অ্যামাজনে শপিং করা মানে মজাই মজা। অ্যামাজনের মূলমন্ত্র ‘কাস্টমার হচ্ছে রাজা’। কাস্টমারের ইউজার এক্সপিরিয়েন্স দুর্দান্ত করতে এবং কাস্টমারকে খুশি রাখতে ও ধরে রাখতে অ্যামাজন ওদের ওয়েবসাইট বা অ্যাপে বহু রকম ফিচার বা সুযোগ-সুবিধা প্রোভাইড করে। আবার কেনাকাটার সময় ওরা নিজে থেকেই বহু ভাবে বহু রকম ছাড়ও দেয়। এর সাথে ওদের অনবদ্য আফটার সেল সার্ভিস বা কাস্টমার কেয়ার সার্ভিসের কথাও এখানে না বললেই নয়।
অ্যামাজনের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যকে আবার একটু বাঁকা আঙুলে ব্যবহার করে আরোও বেশি সুযোগ সুবিধা বা ছাড় আদায় করে নেওয়া যায়। আর সেই জিনিস গুলোই আপনি এখানে জানতে পারবেন। এই গুপ্ত কৌশলগুলো ব্যবহার করে আপনিও আমার মতো অ্যামাজন থেকে কেনাকাটার সময় বেশ কিছুটা এক্সট্রা লাভ পেতে পারবেন বা টাকা বাঁচাতে পারবেন। এরমধ্যে কয়েকটা কৌশল কিছুটা অনৈতিক হলেও সবার লাভের স্বার্থে আমি এখানে সেগুলো শেয়ার করছি। এর মধ্যে কিছু কৌশল অন্যান্য শপিং ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে।
নতুন অ্যাকাউন্টের বা প্রথম অর্ডারের অফার বারবার
অ্যামাজন বা বেশীরভাগ ই-কমার্স ওয়েবসাইট গুলোই নতুন ইউজারদের জন্য বা প্রথম অর্ডারের জন্য কিছু না কিছু অফার দিয়ে থাকে। দ্বিতীয়বার অর্ডার দেওয়ার ক্ষেত্রে কিন্তু এই অফার গুলো পাওয়া যায় না। তাই যদি এ ধরনের অফার গুলো বারবার পেতে চান তাহলে আপনাকে বিভিন্ন ইমেইল আইডি বা বিভিন্ন ফোন নাম্বার দিয়ে আলাদা আলাদা অ্যাকাউন্ট তৈরি করে নিতে হবে এবং ওই আলাদা আলাদা অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে আপনি এ ধরনের অফার গুলো বারবার পেতে পারবেন।
একাধিক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ডবল ডিসকাউন্ট
অ্যামাজনে বিভিন্ন সময়ে বিশেষ রকমের প্রোডাক্টের জন্য বিশেষ কুপন প্রোভাইড করে। ওই কুপন ব্যবহার করে সেই নির্দিষ্ট ধরনের প্রোডাক্ট কিনলে কিছু এক্সট্রা ছাড় পাওয়া যায়। কিন্তু ওই কুপন গুলো একবারই ব্যবহার করা যায়। এক্ষেত্রে আপনি একাধিক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে একই কুপনের সুবিধা একাধিকবার নিতে পারবেন।
যেমন ধরুন অ্যামাজনে প্রতি মাসের শুরুতে যে গ্রোসারীর কুপন প্রোভাইড করে সেগুলো ব্যবহার করে নির্দিষ্ট অ্যামাউন্টের গ্রোসারী কিনলে 10 থেকে 15% পর্যন্ত এক্সট্রা ছাড় পাওয়া যায়। অনেক সময় 1500 টাকার কেনাকাটায় 150 টাকা ক্যাশব্যাকের কুপন পাওয়া যায়। কিন্তু ধরুন আপনার 3000 টাকার মাল দরকার। তখন আপনি ওই কুপন ব্যবহার করলে কিন্তু 150 টাকাই ডিসকাউন্ট পাবেন। কিন্তু আপনি যদি পুরো অর্ডারটাকে দুভাগ করে দুটো অ্যাকাউন্ট থেকে 1500 টাকার আলাদা দুটো অর্ডার দেন তাহলে আপনি মোট 300 টাকা ক্যাশব্যাক পেতে পারবেন।
‘সাবস্ক্রাইব অ্যান্ড সেভ’ ডিসকাউন্ট ট্রিক
অ্যামাজনে কিছু কিছু প্রোডাক্ট এর ক্ষেত্রে সাবস্ক্রাইব অ্যান্ড সেভ ফিচার এর মাধ্যমে সাবস্ক্রাইব করার জন্য 5-10% পর্যন্ত এক্সট্রা ছাড় পাওয়া যায়। কোনো প্রোডাক্ট প্রথমবার অর্ডার করার সময় যদি সেই প্রোডাক্টে এই সুবিধা থাকে তাহলে প্রোডাক্ট কার্টে অ্যাড করার পর কার্টেই এই সুবিধা অন করে নিলে ওই অর্ডারের সময়েই 5% এক্সট্রা ছাড় পাওয়া যায়।
কিন্তু এই ছাড় নিতে গেলে বাধ্যতামূলকভাবে সাবস্ক্রিপশন-ও অন করতে হয়। আর সাবস্ক্রিপশন অন করা মানে কয়েক মাস পরে ওই প্রোডাক্ট আবার অটোমেটিক অর্ডার হয়ে যায়।
কিন্তু আপনি চাইলে সাবস্ক্রিপশনের বোঝা না বাড়িয়েই সাবস্ক্রাইব অ্যান্ড সেভ ফিচারের ছাড়টা নিতে পারেন। এর জন্য সাবস্ক্রাইব অ্যান্ড সেভ ফিচার অন করে অর্ডার করার পর অ্যামাজন অ্যাপ এ সাবস্ক্রাইব অ্যান্ড সেভ সেকশনে গিয়ে ম্যানেজ সাবস্ক্রিপশনস বাটনে ট্যাপ করে সাবস্ক্রিপশনস ট্যাবে যাওয়ার পর সাবস্ক্রাইব করা প্রোডাক্ট এর পাশে এডিট বাটন থেকে ওই প্রোডাক্টের সাবস্ক্রিপশন পেজে গিয়ে পেজের একদম নিচে ক্যানসেল সাবস্ক্রিপশন বাটনে ট্যাপ করে ওই সাবস্ক্রিপশন থেকে মুক্তি পেতে পারবেন।
প্রচুর ছাড়ে ভালো মানের আইটেম খোঁজার ট্রিক
অ্যামাজন থেকে অবিশ্বাস্য ছাড়ে, খুব সস্তা দামে দুর্দান্ত মানের ব্র্যান্ডেড জিনিস খুঁজতে ← এখানে ক্লিক করুন!
অ্যাফিলিয়েট কমিশন ফেরত পাওয়ার কৌশল
অ্যামাজন তার অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম এর মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েটদের অ্যামাজনের বিভিন্ন প্রোডাক্টের লিংক শেয়ার করার সুযোগ দেয় এবং সেই অ্যাফিলিয়েট লিংক ব্যবহার করে কেউ কোনো প্রোডাক্ট কিনলে অ্যামাজন তাদের এফিলিয়েটদের নির্দিষ্ট রেটে কমিশন দেয়। তাই অ্যামাজনে বিভিন্ন প্রোডাক্টের যে দাম দেখা যায় তার মধ্যে অ্যাফিলিয়েট কমিশন আগে থেকেই যোগ করা থাকে।
তবে আপনি ক্রেতা হিসেবে চাইলে ওই অ্যাপিলিয়েট কমিশন ফেরত পেতে পারেন। এবং যদি আপনি সেটা ফেরত পেতে চান তাহলে এক্সট্রা অ্যাফিলিয়েট কমিশন ক্যাশব্যাক সম্পর্কিত ← এই আর্টিকেলটা পড়ে নিন।
অ-ফেরতযোগ্য আইটেম ফেরত দেওয়ার বা রিফান্ড পাওয়ার কৌশল
অ্যামাজনে কসমেটিক্স, পার্সোনাল হাইজিন, ফুড, আন্ডারওয়্যার ইত্যাদি ধরনের কিছু কিছু আইটেম স্বাভাবিক কারণেই অ-ফেরতযোগ্য বা নন-রিটারনেবল হয়। এই ধরনের আইটেম কিন্তু কোনো কারণেই ফেরত দেওয়া যায় না।
তো এই ধরনের কোনো আইটেম ডেলিভারি হওয়ার পর বা প্যাকেজ খোলার পর আপনি যদি দেখেন কোনো রকমের সমস্যা আছে, যেমন ধরুন ড্যামেজড, ডুপ্লিকেট বা এক্সপায়ার্ড আইটেম কিংবা মিসিং পার্টস ইত্যাদি, সেক্ষেত্রে আপনি কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করে আপনার সমস্যার কথা জানিয়ে রিফান্ড বা রিপ্লেসমেন্ট পেতে পারবেন।
শুধুমাত্র রিপ্লেসযোগ্য আইটেম রিটার্ন করার কৌশল
নন-রিটারনেবল আইটেমের মতই কিছু কিছু আইটেম হয় ‘রিপ্লেসমেন্ট অনলি’। মানে সেই প্রোডাক্টগুলো কেনার পর আপনার অপছন্দ হলেও আপনি রিটার্ন করতে পারবেন না। কিছু সমস্যা হলে কেবলমাত্র পাল্টাতে বা রিপ্লেস করতে পারবেন।
এই ধরনের রিপ্লেসমেন্ট অনলি প্রোডাক্টও আপনি কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করে সঠিক কারণ (যেমন ধরুন, জিনিসটা কোনো মোবাইল এক্সেসরি হলে সেই এক্সেসরি আপনার মোবাইলের সাথে কমপ্যাটেবল হচ্ছে না।) দেখিয়ে কাস্টমার কেয়ার এক্সিকিউটিভ-এর মাধ্যমে রিটার্ন রিকোয়েস্ট করতে পারবেন বা রিটার্ন করতে পারবেন।
জিনিস ব্যবহার করার পর খুঁত ধরা পড়লে রিটার্ন করার কৌশল
আবার ধরুন কোনো জিনিস ডেলিভারি হওয়ার পর আপনি ব্যবহার করা শুরু করলেন এবং এক দু দিনের মধ্যেই তাতে কোনো সমস্যা দেখা গেল। আপনি ভাবলেন যে ব্যবহার তো করেই ফেলেছেন তাই আর রিটার্ন করা যাবে না। কিংবা সরাসরি যদি আপনি রিটার্ন রিকোয়েস্ট করেও দেন তাহলে তাই-ই হবে মানে ডেলিভারি এক্সিকিউটিভ ব্যবহার করা জিনিস দেখে আপনার রিটার্ন রিজেক্ট করে দেবে।
তাহলে এ ধরনের কেসে আপনি কি লসটা হজম করবেন? একদমই না। এইরকম সিচুয়েশনেও আপনাকে আগে কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করতে হবে এবং আপনার সমস্যাটা বুঝিয়ে বলতে হবে। ওরা ভিতর থেকে আপনার হয়ে রিটার্ন বা রিপ্লেসমেন্ট রিকোয়েস্ট করে দেবে। এরপর যখন ডেলিভারি এক্সিকিউটিভ আপনার জিনিসটা ফেরত নিতে আসবে তখন যদি ওরা ব্যবহার করা জিনিস বলে রিটার্ন একসেপ্ট করতে না চায় তখন আপনি কাস্টমার কেয়ারে রিকোয়েস্ট করার কথা বলবেন এবং আপনার রিটার্নে আর কোনো রকম সমস্যা হবে না।
কার্ড ডিসকাউন্ট-এর মিনিমাম অর্ডার বাইপাস
অ্যামাজনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডে যে 10% ডিসকাউন্টের অফার থাকে সেটা পেতে সাধারণত মিনিমাম একটা অ্যামাউন্টের কেনাকাটা করতেই হয়। কিন্তু আপনি ওই নির্দিষ্ট মিনিমাম অ্যামাউন্টের কেনাকাটা না করেও শুধুমাত্র আপনার প্রয়োজনের কম দামের জিনিসেও ওই 10% ছাড়টা পেতে পারবেন।
এর জন্য আপনাকে আপনার চয়েস করা জিনিসের পাশাপাশি অন্য এক দুটো যেকোনো ফেরতযোগ্য জিনিস যোগ করে অর্ডারের মোট অ্যামাউন্টটা ওই মিনিমাম অ্যামাউন্ট এর থেকে বেশি করে দিতে হবে। এরপর অর্ডার প্লেস করলে 10% ছাড়ের সুবিধাটা পাওয়া যাবে। অর্ডার প্লেস করার পর যে অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো আপনি যোগ করেছিলেন সেগুলো ক্যানসেল করে দিতে হবে। ক্যানসেল করলেই ওই অপ্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য খরচ হওয়া অ্যামাউন্টটা কার্ডে রিফান্ড হয়ে যাবে। রিফান্ড হওয়ার সময় ওই 10% ছাড়টা প্রত্যেকটা জিনিসের দাম অনুযায়ী অ্যাডজাস্ট হয়ে যায়। আর যে জিনিসটা আপনি আসলে অর্ডার করতে চেয়েছিলেন বা রিটার্ন করলেন না সেটায় কিন্তু ওই ছাড়টা বহাল থেকে যায়।
টাকা ট্রান্সফার ক্যাশব্যাক ট্রিক
অ্যামাজন পে-তে কখনো কখনো কিউআর কোড স্ক্যান করে বা সাধারণভাবে টাকা ট্রান্সফার করলে কিছু ক্যাশব্যাকের অফার দেয়। তো আপনি এই ক্যাশব্যাক পাওয়ার জন্য আপনার বাড়ির যেকোনো দুটো মোবাইল ব্যবহার করে এক মোবাইল থেকে অন্য মোবাইলে কিউ আর কোড স্ক্যান করে টাকা ট্রান্সফার করলেই ফ্রিতে ওই ক্যাশব্যাক টা পেতে পারবেন।
একবার অ্যামাজনে টানা 2-3 মাস প্রতিদিন এভাবে টাকা ট্রান্সফারের জন্য দু চার টাকা করে ক্যাশব্যাক পাওয়া যেত। আমি এভাবে দুটো ফোন ব্যবহার করে একটা থেকে আরেকটায় টাকা ট্রান্সফার করে কয়েকশো টাকা ফ্রিতে ক্যাশব্যাক হিসেবে পেয়েছিলাম।
বোনাসঃ অ্যামাজনে জিনিসের দাম কখন এবং কত কমে জানার কৌশল
অ্যামাজনে কেনাকাটার সময় কোনও জিনিসের দাম কত থেকে কত পর্যন্ত হতে পারে এবং কখন দাম নিম্নতম হয় সেটা এই লিংক থেকে জানতে পারবেন।
শেষ করার আগে…
আগেই বলেছি অ্যামাজন তাদের কাস্টমারদের রাজার মতো ট্রিট করে। আপনার আমার মতো কাস্টমারদের সুবিধার্থেই ওরা সব রকমের ফেসিলিটি দেওয়ার চেষ্টা করে। তাই শেষ করার আগে আমি একটাই আশা রাখব আপনারা এখানে শেয়ার করা যেকোনো কৌশলের অতিরিক্ত ব্যবহার বা অপব্যবহার থেকে বিরত থাকবেন।
ভালো থাকবেন। টা টা 🙂