গুগলে অ্যাডের মাধ্যমে জালিয়াতি। আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা

5/5 - (1 জন রেটিং করেছেন)

ইন্টারনেটের সবথেকে বেশি ব্যবহৃত ওয়েবসাইট হল গুগল। ভাবলেও আশ্চর্য লাগে, সারা পৃথিবীর আবালবৃদ্ধবনিতা প্রতিদিন তাদের ৮৫০ কোটিরও বেশি প্রশ্ন নিয়ে এর দ্বারস্থ হয়ে থাকে। আর প্রায় সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর খুঁজে দেওয়া ও সব সমস্যার সমাধান খোঁজার কাজটা গুগল এতটাই আশ্চর্যরকম দক্ষতার সাথে করে যে এর ওপর বিশ্বাসটা এমনি এমনিই চলে আসে।

কিন্তু গুগল নিজে বড়সড় একটা বিশ্বাসযোগ্য কোম্পানি হলেও এতে সার্চের সাথে জড়িয়ে থাকে সার্চ রেজাল্টে আসা কোটি কোটি ওয়েবসাইট এবং লক্ষ লক্ষ ছোট বড় কোম্পানি যাদের অ্যাড গুগল সার্ভ করে তাদের সার্চ পেজ ও অন্যান্য প্রডাক্টে। গুগলের ওপর চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা গেলেও গুগলের দেখানো সার্চ রেজাল্ট তথা অ্যাডে আসা বিভিন্ন থার্ড পার্টি কোম্পানি গুলোকে বিশ্বাস করাটা কতটা সমীচীন?

এই আর্টিকেলটা গুগলে আসা অ্যাডের উপর আমার বিশ্বাস-অবিশ্বাস ভাঙা-গড়ার গল্প, যেটা থেকে আপনিও অনলাইনে জালিয়াতির হাজারো ফাঁদের মধ্যে এই অভিনব নতুন ফাঁদে পড়া থেকে বাঁচতে পারবেন বা অন্ততপক্ষে সতর্ক থাকতে পারবেন…

সূচীপত্র দেখান

গুগল আসলে কী আর এর আসল ব্যবসাই বা কী?

এই নিবন্ধে আমার গল্প ও বিষয়বস্তুটা ভালোভাবে বুঝতে গেলে সবার আগে গুগল এবং তাদের ব্যবসা সম্পর্কে ছোট্ট করে জেনে নেওয়া খুবই প্রয়োজন। গুগল এক সময় কেবলমাত্র ইন্টারনেটের সার্চ ইঞ্জিন হিসাবে তাদের ব্যবসা শুরু করলেও এখন এর বিস্তার বহুমুখী। এখন গুগল সব থেকে বেশি ব্যবহৃত ও জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিনের পাশাপাশি সব থেকে বড় অনলাইন ভিডিও প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব, সবথেকে জনপ্রিয় ইমেল প্ল্যাটফর্ম জিমেল, সবথেকে বেশি ব্যবহৃত ওয়েব ব্রাউজার ক্রোম, সবথেকে নিখুঁত ও জনপ্রিয় ম্যাপ গুগল ম্যাপস ইত্যাদি সার্ভিস তথা অ্যাপের যোগান দিয়ে থাকে।

তবে উপরে উল্লিখিত গুগলের প্রোডাক্ট গুলো জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকলেও ওগুলোর সবকটাই ফ্রি সার্ভিস হাওয়ায় সরাসরি ওগুলো থেকে আয়ের কোনো সুযোগ তারা পায় না। কিন্তু ব্যবসা মাত্রই আয়ের রাস্তা তো কিছু না কিছু একটা থাকতেই হবে, তাই না! আর গুগলের ক্ষেত্রে ওই আয়ের রাস্তাটা হচ্ছে অ্যাড। সেই প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত গুগল তার শাখা প্রশাখা বিস্তার করে বিশাল মহীরুহের আকার নিলেও তাদের মোট রেভিনিউয়ের বেশিরভাগটাই এখনো পর্যন্ত অ্যাড থেকেই আসে।

গুগল সার্চ করার সময় কিংবা জি-মেল, গুগল ম্যাপস বা গুগলের অন্যান্য অনেক প্রোডাক্ট ব্যবহার করার সময় ওগুলোর মধ্যে বিশেষ বিশেষ স্পটে আমরা গুগলের সার্ভ করা বিভিন্ন রকম অ্যাড দেখতে পাই। যেহেতু কোটি কোটি লোক গুগলের এই সমস্ত সার্ভিস ব্যবহার করে তাই ওই স্পট গুলোতে যেকোনো কোম্পানি তাদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের অ্যাড দেখিয়ে তাদের ব্যবসা বাড়ানোর সুযোগ পায়। অ্যাড দিতে ইচ্ছুক কোম্পানি বা ব্র্যান্ড অ্যাড ইম্প্রেশন বা এ্যাড-ক্লিক এর জন্য গুগলকে চার্জ দিয়ে থাকে। আর এভাবেই গুগল প্রতিদিন কোটি কোটি ডলার আয় করে থাকে।

গুগলে দেখা অ্যাড কি বিশ্বাসযোগ্য বা নিরাপদ?

গুগলের অ্যাডের ব্যবসার বিষয়টায় সাধারনভাবে কোনোরকম খারাপ কিছু নেই। অসাধারণ ফ্রি সার্ভিসের বদলে যদি একটু অ্যাড দেখতে হয়, আর তার বদলে গুগলের আয় হয়, তাতে ক্ষতি কী! তাছাড়া সার্চ করার সময় বা বিবিধ অ্যাপ এক্সপ্লোর করার সময় প্রাসঙ্গিক অ্যাড অনেক সময় আমাদের অজানা কোনো প্রোডাক্ট বা ব্র্যান্ড সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে। যদি সঠিক অ্যাড আমাদের সঠিক জায়গায় নিয়ে যায় বা তা থেকে আমাদের কোনো একটা সমস্যার সমাধান হয় তাতে আখেরে লাভ সব পক্ষেরই হয়।

কিন্তু সমস্যা তখনই হয় যখন গুগলে দেখানো কোনো অ্যাড আমাদের অনভিপ্রেত কোনো জায়গায় নিয়ে যায়, কোনোরকম তথ্য বা অর্থ চুরি কিংবা অন্য যেকোনো ধরণের জালিয়াতির কারণ হয়। সমস্যা আসলে সিস্টেমটার নয়। সমস্যা হচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বা কোম্পানি কখনো কখনো এই গুগল অ্যাড ব্যবহার করে নানা ভাবে, নানা ফন্দি এঁটে আপনার আমার মত সাধারন মানুষকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে এবং সেই ফাঁদে পা দিলে আমাদের তাথ্যিক, আর্থিক বা মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। আজ এমনই এক অভিনব ফাঁদে পড়ে একটুর জন্য বিশাল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া থেকে বাঁচার আমার নিজের গল্প শোনাব…

গুগলে আসা অ্যাডে ক্লিক করে একাশি হাজার টাকা জালিয়াতির হাত থেকে বাঁচার আমার নিজস্ব গল্প

যখন থেকে কম্পিউটার আর গুগলের সাথে পরিচয় তখন থেকেই আমি আর পাঁচটা লোকের মতোই গুগল সার্চ করি। তবে যেকোনো সার্চ করার সময় বেরোনো লিস্টের প্রথমে, পাশে বা নিচে যে সমস্ত অ্যাড গুলো দেখায়, খুব প্রাসঙ্গিক না হলে সাধারণত আমি ওই সমস্ত অ্যাডগুলোকে এড়িয়ে আসল সার্চ রেজাল্টে ফোকাস করি। তাছাড়া এমনিতে সার্চের রেজাল্টে বা অ্যাডে যে ওয়েবসাইটই আসুক না কেন, তা যদি অচেনা-অজানা হয়, তবে তার উপর বিশ্বাস আমার কোনদিনই ঠিক মতো হয় না। আর যদি সেই ওয়েবসাইটে কোনরকম কেনাকাটা বা টাকা-পয়সা লেনদেনের ব্যাপার স্যাপার থাকে তাহলে তো একদমই নয়।

আরও পড়ুনঃ  ইউপিআই তে ক্রেডিট কার্ড। ইসে সেট কর ডালা তো লাইফ জিঙ্গালালা!

তবে ইদানিংকালে গুগল সার্চের স্মার্টফোন অ্যাপ এবং ক্রোমের হোম পেজে গুগল ডিসকভার বা গুগল ফীড-এ সার্চ করার আগেই ছবিসহ কিছু পোস্ট বা ওয়েবসাইটের তালিকা আমাদের সামনে আসে। ওই তালিকাটা আমাদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রে আমাদের আলাদা আলাদা ইন্টারেস্ট (সার্চ হিস্ট্রি) অনুযায়ী আলাদা আলাদা রকম হয়। এবং এটা যে যার ইন্টারেস্টের সাথে এতটাই মিল খায় ও প্রাসঙ্গিক হয় যে, এখানে আসা অ্যাড গুলোর উপরও একটা ভরসা জন্মে যায়। অবশ্য বাকিদের কথা জানিনা, তবে আমার এই জায়গার অ্যাডগুলোর উপরে ভরসাটা একটু বেশিই (ছিল)। আমার বিশ্বাস ছিল গুগল যখন আমার জন্য এতটা পার্সোনালাইজড অ্যাড প্রোভাইড করছে তখন নিশ্চয়ই সেগুলো কাজেরই হবে। কিন্তু আমার এই বিশ্বাসটা ভুল ছিল।

যেদিন ঘটনাটা ঘটেছিল সেদিন বাবাকে রুটিন চেকআপের জন্য কলকাতার এক হসপিটালের আউটডোরে নিয়ে গিয়েছিলাম। তো, ডাক্তারবাবু আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করার সময়ে গুগলের ডিসকভার ফিডের পোস্টগুলো একটু স্ক্রল করছিলাম। সেসময়ে ওখানে দেখানো একটা অ্যাড আমার নজর কাড়ে। অ্যাডটা অনুযায়ী অর্গানিক ডিমের নতুন এক কোম্পানি, যা কিনা ভারতের এক ভীষণ বড় ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়িক পরিবারের নতুন একটা প্রোজেক্ট, কলকাতায় ব্যবসা শুরু করতে চলেছে এবং সেই উপলক্ষে সেই দিনের জন্য এক বিশেষ অফারে তারা মাত্র ১০০ টাকায় ৮ ডজন ডিম অর্থাৎ প্রায় ১ টাকায় একটা ডিম পাওয়ার সুযোগ দিচ্ছে।

তো, এত দারুন একটা অফার, তাও আবার অত বড় একটা কোম্পানির তরফ থেকে – এটা দেখে আর লোভ সামলাতে পারিনি। তবে তখনই আমি অর্ডারটা করে দিইনি। অ্যাডের ক্লেম টা ভেরিফাই করার জন্য ওই নাম দিয়ে একবার গুগল সার্চ করি এবং সত্যিই দেখতে পাই অর্গানিক ডিমের ওই ব্র্যান্ডের ব্যবসা হায়দ্রাবাদে ইতিমধ্যেই চালু আছে। তাছাড়া ওদের প্যারেন্ট কোম্পানির অন্য এক ব্র্যান্ডের অর্গানিক গ্রসারি ইতিমধ্যেই আমি ব্যবহার করি। তো আমার সত্যিই মনে হয় যে তাহলে নিশ্চয়ই ওরা কলকাতায় ওদের ব্যবসা শুরু করতে চলেছে এবং সেজন্যই অফারটা দিচ্ছে। আর যেহেতু অর্ডারটা মাত্র ১০০ টাকার তাই ভাবলাম অর্ডারটা দিয়েই দেখা যাক না কি হয়…।

যাইহোক, কার্টে অ্যাড করে যখন পেমেন্ট করতে যাব তখন দেখতে পাই যে পেমেন্ট অপশনে শুধুমাত্র ক্রেডিট কার্ড গ্রাহ্য। ইউপিআই বা ডেবিট কার্ডের কোনো অপশন সেখানে নেই। একটু খটকা লাগলেও বিষয়টা নিয়ে আর বেশি কিছু না ভেবে ক্রেডিট কার্ড দিয়েই পেমেন্ট সম্পূর্ণ করার জন্য এগিয়ে যাই। ক্রেডিট কার্ডের নম্বর দিয়ে প্রসিড করার পর ওটিপি দেওয়ার পালা আসে। এবং ফোনে ওটিপির এসএমএস টা ঢোকার পর যখন সেটা খুলে ওটিপিটা খোঁজার জন্য তৎপর হই তখনই আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়।

ওটিপির ওই এসএমএসটায় ট্রানজেকশনের অংকটা দেখে প্রথমে মনে হয় আমি ভুল দেখছি, তারপরে ভাবি হয়তো বা ওটা অন্য কোন একটা নম্বর, কিন্তু ভালোভাবে পড়ার পরেই আমার হার্টবিট বেড়ে যায়। আমি যে ট্রানজেকশন করেছিলাম তার অ্যামাউন্টটা ছিল ১০০ টাকার। কিন্তু ওটিপি তে যে অংকটা উল্লেখ ছিল সেটা ৮১ হাজার টাকার। প্রথম নজরে ভেবেছিলাম ৮১ টাকা, কিন্তু ৮১ হাজার অংকটা ভালোভাবে দেখার পরেই পুরো বিষয়টা আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়।

কিছু কিছু কেনাকাটার অ্যাপে ওটিপি গুলো আবার নিজে নিজেই সাবমিট হয়ে যায়। তাই আমার ভয় হল ওটা নিজে নিজে সাবমিট হয়ে যায়নি তো! চেক করার জন্য আমি তৎক্ষণাৎ ক্রোম থেকে ওই ট্যাব টা সরিয়ে দিই এবং প্রসেসটা সেখানেই থামিয়ে দিই। অতঃপর ইমেইল ও এসএমএস চেক করে দেখি যে ট্রানজেকশন সম্পূর্ণ হওয়ার কোন মেসেজ ঢুকেছে কিনা। ঢোকেনি দেখে কিছুটা আশ্বস্ত হই এবং তারপর আরও সতর্ক হতে ক্রেডিট কার্ডের অ্যাপ খুলে কার্ড সেটিংস থেকে তৎক্ষণাৎ সমস্ত রকম ট্রানজেকশন বন্ধ করে দিই।

সেদিন আমি একটুর জন্য বেঁচে যাই!

অনলাইনে কেনাকাটার সময় ওটিপি-র যে এসএমএস-টা আসে সেটার পুরোটা অনেক সময় আমরা ভালো করে চেক-ই করিনা। ঝটপট শুধুমাত্র ওটিপি নম্বর টা দেখে নিয়েই ট্রানজেকশন কমপ্লিট করে দিই। তাছাড়া এখনকার ফোনগুলো এতটাই স্মার্ট হয়ে গেছে যে, এসএমএস-এর ভেতর থেকে শুধুমাত্র ওটিপি টা খুঁজে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। তবে আমার ফোনটা একটু পুরনো হওয়ায় ওই কাজটা এখনো পর্যন্ত তার শিখে ওঠা হয়নি! আর ওই খামতিটাই সেদিন আমার জন্য আশীর্বাদ হয়ে যায়। সেদিন ম্যানুয়ালি এসএমএসটা খুলে পড়তে হয় বলেই অ্যামাউন্টটা আমার চোখে পড়ে আর অল্পের জন্য জালিয়াতির কবলে পড়া থেকে বেঁচে যাই।

তবে পুরোপুরি বাঁচলাম কি? সেটা এখনো আমার কাছে অজানা। একটা ফ্রড ওয়েবসাইটে আমি আমার ক্রেডিট কার্ডের মতো সেনসিটিভ ইনফরমেশন দিয়ে ফেলেছি। আর তারা এই ইনফরমেশন নিয়ে কি করবে তা আমার জানা নেই। সেদিন তৎক্ষণাৎ ওই কার্ডের সমস্ত রকম ট্রানজেকশন আমি সেই কারণেই বন্ধ করে দিয়েছিলাম যাতে ওই কার্ড ইনফরমেশন ব্যবহার করে তারপরেও আমার অজান্তে কোনো জালিয়াতি না হতে পারে। এরপরে আরো একটা কাজ বাকি রইল, যেটা হচ্ছে কার্ডটাকে একবার রিপ্লেসমেন্ট করিয়ে নেওয়া। যাতে ওই কার্ড সম্পর্কিত নম্বর গুলো একবার পরিবর্তন হয়ে যায় আর আগের নম্বরগুলো অকেজো হয়ে যায়।

যদি ওটিপি টা দিয়ে ফেলতাম…

এতক্ষণের ঘটনা পরম্পরা অনুযায়ী ওটিপি দিয়ে ফেললে আমার ৮১ হাজার টাকা জালিয়াতি হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু যদি আমি সেদিন ওটিপি দিয়েও ফেলতাম তাহলেও কিন্তু জালিয়াতরাই হারতো আর আমি বেঁচেই যেতাম। কারণ, কার্ড সেটিংসে আমার আরো একটা সুরক্ষা কবচ দেওয়া ছিল। আমার কার্ডের ক্রেডিট লিমিট ৮১ হাজারের থেকে বেশি হলেও কার্ড সেটিংস থেকে ট্রানজেকশন লিমিট ওই অ্যামাউন্টের থেকে অনেক কম করা ছিল। তাই, ওই অ্যামাউন্টের ট্রানজেকশন করার চেষ্টা করা হলেও সেটা অটোমেটিক ডিক্লাইন হয়ে যেত।

অভিনব এই পদ্ধতিতে জালিয়াতির কার্যপ্রণালী

বহু বছর থেকে কম্পিউটার, স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করার দরুন টেকনোলজি আর অনলাইনে সুরক্ষার ছোটখাটো ব্যাপারগুলো সম্পর্কে আমি ওয়াকিবহাল। বহুবার বহু রকম ছোটখাটো ফাঁদ আমি খুব সহজেই এড়িয়েছি। আর সচরাচর যে সমস্ত ভুলগুলো সবাই করে থাকে সেগুলো করা থেকেও আমি সাধারণত বিরতই থাকি। কিন্তু তবুও সেদিন আমি জালিয়াতির ফাঁদে পা দিয়ে বসি। এমনটা হওয়ার পেছনে কারণ ছিল জালিয়াতির ধরণের অভিনবত্ব, সেদিনের পরিস্থিতি, আমার লোভ আর কিছুটা অসতর্কতা।

আরও পড়ুনঃ  ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি কিভাবে হয়? এর থেকে বাঁচবেন কিভাবে...?

সেদিন ঘটনাটা ঘটার পরে পিছন ফিরে ভালোভাবে খুঁজে দেখা এবং ভাবনা চিন্তা করার পর আমি এভাবে জালিয়াতির পুরো কার্যপ্রণালী টা বুঝতে পারি। জালিয়াতির পুরো বিষয়টা দারুনভাবে প্রফেশনালি প্ল্যানড ছিল। যেমন,

অন্য বাস্তব কোম্পানির নাম ব্যবহার

সেদিনের অ্যাডটাতে যে কোম্পানির নাম ব্যবহার করা হয়েছিল সেটা কোনো কাল্পনিক বা নতুন অচেনা নাম ছিল না। বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হওয়ার জন্য ইতিমধ্যে স্থিত এক কোম্পানির নামে অ্যাডটা দেওয়া হয়েছিল।

দেশের বিশাল বড় ও পুরানো এক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নাম জড়িয়ে দেওয়া 

আরোও বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য তারা প্যারেন্ট কোম্পানি হিসেবে দেশের সবথেকে বড় ও বিশ্বাসযোগ্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটা কোম্পানির নাম জড়িয়ে দিয়েছিল।

একটা বিশ্বাসযোগ্য ব্যাকগ্রাউন্ড স্টোরি

ঠিক যেভাবে বড় বড় কোম্পানি তাদের ব্যবসা বাড়ানোর জন্য বা মার্কেটিং করতে আমাদের মনে দাগ কাটে এমন ধরনের বিভিন্ন স্টোরি ব্যবহার করে থাকে, এক্ষেত্রেও অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে এবং মিথ্যেটাকে সঠিক প্রতিপন্ন করতে অ্যাডের কনটেক্সট-এ দারুণ সলিড একটা গল্প দেওয়া হয়েছিল (যেটা আমি ইতিমধ্যেই বলেছি) যাতে বিশ্বাসটা আরো পোক্ত হয়। 

অ্যাড এবং ওয়েবসাইটের প্রফেশনাল ডিজাইন

অ্যাড এবং অ্যাডে ক্লিক করার পরে যে ওয়েবসাইট খুলেছিল তার ডিজাইন ও গ্রাফিক্স এতটাই প্রফেশনাল ছিল যে, সেটার ব্যাপারে নেগেটিভ ভাবনার উদ্রেক হওয়া খুবই কঠিন ছিল! 

ফিশিং ওয়েবসাইট

ট্রানজেকশন করার আগে ঝট করে করা গুগল সার্চে আসল কোম্পানিটার নাম ও ওয়েবসাইট এসেছিল বটে, তবে সেই মুহূর্তে আমি যেটা নোটিশ করতে ব্যর্থ হই এবং ঘটনার পরে খেয়াল করি সেটা হল, ওই আসল আর নকল ওয়েবসাইটের ইউআরএল-এ একটা লেটারের তফাৎ ছিল। অর্থাৎ ওই ফেক ওয়েবসাইটটা আসলে একটা ফিশিং ওয়েবসাইট ছিল।

লোকাল ঠিকানা ব্যবহার ও লোকালাইজড অ্যাডকে জালিয়াতির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার

বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরী করার জন্য ওদের আরো একটা অস্ত্র ছিল ওয়েবসাইটে লোকাল অর্থাৎ কলকাতার একটা ঠিকানার ব্যবহার। তাছাড়া এর পাশাপাশি গুগলে এ্যাড ডিস্ট্রিবিউশনের ক্ষেত্রেও লোকালাইজড অ্যাডের ফিচার কে তারা জালিয়াতির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিল। অ্যাডটা আমি দেখেছিলাম কলকাতায় পা রাখার পরে। অর্থাৎ, ওই অ্যাড দেখানোর ক্ষেত্রে এমন সেটিংস ব্যবহার করা হয়েছিল যাতে একমাত্র কলকাতায় বসবাসকারীদেরই সেটা দেখানো হয় আর তারা কলকাতার নাম বা ঠিকানা দেখে বিশ্বাস করে, বিভ্রান্ত হয় এবং জালিয়াতির ফাঁদে পা দেয়।

লোভ এবং ফিয়ার অফ মিসিং আউট

লোভ আর ফোমো বা ফিয়ার অফ মিসিং আউট – এই দুটো ক্লাসিকাল নীতি ছোট-বড় অনেক কোম্পানিই জেনুইন কারণে এবং সঠিকভাবে ব্যবহার করে থাকে সেলস বাড়ানোর জন্য। তবে সেদিন জালিয়াতরা অসৎ উদ্দেশ্যে এই দুটো জিনিস আমার উপর প্রয়োগ করেছিল এবং সফলও হয়েছিল। অবিশ্বাস্য ছাড় আর একমাত্র সেদিনের জন্যই ছাড় – এই দুটো অস্ত্রেই সেদিন আমি বিদ্ধ হয়েছিলাম!

ছোট অ্যামাউন্টের অর্ডারকে ব্যাকগ্রাউন্ডে বদল

জালিয়াতির এই চিত্রনাট্যের শেষ অংশটাই সবথেকে অভিনব ছিল। ওয়েবসাইটের ফ্রন্ট এন্ডে সামান্য একটা অংকের ছদ্ম অর্ডার দেখিয়ে কোডিং এর কেরামতিতে ব্যাক এন্ডে অর্ডার অ্যামাউন্টটা বদলে অনেক বড় করে দেওয়া হয়েছিল। এবং খারাপ হলেও এই বিষয়টাই আমার কাছে নতুন একটা অভিজ্ঞতা ছিল।

গুগল অ্যাডের মাধ্যমে এধরনের জালিয়াতির হাত থেকে বাঁচবেন কিভাবে?

সেদিনের অভিজ্ঞতাটা খানিকটা তেতো হলেও সেটার জন্যই আমি এই জালিয়াতির বিষয়টা সম্পর্কে জানতে পেরেছি। সেদিন কিছুটা অসাবধান হলেও কিছুটা সচেতনতা ও আগে থেকে নেওয়া প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থার জন্য আমি ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে গেছি। আর আমার অভিজ্ঞতা থেকে এবার আপনাদের সাবধান হওয়ার পালা। কথায় আছে প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর। সুতরাং ফাঁদে পড়ার বা ক্ষতি হওয়ার আগেই প্রয়োজন কিছু প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আর তার সাথে কিছু সাবধানতা মেনে চলার। যেমন,

ক্রেডিট কার্ডের ট্রানজেকশন লিমিট কমিয়ে রাখুন ও অপ্রয়োজনীয় ধরনের ট্রানজেকশন বন্ধ রাখুন

সাধারণত ক্রেডিট কার্ডে যে ক্রেডিট লিমিট পাওয়া যায় সেটা বেশ মোটা অংকেরই হয়। আর যাতে কখনো কোনো কারনে জালিয়াতির ঘটনা ঘটলে ধাক্কাটা কমের উপর যায় সেজন্য যতটা সচরাচর প্রয়োজন হয় সেই অনুযায়ী পার ট্রানজেকশন এবং টোটাল ট্রানজেকশন লিমিট কম করে রাখুন।

এর পাশাপাশি কার্ডে যে ধরনের ট্রানজেকশন আপনার প্রয়োজন নেই (যেমন ইন্টারন্যাশনাল, কন্টাক্টলেস, এটিএম ইত্যাদি) সেগুলো বন্ধ রাখুন। বিশেষ করে ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশনের অপশনটা বন্ধ রাখাই মঙ্গল। কারণ, এ ধরনের ছোট ছোট ট্রানজেকশনে ওটিপির প্রয়োজন পড়ে না!

অচেনা অজানা ওয়েবসাইট থেকে যেকোনো কেনাকাটা করা থেকে বিরত থাকুন

খুব প্রয়োজন না পড়লে অনলাইনের কেনাকাটা করুন চেনাজানা ওয়েবসাইট বা অ্যাপ থেকে। আর পেমেন্ট করার আগে ওয়েবসাইটের ইউআরএল টা ভালো করে চেক করে নিন।

ভার্চুয়াল কার্ডের সুবিধা থাকলে তা ব্যবহার করুন

অনেক ব্যাংক ভার্চুয়াল ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড ব্যবহারের সুযোগ দেয়। এগুলো টেম্পোরারি ব্যবহারের জন্য বানানো যায় এবং আগে থেকে লিমিট সেট করে নেওয়া যায়। এ ধরনের কার্ড ব্যবহার করলে একদিকে যেমন নির্দিষ্ট লিমিটের বাইরে ট্রানজেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না, তেমনি যেহেতু কার্ডগুলো টেম্পোরারি তাই আপনার আসল কার্ডের নম্বরটা লিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

টু গুড টু বি ট্রু ডিল থেকে দূরে থাকুন

যদি কখনো এমন কোনো অফার দেখেন যেটা এতটাই সাশ্রয়ী যে বিশ্বাস করতে অসুবিধা হচ্ছে, তবে সে ধরনের অফার এড়িয়ে যাওয়াই মঙ্গল। এই ধরনের জালিয়াতিতে সবথেকে প্রধান অস্ত্র হচ্ছে লোভ। ‘অবিশ্বাস্য’ অফারে সাশ্রয়ের লোভটা যদি প্রথমেই ত্যাগ করা যায় তাহলে জালিয়াতির কবলে পড়ার সম্ভাবনাটাই তৈরি হয় না।

পেমেন্ট অপশনে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া অন্য অপশন না থাকলে সাবধান হন

এই ধরনের জালিয়াতিতে সাধারণত কেবলমাত্র ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেই পেমেন্ট চাওয়া হয়। কারণ, সাধারণত ক্রেডিট কার্ডের ক্রেডিট লিমিট ব্যাংকে পড়ে থাকা লুজ টাকার থেকে বেশি হয়। ফলে, জালিয়াতরা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে ট্রানজেকশনের থেকে ক্রেডিট কার্ডে অনেক বেশি টাকা বাটপারি করার সুযোগ পায়। তাই, যে ওয়েবসাইটে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া ট্রানজেকশনের অন্য কোন মাধ্যম গ্রাহ্য নয় সেখানে ট্রানজেকশন করার আগে ভালো করে সবকিছু চেক করে নিন।

আরও পড়ুনঃ  আধার কার্ড দিয়ে পেমেন্ট? ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড ছাড়াই? কিভাবে...?

ওটিপি দেওয়ার আগে ওটিপির এসএমএস-টা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ুন

আধুনিক ফোনের নোটিফিকেশন অপশন থেকে শুধুমাত্র ওটিপি দেখে নিয়ে বা কপি করে দিয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকুন এবং যত ছোট অঙ্কের ট্রানজেকশনই হোক না কেন, সব সময় ওটিপি-র এসএমএস-এ ট্রানজেকশনের অংকটা ভালো করে মিলিয়ে নিন।

সব সাবধানতা সত্ত্বেও ভুল হয়ে গেলে কী করনীয়? 

আমরা মানুষ, আর তাই যতই সব কিছু জানা থাক বা যতই সাবধানতা অবলম্বন করা হোক, ভুল হতেই পারে। আর কখনো কোনোভাবে যদি ভুল হয়ে যায় এবং কার্ড নম্বর লিক হয়ে যায় বা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়, তখন হা হুতাশ না করে চটপট কিছু কিছু করণীয় কাজ থাকে যেগুলো করে নিতে হবে। যেমন,

  • জালিয়াতির ব্যাপারটা বোঝা মাত্র ব্যাংক বা কার্ডের হেল্পলাইনে ফোন করে তৎক্ষণাৎ বিষয়টা রিপোর্ট করতে হবে এবং কার্ডটা ব্লক করতে হবে এবং/অথবা কার্ডের অ্যাপ থেকে চটপট সব ধরনের ট্রানজেকশন বন্ধ করে দিতে হবে।
  • অতঃপর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পুলিশের সাইবার সেলে বিষয়টা জানাতে হবে। গতানুগতিক ডায়েরী করার আগে তৎক্ষণাৎ এটা করার জন্য সাইবার সুরক্ষা সেলের হেল্পলাইন নম্বর, ইমেইল এবং সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল-ও ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • অনেক কার্ডে কমপ্লিমেন্টারি জিরো লাইবিলিটি ইন্সুরেন্সের সুবিধা পাওয়া যায়। আপনার কার্ডে সেই সুবিধা থাকলে ইন্সুরেন্সের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য ফর্মালিটিগুলো পূরণ করতে হবে।
  • সবশেষে কার্ডটা রিপ্লেস করিয়ে নিতে হবে যাতে ওই নম্বর ব্যবহার করে ভবিষ্যতে আর কোনো জালিয়াতির ঘটনা না ঘটতে পারে।

এ ধরনের অ্যাড তথা জালিয়াতি বন্ধ করতে গুগল কী করছে?

যেদিন আমার সঙ্গে ঘটনাটা ঘটে সেদিন আমার গুগলের ওপর খুব রাগ হয়েছিল। আমার মনে হয়েছিল এটার জন্য গুগল-ই দায়ী। কিন্তু আসলে কি তাই? গুগল তো একটা প্ল্যাটফর্ম মাত্র। অ্যাডটা গুগলের প্ল্যাটফর্মে দেখা গেলেও আসলে সেটা দিয়েছিল কিন্তু কিছু অসাধু লোকজন। তাই এ ধরনের এবং সব ধরনের জালিয়াতিতেই প্রকৃত দায়ী জালিয়াতরাই।

ঠিক যেভাবে বিজ্ঞান অভিশাপ হয়ে যায় ভুল ভাবে সেটার ব্যবহারের জন্য, এবং সেজন্য বিজ্ঞানকে দোষ দেওয়া যায় না, এক্ষেত্রেও গুগলের প্রোভাইড করা অসাধারণ একটা অ্যাড দেওয়ার প্ল্যাটফর্ম, যেটা ব্যবসা বাড়ানোর জন্য বা নতুন কাস্টমার খুঁজে পাওয়ার জন্য অতুলনীয়, সেটাকে কিছু অসাধু লোকজনের অপব্যবহারের জন্য প্ল্যাটফর্মটাকে বা গুগলকে দোষ দেওয়া যায় না।

গুগল বিশাল একটা কোম্পানি। এবং তাদের প্ল্যাটফর্মে যেকোনো ছোট বড় কোম্পানি বা যেকোনো কেউ বিভিন্ন উদ্দেশ্য সাধনে অ্যাড দিতে পারে। চাইলে আপনি বা আমিও আমাদের নিজস্ব কারণে গুগল অ্যাডের একটা অ্যাকাউন্ট খুলে অ্যাড দিতে পারি। আর প্ল্যাটফর্মটা যাতে সবাই ব্যবহার করতে পারে তার জন্য এ ধরনের ব্যবস্থাপনা থাকাটা জরুরী-ও। আর যেহেতু এখানে অ্যাড দেওয়ার দরজা সবার জন্য খোলা, তাই লক্ষ লক্ষ কাস্টমারের মধ্যে কে অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে অ্যাড দিচ্ছে সেটা গুগলের জন্যও সব সময় আগে থেকে বোঝা সম্ভব নয়।

তবে গুগল যে কোনো রকম ব্যবস্থা নেয় না, বা নিচ্ছে না তা কিন্তু নয়। যখনই এ ধরনের কোনো অ্যাড গুগলের নজরে আসে তখনই গুগল তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় এবং সেটা দেখানো বন্ধ করার পাশাপাশি ওই সমস্ত অ্যাকাউন্ট গুলোকেও সাসপেন্ড করে দেয়। শুধুমাত্র আগের বছরেই ভুল তথ্য দেওয়া ও জালিয়াতিতে জড়িত এমন ৫০০ কোটিরও বেশি অ্যাড গুগল সরিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে তারা যতই ব্যবস্থা নিক, জালিয়াতরাও তাদের সমস্ত ব্যবস্থাপনাকে বাইপাস করার রাস্তা বের করে এবং নতুন নতুন অ্যাকাউন্ট তৈরি করে আবার জালিয়াতি করতে উদ্যত হয়।

ঠিক যেভাবে জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে অনবরত ভালো খারাপের লড়াই চলে, এক্ষেত্রেও গুগল আর জালিয়াতদের লড়াই চলছে এবং চলবে। তবে তার মাঝে আমাদের নিজেদেরকে বাঁচানোর জন্য এবিষয়য়ে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে ও সুরক্ষিত থাকার যথাসম্ভব প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

আমরা কি গুগলকে কোনোভাবে সাহায্য করতে পারি?

গুগল নিজে থেকে এধরনের জালিয়াতির অ্যাড গুলো সরানোর ব্যবস্থা নেওয়া পর্যন্ত আমরা যদি বসে না থেকে এই ধরনের কোনো অ্যাড নজরে এলে সেগুলোকে রিপোর্ট করি তাহলে কিন্তু কাজটা গুগলের জন্য অনেক সহজ হয়ে যায়। আর যত বেশি সংখ্যায় সাধারণ মানুষ এই রিপোর্টিং-এ অংশ নেবে ততই লাভটা পুরো সিস্টেমটার হবে এবং অনেক মানুষ জালিয়াতির হাত থেকে বেঁচে যাবে।

এ ধরনের জালিয়াতিতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ক্ষতিটা কিন্তু সেই সমস্ত জেনুইন কোম্পানিগুলোরও হয় যেগুলোর নামে এগুলো করা হয়। রেপুটেশনের পাশাপাশি এর ফলে অনেক সময় তাদের ব্যবসারও ক্ষতি হয়। তাই যদি গুগলে রিপোর্ট করার পাশাপাশি এ ব্যাপারে ওই সমস্ত কোম্পানির কন্টাক্ট ইমেইলে বিষয়টা জানানো হয় তাহলে ওই কোম্পানিগুলোও বিষয়টা জানতে পারে এবং জালিয়াতদের উপর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারে।

শেষ কথা

আমার সাথে এই ধরণের একটা ঘটনা ঘটেছে বলে এটা কিন্তু একদমই ভাববেন না যে, আমি গুগল ব্যবহার করা থেকে, গুগলে দেখানো অ্যাডে ক্লিক করা থেকে বা অনলাইনে কেনাকাটা করা থেকে পুরোপুরি বিরত থাকছি…। আমি ঘটনাটার আগে যেভাবে এই সমস্ত বিষয়গুলোয় অংশ নিতাম এখনও নিচ্ছি এবং ভবিষ্যতেও নেব। তবে ঘটনাটার পর থেকে আরও বেশি সচেতন থাকছি আর আশা করছি ভবিষ্যতে কখনো এই ধরনের ফাঁদে আর আমি পা দেবো না। আর আপনাদের কাছে পুরো ঘটনাটা তুলে ধরার পর আপনাদের থেকেও একই রকম প্রত্যাশা রাখব…।

আজকের বকর বকর তাহলে এখানেই শেষ করছি। ভালো থাকুন আর ইন্টারনেটের দুনিয়ায় সাবধানে চলাফেরা করুন। টা টা…🙂


সম্পর্কিত পাঠঃ
ব্যাংক জালিয়াতির 10 ধরণ। জানুন আর সঞ্চয়ের টাকা রক্ষা করুন।
ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি কিভাবে হয়? এর থেকে বাঁচবেন কিভাবে…?

মন্তব্য করুন