একটা সময় ছিল যখন আমরা নেট ব্যাঙ্কিং, কার্ড-পেমেন্ট আর ক্যাশলেস টাকা-পয়সা আদান-প্রদানে ভয় পেতাম। তারপরে যখন ধীরে ধীরে কিছু কিছু সাহসী ও প্রযুক্তি প্রিয় লোকজন নতুন যুগের এই সমস্ত জিনিস গুলোকে আপন করা শুরু করল, তখনই এসবের সুবিধা গুলো সবার সামনে ফুটে উঠলো। আর তার পর থেকেই ক্রমশ এগুলো আমাদের প্রতিদিনের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠলো।
তবে শুরুর দিকে সাধারণত সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে লিঙ্কড ডেবিট কার্ড এটিএম থেকে টাকা তোলার কাজে আর নেট-ব্যাংকিং টাকা টান্সফার ও পেমেন্টের কাজে ব্যবহার হতো। কিন্তু যুগ যত এগিয়েছে তত মানুষ এগুলোর পাশাপাশি আরও একটু বেশি সুযোগ সুবিধা নিতে ধীরে ধীরে ক্রেডিট কার্ডের দিকেও ঝুঁকতে শুরু করেছে।
ক্রেডিট কার্ড শুনতে বা দেখতে ডেবিট কার্ডের মতো হলেও এটা ডেবিট কার্ডের থেকে অনেকটাই আলাদা। এর সাথে বেশি খরচ, পেনাল্টি, সুদ আর ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ইদানিংকালে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে। আর তার কারণ হচ্ছে এই কার্ডে পাওয়া অতুলনীয় কিছু সুযোগ সুবিধা। আর এই নিবন্ধে আমরা সেগুলোই বিস্তারিতভাবে জেনে নেব।
ক্রেডিট কার্ড কী?
ক্যাশলেস পেমেন্ট সিস্টেমের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত এক বিশেষ ধরনের প্লাস্টিক (বা মেটাল) কার্ড হল ক্রেডিট কার্ড। এই কার্ড ইচ্ছুক ও যোগ্য ব্যক্তিকে ইস্যু করে থাকে ব্যাংকের মতো লাইসেন্স প্রাপ্ত বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এর সাহায্যে ইস্যুকারী ওই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের থেকে তাৎক্ষণিক ঋণ বা ক্রেডিট পাওয়া যায়। কার্ড ব্যবহারকারী এই কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে পূর্ব নির্ধারিত ক্রেডিট লিমিটের মধ্যে কেনাকাটা বা বিল পেমেন্ট করতে পারে এবং পরে একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিনা সুদে কিংবা ইচ্ছেমত সময়ে সুদসহ সেই টাকা মিটিয়ে দেওয়ার সুযোগ পায়।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুবিধা
#১ প্রধান সুবিধাঃ ক্রেডিট
ক্রেডিট কার্ডের প্রধান সুবিধা হচ্ছে এটা একটা ক্রেডিট কার্ড। এর মাধ্যমে কেনাকাটা বা খরচপাতি করার বিষয়টা আমাদের গতানুগতিক বিল মেটানোর ধারণার থেকে আলাদা। সাধারণভাবে যেখানে ক্যাশ বা ডেবিট কার্ডে কেনাকাটা করতে, বিল মেটাতে বা এটিএম থেকে টাকা তুলতে হলে আগে নিজের কাছে বা ব্যাংকে টাকা থাকতে হয় এবং সেই টাকা ব্যবহার করেই কাজগুলো করা যায়, সেখানে ক্রেডিট কার্ড থাকলে উক্ত কাজগুলোর সময়ে নিজস্ব টাকা থাকার দরকার পড়ে না।
কার্ডের ক্রেডিট লিমিটের মধ্যে যেকোনো কেনাকাটা বা বিল মেটানোর সময় ইস্যুয়ার ব্যাংকের টাকা ব্যবহার করেই পেমেন্ট করে দেওয়া যায়। এমনকি ক্যাশের দরকার পড়লে এটা ব্যবহার করে সেভিংস অ্যাকাউন্ট ছাড়াই এটিএম থেকে টাকাও তোলা যায়। ক্রেডিট কার্ডের এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের জন্য ইমার্জেন্সির সময় এটাকে ভগবান প্রদত্ত আশীর্বাদের মত মনে হয়।
এই কার্ডের প্রধান এই সুবিধা ছাড়াও এতে অন্যান্য অনেকগুলো অতিরিক্ত সুবিধাও পাওয়া যায়। যেমন,
#২ ক্যাশলেস কনভেনিয়েন্স
ক্রেডিট কার্ড মানেই ক্যাশলেস পেমেন্টের সুবিধা পাওয়া। সঙ্গে এরকম একটা কার্ড থাকলে আর ক্যাশ বয়ে বেড়াবার প্রয়োজন পড়ে না। অনলাইন এবং অফলাইন দুই ক্ষেত্রেই কিছু নম্বর দিয়ে, সোয়াইপ করে বা কেবলমাত্র ছুঁইয়েই এর সাহায্যে খুব সহজেই ক্যাশলেস পেমেন্ট করা যায়। এটা এক দিকে যেমন ভীষণ সুবিধাজনক, অন্যদিকে টাকা ক্যারি করার সাথে সেটা চুরি হয়ে যাওয়ার যে ঝুঁকি থাকে সেটা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
#৩ সুদবিহীন ঋণ
ক্রেডিট কার্ড দিয়ে পেমেন্ট করলে ঋণ নিয়ে পেমেন্ট করা হয় বটে, তবে এটা এমন এক ধরনের ঋণ যেক্ষেত্রে ঋণ নেওয়ার সাথে সাথেই সুদ গুনতে হয় না। প্রতিমাসে স্টেটমেন্ট জেনারেট হওয়া এবং তারপরে আরো ২০ দিন মিলিয়ে মোট ৫০ দিন পর্যন্ত সুদবিহীন সময় পাওয়া যায় যার মধ্যে টাকা শোধ করে দিলে কোনো রকম অতিরিক্ত সুদ গুনতে হয় না।
#৪ রিওয়ার্ড পয়েন্ট
গতানুগতিক ক্যাশ বা ইন্টারনেট ব্যাংকিং-এর বদলে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট করলে সাধারণভাবে বিভিন্ন হারে রিওয়ার্ড পয়েন্ট পাওয়া যায়। কার্ড বা ট্রানজাকশনের ধরণ অনুযায়ী এই রিওয়ার্ড পয়েন্টের হার বিভিন্ন রকম হয়। আর অনেক পয়েন্ট জমে গেলে তা বিভিন্ন ধরনের গিফট কার্ড কিনতে, মুভি বা ফ্লাইটের টিকিট কাটতে, রিচার্জ করতে, ওটিটি সাবস্ক্রাইব করতে, এমনকি কার্ডের বিল পেমেন্টে ব্যবহার করা যায়।
#৫ ক্যাশব্যাক ও ডিসকাউন্ট
অ্যামাজন-ফ্লিপকার্ট এর মত বিভিন্ন ই-কমার্স কোম্পানি বা অফলাইনের বড় বড় দোকান গুলো সময়ে সময়ে বিশেষ কিছু ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সাথে ১০% পর্যন্ত ডিসকাউন্ট বা ক্যাশব্যাক-এর অফার দেয়। অফারের সময় যে ব্যাংকের কার্ডে ছাড় প্রযোজ্য সেই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে পেমেন্ট করলেই ওই অতিরিক্ত ছাড়ের সুবিধাটা নেওয়া যায়।
কিছু কিছু প্ল্যাটফর্মে আবার তাদের নিজস্ব কো-ব্র্যান্ডেড ক্রেডিট কার্ডে (যেমনঃ ফ্লিপকার্ট অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক ও অ্যামাজন পে আইসিআইসিআই কার্ড) সব সময় কেনাকাটার জন্য ৫-১০% অতিরিক্ত ছাড় পাওয়া যায়। আবার ইদানিংকালে এই ক্যাশব্যাক কেন্দ্রিক কিছু কিছু ইউনিভার্সাল কার্ড লঞ্চ হয়েছে যেগুলো সব ক্ষেত্রে ব্যবহারেই অতিরিক্ত ৫% পর্যন্ত ক্যাশব্যাক পাওয়া যায়।
এছাড়া কিছু কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে আরও কিছু ছাড় পাওয়া যায়। যেমন, বেশিরভাগ ক্রেডিট কার্ড পাম্পে তেল তোলার জন্য ব্যবহার করলে সারচার্জে ছাড় পাওয়া যায়, বিভিন্ন লিস্টেড রেস্টুরেন্টে বিল পেমেন্টের সময় ২০-৪০% পর্যন্ত অতিরিক্ত ছাড় পাওয়া যায় ইত্যাদি।
#৬ ব্যাংকের/ কার্ডের নিজস্ব অ্যাপ বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে খরচে অতিরিক্ত ছাড়
অনেক ব্যাংক তাদের নিজস্ব পেমেন্ট অ্যাপ বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তাদের নিজস্ব ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে ট্রানজাকশনের জন্য সব ক্যাশব্যাক ও ডিসকাউন্ট এর উপরে আরো কিছু অতিরিক্ত ক্যাশব্যাক দিয়ে থাকে।
যেমন, অ্যাক্সিস ব্যাংকের কার্ড থাকলে এবং অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক গ্র্যাব ডিলস প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ফ্লিপকার্ট অ্যামাজন বা অন্যান্য ই-কমার্স ওয়েবসাইটে কেনাকাটা করলে অতিরিক্ত ১০% পর্যন্ত ক্যাশব্যাক পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে বিশদে জানতে হলে নীচের আর্টিকেলটা পড়ে নিতে পারেনঃ
#৭ একাধিক কার্ড, আরও বড় ছাড়
বিভিন্ন ব্যাংকের তরফে বিভিন্ন ক্যাটাগরির, বিভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ট্য সম্বলিত বহু রকমের ও বহু নামের স্ট্যান্ডার্ড ও কো-ব্র্যান্ডেড ক্রেডিট কার্ড পাওয়া যায়। আর যেহেতু একজন কয়টা কার্ড নিতে পারে সে বিষয়ে তেমন কোনো সীমা নেই, তাই বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য একাধিক কার্ড নিয়ে সব থেকে বেশি ক্যাশব্যাক ও ডিসকাউন্টের সুবিধা নেওয়া যায়।
#৮ ওয়েলকাম অফার ও অ্যাপ্লিকেশনের সময় রিওয়ার্ড
ব্যাংকগুলো সব সময় চায় তাদের কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ুক। আর এই উদ্দেশ্যে নতুন কাস্টমার ধরতে তারা নতুন ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করার সময় বিভিন্ন রকম ওয়েলকাম অফার দিয়ে থাকে। তার মধ্যে কখনো যেমন হাজার হাজার রিওয়ার্ড পয়েন্ট থাকে আবার কখনো হাজার হাজার টাকার গিফট কার্ডও থাকে।
আবার বিশেষ কিছু থার্ড পার্টি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নতুন ক্রেডিট কার্ডের জন্য অ্যাপ্লাই করলে ব্যাংকের ওয়েলকাম অফারের পাশাপাশি ঐ প্ল্যাটফর্মের তরফ থেকে ২-৩ হাজার টাকা পর্যন্ত রিওয়ার্ড পাওয়া যেতে পারে। আর এব্যাপারে বিষদে জানতে চাইলে নীচের আর্টিকেলটা পড়ে নিতে পারেনঃ
ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করে 2000 টাকা পর্যন্ত উপহার পাওয়ার উপায়।
#৯ ইএমআই ও নো-কস্ট ইএমআই তে কেনাকাটা
আমরা বেশীরভাগই গড়পড়তা সাধারণ মানুষ। আমাদের কাছে বড় অংকের ক্যাশ বা ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স বেশিরভাগ সময়েই রেডি থাকে না। ফলে, বড় কোনো শখ মেটানোর ইচ্ছাই হোক বা প্রয়োজনীয় দামী কিছু কেনার প্রয়োজন পড়ুক, সেটা বেশিরভাগ সময় তৎক্ষণাৎ পূরণ করা সম্ভব হয় না। আর ঐ ধরনের পরিস্থিতিতে ক্রেডিট কার্ডে পাওয়া ইএমআই এর সুবিধা এই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেয়। উপরন্ত সাধারণ ইএমআই এর পাশাপাশি বিশেষ কিছু পরিস্থিতিতে পাওয়া নো-কস্ট ইএমআই বিষয়টাকে আরো সহজ তথা সহজলভ্য করে দেয়।
#১০ অটোমেটিক রেকারিং পেমেন্ট ও হোল্ড পুট করা
আমাদের প্রত্যেক-কেই প্রতি মাসে ইলেকট্রিসিটি, ফোন, কেবল, বিবিধ সাবস্ক্রিপশন ইত্যাদির বিল চোকাতে হয়। ডেড-লাইনের মধ্যে মনে করে এগুলো পেমেন্ট না করলে পেনাল্টি বা ডিসকানেকশনের ঝামেলা পোহাতে হয়। এই ধরনের প্রত্যেকটা বিলের জন্য ক্রেডিট কার্ডের অটোমেটিক রেকারিং বিল পেমেন্টের সুবিধা অন করে নেওয়া যায়। আর সেটা করে নিলেই প্রতি মাসে বিল আসার পর ক্রেডিট কার্ড থেকে নিজে নিজেই পেমেন্টটা হয়ে যায়।
ক্রেডিট কার্ডের এই রেকারিং পেমেন্ট সিস্টেমের সুবিধা থাকার জন্য অনলাইনের বহুবিধ সাবসক্রিপশন এই কার্ড ছাড়া কেনাই যায়না। আবার হোটেল বুকিং বা গাড়ি রেন্ট-এর মতো কিছু কিছু ক্ষেত্রে একটা প্রাথমিক অ্যামাউন্টের হোল্ড পুট করতেও এই কার্ডেরই প্রয়োজন পড়ে।
#১১ সুরক্ষা ও নিয়ন্ত্রণ
ক্রেডিট কার্ডের পেমেন্ট সিস্টেমটা অনেকগুলো সিকিউরিটির লেয়ার দিয়ে সুরক্ষিত। কার্ড নম্বর দিয়ে পেমেন্ট করার ক্ষেত্রে একদিকে যেমন এই নম্বরের পাশাপাশি এক্সপায়ারি ডেট, সিভিভি ও ওটিপির দরকার পড়ে, তেমনি অন্যদিকে অফলাইনে পেমেন্টের ক্ষেত্রে পুরো ব্যবস্থাপনাটা কার্ডের সুরক্ষা চিপ দিয়ে সুরক্ষিত থাকে।
আবার চাইলে ব্যাংকের ওয়েবসাইট বা অ্যাপ থেকে খুব সহজেই কার্ডের অযাচিত বা অপ্রয়োজনীয় ট্রানজাকশনের ধরন বন্ধ করে রাখা যায় এবং প্রত্যেক ধরনের ট্রানজাকশনের পছন্দমত লিমিট সেট করে দেওয়া যায়।
#১২ ইন্সুরেন্স
উপরে বলা বিবিধ রকম সুরক্ষা ও নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাপনা থাকার পরেও যদি কোনরকম অযাচিত জালিয়াতির ঘটনা ঘটে, সেক্ষেত্রেও সব ঝামেলা থেকে মুক্তি দেয় বেশিরভাগ কার্ডে থাকা জিরো লায়াবিলিটি ইন্সুরেন্স।
এই ইন্সুরেন্স ছাড়াও অনেক কার্ডে আবার অ্যাক্সিডেন্টাল ও ট্রাভেল ইন্সুরেন্স আর পারচেস প্রোটেকশন ও এক্সটেন্ডেড ওয়ারেন্টির সুবিধা পাওয়া যায়। ট্রাভেল ইন্সুরেন্সের সুবাদে বেড়াতে গিয়ে মালপত্র হারানো, ফ্লাইট দেরী বা বাতিল হওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে আর পারচেস প্রোটেকশনের সুবাদে কার্ডে কেনা কোনো জিনিস ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা চুরি গেলে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়।
#১৩ বেড়ানোর সময় আরও সুবিধা
এই কার্ড নিয়ে বেড়াতে গেলে ক্যাশলেস ট্রাভেল ও সবেমাত্র বলা ট্রাভেল ইন্সুরেন্সের সুবিধা ছাড়াও অনেক কার্ডে পাওয়া ফ্রি রেলওয়ে ও এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ অ্যাক্সেস, প্রায়োরিটি চেক-ইন, অতিরিক্ত লাগেজ অ্যালোয়েন্স, ফ্লাইট টিকিট ও হোটেলে ছাড় ইত্যাদি বেড়ানোর অভিজ্ঞতাটাকে আরও সুন্দর ও সাশ্রয়ী করে দেয়।
আবার বেড়ানোর জন্য স্পেশাল ট্রাভেল ক্রেডিট কার্ডে বেড়ানোর খরচের সাথে অতিরিক্ত রিওয়ার্ড পয়েন্ট পাওয়া যায় যা ফ্রি ফ্লাইট, হোটেল বুকিং বা বেড়ানো সম্পর্কিত অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়।
#১৪ ফ্রি অ্যাড-অন কার্ড
ব্যাংকে এফডি করে তার বদলে সিকিউরড ক্রেডিট কার্ড পাওয়া যায় বটে, তবে তাতে এই কার্ডের আসল উদ্দেশ্যটাই নস্যাৎ হয়ে যায়। তাই, ঐ কার্ডকে বাদ দিলে সবাই স্ট্যান্ডার্ড ক্রেডিট কার্ড (আনসিকিউরড) পাওয়ার যোগ্য হয় না। ব্যবসা বা চাকরি থেকে নিয়মিত আয় থাকলে তবেই এধরণের কার্ড পাওয়া যায়।
তবে, একটা পরিবারে একজনও যদি ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার জন্য যোগ্য হয় তাহলে সেই পরিবারের অন্যান্য প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যরাও এই কার্ডের সুবিধা ভোগ করতে পারে অ্যাড-অন কার্ডের সাহায্যে। প্রায় প্রতিটা ক্রেডিট কার্ডের সাথেই একাধিক অ্যাড-অন কার্ড পাওয়া যায় যেগুলো ওই একই অ্যাকাউন্টের সাথে যুক্ত থাকে কিন্তু বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের নামে নেওয়া যায়। এবং এর জন্য কোনো অতিরিক্ত খরচ হয় না।
#১৫ ইনস্ট্যান্ট পেপারলেস লোন
এমনিতে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা মানেই এক ধরনের লোন নেওয়া। তবে এই লোন এক বিশেষ ধরনের লোন যেটা সাধারণত কেনাকাটা বা বিল পেমেন্টে ব্যবহার করা যায়। তাছাড়া ইন্টারেস্ট ফ্রি পিরিয়ডের বাইরে এতে সুদও অনেক বেশি হারে গুনতে হয়।
কার্ডের ব্যবহার্য ক্ষেত্রের বাইরে ক্যাশের দরকার পড়লে এর উপর ভিত্তি করে একটা নির্দিষ্ট অ্যামাউন্ট পর্যন্ত (ক্রেডিট লিমিটের বাইরে) পেপারলেস ও ইনস্ট্যান্ট স্ট্যান্ডার্ড লোন পাওয়া যেতে পারে খুবই সহজে কয়েকটা ক্লিক/ ট্যাপ করেই! আর ঐ লোনে সুদের হারও ক্রেডিট কার্ডের স্ট্যান্ডার্ড সুদের হারের থেকে অনেক কম হয়।
#১৬ মাইলস্টোন বেনিফিট
অনেক ক্রেডিট কার্ডে খরচের কিছু কিছু স্ট্যান্ডার্ড মাইলস্টোন আর কখনো কখনো কিছু কিছু প্রোমোশনাল মাইলস্টোন ছুঁলে অতিরিক্ত রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ক্যাশব্যাক, গিফট কার্ড, অ্যানুয়াল ফি ওয়েভার ইত্যাদি সুবিধা পাওয়া যায়।
#১৭ লাইফটাইম ফ্রি কার্ড
ক্রেডিট কার্ডে পাওয়া হাজারো সুযোগ সুবিধা সব ক্ষেত্রে ফ্রি নয়। ফিচার, ক্যাশব্যাক আর ক্রেডিট লিমিট অনুযায়ী ক্রেডিট কার্ড গুলোকে সাধারণত দুই শ্রেণীতে ভাগ করা যায়, যথাঃ বেসিক কার্ড আর প্রিমিয়াম কার্ড। আর প্রিমিয়াম-নেসের উপর ভিত্তি করে প্রিমিয়াম কার্ডগুলোর অ্যানুয়াল চার্জ ১ হাজার থেকে ৫০-৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে!
তবে গড়পড়তা সাধারণ মানুষের বেশিরভাগ প্রয়োজন এক বা একাধিক বেসিক কার্ডেই মিটে যায়। আর এই বেসিক কার্ডগুলোর হয় কোনো চার্জ লাগেই না (লাইফটাইম ফ্রি), নতুবা চার্জ ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত হয়। অল্প চার্জের এধরণের কিছু কিছু কার্ড আবার বিশেষ অফারে কখনো কখনো লাইফটাইম ফ্রি হিসেবেও পাওয়া যায়।
মোদ্দা কথা হচ্ছে, সব ক্রেডিট কার্ড ফ্রি নয়, তবে লাইফটাইম ফ্রি হিসেবে পাওয়া যায় এমন ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যাও খুব একটা কম নয়! তাছাড়া অল্প চার্জের যে কার্ডগুলো প্রকৃতভাবে চার্জেবল, সেগুলোর ক্ষেত্রেও সাধারণত কার্ড ভেদে ৩০ হাজার থেকে ৩ লাখ বার্ষিক খরচের মাইলস্টোন ছুঁলে ঐ চার্জটাও মুকুব হয়ে যায়।
#১৮ ক্রেডিট স্কোর
বাড়ি-গাড়ি কেনা, ইমার্জেন্সি বা অন্য কোনো কারণে আমাদের জীবনে কখনো না কখনো লোন নেওয়ার প্রয়োজন পড়েই। আর লোন নিতে গেলেই ব্যাংক সবার আগে চেক করে ক্রেডিট স্কোর। কিন্তু যে কোনদিনই লোন নেয়নি তার ক্ষেত্রে না থাকে কোনো ক্রেডিট হিস্ট্রি আর না থাকে কোনো ক্রেডিট স্কোর। আর কখনো কখনো লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে এই বিষয়টাই সমস্যা তৈরি করে।
কিন্তু লোন না নিয়ে শুধুমাত্র ক্রেডিট কার্ড (সিকিওরড বা আনসিকিওরড) নিলেই একটা ক্রেডিট স্কোর তৈরি হয় এবং কার্ডটা নিয়মিত দায়িত্বশীল ভাবে ও সীমার মধ্যে ব্যবহার করে লম্বা সময় ধরে কোনোরকম ব্যর্থতা ছাড়া প্রতিমাসে সেটার বিল মিটিয়ে গেলে ভালো ক্রেডিট হিস্ট্রি তথা ভালো ক্রেডিট স্কোর তৈরি হয়। আর ভালো স্কোর থাকলে ভবিষ্যতে যেকোনো প্রয়োজনে খুব সহজেই লোন পাওয়া যায়।
#১৯ ইউপিআই
ইউপিআই ভারতের এক যুগান্তকারী উদ্ভাবন। এর জন্যই পাড়ার দোকানে দোকানে কিউআর কোড স্ক্যান করে সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ক্যাশলেস পেমেন্ট করাটা একেবারে বাচ্চাদের খেলার মতই সহজ হয়ে গেছে। তবে এতদিন যেখানে এই প্ল্যাটফর্মে শুধুমাত্র ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট-ই ব্যবহার করা যেত, সেখানে এখন এর সাথে বিশেষ ভ্যারিয়ান্টের (রুপে) ক্রেডিট কার্ডও ব্যবহার করা যাচ্ছে।
আর ইউপিআই-এর সাথে ক্রেডিট কার্ড লিংক হওয়া মানে কিউআর কোড স্ক্যান করে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে পারা আর এর সমস্ত সুযোগ সুবিধা গুলোর লাভ পাওয়া।
#২০ কার্ডের বিল পেমেন্টের সময় ক্যাশব্যাক
প্রত্যেক ক্রেডিট কার্ডের স্টেটমেন্ট জেনারেট হয় মাসের নির্দিষ্ট একটা দিনে। আর স্টেটমেন্ট জেনারেশনের পর সাধারণত ২০ দিন সময় থাকে সেই বিল মিটিয়ে দেওয়ার। ইউপিআই, নেট ব্যাঙ্কিং বা নতুন যুগের বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে খুব সহজেই এই বিল মেটানো যায়। আর কিছু কিছু অ্যাপ যেমন ক্রেড, পেটিএম, জি-পে, অ্যামাজন পে, মোবিকুইক ইত্যাদিতে সময় সময়ে বিভিন্ন রকম ক্যাশব্যাকের অফার থাকে যা ব্যবহার করলে কার্ডের বিল পেমেন্টের সময়ও কিছুটা লাভ পাওয়া যায়।
#২১ আরো কার্যকরীভাবে মাসিক বাজেট পরিচালনা
ক্রেডিট কার্ডে কেনাকাটা বা পেমেন্ট করা মানে প্রত্যেক ট্রানজাকশনের পুঙ্খানুপুঙ্খ রেকর্ড থাকা। আর ওই রেকর্ড পুনরুদ্ধার করার জন্য একদিকে যেমন প্রতি বিলিং সাইকেলের শেষের স্টেটমেন্ট থাকেই, অন্যদিকে তেমন মোবাইলে পাওয়া এসএমএস বা কার্ডের অ্যাপ-ওয়েবসাইটও ব্যবহার করা যায়।
আর প্রতি মাসের খরচের ওই ধারা বিবরণী থেকে কোথায় কতটা খরচ হচ্ছে একদিকে যেমন সেটা জানতে পারা যায় তেমনি কোথায় কতটা খরচ কমানো-বাড়ানো যেতে পারে সে ব্যাপারেও খুব সহজেই পরিকল্পনা করে নেওয়া যায়।
শেষ কথা
এতক্ষণ ক্রেডিট কার্ডের ভালো দিকগুলো সম্পর্কে ঢাক পেটাচ্ছি বটে তবে এর সবটাই কিন্তু আলোক-উজ্জ্বল নয়। গোলাপে যেমন কাঁটা থাকে তেমনই এই কার্ড ব্যবহারের কিছু খারাপ দিকও আছে। তবে আপাতত সেগুলো তোলা থাক অন্য কখনো অন্য কোনো আর্টিকেলে খোলসা করার জন্য। আজ তাহলে এখানেই শেষ করি। ভালো থাকবেন। 🙂
সম্পর্কিত পাঠঃ ক্রেডিট কার্ড কত ধরণের হয়? ক্রেডিট কার্ডের ব্যাপারে 7 টা ভুল ধারণা বা মিথ। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে টাকা বাঁচানোর 20 টি গোপন উপায়। ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি কিভাবে হয়? এর থেকে বাঁচবেন কিভাবে? অনলাইনে কেনাকাটার জন্য সেরা 5 ক্রেডিট কার্ড। ফাটাফাটি লাইফটাইম ফ্রী ক্রেডিট কার্ডের তালিকা। সেরা 9 লাইফটাইম ফ্রি রুপে ক্রেডিট কার্ড।