁটে দিতে পারে। কিন্তু অ্যাকাউন্টে বেশি টাকা থাকলে পরপর লস হলেও সেটা লম্বা সময় ধরে সহ্য করা যায়।

তাই পুঁজি বেশি থাকলে প্রতিকুল পরিস্থিতিতে লম্বা সময় (আবার অনুকুল পরিস্থিতি আসা পর্যন্ত) ময়দানে টিকে থাকা যায়।

#২ পুঁজি কম থাকার অসুবিধা

কিছু স্ট্রাটেজি ব্যবহারই করা যায় না

কিছু কিছু স্ট্রাটেজি প্রয়োগ করার জন্য বেশি পুঁজির দরকার পড়ে। যেমন ধরুন নেকেড অপশন বাইং ছাড়া বেশীরভাগ অপশন ট্রেডিং স্ট্রাটেজি ব্যবহার করতে চাইলে অনেক টাকার দরকার পড়ে। এবং পুঁজি অপ্রতুল হলে সেসব স্ট্র্যাটেজিগুলো ব্যবহারই করা যায় না। 

সব ধরণের ট্রেডিং ইন্সট্রুমেন্ট কেনাবেচা করা যায় না

শেয়ার বাজারের কিছু কিছু ইন্সট্রুমেন্টের ক্ষেত্রে নিম্নতম পুঁজির প্রয়োজনীয়তা টা বেশ বড়। যেমন ধরুন অপশন সেলিং-এর ক্ষেত্রে সবথেকে কম বা ১ লটে কাজ করতে চাইলেও মোটামুটি কমপক্ষে এক লক্ষ টাকার কাছাকাছি টাকা তো লাগেই। তাই বেশি টাকা না থাকলে এই পথে আসাই যায়না।

ইনভেস্টিং-এর ক্ষেত্রেও ভালো কিন্তু দামী শেয়ার হলে এবং অনেক পরিমাণে কিনতে চাইলে কিংবা পোর্টফোলিওতে নিয়মিত কোয়ান্টিটি যোগ করে অ্যাভারেজিং করতে চাইলে বেশি টাকা ছাড়া সম্ভব হয়না।

#৩ লোনের রাস্তা ধরার অন্যান্য কারণ

উপরের কারণগুলো ছাড়া আরও কিছু কারণ আছে যেগুলো অনভিজ্ঞ ট্রেডার-ইনভেস্টারদের লোন করা টাকা শেয়ার বাজারে লাগানোর দিকে ঠেলে দেয়। যেমন,

গল্প

শোনা যায় কিংবদন্তি বিনিয়োগকারী রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা তাঁর শেয়ার বাজার কেরিয়ারের প্রথম দিকে উঁচু সুদে বিশাল পরিমাণ টাকা ঋণ নিয়ে শেয়ার বাজারে খাটিয়েছিলেন এবং ঋণের সুদের থেকে অনেক বেশি হারে রিটার্ন পেয়েছিলেন। রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালার এখনকার পর্বত প্রমাণ সম্পত্তি সেদিন ঋণ নিয়ে ওই ঝুঁকিটা না নিলে হয়তো হত না।

এই ধরণের গল্প শুনে অনেকেই তাদের নিজেদের কপাল পরীক্ষা করতে একই পথ ধরে। (তবে তার ফল কেমন হয় সেটা ক্রমশ প্রকাশ্য!) 

প্রাইস হিস্ট্রি

শেয়ার বাজারে লিস্টেড অনেক বড় বড় কোম্পানির লম্বা সময়ের প্রাইস চার্ট দেখলে দেখা যায় লম্বা সময়ের বিচারে অনেক ক্ষেত্রেই ব্যাংকের লোনের থেকে অনেক বেশি রিটার্ন পাওয়া যায়। তাই অনেকে নিজের পছন্দের শেয়ারের প্রাইস হিস্ট্রি দেখে ধরে নেয় ভবিষ্যতেও একইভাবে ভালো রিটার্ন দেবে। এবং লোনের টাকায় শেয়ার কেনার ঝুঁকিটা নিয়ে নেয়।

আরও পড়ুনঃ  শেয়ার বাজারের 5 স্বনামধন্য ট্রেডার - ইনভেস্টার - যারা এখানেই খুঁজে পেয়েছেন গুপ্তধন

ধৈর্যের অভাব ও লোভ

মানুষ চিরকালই রাতারাতি বড়লোক হতে চায়। ধীর গতিতে সম্পদ তৈরির ধৈর্য তাদের থাকেনা। আর কম সময়ে বড়লোক হওয়ার দুঃসাহসিক স্বপ্ন তথা চটপট অনেক লাভ করার লোভ নিয়ে লিভারেজড পজিশন নেওয়ার জন্য লোন নিয়ে বিনিয়োগ তথা ট্রেড করতে উদ্যত হয়।

আশা

ব্যবসাক্ষেত্রে লোন নেওয়া খুবই প্রচলিত একটা পথ। সেক্ষেত্রে লজিক হচ্ছে বেশি টাকা লাগিয়ে তাড়াতাড়ি ব্যবসা বড় করা এবং ব্যবসা তথা রেভিনিউ বাড়ার সাথে সাথে লোনে দেওয়া সুদের থেকে বেশি হারে লাভ করে লোনের টাকা শোধ করে দেওয়া।

শেয়ার বাজারে ট্রেডিং-টাকেও একধরণের ব্যবসা হিসেবেই ধরা হয়। তাই এক্ষেত্রেও অনেক ট্রেডার লোনের রাস্তা ধরে এই আশা করে যে লোন নিয়ে ট্রেড বা ইনভেস্ট করে ব্যাংকের সুদের থেকে বেশি হারে লাভ করতে পারবে এবং লাভের টাকায় ধীরে ধীরে লোন শোধ করে দিতে পারবে।

লোন করে শেয়ার বাজারে টাকা লাগানোর বিপদ

burden

শেয়ার বাজারে লাভ করার প্রচেষ্টায় ১০০ জনের মধ্যে ৯৯ জনই অসফল হয়। আর দেখা যায় সফল ১% এর মধ্যে বেশিরভাগই সাধারণত এই বাজারের বাইরেই বিশাল পুঁজির অধিকারী হয়। অর্থাৎ বিশাল পুঁজিতে অল্প অল্প লাভই শেয়ার বাজারে সাফল্যের প্রধান মূলমন্ত্র। তাই শেয়ার বাজারে ট্রেড বা ইনভেস্ট যাই করা হোক না কেন, দুই ক্ষেত্রেই টাকার গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

হাতে বেশি টাকা থাকলে সুবিধে যে পাওয়া যায় সে ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই। কিন্তু সেই টাকা যদি লোনের টাকা হয় তাহলে কিন্তু আবার বিষয়টা উল্টো হয়ে যায়, অর্থাৎ সেটা সুবিধার বদলে বেশীরভাগ সময়েই অসুবিধার কারণ হয়ে যায়। কেননা,

#১ শেয়ার বাজার খুবই ভোলাটাইল বা অস্থির

শেয়ার বাজারের প্রধান বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে ভোলাটিলিটি। এখানে লিস্টেড প্রত্যেকটা শেয়ারের দাম অনবরত ওঠানামা করে এবং দাম কখন কোথায় যেতে পারে সেটা কেউ বলতে পারেনা। আর দাম বাড়ুক বা কমুক কত সময়ের জন্য বেড়ে থাকবে বা কমে থাকবে সেটারও কোনো ঠিক ঠিকানা থাকেনা। আর এটা ভালো খারাপ সব শেয়ারের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হয়।

ভালো ভালো কোম্পানির শেয়ার যেগুলোর বিগত ২০-৩০ বছরের দামের চার্ট যদি দেখা যায় দেখা যাবে হয়তো এর মাঝে কোনো একটা বছরে ডবল রিটার্ন দিয়েছে। আবার হয়তো অন্য ৫ বছর তেমন কিছু রিটার্নই দেইনি।

শেয়ারের দামের এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের জন্য অভিজ্ঞ ইনভেস্টাররা ভালো শেয়ার বেছে নিয়ে লম্বা সময়ের জন্য ইনভেস্টেড থাকার পক্ষপাতী হয়। কারণ ছোটো সময়ের ভোলাটিলিটি লম্বা সময়ের বিচারে ন্যাস্যাত হয়ে যায়। কিন্তু নিজের টাকায় ভালো শেয়ারে এভাবে লম্বা সময় চোখ বুজে ইনভেস্টেড থাকা গেলেও টাকাটা লোনের হলে গল্পটা আলাদা হয়ে যায়।

লোনের টাকায় সুদসহ লোন শোধ করার বিষয় চলে আসে। তাই এক্ষেত্রে বিনিয়োগের পর লম্বা সময় রিটার্ন না পেলে হিসেবগুলো উল্টোপাল্টা হয়ে যায়। নিজের টাকায় বিয়ার ফেজে চুপচাপ বসে থাকা গেলেও লোনের টাকার ক্ষেত্রে সেটা হয়না। কারণ বিয়ার ফেজ পেরিয়ে আবার কখন বুল ফেজ আসবে সেটা কিন্তু কেউ জানেনা। শেয়ার দাম বাড়ার আগে এক্সট্রা টাইম নিলেও লোন শোধের ক্ষেত্রে কিন্তু ইচ্ছেমত এক্সট্রা টাইম পাওয়া যায়না!

#২ ইনস্টলমেন্ট ও সুদের বোঝা

লোন যে শর্তেই নেওয়া হোকনা কেন, আজ বা কাল এককালীন বা ইন্সটলমেন্টে সুদসহ আসল শোধ করতে বাধ্য থাকতে হয়। ফলে একদিকে যেমন নিজের স্ট্র্যাটেজি ঠিকভাবে অনুসরণ করতে সমস্যা হয় তেমনি আবার অন্যদিকে লাভ পেলেও সেই লাভে ভাগ বসাতে থাকে লোনের সুদ।

#৩ লিভারেজ যেন শাঁখের করাত 

লোন করা টাকা শেয়ার বাজারে ব্যবহার করা মানে আসলে লিভারেজের ব্যবহার করা। এই লিভারেজ আসলে শাঁখের করাতের মতো। অনুকূল পরিস্থিতিতে এটা যেমন বেশি লাভের সুযোগ করে দেয় ঠিক তেমনি প্রতিকূল পরিস্থিতিতে লস বড় হওয়ার কারণ হয়। তাই অনভিজ্ঞ হলে কিংবা বাজার সম্পর্কে গণনা ভুল হলে লোনের জন্য বড় খেসারত দিতে হয়।

#৪ এমার্জেন্সি

আমাদের জীবনে বিভিন্ন কারণে ফাইন্যান্সিয়াল ইমার্জেন্সি যখন খুশি আসতে পারে। আর সে সময়ে লোন করা ছাড়া আর কোনো গতি থাকে না। কিন্তু ইতিমধ্যেই শেয়ার বাজারে লাগানোর উদ্দেশ্যে লোন করা থাকলে হয় নতুন করে লোন পাওয়া যায় না কিংবা লোনের বোঝা আর বাড়ানো সম্ভব হয় না। ফলে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের সমস্ত পরিকল্পনা মাঝপথেই ভঙ্গ করে বাজার থেকে টাকা তুলে নিতে বাধ্য হতে হয়। ফলে একদিকে যেমন শেয়ার বাজারে লস খাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় তেমনি অন্যদিকে সুদের বোঝা গোদের ওপর বিষ ফোড়ার মত হয়ে যায়। 

আরও পড়ুনঃ  শেয়ার বাজার কি জুয়াড়িদের জায়গা?

#৫ গল্পের পিছনের আরেক গল্প 

একটু আগে বলা রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালার যে গল্পটা অনেককে এই পথ ধরতে অনুপ্রাণিত করে সেটাকে ব্যতিক্রমী বলে ধরে নেওয়াই ভালো। তিনি দূরদর্শী ছিলেন বটে তবে খানিকটা সৌভাগ্যবানও ছিলেন। প্রথম জীবনে লোন করে বিশাল ঝুঁকি নেওয়ার পর যদি দুর্ভাগ্যবশত বাজার তার প্রত্যাশার বিপরীতে যেত তাহলে হয়তো আজ আমরা যে রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালাকে চিনি তিনি ঋণের বোঝার চাপেই কোথাও হারিয়ে যেতেন।

এই একটা সাফল্যের গল্প কিংবদন্তী হয়ে থাকলেও একই কারণে কতশত বিনিয়োগকারী যে সর্বশান্ত হয়ে গেছে সেগুলো কিন্তু সবাই জানতে পারেনা বা জানতে চায়-ও-না।

শেষ কথাঃ আমাদের করনীয়

পোড় খাওয়া বড় বড় অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা সবসময়ই লোন নিয়ে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের বিষয়ে সাবধান করেন। কারণ তারা জানেন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এটা কোন ভরসাযোগ্য বিকল্প নয়। এই বাজার রাতারাতি বড়লোক হওয়ার জায়গা নয়। দীর্ঘ সময় ধৈর্য ধরে ধীরে ধীরে নিজের সাধ্যমত বিনিয়োগ করাই এখানে সম্পদ তৈরীর আসল মন্ত্র।

তবে কিছু কিছু পরিস্থিতিতে হয়তো লোনের টাকায় বিনিয়োগ করলে বড় লাভের সুযোগ পাওয়া যেতে পারে। এই যেমন করোনার সময়ই ধরুন, হু হু করে বিশাল একটা ধস নামার পরই ‘ভি’ আকারে রিকভারি হয়েছিল এবং বাজার যতখানি পড়েছিল তার থেকে আরও বেশি উঠে গিয়েছিল খুব কম সময়ের মধ্যেই। তো, কেউ যদি করোনায় ধস নামার পরে লোন নিয়ে ভালো ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে দিত তাহলে কিন্তু লোনের সুদের থেকে কয়েক গুণ রিটার্ন পাওয়ার সুযোগ পেতো!

তবে এখানেও কিছু ‘কিন্তু’ আছে। করোনায় বাজার কতখানি পড়তে পারে সেটা আগে থেকে কেউ জানত না। আর বাজার পড়ার পর ‘ভি’ আকারে রিকভারির কথাও অজানা ছিল। আর পরিস্থিতি সামান্য অন্যরকম হলে বাজারের প্রতিক্রিয়াও অন্যরকম হতে পারত।

সুতরাং, এই ধরনের বিশেষ কোনো পরিস্থিতিতে যখন বাজার খুব তাড়াতাড়ি কোনো একদিকে মুভ করার সম্ভাবনা তৈরি হয় এবং বাজার সম্পর্কে ভীষণ অভিজ্ঞ কেউ সে ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে পূর্ব-অনুমান করতে পারে তখন তার জন্য লোন করে বিনিয়োগ করার বিষয়টা বিচার্যের বিষয় হতে পারে।

তবে একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না, লোন নিলেই হল না, নিয়মিত তার ইএমআই-ও চোকাতে হবে। তাই এমন বিশাল পরিমাণে লোন নেওয়া ঠিক হবে না যেটা চোকাতে অসুবিধায় পড়তে হতে পারে। আর এক্ষেত্রে কত সুদ ধার্য হচ্ছে সেই ব্যাপারটার দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। উঁচু সুদে লোন নিয়ে বিশাল রিটার্ন পাওয়ার অবাস্তব প্রত্যাশা রাখা যুক্তিযুক্ত হবে না।

তাছাড়া লোন শোধ করার অর্থের যোগানের জন্য যেন বিনিয়োগের রিটার্নের উপর ভরসা না করতে হয়। লোন করে বিনিয়োগ করলেও লক্ষ্য থাকবে দূরের দিকেই। অর্থাৎ, চাকরি বা ব্যবসার আয় থেকে যদি ঐ টাকা যোগানো সম্ভব হয় তবেই এই রাস্তায় যাওয়ার কথা ভাবা যেতে পারে, অন্যথায় নয়।

এই বলেই আজকের এই নিবন্ধ শেষ করলাম। এ বিষয়ে আপনার কোন মতামত থাকলে কমেন্টে জানানোর অনুরোধ রইল। ভালো থাকবেন। 🙂

মন্তব্য করুন