“শেয়ার বাজার এত গভীর এক কুয়ো যা গোটা দেশের টাকার খিদে মেটাতে পারে…”- এটা এক হিন্দি ছবির ডায়লগ হলেও খুব একটা ভুল কিছু না। কিন্তু এই শেয়ার বাজার নিয়ে অনেকের ধারণা এবং অভিজ্ঞতা অনেক রকম। এই বাজার যেমন অনেককে লাখপতি কোটিপতি করেছে তেমনই আবার অনেককে করেছে নিঃস্ব! কারও কাছে এটা স্বপ্নের মত আবার কারও কাছে দুঃস্বপ্ন! কারও ধারণা এটা জুয়াড়িদের জায়গা, আবার কারও রুজি রুটি আসে এই শেয়ার বাজার থেকেই। কেউ চায় এখান থেকে কিছু এক্সট্রা ইনকাম করতে আবার কেউ তার এক্সট্রা ইনকাম টা এখানে খাটাতে চায়। তো আজ এখানে আমি সব ধোঁয়াশা কাটিয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করব এই বাজারের বাস্তব নিয়ে। আর্টিকেলটা পুরোটা পড়লেই এই বাজার আসলে কি সেই সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা তৈরি হবে আশা রাখি।
শেয়ার ও বাজারঃ
শেয়ারবাজার এই শব্দটায় দুটো কথা আছে, শেয়ার আর বাজার। ‘শেয়ার’ মানে এককথায় বলা যায় কোনও পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি (বা এক্সচেঞ্জে লিস্টেড কোম্পানি) বা বিজনেস এর অংশ বা অংশীদারিত্ব আর ‘বাজার’ মানে যা বোঝায় তাই… মানে, যেখানে কেনাবেচা হয়, ঠিক যেমন মাছের বাজারে মাছ কেনাবেচা হয় কিংবা সবজির বাজারে সবজি, তেমনই শেয়ারবাজারে কেনাবেচা হয় ‘শেয়ার’। আর পাঁচটা সাধারণ বাজারের মতই এখানেও ক্রেতা থাকে, বিক্রেতা থাকে, আর থাকে ব্রোকার বা দালাল যে এই কেনা-বেচায় মধ্যস্থতা করে।
উপর উপর কেসটা এইরকমই… সাদামাটা সিম্পল কনসেপ্ট কিন্তু আরেকটু ভালো করে ঘেঁটে দেখার জন্য চলো বন্ধু একটু গভীরে যাওয়া যাক…
কোম্পানির শেয়ার ও শেয়ার-হোল্ডারঃ
যাইহোক, প্রথমেই এই ‘শেয়ার’ মালটা আসলে কি জিনিস, সেটা একটু কচলে দেখা যাক! ‘Share’ ইংরেজি কথার আক্ষরিক বাংলা অর্থ হচ্ছে অংশ। আর এখানে ওই অংশ মানে আসলে বোঝাচ্ছে অংশীদারিত্ব। অংশীদারিত্ব সেই কোম্পানির যে কোম্পানির শেয়ার ক্রেতা কিনছে বা বিক্রি করছে। এখানে কেনা মানে অংশীদারত্ব লাভ করা আর বিক্রি করা মানে অংশীদারিত্ব ছেড়ে দেওয়া। আর যেকোনো সময়ে শেয়ারটির বর্তমান মালিক কে বলা হবে উক্ত কোম্পানীর অংশীদার বা শেয়ারহোল্ডার।
এরপর পুরো বিষয় টা আরও ভালো করে ক্লিয়ার করার জন্য চলো অভিষেকের গল্প টা শুনে নেওয়া যাক।
অভিষেকের চপের দোকানের কাহিনী
অভিষেকের একটা ছোট্ট চপের দোকান ছিল কলকাতার রাসবিহারীতে। কত্ত রকমের, কত্ত আকারের, কত্ত স্বাদের, কত্ত রঙ-বেরঙের বাহারি চপ যে সে বিক্রি করত তা বলাই বাহুল্য! আর তার এত্ত রকমের চপের মধ্যে যে কোনটাই খাওয়া হোক না কেন, স্বাদে, গন্ধে প্রত্যেকটাই এক্কেবারে অতুলনীয়। তো তার এহেন চপের জন্য দোকানের খ্যাতি ক্রমশ ছড়িয়ে পড়লো দূর-দূরান্তে! আর অভিষেকের এই চপের দোকানের ব্যবসা বেশ রমরমিয়ে বাড়তে থাকলো।
অভিষেক এক বিশেষ মশলা ব্যবহার করত তার বানানো প্রত্যেকটা চপে। আর তাই তো আর কেউ অভিষেকের মত চপ বানাতে পারত না।
একদিন অভিষেক বসে বসে ভাবছিল, তার ছোট্ট একটা দোকান, কলকাতার একটা জায়গায়। কিন্তু তার চপের বেশ চাহিদা আছে। তার মত চপ কেউ বানাতে পারেনা। আর দূর দুরান্ত থেকে লোক তার দোকানে চপ কিনতে আসে। তো যদি সে কলকাতার আরও অন্যান্য জায়গায় শাখা খুলতে পারে তাহলে তার ব্যাবসা অনেক বড় করার সুযোগ আছে। এই ভাবনা মাথায় আসতেই চোখ টা তার চকচক করে উঠলো।
কিন্তু নতুন শাখা যে খুলবে টাকা কোথায়? সোজা সমাধান ব্যাংক। তো যেমন ভাবনা তেমন কাজ। সে ব্যাংকে গেল, ব্যাংক থেকে ঋণ নিল আর দ্বিতীয় শাখা খুলে ফেলল ধর্মতলায়। এরপর আরও কয়েক মাস পর আরও একটা শাখা। এইভাবে ঋণ নেওয়া, নতুন শাখা খোলা, ঋণ শোধ এই চক্র চলতে থাকলো আর তার চপের কোম্পানি ‘ঢপের চপ’ হু হু করে বড় হতে থাকলো।
একসময় তার ‘ঢপের চপ’ কোম্পানি এত বড় হয়ে গেল যে তার জন্য নেওয়া বিশাল পরিমাণ ব্যাঙ্ক ঋণের জন্য চোকানো সুদ, লাভের অঙ্কে ভাগ বসাতে থাকলো। তার মনে হচ্ছিল, ঋণের বোঝাটা এবার কমানো দরকার। কিন্তু ঋণের ভার কমাতে গিয়ে ব্যাবসা বাড়ানোর গতি কমানোতেও তার অমত ছিল। বরং অভিষেকের ইচ্ছা ব্যাবসা আরও তাড়াতাড়ি আরও বড় করার। কিন্তু আরও ঋণের বোঝা আর না বাড়িয়ে সে এটা করতে চাইছিল।
এমতাবস্থায় তার কাছে দুটো রাস্তা ছিল, তার কোম্পানির কিছুটা অংশ বা শেয়ার এর বদলে (বা ছেড়ে দিয়ে) পুঁজিপতি বা বাজার থেকে টাকা তোলা। এতে নিজের কোম্পানির কিছুটা মালিকানা হাতছাড়া হবে বটে কিন্তু তার বদলে ব্যবসা বাড়াবার জন্য প্রয়োজনীয় পুঁজি সে পাবে বিনা সুদে। পুঁজিপতিদের বদলে সে বাজার থেকে টাকা তোলার রাস্তা টাই বেছে নিল।
বাজার থেকে বা তোমার আমার মত সাধারণ পাবলিকের থেকে টাকা তোলার অর্থ হচ্ছে নিজের প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে পরিবর্তিত করা ও নিজের কোম্পানীর কিছু শতাংশ মালিকানাকে ইউনিট শেয়ারে ভেঙে এবং তা বিক্রি করে টাকা তোলা।
যেমন ভাবনা তেমন কাজ। প্রথমেই সে একজন স্বনামধন্য চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট এর পরামর্শ নিল। তারপর ন্যশানাল স্টক এক্সচেঞ্জ (এন এস ই)-এর রুল বুক দেখে তার কোম্পানির যোগ্যতা চেক করা হলো। অতঃপর, পুরো বিষয়টায় সহযোগিতার জন্য আন্ডার-রাইটার নিযুক্ত হলো। নির্দিষ্ট নিয়মে তার কোম্পানির ভ্যালুয়েশন নির্ধারিত হলো। অভিষেক ঠিক করল তার কোম্পানির কুড়ি শতাংশ শেয়ার সে বিক্রি করে দেবে। অতঃপর নিয়মমাফিক কত দামে কত শেয়ার ছাড়া হবে সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।
তারপর ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং বা আই পি ও-র প্রস্তুতি শুরু হল। প্রাইমারি মার্কেটে আই পি ও তে ‘ঢপের চপ’ কোম্পানির শেয়ার কেনার জন্য তোমার আমার মত রিটেল ইনভেস্টর এবং ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টররা এপ্লাই করলো।
তারপর যারা শেয়ার পেল নির্দিষ্ট দিনে তাদের ডিম্যাট একাউন্টে তাদের প্রাপ্ত শেয়ার যোগ হলো এবং তারা হয়ে গেল ‘ঢপের চপ’ কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার এবং ‘ঢপের চপ’ পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি এন এস ই এক্সচেঞ্জে লিস্টেড হয়ে গেল। আর তার সাথে সাথেই সেকেন্ডারি মার্কেটে বা শেয়ার বাজার বলতে আসলে আমরা যা বুঝি সেখানে ‘ঢপের চপ’ কোম্পানির যাত্রা শুরু হল। মানে এখন থেকে যারা প্রথম শেয়ার পেল সেসকল শেয়ারহোল্ডার-রা চাইলে তাদের ডিম্যাট একাউন্টে থাকা শেয়ার বিক্রি করতে পারবে এবং যেসকল ক্রেতারা ওই শেয়ার কিনতে ইচ্ছুক তারাও তাদের থেকে ওই শেয়ার কিনতে পারবে। আর এই কেনাবেচায় সাহায্য বা মধ্যস্থতা করবে ওই ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট প্রোভাইডার। ওই ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট প্রোভাইডার-ই হল সরল ভাষায় ব্রোকার বা দালাল।
ব্রোকার বা দালাল কি বা কে?
সাধারণ বাজারে দালাল বা ব্রোকার বলতে কি বোঝায় তা আমরা সকলেই জানি। যারা নতুন ক্রেতাকে বিক্রেতার কাছে নিয়ে আসে আর তার বদলে বিক্রিত জিনিসের দামের উপর কিছু কমিশন নেয়। তবে সাধারণ বাজারে দালাল ছাড়াও কেনাকাটা করা যায়।
শেয়ার বাজারের দালাল বা ব্রোকার-ও খানিকটা এরকমই। বিক্রেতা ও ক্রেতার যোগাযোগ করিয়ে দেয়। তবে এক্ষেত্রে যেটা আলাদা, সেটা হচ্ছে ব্রোকার ছাড়া এখানে বিক্রেতা তার শেয়ার বিক্রি করতে পারে না এবং ক্রেতা চাইলেও সরাসরি শেয়ার কিনতে পারে না।
আজকের ডিজিটাল যুগে সবকিছুর মত শেয়ার বাজার এবং সেই বাজারে কেনাকাটা সবটাই ডিজিটাল হয়ে গেছে। আর এখানে এখন ব্রোকার মানে বোঝায় যারা ডিম্যাট কাম ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট প্রোভাইড করে তারা। যেমন Zerodha, Upstox, Groww ইত্যাদি নতুন যুগের ডিস্কাউন্ট ব্রোকার আর ICICIdirect, HDFC Securities ইত্যাদির মত ট্রেডিশনাল ব্যাঙ্ক লিঙ্কড ব্রোকার। তো শেয়ার বাজারে সরাসরি আসতে চাইলে এরকমই কোনও এক ব্রোকার এর কাছে বা আসলে তাদের ওয়েবসাইট বা অ্যাপে ডিম্যাট কাম ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। তারপর সেই অ্যাকাউন্টে লগ ইন করে শেয়ার কেনা বা বেচা যায় খুব সহজেই ডিজিটালি।
প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে একসময়ের এক জটিল সময়সাপেক্ষ পদ্ধতি আজ হয়ে গেছে তাৎক্ষণিক এবং খুবই সহজ। আজ তুমি কোনও কোম্পানির শেয়ার কিনতে বা বিক্রি করতে চাইলে অ্যাকাউন্টে লগ ইন করে বাই বা সেল অর্ডার প্লেস করতে হয়। আর সেটা করা মানে আসলে মোবাইল এর স্ক্রীনে কয়েকটা ট্যাপ বা কম্পিউটার এ কয়েকটা মাউস ক্লিক, ব্যাস! আর অর্ডার প্লেস করার পর চোখের পলক ফেলার আগেই তৎক্ষণাৎ সেই অর্ডার এক্সিকিউট-ও হয়ে যায়।
শেয়ার আর ব্রোকার এর পর যে বিষয় টা আলোচ্য সেটা হচ্ছে শেয়ারের দাম। শেয়ার এর দাম যেটা, কেনই সেটা আর দাম কেনই বা এত ওঠানামা করে?
কোনও কোম্পানির শেয়ার এর দাম বাড়ে বা কমে কেন?
অভিষেকের গল্পটায় আই পি ও-এর সময় শেয়ার এর একটা দাম নির্ধারণ করার কথা বলেছিলাম। তো প্রথম যখন কোনও কোম্পানি শেয়ার বাজারে পা রাখে তার দাম টা নির্ধারণ করা হয় সেসময়ে কোম্পানির ভ্যালুয়েশন, শেয়ারের ফেস ভ্যালু (=ইকুইটি শেয়ার ক্যাপিটাল ÷ শেয়ার এর সংখ্যা), সেসময়ে বাজারে ওইধরনের অন্যান্য কোম্পানির শেয়ারের দাম কেমন চলছে, বাজারে ওই শেয়ারের চাহিদা ইত্যাদি বহু বিষয়ের উপর খেয়াল রেখে।
অতঃপর আই পি ও শেষে লিস্টড হওয়ার পর কিন্তু দাম কি থাকবে তা নির্ভর করে ওই শেয়ারের চাহিদা ও যোগানের উপরই। মানে আর পাঁচটা সাধারণ বাজারেও যেমন জিনিসপত্রের দাম বাড়া কমা হয় চাহিদা ও যোগানের উপর ভিত্তি করে ঠিক সেভাবেই। যোগানের থেকে চাহিদা বেশি হলে দাম বাড়ে আর যোগানের থেকে চাহিদা কম হলে দাম কমে।
এবার একটু আমাদের অভিষেকের ‘ঢপের চপ’ কোম্পানির উদাহরনের সাহায্যে আরও পরিষ্কারভাবে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করব।
ধরাযাক আই পি ও তে ‘ঢপের চপ’- এর এক একটি শেয়ার এর দাম ধার্য হয়েছিল 80। শেয়ার বাজারে ‘ঢপের চপের’ পথ চলা শুরু হয় বা লিস্টিং হয় 100 টাকায়। এবার ধরা যাক বাজারে ‘ঢপের চপ’ নিয়ে বেশ একটা পসিটিভ সেন্টিমেন্ট বিরাজমান। এবং আই পি ও-র পরই অনেকেই এই শেয়ার কিনে রাখতে চাইছে। আবার আই পি ও তে যারা শেয়ার অ্যালটমেন্ট পেয়েছে তারা লিস্টিং এর লাভ (Listing Gain- আই পি ও তে শেয়ার-এর যে দাম ধার্য করা হয় অনেক সময় চাহিদা অনুযায়ী তার থেকে অনেক বেশি দামে লিস্টিং হয়, মানে যারা শেয়ার এর অ্যালটমেন্ট পায় তারা শুরুতেই ডিম্যাট ড্যাশবোর্ডে কিছুটা লাভ দেখতে পায়) -পকেটে ভরার জন্য তাদের শেয়ার বেচে দিতে চায়। তো ধরা যাক একজন শেয়ারহোল্ডার পার্থ 101 টাকায় শেয়ার বেচার জন্য একটা সেল অর্ডার প্লেস করল। একজন নতুন ক্রেতা দিলীপ ভাবল বাজারে এর চাহিদা আছে এবং এর দাম আরও বাড়তে পারে। সেই ভেবে সে 101 টাকায় ওই শেয়ার কিনে নিল। ব্যাস শেয়ার এর দাম হয়ে গেল 101। একটা টার্ম আছে ‘লাস্ট ট্রেডেড প্রাইস’ বা LTP। আমরা যেকোনো সময়ে কোনও কোম্পানির শেয়ারের যে দাম দেখি সেটা আসলে ওই শেয়ারের LTP। মানে লাস্ট যে দামে শেয়ারটা কেনাবেচা হয়েছিল। তাহলে যেটা হল, শেয়ারটার একজন প্রথম শেয়ারহোল্ডার পার্থ শেয়ার প্রতি 101-80 মানে মোট 21 টাকা লাভ করল। দিলীপ আবার শেয়ার টা 102 টাকায় বেচার অর্ডার প্লেস করল আর নন্টে সেটা ওই দামে কিনে নিল। শেয়ারের বর্তমান দাম দাঁড়াল 102। এইভাবেই চাহিদা আকাশচুম্বী হওয়ায় খুব শীঘ্রই LTP বা শেয়ারের দাম বাড়তে বাড়তে 200 তে ঠেকল। এরপর ধরা যাক করোনা মহামারী এলো। করোনার সময় চপের ব্যাবসায় ভাটা পড়তে পারে এই আশঙ্কায় নন্টে LTP থেকে কমে 199 টাকায় একটা সেল অর্ডার প্লেস করল কিন্তু সেটা করোনার আবহে কেউ কিনল না। তখন সে 175 টাকায় বেচতে চাইলো। LTP থেকে এতটা কম দামের অফার দেখে ঋষি 175 টাকায় তা কিনে নিল। তাহলে এখন শেয়ারের দাম দাঁড়ালো 200 থেকে কমে 175। LTP থেকে কমে বেচেও নন্টে 175-102 মানে 73 টাকা লাভ পকেটে ভরল। ঋষি আবার 175 টাকায় কিনে 180 তে বেচার অফার দিল। কিন্তু কেউ কিনল না। ঋষি ভয় পেয়ে তখন 175 তেই বেচতে চাইলো কিন্তু তাও কেউ কিনল না। এরপর 174 তে সেল অর্ডার প্লেস করল, তাও কেউ কিনল না। তখন সে ডেস্পারেট হয়ে 150 এ সেল অর্ডার দিল আরও চাহিদা পড়ে গিয়ে দাম কমার আশঙ্কায়। সম্বিতের মনে হল 150 ওই শেয়ার এর জন্য খুবই ভালো দাম। তো সে 150 এ ওটা কিনে নিল। তাহলে এখন ওটার দাম হল 150 আর ঋষি লস করল 175-150 মানে 25 টাকা প্রতি শেয়ার। শেয়ার বেচাকেনার চক্র এভাবেই চলতেই থাকে চলতেই থাকে…
আর এইভাবেই শেয়ারের LTP মানে এর দাম নিত্য ওঠানামা করতে থাকে।
শেয়ার বাজারে কোনও কোম্পানির শেয়ার ছাড়া আর কিছু কেনা বেচা হয়?
শেয়ার বাজারে বা ডিম্যাট কাম ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট থেকে সরাসরি শেয়ার ছাড়াও ই টি এফ বা এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড, শেয়ার বা ইনডেক্স ডেরিভেটিভ মানে ফিউচার এবং অপশান-ও কেনাবেচা করা যায়। আবার ফিচার এনেবেল করলে কমোডিটি ডেরিভেটিভ-ও কেনাবেচা করা যায়। এইসব টার্ম গুলো নিয়ে আবার অন্য কোনও আর্টিকেলে বিষদে বলব।
ক্রেতা বা বিক্রেতাদের প্রকারভেদঃ
শেয়ার বাজারে শেয়ার কেনার পর সেটা নিজের কাছে রাখার মনোভাবের উপর নির্ভর করে ক্রেতা বা বিক্রেতা দের দুই দলে ভাগ করা যায়।
যারা কোনও শেয়ার কেনার পর লম্বা সময় সেটা নিজের কাছে রাখার মনোবৃত্তি রাখে তাদের বলা হয় ইনভেস্টর।
আর যারা শেয়ার কেনার পর সেদিনেই বা কয়েকদিনের মধ্যে স্বল্প লাভে বিক্রির সুযোগ খোঁজে তাদের বলে ট্রেডার।
আবার আর্থিক ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে তোমার আমার মত সাধারণ অতি খুদ্র আর্থিক ক্ষমতার অধিকারীদের শেয়ার বাজারের পরিভাষায় বলে রিটেল ইনভেস্টর বা ট্রেডার।
আর ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টর হচ্ছে বিশাল আর্থিক ক্ষমতাসম্পন্ন কোনও প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন যারা হাজারো ক্লায়েন্টদের টাকা তাদের হয়ে ইনভেস্ট করে। কোনও শেয়ারের দামের দ্রুত পরিবর্তন তখনই হয় যখন এরকম ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টররা একসাথে প্রচুর শেয়ার কেনাবেচা করে। মিউচুয়াল ফান্ড এর একটা উদাহরণ।
ডিম্যাট ছাড়া অন্যভাবে বা পরোক্ষভাবে কি শেয়ার বাজারে ইনভেস্ট করা যায়?
এইযে বললাম মিউচুয়াল ফান্ডের কথা সেই মিউচুয়াল ফান্ড আসলে তোমার আমার মত সাধারন মানুষের থেকেই টাকা জমা করে সেই টাকা শেয়ার মার্কেটে খাটায়। মিউচুয়াল ফান্ডে এই বাজারের ব্যাপারে আমাদের থেকে অনেক বড় বড় এক্সপার্ট ফান্ড ম্যানেজাররা ঠিক করে কোন শেয়ার কত পরিমাণে কখন কোন দামে কেনা বেচা হবে। আর এ ধরনের যেকোনো মিউচুয়াল ফান্ডে ইনভেস্ট করার জন্য কোন ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট এর দরকার পড়ে না। যে কোনও ব্যাংকে গিয়ে ফিক্স ডিপোজিট এর মত ফর্ম ফিলাপ করেই লাম্পসাম বা SIP-র মাধ্যমে মিউচুয়াল ফান্ডে ইনভেস্ট করা যায়।
শেয়ার বাজার কখন খোলা থাকে?
এমনি তে অন্যান্য অফিসের মতই সপ্তাহের সোম থেকে শুক্রবার শেয়ার বাজার খোলা থাকে মানে ওই দিন গুলোতে শেয়ার কেনাবেচা করা যায়। এর মধ্যে অন্যান্য অফিসের মতই জাতীয় ছুটির দিনগুলো ও আরও কিছু বিশেষ দিনে এখানে লেনদেন বন্ধ থাকে। আর সময় দেখতে গেলে ভারতীয় শেয়ার বাজারে এমনিতে সকাল 9:15 থেকে বিকাল 3:30 পর্যন্ত কেনাবেচা করা যায়। তবে সকাল 9:00 থেকে 9:15 প্রি ওপেনিং সেশন আর বিকাল 3:30 থেকে 4:00 টে পর্যন্ত চলে ক্লোজিং সেশন যেটা নিয়ে আপাতত আমাদের না ভাবলেও চলবে কারন আমাদের যা করার সেটা ওই 9:15-3:30 এর মধ্যেই করতে হবে। বাকিটা নিয়ে পরে ভাবলেও চলবে!
তবে এম সি এক্স কমোডিটি মার্কেট খোলা থাকে সকাল 9 টা থেকে রাত্রি 11:30 পর্যন্ত।
শেয়ার বাজার থেকে ইনকাম কিভাবে?
অন্য সব ব্যাবসার মতই শেয়ার বাজারে লাভ বা ক্ষতির লজিক টা এক্কেবারেই সিম্পল। শেয়ার কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করলে লাভ আর উল্টো টা হলে ক্ষতি। তবে এখানে লাভ করতে হলে বুঝতে হবে কখন কত দামে কোন শেয়ারটা কেনা উচিৎ হবে মানে কেনার আগে দেখতে হবে দাম বাড়ার সম্ভাবনা কতটা। আর এটাও ঠিক করতে হবে যদি ভাবনামত না চলে তখন কি করনীয়। তবে এই বিষয় টা এত ছোটো পরিসরে আলোচনা করার মত না… এটা নিয়ে আমার অনেক কিছু বলার আছে কিন্তু সেগুলো আজ না। অন্য কোনও দিন, অন্য কোনও আর্টিকেল-এ।
শেষ করার আগে…
তো আশা করি কথামত শেয়ার বাজার সম্পর্কে একটা ধারণা আমি তৈরি করতে পেরেছি। কোনও কিছু বলার থাকলে বা প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করতে ভুলো না কিন্তু! আর গুপ্তধন ডট কম কে তোমার মনের মণিকোঠায় একটু জায়গা দিও তো! আর হ্যাঁ আর্টিকেলটা পড়ে যদি এই বাজার সম্পর্কে কোনো ইন্টারেস্ট জন্মায় অথবা এখানে ইনভেস্ট করার ইচ্ছা হয় তাহলে তো একটা ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট দরকার পড়বেই, আর ভারতের সবথেকে বড় এবং সবথেকে ভরসাযোগ্য ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট প্রোভাইডার Zerodha-য় যদি ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলতে চাও তাহলে আমার এই অ্যাফিলিয়েট লিংক ব্যবহার করে খুলতে পারো। এই লিঙ্ক ব্যবহার করলে আমি একটু সাপোর্ট পাব আর কি।
Zerodha ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট ← [এখানে ট্যাপ করো]
তো বন্ধু আজ শেষ করি। ভালো থেকো। টা টা। 🙂
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)
শেয়ার বাজার মানে কি জুয়া?
মোটেও না। এটা ব্যবসার জায়গা। এখানে লম্বা সময় ধরে বিনিয়োগ ও ট্রেড করে বিশাল সম্পত্তির অধিকারী হয়েছেন এমন উদাহরণ প্রচুর পাওয়া যায়। শেয়ার বাজারে ঝুঁকি আছে। কিন্তু সঠিক ট্রেনিং নিয়ে নামলে সম্ভাবনাও বিশাল!
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে কত টাকা লাগে?
এটা তো শেয়ারের দামের উপর নির্ভর করছে। যত টাকার শেয়ার কিনতে চাইবেন তত টাকা লাগবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি ১০ টাকা দামের একটা শেয়ার কিনতে চান তাহলে ১০ টাকাতেও বিনিয়োগ করতে পারবেন আবার ১০০ টাকা দামের শেয়ার ১০০০ টা কিনতে চাইলে ১ লাখ টাকার প্রয়োজন পড়বে।