শেয়ার বাজারের কথা উঠলেই সাথে সাথে আরও দুটো কথা চলেই আসে, ইনভেস্টিং এবং ট্রেডিং। এই দুটো শব্দ মানে দুটো আলাদা পথ শেয়ার বাজার থেকে আয় করার। দুই পথেই বেসিক কাজ দুটো, শেয়ার কেনা এবং বেচা। কিন্তু উপর থেকে এক মনে হলেও দুই পথের ফারাক বিস্তর। দুই ক্ষেত্রে জড়িত ঝুঁকি, সময়কাল, বিনিয়োগের রিটার্ণ, প্রচেষ্টার ধরণ, বিশ্লেষণ শৈলী ইত্যাদি বিচার করলে দেখা যায় ট্রেডিং আর ইনভেস্টিং আসলে দুটো সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস।
শেয়ার বাজারে রোজ কত কী যে ঘটে!
শেয়ার বাজারে বিভিন্ন সেক্টরের হাজার হাজার লিস্টেড কোম্পানির শেয়ার প্রতিদিন কেনাবেচা হয়। ওই সব কোম্পানির মধ্যে কোনও কোনও কোম্পানি বিশাল, আবার কোনও কোনও কোম্পানি তাদের তুলনায় একেবারেই নগণ্য। কোনও কোম্পানি আমাদের সুপরিচিত আবার কোনওটার নাম এক্কেবারেই অজানা। কোনওটা ইনডেক্সের অংশ কোনওটা না। কোনওটা লম্বা সময় ধরে বিনিয়োগকারীদের বিশাল রিটার্ণ দিয়েছে আবার কোনও কোম্পানি সব টাকা ডুবিয়েছে। হাজারো ঘটনা শেয়ার বাজারে অনবরত ঘটতে থাকে। খুঁটিয়ে দেখলে দেখা যায় বিভিন্ন শেয়ারের দাম অনবরত ওঠানামা করে। যত কম সময়ের ব্যবধানে লক্ষ করা হয়, দেখা যায় এই ওঠা নামার হার তত বেশি। কিন্তু আবার লং টার্মের চার্ট দেখলে দেখা যায় ভালো ভালো কোম্পানিগুলো লম্বা সময় ধরে ক্রমাগত তাদের ব্যবসা ও লাভ বাড়িয়ে বিশাল কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে এবং সাথে সাথে তাদের শেয়ারের দাম কোনো কোনো ক্ষেত্রে হাজার হাজার গুণে বেড়ে গেছে।
‘যত মত তত পথ’
শ্রী শ্রী ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলেছিলেন ‘যত মত তত পথ’। শেয়ার বাজারে এই এত কোলাহলের মধ্যেও বিভিন্ন মানসিকতার বিভিন্ন মানুষ আয় করার বিভিন্ন উপায় খুঁজে নিয়েছেন।
একটা কোম্পানি বা একটা শেয়ার ছেড়ে যদি দেশ বা একটা ইনডেক্সের কথা ধরি, তাহলে দেখা যায় সাধারনত কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিয়ে বেশীরভাগ দেশ এবং তাদের শেয়ার বাজারের ইনডেক্স লম্বা সময়ের ব্যবধানে ক্রমাগত বাড়ে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে এই বৃদ্ধির হার বিভিন্ন রকম হয়। বর্তমান সময় বিচার করলে বিগত কিছু দশক ধরে সম্ভাবনাপূর্ণ উন্নয়নশীল দেশ হয়ে উঠেছে আমাদের ভারতবর্ষ। ভারতের ফ্ল্যাগশিপ ইন্ডেক্স নিফটি 50-র কথা যদি ধরা যায় তাহলে দেখা যাবে বিগত কুড়ি বছরে নিফটি 50 ইনডেক্স 1000 থেকে পৌঁছেছে প্রায় 18000 এর কাছে। কুড়ি বছরের ব্যবধানে 18 গুণ এটা নেহাতই কম না তাই না! আবার আরও একটু গভীরে গিয়ে উদাহরণ হিসাবে যদি এই ইনডেক্সের একটা অংশ টাটার টাইটান কোম্পানির কথা ধরি, দেখা যাবে এর শেয়ার 2001 সালে এর নিম্নতম দাম 1.30 টাকা থেকে বেড়ে আজকের দাম অনুযায়ী হয়েছে 2538 টাকা। মানে সেদিন থেকে 21বছর পর এর দাম বেড়েছে প্রায় 2000 গুন!
ভারতের এক নম্বর ইনভেস্টর রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা বাবু তার শেয়ারবাজারের জার্নি মাত্র 5000 টাকা থেকে শুরু করে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তাঁর পোর্টফোলিওর ভ্যালুয়েশন নিয়ে গিয়েছিলেন 30 হাজার কোটিতে! তাঁর সম্পত্তির এই পর্বত প্রমাণ বৃদ্ধির পেছনে একটা বড় কারণ এই টাইটান কোম্পানির শেয়ার কেনা এবং সেটাকে লম্বা সময়ের জন্য ধরে রাখা। ভবিষ্যতে দেশ আরও উন্নতি করবে বা দেশের ইনডেক্স বাড়বে এবং তাঁর সাথে ভালো ভালো কোম্পানিগুলো আরও বড় হবে এই আশাবাদী মনোভাব রেখে পছন্দের সম্ভাবনাময় কোম্পানির শেয়ার কেনা এবং লম্বা সময়ের জন্য হোল্ড করে সম্পদ বানানোর পথই ইনভেস্টিং।
এইমাত্র যার কথা বললাম সেই রাকেশবাবু একদিকে যেমন ছিলেন ইনভেস্টর তেমনই অন্যদিকে তিনি একজন ট্রেডারও ছিলেন। শেয়ার বাজারে তাঁর যাত্রা আসলে শুরু হয়েছিল ট্রেডিং দিয়েই। 1986 তে তিনি একবার সবকিছু বিচার করে সিদ্ধান্ত নেন যে টাটা টি-র শেয়ার-এর দাম খুব শীঘ্রই বাড়তে চলেছে। সেইমত তিনি টাটা টি কোম্পানির 5000 টি শেয়ার 43 টাকা প্রতি শেয়ার দরে কিনে রাখেন। তাঁর আন্দাজ সত্যি হয় এবং 3 মাসের ভিতরেই সেই শেয়ারের দাম 143 টাকায় ওঠে এবং তিনি তাঁর কেনা শেয়ার বিক্রি করে শেয়ার প্রতি 100 টাকা লাভ করেন। এই ট্রেডে তিনি 3 গুণেরও বেশি লাভ করেছিলেন। এটাই তাঁর প্রথম সবথেকে বেশি লাভজনক ট্রেড ছিল। শেয়ার কিনে খুব কম সময়ের মধ্যে বিক্রি করে লাভ পকেটজাত করার জন্যই এর নাম ট্রেডিং।
তাহলে, শেয়ার বাজারে ইনভেস্টিং আসলে কী?
ইতিমধ্যেই ইনভেস্টিং-এর একটা ছোট্ট উদাহরণ আমি দিয়ে দিয়েছি। পৃথিবীর সবথেকে বড় ইনভেস্টর যাকে ধরা হয় সেই ওয়ারেন বাফেটের কথায়, “যদি আপনি নিদ্রাকালীন সময়ে অর্থ উপার্জনের কোন রাস্তা খুঁজে বের করতে না পারেন, তাহলে আপনাকে মৃত্যু পর্যন্ত কাজ করে যেতে হবে।” নিদ্রাকালীন সময়ে ইনকাম করা মানে হচ্ছে প্যাসিভ ইনকামের একটা সোর্স তৈরি করা। আর শেয়ার বাজারে ঠিকঠাক ভাবে ইনভেস্টিং করা মানেই তাই।
এই ইনভেস্টিং টেস্ট ক্রিকেট খেলার মত। যেমনি বল ধেয়ে আসুক রাহুল দ্রাবিড় ঠিক যেভাবে দাঁতে দাঁত কামড়ে ক্রিজে টিকে থাকতেন, ভালো ইনভেস্টর হতে গেলে আপনাকেও সবদিক বিবেচনা করে স্টক বা কোম্পানি সিলেকশন করার পর সেই কোম্পানির শেয়ার কিনে বহুগুণে রিটার্ন এর আশায় সেই শেয়ার হোল্ড করতে হবে বছরের পর বছর কিংবা দশকের পর দশক, এবং শর্ট টার্মে দাম বাড়ুক বা কমুক সেদিকে বেশি গুরুত্ত দিলে চলবে না। বাফেট বাবুর কথায়, “আমাদের পছন্দের হোল্ডিং পিরিয়ড হচ্ছে চিরতরে।”
ইনভেস্টিং এর ধাপঃ
মোদ্দা কথা ইনভেস্টিং-এর প্রথম ধাপ হচ্ছে ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিস করে একটা ভালো লিস্টেড কোম্পানি খোঁজা। সেই কোম্পানি নিজের ব্যবহার করা কোনো জিনিসের কোম্পানি হতে পারে। যে জিনিসটা আপনার ভীষণ পছন্দের এবং আপনি যেটার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখতে পান। এছাড়াও আপনি শেয়ার বাজারে লিস্টেড কোম্পানির তালিকা থেকেও বেছে নিতে পারেন। আবার আমাদের চারপাশে কখন কি ঘটে চলেছে, বা কেমন সময় চলছে এবং কেমন সময় আসতে চলেছে সেসব পর্যবেক্ষণ করে কোন জিনিসের ব্যবহার ভবিষ্যতে বাড়তে চলেছে সেটা আন্দাজ করে সেই জিনিসের সঙ্গে যুক্ত কোন কোম্পানি শর্টলিস্ট করতে পারেন। এরপর সেই কোম্পানির ব্যালেন্স শীট দেখে কোম্পানিটার আর্থিক অবস্থা কেমন, লাভ ও লাভের মার্জিন কেমন, প্রাইস টু আর্নিং রেশিও কেমন, বাজারে ধার কেমন, বৃদ্ধির হার কেমন এছাড়া কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট কেমন বা ওদের ভবিষ্যতের রূপরেখা কেমন ইত্যাদি সবকিছু জেনে এবং বুঝে তবে অন্তিম সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
তারপরে কাজ হচ্ছে একবারে কিংবা ধীরে ধীরে ধাপে ধাপে তাদের শেয়ার কিনতে থাকা। শেয়ার এর দাম যেহেতু চাহিদা এবং সরবরাহ অনুযায়ী কখনও বেশি এবং কখনও কম থাকে, ভালো কোম্পানির শেয়ার যখন কোন সাময়িক কারনে কম দামে পাওয়া যায়, সেই সময়ে সেই শেয়ার কিনে জমা করতে পারলে সবথকে ভালো।
উদাহরনঃ রিলায়েন্স
যেমন ধরুন রিলায়েন্স 2016 সালে যখন বাজারে জিও ফোর জি আনে এবং ফ্রী তে ডেটা দিতে শুরু করে, বাজারে হুলুস্থুল পড়ে যায় এবং হু হু করে ওদের ব্যবহারকারী বাড়াতে থাকে। আর তারপর যখন 2017 তে ওরা চার্জ করতে শুরু করে তখন থেকেই ওদের শেয়ারের দাম বাড়তে শুরু করে। এবং এই চক্র চলতেই থাকে, আর 2016 তে রিলায়েন্স-এর শেয়ারের দাম 500 থেকে আজ পৌঁছে গেছে 2500 তে। মানে মাত্র ছয় বছর আগে এই শেয়ার কিনে রাখলে এখন পর্যন্ত সেই বিনিয়োগ 5 গুন হয়ে যেতে পারত!
লম্বা সময়ের জন্য কোনও শেয়ার কিনে হোল্ড করার আরো কয়েকটা সুবিধা হচ্ছে সময়ে সময়ে কোম্পানির তরফ এ দেওয়া ডিভিডেন্ড, বোনাস শেয়ার বা স্টক স্প্লিট কিংবা বাই ব্যাক-এর লাভ পাওয়া যায়।
ইনভেস্টিং কৌশলের ধরণঃ
বিভিন্ন ইনভেস্টর বিভিন্ন রকম ইনভেস্টিং কৌশল অনুসরণ করেন। তার মধ্যে কয়েকটা হল…
- ভ্যালু ইনভেস্টিং- একজন ভ্যালু ইনভেস্টর ভালো কোম্পানির শেয়ার কখন কম দামে পাওয়া যাচ্ছে সেটা খুঁজে বের করেন এবং সেখানে ইনভেস্ট করেন। মানে আন্ডারভ্যালুড স্টকে ইনভেস্ট করার আর্টই হচ্ছে ভ্যালু ইনভেস্টিং।
- গ্রোথ ইনভেস্টিং- বেশি হারে বৃদ্ধির সম্ভাবনা সম্পন্ন কোম্পানির শেয়ার কেনার নামই হচ্ছে গ্রোথ ইনভেস্টিং। এক্ষেত্রে ঝুঁকি এবং ক্যাপিটাল বাড়ার সম্ভাবনা দুই-ই বেশি।
- ইনডেক্স ইনভেস্টিং- কোন একটা বিশেষ ইনডেক্সে যে সমস্ত কোম্পানির শেয়ার থাকে সেই সমস্ত শেয়ারকে অনুকরণ করে ইনভেস্টিং করাকেই বলে ইনডেক্স ইনভেস্টিং।
শেয়ার ট্রেডিং কী?
আগেই বলেছি চাহিদা এবং সরবরাহের উপর ভিত্তি করে যেকোনো শেয়ারের দাম অনবরত ওঠানামা করে। সময়ের ব্যবধান যত কম এই ওঠানামা তত বেশি। শেয়ার অনবরত হাত বদল হওয়ার জন্য, কোম্পানি ভালো না খারাপ, তার ফান্ডামেন্টালস ইত্যাদি এসব কিছু যাই হোক না কেন, শর্ট টার্মে দামের ওঠানামা অবিশ্যম্ভাবী। কোন শেয়ারের শর্ট টার্মে দামের ওই ওঠানামাকে নিজ সুবিধার্থে কাজে লাগিয়ে লাভ করার প্রচেষ্টার নামই শেয়ার ট্রেডিং।
টেস্ট ক্রিকেট যদি ইনভেস্টিং হয় তবে ট্রেডিং হচ্ছে টি-টোয়েন্টি খেলার মত। টি-টোয়েন্টিতে যেমন সব সময় বাউন্ডারিতে বল পাঠাবার জন্য সুযোগ খুঁজতে মুখিয়ে থাকতে হয় এবং সামান্য সুযোগ পেলেই ব্যাট চালাতে হয় ঠিক তেমনি ট্রেডিং এর ক্ষেত্রেও প্রাইস চার্টের দিকে তাকিয়ে বসে থাকতে হয় এবং সঠিক সুযোগ পেলেই বাই/সেল বাটনে ক্লিক করতে হয়। টি-টোয়েন্টিতে যেমন যুবরাজের মত খুব ভালো এবং স্কিলড প্লেয়ার হলে এবং তার সাথে ভাগ্য কিছুটা সুপ্রসন্ন হলে একটার পর একটা ছক্কা হয় আর অন্যথায় প্যাভিলিয়নে ফেরত আসতে হয় তেমনি ভাল অভিজ্ঞ স্কিলড ট্রেডার খুব কম সময়ের ব্যবধানে ব্যবহৃত ক্যাপিটাল এর উপর বিশাল রিটার্ন পেতে সমর্থ হন অথবা কখনো কখনো মার্কেট উল্টো দিকে গেলে অল্প ক্ষতি স্বীকার করে ট্রেড ক্লোজ করতে বাধ্য হন।
ট্রেডিং এর ধাপঃ
তাহলে যেটা দেখা যাচ্ছে এর পর্যায়গুলো হচ্ছে,
প্রথমত, কোনো ইন্সট্রুমেন্ট যেমন কোনো শেয়ারের প্রাইস চার্ট দেখে টেকনিক্যাল এনালাইসিস এর মাধ্যমে হাই প্রবাবিলিটি এন্ট্রি পয়েন্ট খুঁজে বের করা এবং সাথে টার্গেট ও স্টপ লস-ও ঠিক করা।
দ্বিতীয়ত, এন্ট্রি।
তৃতীয়ত, এন্ট্রি করার পর দাম যদি ফরে যায় তাহলে প্ল্যান অনুযায়ী ট্রেড স্কয়ার অফ করে লাভ পকেট ভরা আর দাম এক্সপেক্টেশন-এর উল্টো দিকে গেলে প্ল্যান ফেল হয়েছে মেনে নিয়ে লস ছোটো থাকতে থাকতেই লস হজম করে স্টপ লস এর মাধ্যমে বা ম্যানুয়ালি ট্রেড শেষ করা।
ট্রেডিং এর বিশিষ্টতাঃ
ট্রেডিং-এর একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য যেটা ইনভেস্টিং থেকে আলাদা সেটা হচ্ছে মার্কেট বা কোনো শেয়ারের দাম উপরদিকে যাক বা নিচের দিকে, দুদিকেই অংশগ্রহণ করা যায়। কম দামে কিনে বেশি দামে বেচা সেটা তো সাধারন ব্যাপার। কিন্তু কোনো শেয়ারের দাম নিচের দিকে যাবে যদি এটা আন্দাজ করা যায়, তাহলে আগে বেশি দামে বেচে এবং দাম কমার পর স্কোয়ার অফ করে বা কিনে নিয়ে ট্রেড কমপ্লিট করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে বেচা ও কেনার দামের পার্থক্যটা লভ্যাংশ হিসাবে পকেটজাত হয়। এ ধরনের ট্রেডকে শর্ট সেলিং বলে।
এছাড়া শেয়ার মার্কেটে ডেরিভেটিভস ইন্সট্রুমেন্টস বা অপশন এবং ফিউচার-ও ট্রেডিং-এর জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে যেটা ইনভেস্টিং এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
সময়কালের উপর ভিত্তি করে ট্রেডিং-এর প্রকারভেদঃ
- পজিশন ট্রেডিং- এক্ষেত্রে টেকনিক্যাল এনালাইসিস এর মাধ্যমে কোন ইন্সট্রুমেন্টের প্রাইস ডাইরেকশন অনুধাবন করে এন্ট্রি এবং এক্সিট পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয় এবং শেয়ারটি কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত হোল্ড করার প্ল্যান করা হয় যতক্ষণ না পর্যন্ত বিক্রি করার সঠিক সুযোগ পাওয়া যায়।
- সুইং ট্রেডিং- এক্ষেত্রে ট্রেডাররা দাম বাড়ার প্রত্যাশায় কয়েকদিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সময়ের জন্য শেয়ার কেনেন।
- ইন্ট্রা-ডে ট্রেডিং- এক্ষেত্রে শেয়ার বা অন্য কোনও ইন্সট্রুমেন্ট কেনা-বেচা বা বেচা-কেনা (শর্ট সেলিং) একদিনের ভিতরেই বা মার্কেট ক্লোজিংয়ের আগেই শেষ করতে হয়।
- স্ক্যাল্প ট্রেডিং- ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সময়ে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দামের পরিবর্তনকে ব্যবহার করে ট্রেড করাকেই স্ক্যাল্প ট্রেডিং বলে। এ ধরনের ট্রেড কয়েক মিনিট এমনকি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেও সম্পন্ন হতে পারে।
ইনভেস্টিং ও ট্রেডিং এর পার্থক্যঃ
বিভিন্ন ফ্যাক্টর উপর ভিত্তি করে এদের পার্থক্যগুলো নিচে টেবিল এর মাধ্যমে দেওয়া হল —
ফ্যাক্টর | ইনভেস্টিং | ট্রেডিং |
---|---|---|
ঝুঁকি | তুলনামূলক কম। | অনেক বেশি। |
সময়কাল | অনেক বেশি। এমনকি সারা জীবনের জন্য হোল্ড করা যেতে পারে। | কম। এমনকি সেকেন্ডের মধ্যে সম্পন্ন হতে পারে। |
আয়ের গতি | কম। বছরে 15-20% রিটার্ণ মানেই অনেক। | বেশি। অনেক ট্রেডার মাসে 10-20% রিটার্ণের লক্ষমাত্রা স্থির করেন। ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে এটা অবাস্তব না। |
অ্যানালিসিস এর ধরন | ফান্ডামেন্টাল। | টেকনিক্যাল। |
সক্রিয়তা | এটা প্যাসিভ ইনকামের একটা উপায়। প্রথমে সঠিক শেয়ার বাছার জন্য এফোর্ট ও সময় ব্যয় করতে হয়, তারপর আর বেশি অ্যাক্টিভ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। | এটাকে বিজনেস বা চাকরির মত ধরা যেতে পারে। অনবরত অ্যানালিসিস করতে হয় এবং সঠিক সময়ে এন্ট্রি করতে ও এন্ট্রি করার পর ভালো লাভে এক্সিট করতে দামের পরিবর্তনের ওপর একটানা নজর রাখতে হয়। |
ডাইরেকশন | কেবলমাত্র দাম বাড়ার ক্ষেত্রেই লাভ হয়। | দাম বাড়া বা কমা দুই ক্ষেত্রেই লাভ করার সুযোগ আছে। |
এক্সট্রা আয়ের সুযোগ | ডিভিডেন্ড, বোনাস ইত্যাদির মাধ্যমে এক্সট্রা আয়ের সুযোগ আছে। | নেই। |
চার্জ | কেনা বেচার ফ্রিকোয়েন্সি খুবই কম তাই চার্জ কম লাগে। | অল্প সময়ের মধ্যে বারেবারে কেনাবেচা করা হয় বলে এক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম চার্জে অনেক বেশি খরচ হয়। |
ট্যাক্স | লং-টার্ম ক্যাপিটাল গেইনে তুলনামূলক অনেক কম ট্যাক্স দিতে হয়। | ট্রেডিং-এর লাভকে বিজনেস ইনকাম বা শর্ট-টার্ম ক্যাপিটাল গেইন হিসাবে দেখানো যায়। দুই ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ বা প্রায় 35% হারে ট্যাক্স দিতে হয়। |
আর্ট না স্কিল | এটা ভালো ব্যবসা বা কোম্পানি খোঁজার একটা আর্ট। | প্রাইস চার্টের টেকনিক্যালিটি বুঝে, মার্কেট ট্রেন্ড বুঝে, আর ঠিক সময়ে বাই / সেল করে ট্রেড করা একটা স্কিল। |
আপনি কোন পথে যাবেন?
উপরের সব কিছু পড়ার পর আপনার ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা, মনোভাব, বয়স, লক্ষ্য, উপলব্ধ সময় ইত্যাদি সব দিক বিচার করে আপনাকে নিজেকেই ঠিক করতে হবে কোন পথটি আপনার জন্য সঠিক।
শেষ করার আগে…
ইনভেস্টিং কিংবা ট্রেডিং যেদিকেই যেতে চান না কেন, শেয়ারবাজারে আসতে চাইলে বিষয়টাকে সিরিয়াসলি নিন। শেয়ার মার্কেট কিন্তু ইয়ার্কির বা হালকাভাবে নেওয়ার জায়গা না। কারণ এখানে ফাইন্যান্সিয়াল লসের সমূহ সম্ভাবনা আছে। তাই জানুন শিখুন পড়ুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করুন তারপরে আসল জলে পা দেবার কথা ভাববেন।
তাহলে আজকের মত এখানেই শেষ করছি। আবার দেখা হবে অন্য কোন আর্টিকেলে। আগামী আপডেটের জন্য ইমেইল বা বেল বাটন থেকে নোটিফিকেশন সাবস্ক্রিপশন কিংবা আপনার স্মৃতি সাবস্ক্রিপশনে guptadhan.com যোগ করে নিতে পারেন! ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন। টা টা