শেয়ার ট্রেডিং শুরু করার ইচ্ছে? এগুলো না জেনে নিলে খুব হোঁচট খেতে হবে!

5/5 - (4 জন রেটিং করেছেন)

শেয়ার বাজার থেকে আয় করার প্রধান রাস্তা দুটো, ইনভেস্টিং আর ট্রেডিং। ইনভেস্টিং লম্বা সময়ের খেলা। তবে প্রত্যক্ষভাবে না চাইলেও পরোক্ষভাবে ওই রাস্তায় যাওয়াই যায়, আর যাওয়া উচিৎ ও। তবে যদি এই আর্টিকেলের আলোচ্য বিষয় ট্রেডিং-এ আগ্রহ জন্মায় বা ট্রেডিং-এর জলে একটু পা রাখার ইচ্ছে হয়, তবে সেটা তো আর পরোক্ষভাবে সম্ভব না! ট্রেডিং করতে চাইলে আর ওই ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ করে চলবে না। হ্যাঁ তুমি যেমন তেমন যা ইচ্ছে তা করে ট্রেডিং করতেই পারো। কিন্তু সেটা আর ট্রেডিং থাকবে না, জুয়া হয়ে যাবে। যদি জুয়া খেলে সাময়িক কিছু জিতে বা হেরে হেরে ওই ফিল গুড হরমোন ডোপামিন-এর নেশায় মেতে উঠতে চাও তাহলে তো আর শেখার জানার কিছু নেই। কিন্তু ট্রেডিং কে ট্রেডিং-এর মতোই যদি সিরিয়াসলি নাও এবং এটাকে একটা ব্যবসার চোখে দেখো এবং এখান থেকে কিছু সম্পদ বানাতে চাও বা এটাকে নিজের রুজি রুটি বানাতে চাও তাহলে আমি সাহায্য করতে পারি।

এই আর্টিকেলে আমি ফোকাস করব ট্রেডিং শুরু করতে চাইলে সবার প্রথম কি কি করনীয়? কি কি জানার প্রয়োজন? কি কি টুল লাগবে? ট্রেডিং কিভাবে করবে? আর কি কি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে?

ট্রেডিং মানে কি?

ট্রেড মানে ব্যবসা। ব্যবসা মানে কেনাবেচা। শেয়ার ট্রেডিং বা স্টক ট্রেডিং মানে শেয়ার বা স্টক-এর ব্যবসা। মানে শেয়ার-এর কেনাবেচা। লাভ করতে চাইলে কম দামে কিনে বেশি দামে বেচতে হবে আর কখনও কখনও আরও বেশি ক্ষতি হওয়া থেকে বাঁচতে বেশি দামে কেনা হলেও কম দামেই ছেড়ে দিয়ে ক্ষতি টাকে সীমিত করতে হবে। ব্যাস এটাই প্রধান লজিক।

সবার প্রথম প্রয়োজন একটা ডিম্যাট কাম ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট

ট্রেডিং বা এমনকি সরাসরি ইনভেস্টিং এর জন্য সবার প্রথম যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে একটা ডিম্যাট কাম ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট বানানো। ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট মানে যেখানে আমাদের কেনা শেয়ার ইলেকট্রনিক্যালি স্টোর করা হয়, আর ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট হচ্ছে যার মাধ্যমে শেয়ার কেনাবেচা করা হয়। তবে আজকের দিনে যে কোন ব্রোকারের কাছে এপ্লাই করলেই ডিম্যাট আর ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট একসাথেই তৈরি হয়ে যায়। তাই এই দুই ধরনের অ্যাকাউন্ট নিয়ে আলাদা করে ভাবতে হয় না।

বেশিরভাগ বড় বড় ব্রোকারের কাছেই একাউন্ট তৈরির অ্যাপ্লিকেশন করা যায় অনলাইনে, কম্পিউটার কিংবা স্মার্টফোন থেকে ব্রোকার-এর ওয়েবসাইট বা অ্যাপ ওপেন করে। তাছাড়া পুরো প্রক্রিয়াটা পেপারলেস এবং বাড়িতে বসেই করা যায়।

সঠিক ব্রোকার বেছে নেওয়াঃ

কিন্তু এই অ্যাকাউন্ট বানানোর জন্য প্রথমে শত শত ব্রোকার এর মধ্যে থেকে তোমার পছন্দের যে কোনও এক ব্রোকার সিলেক্ট করতে হবে। কত কত ব্রোকার আছে জানতে চাইলে NSE-র এই লিঙ্ক ফলো করতে পারো। আর তুমি চাইলে একাধিক ব্রোকারের কাছে একাধিক ডিম্যাট অ্যাকাউন্টও বানাতে পারো, কেউ আটকাচ্ছে না তোমায়!

তবে ব্রোকার চয়েস করার আগে দেখে নিতে হবে সেই ব্রোকারের মার্কেট শেয়ার কত, তাদের ট্র্যাক রেকর্ড কেমন, চার্জ কেমন, রিভিউ কেমন ইত্যাদি। ট্রেডিং করার সময় এত শত চার্জ কাটে সেগুলো আলাদা করে ট্র্যাক করা মুশকিল। তাই ব্রোকারের সততা ও স্বচ্ছতার রেকর্ড কেমন সেটাও পারলে একটু খোঁজ নেওয়া দরকার।

আর কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস যেগুলো জানা দরকার সেগুলো হচ্ছে অর্ডার এক্সিকিউশন স্পিড, ব্যবহারের স্মুথনেস ও এরর রেট কেমন। তাছাড়া ব্যবহারকারী ভেদে ইন্টারফেস ও সফটওয়্যার পছন্দমত হওয়াটাও জরুরী।

আমার পছন্দঃ

আমার প্রথম চয়েস Zerodha । মার্কেট শেয়ার-এর দিক থেকে জিরোধা ভারতের এক নম্বর ব্রোকার। অন্যান্য ট্রেডিশনাল ব্রোকারের (যেমন আইসিআইসিআই সিকিউরিটিজ, এইচডিএফসি সিকিউরিটিজ ইত্যাদি) থেকে অনেক পরে ওদের সার্ভিস শুরু করেও ওরা ট্র্যাডিশনাল ব্রোকারদের পিছনে ফেলে এক নম্বর স্থানে এসেছে। এক নম্বর স্থানে আসার জন্য প্রধান কারণগুলো হচ্ছে Zerodha-র সস্তা এবং বাস্তবসম্মত ব্রোকারেজ, অনেস্ট ট্রান্সপারেন্ট চার্জিং, ফাস্ট অর্ডার এক্সিকিউশন স্পিড ও আধুনিক ইন্টারফেস। আমার মত তুমিও যদি Zerodha-র উপর ভরসা করে অ্যাকাউন্ট খুলতে চাও তাহলে নিচে দেওয়া লিংক ফলো করতে পারো।

Zerodha ডিম্যাট কাম ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট তৈরী।[এখানে ক্লিক করো]

তবে তুমি নতুন ধরে নিয়ে বলি, তোমার জন্য প্রথমেই ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট দরকার ট্রেড করার জন্য না,  ডিম্যাট অ্যাকাউন্টের অপশন গুলো এবং ইন্টারফেস, নেভিগেশন ইত্যাদির সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য।

আরও পড়ুনঃ  শেয়ার বাজারের উপর ভোট বা নির্বাচনের প্রভাব কেমনতর হয়....?

কম্পিউটার এবং / অথবা মোবাইল

ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট তৈরি করাই হোক বা তৈরি করার পর সেই অ্যাকাউন্ট পরখ করে দেখা বা অর্ডার প্লেস করা সবকিছুর জন্যই একটা কিছু মাধ্যম তো দরকার! এক সময় এই সব কাজগুলোই ম্যানুয়ালি হত। আজও তুমি চাইলে কোন কোন ব্রোকারের কাছে অফলাইনে ম্যানুয়ালি অ্যাপ্লাই করে ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট ওপেন করতে পারো এবং ফোন কলের মাধ্যমে বাকি কাজগুলো করতে পারো। কিন্তু এই টেকনোলজি আর ফাইভ জি ইন্টারনেটের যুগে সেটা করা বাস্তবসম্মত না।

সুতরাং আজকের যুগে এই সব কাজগুলো সুপার ফাস্ট এবং চোখের সামনে নিজের হাতে করতে হলে লাগবে একটা কম্পিউটার। তাছাড়া আমাদের হাতের স্মার্টফোন গুলোও আসলে এক একটা ছোটো ছোটো কম্পিউটার। তাই পুরো প্রসেসটা স্মার্টফোনের মাধ্যমেও হতে পারে। তবে আমি বলব ঠিকঠাক ট্রেডিং করতে এবং উন্নত টেকনোলজির সব রকম সুবিধাগুলো নিতে দুই রকম ডিভাইস-ই ব্যবহার করা উচিৎ।

কেমন ধরনের কম্পিউটার?

ট্রেডিং করার জন্য খুব হাই-ফাই কম্পিউটার দরকার পড়ে না। শুরুতে মোটামুটি মাঝামাঝি স্পেসিফিকেশনের একটা কম্পিউটার হলেই হল। সুবিধামতো বা পছন্দমত ডেস্কটপ বা ল্যাপটপের মধ্যে যে কোন একটা ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ভালো ভাবে ট্রেড করতে গেলে একটার বেশি স্ক্রিন বা মনিটর থাকলে সুবিধা হয়। আজকালকার ডেস্কটপ বা ল্যাপটপে কোন আলাদা খরচ ছাড়াই এক্সট্রা এক-দুটো মনিটর কানেক্ট করা যায় খুব সহজেই। ডেক্সটপ এর ক্ষেত্রে সিপিইউ তে আলাদা দুটো ডিসপ্লে পোর্ট-এ আলাদা দুটো মনিটর এবং ল্যাপটপের ক্ষেত্রেও পাশে যে ডিসপ্লে পোর্ট থাকে তার মাধ্যমে এক্সট্রা একটা মনিটর কানেক্ট করার পর উইন্ডোজে প্রজেক্ট অপশন থেকে এক্সটেন্ড অপশন সিলেক্ট করে নিলেই দুটো স্ক্রিন বা মনিটর একসাথে ব্যবহারের জন্য রেডি হয়ে যায়।

আর একটা ব্যাপার, ট্রেডিং এর জন্য কম্পিউটারে ব্যবহৃত কিবোর্ড এবং মাউস হান্ড্রেড পার্সেন্ট ফাংশানাল একটু ভালো কোয়ালিটির হওয়া দরকার। কারণ কখনো কখনো খুব ফাস্ট টাইপ বা মাউস মুভমেন্ট এবং ক্লিক করতে হয়। 

কেমন স্মার্টফোন?

এক্ষেত্রেও মোটামুটি মাঝারি কোয়ালিটির একটা স্মার্টফোন হলেই চলে যেখানে গুগল ক্রোম বা অন্য যেকোনো ব্রাউজার এবং ব্রোকারের অ্যাপ স্মুথলি চলতে পারে।

সফটওয়্যারঃ

আগে বিভিন্ন ব্রোকার-রা কম্পিউটার থেকে ট্রেড করার জন্য বিশেষ সফটওয়্যার প্রোভাইড করত। এখনো অনেক ব্রোকার সে ধরনের সফটওয়্যার প্রোভাইড করে। তবে নতুন যুগের ট্রেডাররা ওই ধরনের সফটওয়্যারের থেকে বেশি ওয়েব প্ল্যাটফর্ম পছন্দ করে। ওয়েব প্লাটফর্ম হচ্ছে আসলে এক ধরনের ওয়েবসাইট। গুগল ক্রোম বা অন্য যেকোনো ওয়েব ব্রাউজারে ব্রোকারের দেওয়া নির্দিষ্ট ওয়েব অ্যাড্রেস ওপেন করে নিজস্ব ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড ইনপুট করে সেই প্লাটফর্ম অ্যাক্সেস করা যায়।

জিরোধাও এই ধরনের একটা সফটওয়্যার প্রোভাইড করত যেটার নাম ছিল পাই। তবে জিরোধা এখন সেটার ডেভলপমেন্ট পুরোপুরি ভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। এখন জিরোধা একমাত্র যে প্ল্যাটফর্ম প্রোভাইড করে সেটা জিরোধার ওয়েব প্ল্যাটফর্ম এবং সেটার নাম কাইট।

স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে অবশ্য ব্রোকাররা এ ধরনের ওয়েব প্ল্যাটফর্ম ছাড়াও মোবাইল স্পেসিফিক অ্যাপ প্রোভাইড করে। ওই অ্যাপ গুলোতে শেয়ার কেনাবেচা করা ছাড়াও মোবাইল স্পেসিফিক বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা (যেমন নোটিফিকেশন, বায়োমেট্রিক লগ-ইন ইত্যাদি) পাওয়া যায়।

হাই-স্পিড ইন্টারনেট

এতক্ষণ পর্যন্ত যা যা বললাম সবকিছু অর্থহীন ইন্টারনেটের সংযোগ ছাড়া। ভালো কোয়ালিটির হাইস্পিড এবং নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ ট্রেডিং-এর জন্য মাস্ট। সবথেকে ভালো হয় বাড়িতে যদি ফাইবার ব্রডব্যান্ড নেওয়া যায়। ফাইবার ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা পুরোনো ফোন লাইনের বা কেবেলের ইন্টারনেট পরিষেবা থেকে ভালো মানের হয় এবং এতে নিরবিচ্ছিন্ন পরিষেবা পাওয়া যায়।

যদি এ ধরনের ব্রডব্যান্ড পরিষেবা নেওয়ার সুযোগ না থাকে সে ক্ষেত্রে মোবাইলের ফোরজি নেটওয়ার্ক হটস্পট বানিয়ে বা ইউএসবি টেথারিং-এর সাহায্যে ব্যবহার করেও কাজ চলতে পারে।

স্পিড এবং নিরবিচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক এর কথা বলছি কারণ ইন্ট্রা-ডে ট্রেডিং বা স্ক্যাল্পিং করতে হলে কখনো কখনো খুব ফাস্ট ডিসিশন নিতে হয় এবং খুব ফাস্ট অর্ডার প্লেস করতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি করতে পারা মানে লাভ আর দেরি মানে লস হতে পারে। তাই বাজে ইন্টারনেট কানেকশন আপনার একটা ভালো ট্রেডকে আপনার বিপক্ষে নিয়ে যেতে পারে।

নলেজ

ডাইরেক্ট ট্রেডিং শুরু করতে হলে যা যা দরকার তারমধ্যে উপরে যা যা বললাম সেগুলো হচ্ছে টুলস। টুলস রেডি হওয়ার পরে ট্রেড করার জন্য যেটা দরকার সেটা হচ্ছে উপরের টুল গুলোর সঠিক ব্যবহার শেখা এবং নিজেকে বা নিজের ব্রেইন কে ট্রেডিং এর জন্য তৈরি করা মানে প্রয়োজনীয় নলেজ বা জ্ঞান অর্জন করা। 

ডিম্যাট কাম ট্রেডিং টার্মিনাল (Zerodha Kite) এর ব্যবহার

আমি এখানে ছোট্ট করে ব্রোকারের ওয়েব টার্মিনালের পরিচিতি ও ব্যবহার প্রণালীর বিবরণ দেওয়ার চেষ্টা করব। উদাহরণ হিসাবে আমি জিরোধার কাইট ওয়েব টার্মিনাল বেছে নেব। অন্যান্য ব্রোকারদের ওয়েব টার্মিনালও একই রকম হয়। দেখতে কিছুটা আলাদা হলেও বা অপশনগুলোর অন্যান্য নাম থাকলেও কাজে ও বৈশিষ্ট্যে সমকক্ষের হয়।

আরও পড়ুনঃ  কিভাবে শেয়ার বাজারে একজন সফল ট্রেডার হয়ে উঠবেন? নতুনদের জন্য

ওয়েব ব্রাউজারে kite.zerodha.com অ্যাড্রেস ওপেন করার পর নিজের ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড দিলেই সামনে আসে কাইটের ড্যাশবোর্ড। এক্কেবারে বামদিকে থাকে ওয়াচলিস্ট।

জিরোধা ওয়াচলিস্ট
ওয়াচলিস্ট

ওয়াচলিস্টের উপরে থাকে সার্চ বার। ওখানে কোম্পানির শেয়ার, ই টি এফ বা অন্য কোনও ইন্সট্রুমেন্ট এর নাম লিখে সার্চ করার পর পছন্দের নামের উপর মাউস পয়েন্টার নিয়ে গিয়ে প্লাস বাটন-এ ক্লিক করে সেই নাম ওয়াচলিস্টে অ্যাড করে নিতে হয়। ওয়াচলিস্টে যেকোনো ইনস্ট্রুমেন্ট যেমন উদাহরণস্বরূপ কোন কোম্পানির শেয়ার অ্যাড করলেই সেই মুহূর্তে শেয়ারের এর দামটা তার পাশে দেখায়। 

শেয়ার সার্চ করে ওয়াচলিস্টে অ্যাড করা
সার্চ অ্যান্ড অ্যাড

ওয়াচ লিস্ট-এ শেয়ারের নামের উপরে মাউস পয়েন্টার নিয়ে গেলেই তার ওপরে কয়েকটা বাটন দেখা যায়। B আর S বাটনটা হচ্ছে যথাক্রমে বাই আর সেল বাটন।

বাই সেল বাটন
বাই সেল বাটন

ওই বাই বা সেল বাটনে ক্লিক করলেই সামনে চলে আসে বাই / সেল অর্ডার উইন্ডো। এই দুই বাটনে আসলে একই উইন্ডো আসে। বাই বা সেল বাটনে ক্লিক করে বাই / সেল উইন্ডোর ডানদিকের উপরের টগল বাটন এ ক্লিক করলেই সেটা বিপরীত উইন্ডো মানে যথাক্রমে সেল বা বাই উইন্ডো হয়ে যায়।

বাই / সেল অর্ডার উইন্ডো
বাই / সেল অর্ডার উইন্ডো

বাই উইন্ডো মানে যা বোঝায় তাই। এর মাধ্যমে শেয়ার কেনার জন্য অর্ডার প্লেস করা যায়। বাই উইন্ডোতে Regular অর্ডার টাইপের মধ্যে দু’ধরনের অর্ডার প্লেস করা যায়।

Regular Intraday (MIS) অর্ডারঃ

একটা হচ্ছে Intraday বা MIS অর্ডার। MIS মানে বোঝায় Margin Intraday Squareoff । কেবলমাত্র ইন্ট্রা-ডে ট্রেডিং করার জন্য এই ধরনের অর্ডার প্লেস করা যায়। এই ধরনের অর্ডারে শেয়ারের যে একচুয়াল দাম তার পাঁচ ভাগের এক ভাগ মার্জিন বা টাকার দরকার পড়ে। তবে দিনের শেষে এই ধরনের অর্ডার স্কয়ার অফ করতে হয় মানে এক্ষেত্রে সেল করে দিতে হয়।

এই ধরণের অর্ডারের আরও একটা বিশেষত্ব হচ্ছে, যে শেয়ার আগে থেকে তোমার কাছে কেনা নেই সেই শেয়ারও তুমি চাইলে আগেই সেল করতে পারো এবং স্কয়ার অফ করার জন্য পরে সেটাকে বাই করতে পারো। ইন্ট্রা-ডে অর্ডারের এই বিশেষত্ব টাকে কাজে লাগিয়ে কখনো কোন শেয়ারের দাম পড়তে পারে এটা যদি তুমি বুঝতে পারো তাহলে সেই শেয়ার আগে বেশি দামে সেল করে এবং পরে কম দামে বাই করে তুমি প্রফিট বুক করতে পারো।

Regular Longterm (CNC) অর্ডারঃ 

অন্য ধরনের অর্ডার হচ্ছে Longterm এর CNC অর্ডার। CNC মানে Cash N Carry । একদিনের বেশি বা long-term এর জন্য কোন শেয়ারকে হোল্ড করতে হলে এই ধরনের অর্ডার প্লেস করতে হয়। এই ধরনের অর্ডারে কোন মার্জিনের সুবিধা পাওয়া যায় না মানে শেয়ারের যা অরিজিনাল দাম সেটাই পে করতে হয়। Long-term এর জন্য হলেও এই ধরনের অর্ডার কে কাজে লাগিয়ে সুইং বা পজিশনাল ট্রেডিং করা যায়।

অর্ডার Qty বা Quantity

অর্ডার এর ধরন সিলেক্ট করার পরে কতগুলো শেয়ার কিনতে চাইছ তার কোয়ান্টিটি উক্ত বক্সে এন্টার করতে হয়।

Market / Limit অর্ডার

এরপর তুমি কোন দামে শেয়ার টা কিনতে চাইছ সেটা উল্লেখ করতে হয়। যেটা আগে থেকেই সিলেক্ট করা থাকে সেটা Market বা মার্কেট প্রাইস। এই অপশন সিলেক্ট করে যদি অর্ডার প্লেস করা হয় তাহলে অর্ডার প্লেস করার সময়ে শেয়ার টার যা দাম থাকে সেই দামেই তৎক্ষণাৎ অর্ডার এক্সিকিউট হয়ে যায়।

অন্য অপশনটা Limit । এই অপশন সিলেক্ট করলে নিজের পছন্দমত দাম এন্টার করে অর্ডার প্লেস করতে হয় এবং সেই দামে শেয়ার পাওয়া গেলে তবেই অর্ডার এক্সিকিউট হয়।

SL বা স্টপ লস অর্ডার

আর এক ধরনের অর্ডার প্লেস করা যায় যেটাকে বলে স্টপ লস অর্ডার। এই ধরনের অর্ডারের সাহায্যে কোন একটা বিশেষ দামের উপরে বা নিচে গেলে শেয়ার যথাক্রমে কেনা বা বেচা যায়।

এ ধরনের অর্ডার সাধারণত লস বা ক্ষতি সীমিত রাখতে ব্যবহার করা হয়।

Orders, Holdings, Positions, আর Funds

জিরোধা কাইট ইন্টারফেসের উপরের ডান দিকে এই অপশন গুলো থাকে।

kite menu

অর্ডার প্লেস করার পর সেই অর্ডার এক্সিকিউট হয়েছে নাকি ওপেন অবস্থায় আছে সেটা Order সেকশনে দেখা যায়। এছাড়া দিনের সমস্ত অর্ডারের হিস্ট্রি-ও এখানেই থাকে।

Holding সেকশনে থাকে লং-টার্ম এর জন্য কেনা ডিম্যাট অ্যাকাউন্টে স্টোর হওয়া সমস্ত শেয়ার, ইটিএফ ইত্যাদির তালিকা।

ইন্ট্রা ডে ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে কোনও শেয়ার কেনা বা বেচার পর সেই শেয়ারে প্রতিমুহূর্তে কত লাভ বা ক্ষতি হচ্ছে সেটা দেখা যায় Positions সেকশনে।

আর শেয়ার কেনাবেচা করার জন্য ব্যাংক একাউন্ট থেকে ডিম্যাট অ্যাকাউন্টে ফান্ড অ্যাড করা যায় এই Funds সেকশন থেকে এছাড়াও ডিম্যাট অ্যাকাউন্টে থাকা ফান্ড উইথড্র করতেও এই এখানেই আসতে হয়।

আরও পড়ুনঃ  শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ আর জীবনবীমা একইসাথে। 2 ইন 1 ইউলিপ

কখন কি কেনা বা বেচা উচিৎ?

এটা এত বিশাল একটা বিষয় যেটা এই আর্টিকেল এর স্বল্প পরিসরে কিছুতেই বলা সম্ভব না। এর জন্য তোমায় নিজেকে রিসার্চ করতে হবে, প্রচুর প্রচুর আর্টিকেল পড়তে হবে। আর্টিকেলের জন্য এই গুপ্তধন ডটকম ব্লগ ফলো করতে পারো, এখানেও শেয়ার বাজার সম্পর্কিত বহু আর্টিকেল তুমি পেয়ে যাবে। এছাড়াও বই পড়তে পারো, বা ইউটিউবেও শেয়ার বাজার সংক্রান্ত বিবিধ ভিডিও দেখেও আইডিয়া তৈরি করতে পারো। চাইলে কোন কোর্সে ভর্তি হতে পারো তবে সে ক্ষেত্রে একটু সাবধান কারণ শেয়ার বাজার সংক্রান্ত যেসব কোর্স অনলাইন বা অফলাইনে হয় তার মধ্যে বেশির ভাগটাই লোক ঠকানো।

প্র্যাক্টিস

কথায় আছে, ‘Practice makes a man perfect’ । শেয়ার বাজারও এর ব্যতিক্রম নয়। থিওরিটিক্যালি সব কিছু জানা বোঝা হয়ে গেলেও যতক্ষণ না প্রচুর প্রচুর অভ্যাস বা প্র্যাক্টিস করা হচ্ছে ততোক্ষণ আসলে ট্রেডিং কি জিনিস সেটার সাথে পরিচিতি হওয়া যাবে না। সব বোঝার পরও আসল লাইভ মার্কেটে কেমন কি হয় সেটা একমাত্র নিজে অংশ নিয়ে তবেই বোঝা যায়। তবে আসল ট্রেডিং করার আগে কাগজে কলমে পেপার ট্রেডিং করা জরুরি। এবং প্রথম প্রথম শেয়ার মার্কেটে অর্ডার প্লেস করার সময় বা প্রাকটিস করার সময় কোয়ান্টিটি ক্ষুদ্রতম রাখাটাও জরুরি। তাছাড়া একচুয়াল ট্রেডিং করার আগে ঘন্টার পর ঘন্টা দিনের-পর-দিন প্রাইস চার্টের দিকে তাকিয়ে বসে থাকতে হয় এবং দেখতে হয় কোনও শেয়ার বা অন্য কোনও ইন্সট্রুমেন্টের দাম কিভাবে ওঠানামা করছে। এভাবেই আস্তে আস্তে অভিজ্ঞতা তৈরি হয়। 

সাইকোলজি

প্র্যাকটিস করতে করতেই আস্তে আস্তে ট্রেডিং করার জন্য আমাদের সাইকোলজি তৈরি হতে থাকে। এই ট্রেডিং আমাদের মনের উপর বেশ জোরালো একটা এফেক্ট করে। লাভ হলে যেমন আনন্দ হয় তেমনই লস গুলো কে আবার সহজে মেনে নেওয়া যায়না। কিন্তু ট্রেডিং জিনিসটাই এমন এখানে যেমন লাভও হবে তেমনি তার সাথে লস হওয়াটাও অবশ্যম্ভাবী। আমাদের টার্গেট হচ্ছে লাভ গুলোকে বড় করার জন্য অপেক্ষা করা এবং লস গুলোকে বড় হওয়ার আগেই থামানো। কিন্তু এটা বলা যতটা সহজ করা ততটাই কঠিন। আর এর জন্য প্রয়োজন পড়ে আমাদের সাইকোলজিকে বা মনকে ট্রেন করে তৈরি করা।

ক্যাপিটাল এবং অন্য ইনকাম সোর্স

ট্রেডিংয়ে অংশ নেওয়া, প্র্যাকটিস করা, বিভিন্ন স্ট্রাটেজি টেস্ট করা, পরের ধাপে এগোনো, লস একসেপ্ট করার মতো মনোভাব তৈরি করা এই সব কিছুর জন্যই দরকার ক্যাপিটাল । এবং তার সাথে দরকার একটা অন্য ইনকামের সোর্স এর সাপোর্ট।

জিরোধার সি ই ও নিখিল কামাথ বলেছিলেন, ট্রেডিং এর পাশে যাদের একটা অন্য ইনকামের সোর্স আছে তাদের জন্য ট্রেডিংয়ে সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনা সবথেকে বেশি।

সাবধানতা 

ওই নিখিল কামাথ-এরই কথায় ট্রেডিং বিশ্বের সবথেকে শক্ত কাজের মধ্যে একটি। উনিই আরও একবার বলেছিলেন জিরোধার সমস্ত ব্যবহারকারীদের মধ্যে ফিক্স ডিপোজিট এর থেকে বেশি হারে রিটার্ণ পেতে সক্ষম মাত্র 1% এর থেকেও কম ব্যবহারকারী।

সুতরাং ট্রেডিং সহজ নয়। ওই পরিসংখ্যান অনুযায়ী ট্রেডিংয়ে সফলতার হার এক পার্সেন্ট এর থেকেও কম ধরে নেওয়া যায়। তাই ট্রেডিংকে ক্যাজুয়ালি নিলে কিন্তু ওই বাকি 99% এর মধ্যে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আর এখানে বিফল হওয়া মানে কিন্তু শুধুমাত্র বিফল হওয়া নয়, বিফলতার সঙ্গে আসে আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনাও।

তাই একটাই কথা বলব ট্রেড রেস্পন্সিবলি।

শেষ করার আগে…

শেষকালে একটু ভয় দেখালাম বটে কিন্তু ভয় পাওয়াটাও জরুরী। ট্রেডিং ভীষণ সম্ভাবনাময় কিন্তু তার সাথে সাথেই ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ-ও। তাই এখানে কিছু করার আগে বা এগোবার আগে আগুপিছু ভেবে তবেই তা করা উচিত।

তবে এখানে সম্ভাবনাও আছে অসীম। এই যে 1% সফলতার কথা বললাম, তুমি যে কোনও ক্ষেত্রে দেখো, চাকরি বিজনেস ইত্যাদি সবরকম ক্ষেত্রে খুব সফলতা অর্জন করে বা একদম টপে যায় কিন্তু সেই 1% ই। আর জীবনে খুব বড় কিছু করতে হলে বা ওই 1% এ ঢুকতে হলে একটু রিস্কতো নিতেই হবে ভাই। ট্রেডিং থেকে সফলতার কোন শিখরে যাওয়া যায় সেটার সম্পর্কে একটু আঁচ পেতে হলে শেয়ার বাজারে 5 স্বনামধন্য ট্রেডার ইনভেস্টারদের ব্যপারে ← এখান থেকে জেনে নিতে পারো।

তাহলে আজ এখানেই শেষ করি। আবার পরে কথা হবে। কিছু বলার থাকলে বা কিছু জিজ্ঞাসা থাকলে কমেন্ট করতে পারো। ভালো থেকো । টা টা 🙂

মন্তব্য করুন