শেয়ার বাজার কেন আছে? এর প্রয়োজন কী? না থাকলেই বা কী হত?

5/5 - (5 জন রেটিং করেছেন)

শেয়ার বাজার মানে সরকার নিয়ন্ত্রিত এক বিশেষ ধরণের বাজার যেখানে বিভিন্ন পাবলিক কোম্পানির শেয়ার বা স্টক কেনা-বেচা হয়। শেয়ার বাজারকে স্টক মার্কেটও বলে। এই বাজার সম্পর্কে আশাকরি অনেক কিছুই শুনেছেন, কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছেন কি যে, এই শেয়ার বাজার কেন বিদ্যমান? এই বাজার না থাকলে কি এমন এসে যেত? ব্যবসায়, দেশের অর্থনীতিতে বা সাধারণ মানুষের জীবনে এর কার্যকারিতাই বা কী?

এই ধরণের প্রশ্নগুলো করা হলে সাধারণত গড়পড়তা খেটে খাওয়া মানুষের মাথায় মাথায় আসে, শেয়ার বাজার জুয়ার জায়গা, তবে কপাল ভালো হলে এখানে অনেক টাকা বানানো যায়। অনেকে আবার ভাবে এখানে কম সময়ে টাকা ডবল করা যায় বা এখানে টাকা ঢালতে পারলে বড়লোক হওয়া যায়। কারও মতে এই বাজার আছে টাকা বিনিয়োগ করার উদ্দেশ্যে।

কিন্তু এগুলোর কোনো কোনোটা আংশিকভাবে সত্যি হলেও পুরোপুরি ভাবে একটাও ঠিক নয়। তাহলে শেয়ার বাজারের অস্তিত্বের সঠিক কারণ কী? চলুন খুঁজে দেখা যাক…

শেয়ার বাজার আসলে কী?

এই বাজারের দুটো বিভাগ – প্রাইমারি মার্কেট আর সেকেন্ডারি মার্কেট। কোনো কোম্পানি যোগ্য হলে এবং চাইলে তার মালিকানার কিছু অংশ ইউনিট শেয়ারে ভাগ করে আইপিও-র মাধ্যমে প্রথমবারের জন্য প্রাইমারি মার্কেটে বিক্রি করতে পারে। এবং সেই আইপিওতে অংশগ্রহণকারী ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের থেকে ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা তুলতে পারে।

আর প্রথমবার শেয়ার পাওয়া / কিনতে সক্ষম হওয়া শেয়ারহোল্ডাররা সেকেন্ডারি মার্কেটে ঐ শেয়ার কিনতে আগ্রহী অন্য কাউকে তাদের শেয়ার রিসেল করতে পারে। এবং এখানে বেচা কেনার এই চক্র কোম্পানির অস্তিত্ব যতদিন থাকে ততদিন চলতে থাকে। আমরা সাধারণত শেয়ার বাজার বলতে যেটা বুঝি সেটা এই সেকেন্ডারি শেয়ার মার্কেটকেই বোঝায়।

এই ব্যাপারে আরো বিশদে জানতে হলে এই লিংকে দেওয়া আর্টিকেল পড়ে নিতে পারেন।

এবারে চলুন শেয়ার বাজারের অতীতে গিয়ে এর প্রথম আবির্ভাবের বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক…

যখন শেয়ার বাজার প্রথম শুরু হয়েছিল…

গল্পটা শুরু হয়েছিল ইউরোপের মহাজনদের হাতে তেরশ শতকের কাছাকাছি সময়ে। এদেশের মহাজনরা যা করতে অভ্যস্ত ইউরোপের মহাজনরাও তাই করত, মানে ছোটো ছোটো ব্যবসাদারদের ধার দিত। অতঃপর একসময় ওইসব মহাজনরা সেই দেনা বা ডেট (debt) তাদের নিজেদের মধ্যে হাতবদল বা ট্রেড করতে শুরু করে। ধীরে ধীরে অন্য কাস্টমার এবং আরও পরে বিনিয়োগকারীদেরও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অর্থাৎ বিষয়টা এখনকার ডেট সিকিউরিটি ট্রেড করার মত হয়ে যায়। 1300 সালে ভেনিসের লোকেরা আরো এক ধাপ উপরে উঠে অন্য সরকারের সিকিউরিটি ট্রেড করা শুরু করে।

1531 সালে বেলজিয়ামে প্রথম স্টক এক্সচেঞ্জ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা এখানে সরাসরি কোম্পানির স্টক বা শেয়ার কেনাবেচা করতে পারত না কারণ শেয়ারের কনসেপ্টটা তখনো পর্যন্ত তৈরি হয়নি। সে সময়ে বিভিন্ন ধরনের পার্টনারশিপ, কন্ট্রাক্ট বা বন্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা মুনাফা লাভের চেষ্টা করত।

আরও পড়ুনঃ  শেয়ার বাজারে বিনিয়োগে ঝুঁকি কমানোর 10 উপায়। #3 সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ

1500 শতকের শেষ দিকে বিনিয়োগকারীরা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জাহাজের সমুদ্র ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় পুঁজি সরবরাহ করত এবং ভ্রমণ শেষে লভ্যাংশ পেতো। কিন্তু সমুদ্র ভ্রমণ অসফল হলে বিনিয়োগের টাকা ডুবে যেত। তাই তখন বিনিয়োগের একটা নতুন মডেল প্রবর্তন করা হয় যাতে বিনিয়োগকারীরা একটা ভ্রমনে বিনিয়োগের বদলে কোম্পানির স্টক কিনতে পারে এবং কোম্পানির সমস্ত সমুদ্র ভ্রমণ থেকে পাওয়া লাভ অনুযায়ী ডিভিডেন্ড হিসেবে লভ্যাংশ পেতে পারে। 

1602 সালে ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমস্টারডাম স্টক এক্সচেঞ্জ নামে পৃথিবীর প্রথম প্রকৃত স্টক এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠা করে। তারা এই সময়ে পেপার শেয়ার সরবরাহ করা শুরু করে। এই পেপার শেয়ার আবার শেয়ারহোল্ডাররা নিজেদের মধ্যে হাত বদল বা ট্রেড করতে পারত, এবং এটাই ছিল শেয়ার বাজারে শেয়ার কেনাবেচার সূত্রপাত। সরকার সমর্থিত এই এক্সচেঞ্জ সে সময় একাধিপত্য লাভ করে এবং বিনিয়োগকারীরাও বিশাল লাভ করতে সক্ষম হয়।

1773 সালে প্রথম অফিসিয়াল স্টক এক্সচেঞ্জ হিসাবে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ স্থাপিত হয় যেখানে বিনিয়োগকারীরা এক জায়গায় জড় হয়ে শেয়ার কেনাবেচা শুরু করে। কয়েক বছর পরেই 1790 সালে আমেরিকায় ফিলাডেলফিয়া স্টক এক্সচেঞ্জ তৈরি হয় এবং তারও দুবছর পরে একটা গাছের নীচে নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ স্থাপিত হয় যা এখন ওয়াল স্ট্রিট নামে পরিচিত।

শেয়ার বাজারের আবির্ভাব হল কেন? 

শেয়ার বাজারের আবির্ভাবের ইতিহাস থেকে দুটো প্রধান বিষয় উঠে আসছে…

  • ব্যবসা যাই হোক না কেন, এর জন্য ব্যবসাদারদের সব সময়ই পুঁজির দরকার পড়ে।
  • অন্যদিকে পুঁজিপতিরা বা যাদের কাছে সঞ্চিত টাকা থাকে তারা সব সময়ই তাদের জমানো টাকা খাটানোর বিবিধ উপায় খুঁজতে থাকে যাতে আরো বেশি টাকা কামানো যায়।

এই দুই পক্ষের দুই সমস্যা বিপরীতধর্মী। এক পক্ষের টাকার দরকার আর এক পক্ষ টাকা দিতে প্রস্তুত। দুই পক্ষ নিজেদের মধ্যে লেনদেনের মাধ্যমে একে অপরের পরিপুরক হয়ে উঠতে চায়। এই উদ্দেশ্যে এদের মধ্যে টাকা আদান প্রদানের রাস্তা ছিল দুটো।

একঃ ধার দেওয়া ও নেওয়ার মাধ্যমে – একপক্ষ অন্য পক্ষের থেকে ধার নিলেই দু পক্ষেরই দরকার মিটে যায়। কিন্তু এই পথের আবার সমস্যা হচ্ছে যারা ধার নেবে তাদের ধার ফেরত দেওয়ার সাথে সুদও দিতে হবে এবং যারা ধার দেবে তাদের সমস্যা হচ্ছে সুদ পাওয়া গেলেও সুদের হার খুব বেশি কিছু না। তাছাড়া ধারের টাকা ইচ্ছে হলেই বা দরকার পড়লেই ফেরত পাওয়া যায় না। আর ধার দেওয়ার সাথে মূলধন ফেরত না পাওয়ার একটু ঝুঁকি তো থাকেই।

যদিও ধারপত্র হস্তান্তরের বা ডেট ট্রেডের মাধ্যমে ধারের টাকা ফেরত পাওয়ার অন্য রাস্তা তৈরি করা হয়, তবে এভাবে নিজের খুশিমতো সময়ে টাকা ফেরত পাওয়া অতটাও সহজ ছিল না।

দুইঃ ব্যবসার মালিকানা বেচাকেনার মাধ্যমে – ধার নেওয়ার অসুবিধা গুলো এড়াতে ব্যবসাদাররা তাদের ব্যবসার মালিকানার কিছু অংশ বেচে দেওয়ার বদলে যদি পুঁজি জোগাড় করে তাহলে ধার নেওয়ার মতো সুদ শোধ করতে হয় না, আর অন্যদিকে ব্যবসার লাভ বেশি হলে পুঁজিপতিরা ধার দেওয়ার থেকে অনেক বেশি লাভের সুযোগ পায়। তবে এক্ষেত্রে ধার দেওয়ার থেকে ঝুঁকিটা বেশি হলেও অনেক বেশি লাভের আশায় অনেক পুঁজিপতিরা এই ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত হয়ে যায়।

আর ডেট ট্রেডের মত এক্ষেত্রেও মূলধন ফেরত পাওয়ার উপায় হিসেবে অংশীদার বা শেয়ারহোল্ডারদের মালিকানা হস্তান্তর বা শেয়ার বেচাকেনার উদ্দেশ্যে শেয়ার ট্রেডিংয়ের রাস্তা তৈরি করার প্রয়োজন পড়ে। আর এই কারণেই এক্সচেঞ্জ তৈরি করা হয়। মালিকানা বেচতে ইচ্ছুক পুরানো অংশীদার ও নতুন অংশীদার হতে ইচ্ছুক ব্যক্তির মধ্যে যোগাযোগ করানোর জন্য মধ্যস্থতাকারী বা ব্রোকারের আবির্ভাব ঘটে। আর পুরো বিষয়টার মধ্যে স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য এবং নিয়ম ও নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে দেশের সরকারও বিষয়টার মধ্যে জড়িত হয়। আর এভাবেই তৈরি হয় শেয়ার বাজার।

আরও পড়ুনঃ  এসআইপি শুরু করার আগে যে সমস্ত বিষয়গুলো না জানলেই নয়…

শেয়ার বাজারের প্রয়োজনীয়তা

উপরের আলোচনা থেকে শেয়ার বাজারের প্রয়োজনীয়তা যে কী, সেটা আশা করি ইতিমধ্যেই খানিকটা পরিষ্কার। ব্যবসা, সমাজ ও দেশের বিবিধ ক্ষেত্রে এর প্রয়োজনীয়তা ও অবদান যে আসলে কতটা সুদুরপ্রসারী চলুন সেটাই জেনে নেওয়া যাক আরো বিশদে…

ব্যবসা চালানো ও বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় পুঁজি সংগ্রহ করতে শেয়ার বাজারের প্রয়োজন পড়ে

শেয়ার বাজার আছে বলেই কোম্পানিগুলো তাদের নিয়মিত কাজকর্ম চালাতে এবং ব্যবসার সম্প্রসারণ করতে প্রয়োজনীয় অর্থ বিনা সুদে যোগাড় করতে পারে। এবং এভাবে টাকা জোগাড় করার মাধ্যমে ব্যবসা সম্পর্কিত ঝুঁকিগুলো সমস্ত শেয়ারহোল্ডারদের মাধ্যমে ভাগ করে দিতে পারে।

ব্যবসায় ক্ষতি হলে শেয়ারহোল্ডারদের ডিভিডেন্ড দেওয়ার কোনো চাপ তো থাকেই না, এমনকি ব্যবসার কর্মকাণ্ড থেকে লাভ হলে যদিও সেই লাভ ডিভিডেন্ডের মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের দেওয়া যায়, তবে এক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা থাকেনা এবং কোম্পানিগুলো চাইলে তাদের লাভ পুরোপুরি ভাবে ব্যবসার সম্প্রসারণে কাজে লাগিয়ে ব্যবসাকে আরো তাড়াতাড়ি আরো বড় করার দিকে ফোকাস করতে পারে।

এছাড়া কোনো কোম্পানি ব্যবসায় ভালো ফল করলে শেয়ার বাজার থাকার জন্যই সে ব্যাপারে বেশি বেশি মানুষ জানতে পারে, শেয়ারবাজারে সেই কোম্পানির শেয়ারের চাহিদা বাড়ে এবং কোম্পানিটার ভাল রেপুটেশন তৈরি হয় এবং আরো পুঁজি সংগ্রহ করতে, ব্যবসা বাড়াতে এবং ব্যবসার কাজে অনেক সুবিধা হয়।

পুঁজিপতিদের বা বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের সুযোগ করে দেয় শেয়ার বাজার

বড় এবং ছোট সমস্ত রকম পুঁজিপতিদের সরাসরি ব্যবসায়িক কাজকর্মে অংশ না নিয়েও ব্যবসায় বিনিয়োগের মাধ্যমে সম্পদ তৈরীর খুব ভালো একটা সুযোগ করে দেয় শেয়ারবাজার। কোনো কোম্পানির শেয়ার কেনার মাধ্যমে যেমন ব্যবসার লভ্যাংশ থেকে ডিভিডেন্ড পাওয়ার সুযোগ পাওয়া যায় তেমনি আবার শেয়ারের দাম বাড়ার পর অন্য বিনিয়োগকারীকে সেই শেয়ার বিক্রি করেও লাভ করা যায়।

কোম্পানির একটা শেয়ারের অংশগত মান খুব কম হওয়ার জন্য একটা শেয়ার কিনতে খরচ খুবই কম হয়। ফলে একসাথে পছন্দের একাধিক কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা যায়। যার জন্য বিনিয়োগে বৈচিত্র আসে, লাভের সম্ভাবনা বাড়ে ও ঝুঁকির সম্ভাবনা কমে।

বাজারে বহু বিনিয়োগকারীর উপস্থিতির জন্য টাকার দরকার পড়লে বা শেয়ার বিক্রি করতে চাইলে খুব সহজেই অন্য বিনিয়োগকারীকে শেয়ার বিক্রি করে লাভসহ বিনিয়োগের টাকা ফেরত পাওয়া যায়।

ইকোনমিতে বিনিয়োগের কার্যকলাপ বৃদ্ধি করে

একটা দেশের জিডিপি কতটা বাড়বে বা কত তাড়াতাড়ি বাড়বে সেটা অনেকটাই ইকোনোমিতে বিনিয়োগের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে। সেজন্যই সরকারের তরফ থেকে সময় সময়ে এমন ধরনের আর্থিক নীতি গ্রহণ করা হয় যাতে বেশি বেশি বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি হয়।

আর শেয়ার বাজার শুধু দেশের আভ্যন্তরীণ নয়, এমনকি বিবিধ দেশীয় কোম্পানিতে বিদেশী বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত করে যার সুপ্রভাব পুরো ইকোনোমির উপর পড়ে।

দেশ ও দশের লাভ হয়

বিনিয়োগ সহজ ও বেশি হওয়ায় শেয়ার বাজারে লিস্টেড কোম্পানিগুলোর ব্যবসা ভালো চলে এবং দ্রুত বড় হওয়ার জন্য অনেক চাকরি তৈরি হয়। তাছাড়া একটা কোম্পানি বড় হওয়া মানে শুধুমাত্র যে সেই কোম্পানির ভেতরেই কাজের চাহিদা তৈরি হয় তা নয় সেই কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্কিত বা সেই কোম্পানি অন্যান্য যে সমস্ত কোম্পানির উপর নির্ভরশীল সেই সমস্ত কোম্পানির ব্যবসাও বাড়ে ও আরো কাজের চাহিদা তৈরি হয়।

আরও পড়ুনঃ  সক্রিয় শেয়ার ট্রেডিং-এর 4 ধরণ। নতুন ট্রেডারদের এগুলো জানা চাই-ই-চাই।

ফলে সামগ্রিকভাবে দেশে বেকারত্ব কমে, দেশবাসীর আয় বাড়ে, জীবনধারণের গুণমান বৃদ্ধি পায় এবং সঙ্গে তাদের খরচ করার ক্ষমতাও বাড়ে। ফলে এর প্রভাব আরও অন্যান্য ছোট ব্যবসার উপরও পড়ে। সামগ্রিকভাবে দেশীয় অর্থনীতির হাল ভালো হয়, সরকারের ট্যাক্স কালেকশন বাড়ে, সেই অর্থ সরকার দেশের বিভিন্ন উন্নয়নের খাতে আরও বেশি করে খরচ করতে পারে এবং আরো সরকারি চাকরিও তৈরি হয়। সব মিলিয়ে দেশ আরো উন্নতি করে।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে শেয়ার বাজারের লহরী প্রভাব অনেক সুদূরপ্রসারী। দেশীয় ইকোনমির সাথে শেয়ার বাজার অঙ্গাভঙ্গি ভাবে জড়িত। বহু দেশ এমন আছে যেগুলো বিগত কয়েক দশকে যা উন্নতি করেছে (ভারতবর্ষ তার মধ্যে অন্যতম) সেই পরিমাণ স্বল্প সময়ে সেই পরিমাণ উন্নতি হওয়া শেয়ার বাজার ছাড়া সম্ভবপরই হতো না।

শেয়ার বাজার থাকার কিছু অতিরিক্ত লাভ

  • শেয়ারবাজার কে কেন্দ্র করে বিনিয়োগ, ট্রেডিং ও ব্রোকিং সম্পর্কিত ব্যবসা ও কাজ তৈরি হয়। এবং এইসব ক্ষেত্র থেকে সরকারের ট্যাক্স কালেকশন হয়।
  • শেয়ার বাজার বা এর সূচক দেশীয় ইকোনোমির সূচক হিসাবে কাজ করে। মানে এর অবস্থা দেখেই দেশীয় অর্থনীতির অবস্থার কথা বুঝতে পারা যায়। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো থাকলে দেশের বিবিধ কোম্পানির ব্যবসা ভালো চলে ফলে শেয়ার বাজারের সূচক ঊর্ধ্বমুখী হয়। আর তার উল্টোটা হলে নিম্নমুখী। ফলে শেয়ার বাজারের সূচকের দিকে তাকিয়েই সামগ্রিকভাবে দেশের ইকোনোমির অবস্থাও অনেকটাই আন্দাজ করা যায়। আর ইকোনোমির অবস্থা যত ভালোভাবে বোঝা যায় অর্থনীতিবিদরা দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য তত কার্যকর অর্থনৈতিক নীতি তৈরি করতে সমর্থ হয়।
  • শেয়ারবাজার সরকারি নিয়ন্ত্রণের অধীন। এখানে লিস্টেড কোম্পানিগুলোর সমস্ত রকমের আর্থিক তথ্য প্রকাশ করার বাধ্যবাধকতা থাকে। আর কোম্পানির ব্যাপারে যেকোনো ধরণের একটা খারাপ খবর শেয়ারের দামের উপর প্রভাব ফেলে। এবং যেহেতু শেয়ারের দামের সাথে বা শেয়ারের দামের উত্থান পতনের সাথে কোম্পানির খ্যাতি জড়িয়ে থাকে তাই সাধারণত শেয়ারবাজারে লিস্টেড বড় বড় কোম্পানি কোনো ধরনের অনৈতিক কাজকর্ম করা থেকে বিরত থাকাই শ্রেয় মনে করে। আর এর লাভ ভোগ করে যারা ওই সব কোম্পানিতে কাজ করে তারা বা ঐসব কোম্পানির সাথে যুক্ত অন্যান্য ছোটো কোম্পানিগুলো। কোম্পানির মধ্যে কাজের পরিবেশ, নিয়মিত পেমেন্ট ইত্যাদি বিষয়গুলোতে কোম্পানিগুলো কখনো আঙ্গুল তোলার সুযোগ দেয় না।

শেষ কথাঃ

আশা করি শেয়ার বাজার যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা এতক্ষণে বোঝাতে পেরেছি। নিশ্চয়ই আপনার কাছে পরিষ্কার যে শেয়ার বাজার কোনো জুয়া খেলার জায়গা নয় বা খারাপ নজরে দেখার মত কিছু নয়। দেশের উন্নয়নের মেরুদন্ড হচ্ছে শেয়ার বাজার। আর তাই শেয়ারবাজার তথা দেশের বৃদ্ধির গল্পে অংশ নিতে আপনিও এখানে অংশ নিন!

আজ তাহলে এখানেই শেষ করি। ভালো থাকবেন।

মন্তব্য করুন