সঠিক ও ভালো মিউচুয়াল ফান্ড চেনার উপায়। নতুনদের জানতেই হবে

4.3/5 - (3 জন রেটিং করেছেন)

মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য টিভি, খবরের কাগজ ও অন্যান্য গণমাধ্যমে ‘মিউচুয়াল ফান্ড সেহি হে’ এটা তো বারবার বলা হয়, কিন্তু ‘সেহি মিউচুয়াল ফান্ড কোনটা হে’ সেটা কিন্তু বলা হয় না! ভালো শেয়ার বাছাইয়ের জন্য প্রাথমিকভাবে কী করা যেতে পারে সেটা কয়েকদিন আগেই আমরা এক্সপ্লোর করেছি। এবারে, মিউচুয়াল ফান্ডের পালা…

সমস্ত মিউচুয়াল ফান্ডগুলোতেই আল্ট্রা এক্সপার্ট ফান্ড ম্যানেজাররা বেঞ্চমার্ক ইনডেক্স (যেমনঃ নিফটি ৫০) বিট করার জন্য বা ভালো রিটার্ন পাওয়ার জন্য আমাদের হয়ে ভালো শেয়ার বাছাই, সেখানে বিনিয়োগ এবং নিয়মিত রি-ব্যালেন্সিংয়ের কাজটা করে থাকেন। তাই এধরণের যেকোনো ফান্ডে বিনিয়োগ করাই নিজে সরাসরি আলাদা আলাদা শেয়ার খোঁজা, পোর্টফোলিও তৈরি করা এবং সেখান থেকে ওভারঅল ভালো রিটার্ন পাওয়ার থেকে অনেক সহজ।

কিন্তু মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করাটা সহজ হলেও সঠিক ফান্ড বেছে নেওয়াটা ততটা সরল নয়। কারণ ৪৪ টা রেজিস্টার্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি বা ফান্ড হাউসের ২৫০০-এর থেকেও বেশি মিউচুয়াল ফান্ড বর্তমান। আর ওই সমস্ত ফান্ডের মধ্যে থেকে আমাদের জন্য উপযুক্ত সঠিক ফান্ড কিভাবে চিনে নেওয়া বা বেছে নেওয়া যাবে সেটাই হল আজকের নিবন্ধের বিষয়।

সূচীপত্র দেখান

সেরা মিউচুয়াল ফান্ড বলে কিছু হয় না!

এই নিবন্ধের উদ্দেশ্য নিজের জন্য ‘সঠিক ফান্ড’ খুঁজে বের করা, ‘সেরা ফান্ড’ নয়। কারণ সেরা ফান্ড বলে কিছুই হয় না। যে ফান্ডটা আজ ভালো রিটার্ন দিচ্ছে সেটা কাল-ও যে দেবে তার কিন্তু কোনো গ্যারান্টি নেই। আবার এর উল্টোটাও সত্যি। মানে আজ যেটা বাজে পারফর্ম করছে সেটা কাল হয়তো বা সেরা পারফর্ম করা ফান্ডগুলোর মধ্যে একটা হয়ে যেতে পারে।

তাছাড়া আমার জন্য যেটা ভালো সেটা আপনার জন্য নাও উপযুক্ত হতে পারে। আমাদের সবার বিনিয়োগের লক্ষ্য, সময়কাল এবং ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা ও মানসিকতা আলাদা। এবং এগুলোর উপর ভিত্তি করেই আমাদের নিজেদের জন্য উপযুক্ত ফান্ড বেছে নিতে হবে।

মিউচুয়াল ফান্ডের বিভাগ

মিউচুয়াল ফান্ডগুলোকে প্রাথমিকভাবে ৩ ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যথাঃ

  • ইকুইটি ফান্ড – এগুলো প্রধানত বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে। বিনিয়োগের ধরণের উপর নির্ভর করে এগুলো দুই রকমের হয়, যথাঃ অ্যাক্টিভ ভাবে ম্যানেজ করা অ্যাক্টিভ ফান্ড এবং প্যাসিভ ইনডেক্স ফান্ড। আবার শেয়ারের মার্কেট ক্যাপের উপর ভিত্তি করে হয় লার্জ-ক্যাপ, মিড-ক্যাপ, স্মল-ক্যাপ, সর্ব সম্বলিত মাল্টি-ক্যাপ এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তনশীল ফ্লেক্সি-ক্যাপ ফান্ড। এছাড়া বিভিন্ন সেক্টর বা থিমের ওপর ভিত্তি করে হয় সেক্টরাল বা থিম্যাটিক ফান্ড আর পাঁচমিশালী হলে ডাইভারসিফায়েড ফান্ড।
  • ডেট (debt) ফান্ড – ডেট মানে ঋণ। এগুলো ঋণ সম্পর্কিত বিভিন্ন স্থায়ী আয়ের ইন্সট্রুমেন্ট যেমন কর্পোরেট ও গভর্নমেন্ট বন্ড, কর্পোরেট ডেট সিকিউরিটি আর বিভিন্ন মানি মার্কেট ইন্সট্রুমেন্টে বিনিয়োগ করে। এই ফান্ডকে ফিক্সড ইনকাম বা বন্ড ফান্ড-ও বলে।
  • হাইব্রিড ফান্ড – উপরের দুই ধরনের ফান্ডের হাইব্রিড হচ্ছে হাইব্রিড ফান্ড। মানে এ ধরনের ফান্ডে শেয়ার এবং ডেট সিকিউরিটি দুই ক্ষেত্রেই বিনিয়োগ করা হয়।
আরও পড়ুনঃ  শেয়ার বাজার কেন আছে? এর প্রয়োজন কী? না থাকলেই বা কী হত?

ফান্ডের সঠিক বিভাগ কিভাবে বেছে নেওয়া যাবে?

সঠিক মিউচুয়াল ফান্ড বেছে নেওয়ার আগে কোন বিভাগের ফান্ডে বিনিয়োগ করা ঠিক হবে সেটা নির্ণয় করতে হবে। এর জন্য সবার আগে নিজের বিনিয়োগের লক্ষ্যটা কী সেটা স্থির করতে হবে।

বিনিয়োগের লক্ষ্য

আপনি কেন এভাবে বিনিয়োগ করতে চাইছেন তার একটা পরিষ্কার উত্তর আপনার কাছে থাকাটা জরুরী। সেটা বাড়ি বা গাড়ি কেনা, ছেলেমেয়ের উচ্চশিক্ষার খরচ চালানো, বেড়ানো, অবসরপ্রাপ্ত জীবনের সম্বল তৈরি, শখ পূরণ বা অন্য যেকোনো কিছু হতে পারে।

লক্ষ্য যদি স্থির না থাকে তাহলে ভবিষ্যতের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে লক্ষে অবিচল থাকাও হবেনা আর বিনিয়োগের সময়কাল পূরণ হওয়ার আগেই বা প্রকৃত পরিণতি পাওয়ার আগেই ভুল সময়ে বিনিয়োগ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। ফলে হয় যতটা রিটার্ন পাওয়া যেত ততটা পাওয়া হবেনা বা ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

তাই এই স্থির লক্ষ্য খুঁজে পাওয়ার উদ্দেশ্যে নিজেকে দুটো প্রশ্ন করতে হবে,

১) ‘আমি কত সময়ের জন্য বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক?’

২) ‘আমি কতটা ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত?’

এই দুটো প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেলেই আপনি আপনার জন্য উপযুক্ত ফান্ডের বিভাগ পেয়ে যাবেন।

সময়কাল

প্রথম প্রশ্নের উত্তর যদি ১ থেকে ৩ বছর হয়, মানে আপনি যদি খুবই কম সময়ের জন্য বিনিয়োগ করতে চান তাহলে আপনার জন্য ডেট ফান্ড আদর্শ হবে। কারণ এগুলোয় যেকোনো ডেট ইন্সট্রুমেন্ট-এর মতোই রিটার্নের হার কম হলেও স্থির থাকে। তাই অসাধারন না হলেও স্ট্যান্ডার্ড একটা রিটার্ন পাওয়া যাবে আর নেগেটিভে যাওয়ার বা অনভিপ্রেত কিছু হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে।

যদি ৫-৭ বছর বা তার থেকে বেশি সময়ের জন্য বিনিয়োগ করতে চান তাহলে যেকোনো ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা আপনার জন্য সঠিক বিকল্প হবে। কারণ লম্বা সময়ে এধরণের ফান্ডের ঝুঁকি কমে যায় আর রিটার্ন অন্য সব ফান্ডের থেকে অনেক বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আর যদি আপনার বিনিয়োগের সময়কাল এই দুইয়ের মাঝামাঝি বা ৩ থেকে ৫ বছর হয় সেক্ষেত্রে হাইব্রিড ফান্ডে বিনিয়োগ করা সঠিক হবে। কারণ মাঝামাঝি সময় পাওয়া যাওয়ার কারণে ইকুইটি অংশের মাধ্যমে রিটার্ন বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে আবার ডেট অংশের মাধ্যমে ঝুঁকিটাও কমিয়ে আনা যাবে। ফলে এক্ষেত্রে দুই ধরণের সিকিউরিটির মিশ্রণ থাকার জন্য ঝুঁকি আর রিটার্নের সম্ভাবনা ব্যালেন্স হয়ে যাবে।

বিনিয়োগের সময়কালফান্ডের ধরণ
১-৩ বছরডেট
৩-৫ বছরহাইব্রিড
৫ বছরের বেশিইকুইটি

ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা

দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে যদি আপনি সবথেকে কম ঝুঁকি নিতে চান তাহলে আপনাকে ডেট ফান্ডের দিকেই যেতে হবে। এক্ষেত্রে ঝুঁকি কম কিন্তু তার সাথে রিটার্নও তুলনায় কম।

যদি একটু ঝুঁকির বদলে কিছুটা বেশি রিটার্ন পেতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে হাইব্রিড ফান্ড বেছে নিতে হবে।

আর যদি আপনি বেশি রিটার্ন পাওয়ার প্রত্যাশায় বেশি ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত থাকেন তাহলে আপনাকে ইকুইটি ফান্ডে বিনিয়োগ করতে হবে। এর মধ্যে আবার লার্জক্যাপ < মালটিক্যাপ < মিডক্যাপ < স্মলক্যাপ ফান্ড অনুযায়ী উত্তরোত্তর ঝুঁকির পরিমাণ বাড়তে থাকে। এবং প্রতি ক্ষেত্রেই ডাইভার্সিফায়েড ফান্ডের থেকে যেকোনো সেক্টরাল বা থিম্যাটিক ফান্ডের ঝুঁকি বেশি হয়। আবার সাধারণত যেকোনো প্যাসিভ ফান্ডের থেকে অ্যাক্টিভ ফান্ডের ঝুঁকি এবং বাছার ঝক্কি বেশি থাকে। তবে ঝুঁকি বাড়ার সাথে সাথে বেশি রিটার্নের সম্ভাবনাও বাড়তে থাকে।

প্যাসিভ নাকি অ্যাক্টিভ ফান্ড?

এই দুই ধরনের ফান্ডের কথা আগেই বলেছি। প্যাসিভ ফান্ড মানে হচ্ছে যেকোনো একটা ইনডেক্স অনুসরণ করে সেই অনুযায়ী ইনডেক্স ফান্ড। এক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে ফান্ড নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোনো ফান্ড ম্যানেজারের প্রয়োজন পড়ে না। ফলে এক্সপেন্স রেশিও কম হয় এবং ফান্ড ম্যানেজার বা সক্রিয়ভাবে ফান্ড ম্যানেজ করার সাথে যে সমস্ত ঝুঁকি গুলো থাকে সেগুলোর কোনোটাই প্রযোজ্য হয় না। আর এর রিটার্ন যে ইনডেক্সের উপর ভিত্তি করে ফান্ড তৈরি হয় সেই ইন্ডেক্সের সঙ্গে সমান হয়। তবে এর সাথে বাজারগত ঝুঁকিটা থাকে।

আরও পড়ুনঃ  শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের বা শেয়ার কেনার 15 টা ঝুঁকি

এ ধরনের প্যাসিভ ইনডেক্স ফান্ডে বিনিয়োগ করতে হলে যেকোনো ফান্ড হাউসের ফান্ডেই বিনিয়োগ করা যেতে পারে। একই ইনডেক্স এর ওপর সবকটা প্যাসিভ ফান্ড সাধারণত একই রকম হয়।

তবে আমরা সাধারণত মিউচুয়াল ফান্ড বলতে যা বুঝি সেটা আসলে বিবিধ অ্যাক্টিভ ফান্ড। আর সঠিক অ্যাক্টিভ ফান্ড বাছতে হলে বাকি অংশটুকু পড়ে যান…

ভালো মিউচুয়াল ফান্ড (অ্যাক্টিভ) বাছাই

প্যাসিভ ফান্ডে অরুচি হলে, বিভাগ বেছে নেওয়ার পরে সেই বিভাগ থেকে আপনার বিনিয়োগের জন্য সঠিক অ্যাক্টিভ মিউচুয়াল ফান্ড বেছে নিতে হবে। আর তা হলেই কাজ শেষ! এবং এটা নীচের বিষয়গুলোর উপর খেয়াল রেখে করা যেতে পারে —

ফান্ড হাউস বা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির ট্র্যাক রেকর্ড

যে সমস্ত ফান্ড হাউসের ওভারঅল ট্র্যাক রেকর্ড ভালো বা যাদের বেশিরভাগ ফান্ডের লং টার্ম পারফরম্যান্স ভালো তাদেরকে শর্টলিস্ট করা যেতে পারে। এমন যদি কোনো ফান্ড হাউস হয় যাদের কয়েকটা ফান্ড তো দারুন রিটার্ন দিচ্ছে কিন্তু বাকি অর্ধেকের বেশি ফান্ডের অবস্থা ভালো না, তাহলে ঐ ভালো ফান্ড গুলো দারুন মনে হলেও এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।

বেঞ্চমার্কের পরিপ্রেক্ষিতে পারফরম্যান্স

একটা মিউচুয়াল ফান্ডের বেঞ্চমার্ক ইনডেক্স হচ্ছে, একটা স্টান্ডার্ড যেটার সাথে সেটার পারফরম্যান্স বা স্টক বণ্টনের তুলনা করা হয়। যেমন ধরুন কোনো একটা লার্জ ক্যাপ ফান্ড বাছতে হলে লার্জ ক্যাপ স্টকের ইনডেক্সের পরিপ্রেক্ষিতে সেই ফান্ডের পারফরম্যান্স কেমন সেটা দেখতে হবে, আবার একইভাবে যেকোনো সেক্টরাল আইটি ফান্ডের পারফরম্যান্স বা স্টক বণ্টনের বিচার করতে আইটি ইন্ডেক্সের সঙ্গে সেটার তুলনা করে দেখতে হবে। 

সম ক্যাটিগরির তুলনায় পারফরম্যান্স

একটা বিশেষ মিউচুয়াল ফান্ডের পারফরম্যান্স বা রিটার্ন একই ক্যাটিগরির অন্যান্য ফান্ডের তুলনায় কেমন সেটা দেখলেই ওই বিশেষ ফান্ডটা কেমন জায়গায় আছে সেটা বোঝা যাবে।

ধারাবাহিক দীর্ঘমেয়াদী পারফরম্যান্স

এমন ফান্ড চয়ন করতে হবে যেটা লম্বা সময় ধরে মানে কমপক্ষে বিগত ৫ থেকে ১০ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে ভালো রিটার্ন দিয়ে আসছে। কেবলমাত্র সাম্প্রতিক বছরের বা বিগত ১-২ বছরের রিটার্ন দেখা যথেষ্ট নয়। সাম্প্রতিক বছরে খুব ভালো রিটার্ন কিন্তু কয়েক বছর আগেকার রিটার্ন যদি ভালো না হয় অর্থাৎ ধারাবাহিক পারফরম্যান্স ভালো না হয় তবে সেটা বর্জন করাই বাঞ্ছনীয়।

এছাড়া প্রতি ৫ বছরে কেমন রোলিং রিটার্ন দিচ্ছে আলাদা করে সেটাও দেখা যেতে পারে। মানে প্রথম ৫ বছরে ভালো রিটার্ন আবার তার পরের ৫ বছরে খারাপ এ ধরনের ফান্ডের থেকে প্রত্যেকটা পাঁচ বছরে ভালো রিটার্ন দিচ্ছে, এই ধরনের ফান্ড বেশি ভরসাযোগ্য।

আর এটা করতে গিয়ে একটা জিনিস বোঝাই যাচ্ছে নতুনের বদলে পুরোনো ফান্ড বেছে নিতে হবে যাতে যাচাই করার জন্য এ ধরনের ইতিহাস পাওয়া যায়।

খারাপ সময় থেকে সুরক্ষা

ভালো সময়ে বা বাজার যখন উপর দিকে যায় তখন তো সব ঘোড়াই ভালো দৌড়ায়, কিন্তু বাজারে যখন খারাপ সময় চলে, তখন ফান্ডের পারফরম্যান্স কেমন সেটা ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ। একটা ফান্ড ভালো সময়ে ৩০% রিটার্ন দিলো আর খারাপ সময়ে নেগেটিভ ২০% আর অন্য একটা ফান্ড ভালো সময় ২০% আর খারাপ সময় ১৫%, এক্ষেত্রে দ্বিতীয়টাই বিনিয়োগের জন্য আদর্শ কারণ ওটাই খারাপ সময়েও ময়দানে টিকে থাকতে সক্ষম হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  শেয়ার বাজারে ধস নামলে কী করা উচিৎ?

ফান্ড ম্যানেজারের অভিজ্ঞতা

অ্যাক্টিভ মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা রাখা মানে আসলে সেই ফান্ডের ফান্ড ম্যানেজারের হাতে টাকা তুলে দেওয়া যাতে তিনি আমাদের টাকা নিয়ে তাঁর খুশিমত বিনিয়োগ করে আমাদের লাভ দিতে পারেন। সুতরাং ফান্ড বেছে নেওয়ার আগে ফান্ড ম্যানেজারের অভিজ্ঞতা, সেই ফান্ড তিনি কতদিন ম্যানেজ করছেন এবং তাঁর আন্ডারে আর যে সমস্ত ফান্ড আছে সেগুলোর পারফরম্যান্স কেমন সেটা দেখে নেওয়া জরুরী।

যে ফান্ডের ফান্ড ম্যানেজার বা ম্যানেজমেন্ট টিমের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মীরা নিয়মিত পরিবর্তিত হয় সেটার থেকে যে ফান্ডের সাথে লম্বা সময় ধরে একই ম্যানেজমেন্ট টিম জুড়ে থাকে সেটা বিনিয়োগের জন্য বেশি ভালো।

এক্সপেন্স রেশিও ও অন্যান্য চার্জ

প্রত্যেকটা ফান্ড ম্যানেজ করার খরচ চালানোর জন্য একটা নির্দিষ্ট এক্সপেন্স রেশিও ঠিক করা থাকে। এছাড়া অনেক সময় অনেক ফান্ড হাউস বিনিয়োগ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় একটা চার্জ নেয়। এই সমস্ত চার্জ গুলো যে ফান্ডের ক্ষেত্রে যত কম সেটা বিনিয়োগের জন্য ততই উত্তম।

গ্রোথ ফান্ড নাকি ডিভিডেন্ড ফান্ড?

একটা ফান্ড বেছে নেওয়ার পর সেটার দুটো অপশন পাওয়া যায়, গ্রোথ আর ডিভিডেন্ড। ডিভিডেন্ড অপশনের ক্ষেত্রে ফান্ড থেকে যা লাভ হয় সেটা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সময়ে সময়ে ভাগ করে দেওয়া হয় আর গ্রোথ ফান্ডের ক্ষেত্রে লভ্যাংশটা পুনঃবিনিয়োগ করা হয়।

তাই যদি আপনার বিনিয়োগ থেকে নিয়মিত আয়ের প্রয়োজন থাকে তাহলে ডিভিডেন্ড অপশন বেছে নেওয়া ভালো আর যদি আপনি একদম শেষে বেশি রিটার্ন ফেরত পেতে চান তাহলে গ্রোথ অপশন আপনার জন্য প্রযোজ্য।

গ্রোথ অপশনের ক্ষেত্রে কম্পাউন্ডিং এফেক্ট-এর জন্য রিটার্নের পরিমাণ অনেক বেশি হয় বলে সাধারণত যেকোনো ফান্ডের ক্ষেত্রেই লং টার্ম বিনিয়োগের জন্য গ্রোথ অপশনকেই অধিক উত্তম বলে ধরা হয়।

কিভাবে বিনিয়োগ করবেন?

বিনিয়োগের মাধ্যমের উপর ভিত্তি করে আবার প্রত্যেকটা ফান্ডের দুটো প্ল্যান হয়, রেগুলার আর ডাইরেক্ট। ডাইরেক্ট প্ল্যানে টোটাল এক্সপেন্স রেশিও বা টিইআর কম হয় আর রেগুলার প্ল্যানে টিইআর বেশি হয়।

এ ব্যাপারে বিশদে এবং মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের বিবিধ উপায়ের ব্যাপারে জানতে হলে এই লিংকে দেওয়া আর্টিকেলটা পড়ে নিতে পারেন।

শেষ কথা

আশা করি যেটা জানতে এই আর্টিকেলটা খুলেছিলেন সেটা সম্পর্কে কিছুটা হলেও একটা ধারণা এতক্ষণে তৈরি হয়ে গেছে। এরপর আপনার কাজ হচ্ছে গুগল থেকে মিউচুয়াল ফান্ডের লিস্ট সার্চ করা এবং মানিকন্ট্রোল, ইটি মানি ইত্যাদির মত প্ল্যাটফর্ম থেকে বিভিন্ন মিউচুয়াল ফান্ডের খুঁটিনাটি সম্পর্কে খোঁজখবর শুরু করা। যত দেখবেন, যত খুঁজবেন, যত জানবেন ততই নিজের জন্য সঠিক ফান্ড খুঁজে পেতে দক্ষ হয়ে উঠবেন।

আজ তাহলে এখানেই ইতি টানি। ভালো থাকবেন। 🙂


মিউচুয়াল ফান্ড সম্পর্কিত বিবিধ টার্মের বিষয়ে জানতে চাইলে নীচের আর্টিকেলটা পড়ে নিতে পারেনঃ
মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের আগে এই টার্ম গুলো না জানলেই নয়…

মন্তব্য করুন