শেয়ার বাজার সমুদ্রের মতো। এখানে জানার, শেখার ও করার বিষয়ের যেমন শেষ নেই, তেমনই শেষ নেই এখানে লিস্টেড কোম্পানির সংখ্যাতেও। হাজার হাজার লিস্টেড নাম বা তাদের শেয়ারের দাম আলাদা হলেও কাজে বা ব্যবসার ক্ষেত্রে কিন্তু এগুলোর প্রত্যেকটা অন্যান্য কোম্পানিগুলো থেকে পুরোপুরি আলাদা নয়।
একই বা সম্পর্কিত ইন্ডাস্ট্রির অন্তর্গত কোম্পানিগুলো সাধারণত একই ধরনের কাজ করে বা একই ধরনের প্রোডাক্ট ও সার্ভিস প্রোভাইড করে। আবার অনেকসময় এগুলো একে অপরের উপর নির্ভরশীল-ও হয়। এর ওপরেই ভিত্তি করে একই ধরণের বা সম্পর্কিত কোম্পানিগুলোকে শ্রেণীবদ্ধ করতে বিবিধ ক্ষেত্র বা সেক্টরের আশ্রয় নেওয়া হয়।
সেক্টর মানে আসলে বৃহত্তর অর্থনৈতিক সেগমেন্ট বা বিভাগ যার মধ্যে সম্পর্কিত একই ধরনের ইন্ডাস্ট্রি এবং সেই ইন্ডাস্ট্রির অন্তর্গত কোম্পানিগুলোকে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়।
এভাবে শ্রেণীবিভাগ করার প্রয়োজনীয়তা
এমনিতে শেয়ার বাজারের বিবিধ কোম্পানি এবং তার সাথে তাদের ব্যাপারে নানাবিধ তথ্যের সুনামি বিনিয়োগের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে বা বিনিয়োগের জন্য সঠিক শেয়ার খুঁজে পেতে খুবই অসুবিধার সৃষ্টি করে।
কোনো লাইব্রেরিতে গেলে প্রথমেই যদি সরাসরি আপনি আপনার পছন্দের বইটা খুঁজতে উদ্যত হন, তাহলে খেই হারিয়ে ফেলবেন। কিন্তু কোন শেলফে কোন ধরনের বই আছে সেটা আগে জেনে নিয়ে তারপর যদি আপনি আপনার যে বই প্রয়োজন সে ধরনের বইয়ের শেলফে গিয়ে খোঁজেন, তাহলে খুব সহজেই আপনার প্রয়োজনীয় বইটা খুঁজে নিতে পারবেন। একইভাবে শেয়ার বাজারে যখন একই ধরনের শেয়ারগুলোকে বিবিধ সেক্টরের মাধ্যমে দলবদ্ধ করা হয় তখন পছন্দের বা বিনিয়োগের উপযুক্ত শেয়ার খুজে পেতে বিনিয়োগকারীদের অনেক সুবিধা হয় এবং অনেক সময় বেঁচে যায়।
এছাড়া বিভিন্ন সময়ে দেশের বিশেষ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কোনো কোনো ক্ষেত্রের ওপর ভালো অথবা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ক্ষেত্র ভেদে শেয়ারগুলোকে আলাদাভাবে পাওয়ার জন্য ওই ধরনের অনন্য পরিস্থিতিতে বিনিয়োগের উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়। যেমন ধরুন করোনা মহামারী আসার পর স্বাভাবিক কারণেই স্বাস্থ্য পরিচর্যা ক্ষেত্রের সমস্ত শেয়ার গুলোর দাম প্রচুর পরিমাণে বেড়েছিল। এভাবে শ্রেণীবিভক্ত থাকার জন্য বিনিয়োগকারীরা ওই সময়ে সহজেই উক্ত সেক্টরের শেয়ার বেছে নিতে বা চাইলে বিনিয়োগ করতে পারত এবং লাভের ভাগীদার হতে পারত।
এছাড়া এভাবে শ্রেণী বিভাগের জন্যই কোন শেয়ারে বেশি লাভ পাওয়া যাচ্ছে বা যেতে পারে সেটা বিভিন্ন শেয়ারের তথ্য তুলনা করে বুঝতে সুবিধা হয়।
কতগুলো সেক্টর?
অর্থনীতির মূল ক্ষেত্র গুলোকে অনুসরণ করে গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রি ক্লাসিফিকেশন স্ট্যান্ডার্ড বা জিআইসিএস অনুযায়ী শেয়ার বাজারে মোট সেক্টর ১১ টা ধরা হয়। প্রত্যেকটা সেক্টরের মধ্যে অনুষঙ্গী ইন্ডাস্ট্রি, সাব-ইন্ডাস্ট্রি এবং তার মধ্যে অন্তর্গত বিবিধ কোম্পানিগুলোকে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়।
ঐ ১১ টা ক্ষেত্র বা সেক্টরের সংক্ষিপ্ত পরিচয় নীচে সেওয়া হল।
১। আর্থিক ক্ষেত্র বা ফিনান্সিয়াল সেক্টর
এই সেক্টরের কোম্পানিগুলো টাকাপয়সা লেনদেনের সাথে যুক্ত। এর মধ্যে যেমন পড়ে বিবিধ ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা এনবিএফসি এবং ক্রেডিট কার্ড কোম্পানিগুলো, তেমনই পড়ে ইন্সুরেন্স ও বিভিন্ন ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড পরিচালক ও ব্রোকিং কোম্পানিগুলো।
যেহেতু এসব কোম্পানিগুলোর ব্যবসা প্রধানত ঋণ দেওয়া-নেওয়া ও বিনিয়োগের সঙ্গে সম্পর্কিত, বাজারে ইন্টারেস্ট রেট কম বা বেশি হলে এবং বিনিয়োগ উপযোগী বা অনুপযোগী পরিস্থিতি তৈরি হলে, তার প্রভাব এদের ব্যবসা, লাভ তথা শেয়ারের দামের উপর পড়ে।
এই ক্ষেত্রের অন্তর্গত সুপরিচিত কয়েকটা কোম্পানির নাম হচ্ছে এসবিআই, এইচডিএফসি ব্যাংক, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক, আইসিআইসিআই ব্যাংক, এলআইসি, এসবিআই লাইফ, এইচডিএফসি লাইফ, এইচডিএফসি এএমসি, আইসিআইসিআই সিকিউরিটিজ, এসবিআই কার্ডস, বাজাজ ফাইন্যান্স, মুত্থুট ফাইন্যান্স ইত্যাদি।
২। মৌলিক সুবিধার ক্ষেত্র বা ইউটিলিটি সেক্টর
যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বিদ্যুৎ, জল, প্রাকৃতিক গ্যাস, নবায়নযোগ্য শক্তি ইত্যাদি মৌলিক সুবিধা দেওয়ার জন্য সার্ভিস প্রোভাইড করে তাদের এই সেক্টরের মধ্যে ফেলা হয়।
এধরণের কোম্পানিগুলোকে বেশি প্রতিযোগিতার মধ্যে না পড়তে হলেও এদের ব্যবসার জায়গাটা ভীষণভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণের আওতায় পড়ে। তাই সরকারের এই সংক্রান্ত যেকোনো ধরনের নীতিগত পরিবর্তন এই সমস্ত কোম্পানির ব্যবসার ওপর সরাসরি পড়ে।
এটা আবার একটা ডিফেন্সিভ সেক্টর হিসেবেও ধরা হয়। বাজারের অবস্থা যেমনই হোক এইসব কোম্পানি দ্বারা যোগানো মৌলিক সুবিধাগুলোর চাহিদা সব সময়ই থাকে। তাই বাজারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতেও এই ধরনের শেয়ারগুলোর পারফরম্যান্স সাধারণত তুলনায় ভালই হয়।
এই ক্ষেত্রের অন্তর্গত সুপরিচিত কয়েকটা নাম হল সিইএসসি, আদানি পাওয়ার, গেল, মহানগর গ্যাস, পাওয়ার গ্রিড ইত্যাদি।
৩। ভোক্তা বিবেচনামূলক ক্ষেত্র বা কনজিউমার ডিসক্রিশনারি সেক্টর
অপরিহার্য নয় এমন প্রোডাক্ট বা সার্ভিস যেসমস্ত প্রতিষ্ঠান যোগায় সেগুলো এই সেক্টরের মধ্যে পড়ে। আমাদের আয় থেকে মৌলিক প্রয়োজনীয়তা বা বেসিক নেসেসিটি গুলো পূরণ করার পর অতিরিক্ত বেঁচে থাকা টাকা বা ডিস্ক্রিশনারি ইনকাম সাধারণত আমরা এই ক্ষেত্রের কোম্পানিগুলো দ্বারা যোগানো পণ্য ও সার্ভিসের ওপর খরচ করে থাকি।
এক কথায় বলা যায় প্রয়োজন মেটাবার পর লাক্সারি করার জন্য সব কিছু যোগান দেয় এ ধরনের কোম্পানিগুলো। তাই দেশের অর্থনীতির হাল যখন ভালো হয়, মুদ্রাস্ফীতির হার কম থাকে এবং মানুষের হাতে এক্সট্রা খরচ করার মতো যখন টাকা থাকে তখন এ ধরনের কোম্পানি গুলোর ব্যবসা ভালো চলে।
এই বিভাগে যেমন অটো ও অটোমোবাইল বা গাড়ি-ঘোড়া ও যানবাহন সংক্রান্ত সমস্ত কোম্পানি থাকে তেমনিই বসতবাড়ি তৈরির, আসবাবপত্রের, কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স ও অ্যাপ্লায়েন্সেস-এর, জামা-জুতো-এক্সেসরি ও লাক্সারি দ্রব্যের, হোটেল-রিসোর্ট ও রেস্টুরেন্টের এবং অপরিহার্য বাদে অন্যান্য সমস্ত জিনিসের দোকানদানি বা রিটেল সংক্রান্ত সমস্ত কোম্পানি এই সেক্টরের আওতায় পড়ে।
এই ক্ষেত্রের কয়েকটা চেনাজানা কোম্পানি হলো টাইটান, রেমন্ড, পেজ ইন্ডাস্ট্রিজ, লাক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, লেমন ট্রি হোটেলস, জুবিলিয়ান্ট ফুডওয়ার্কস, আইএফবি ইন্ডাস্ট্রিজ, হিরো মটোকর্প, ইচার মটরস, এমআরএফ, আদিত্য বিরলা ফ্যাশন অ্যান্ড রিটেল, ভিআইপি ইন্ডাস্ট্রিজ, বাটা ইন্ডিয়া, এশিয়ান পেইন্টস ইত্যাদি।
৪। প্রধানতম ভোক্তা পন্যদ্রব্যের ক্ষেত্র বা কনজিউমার স্ট্যাম্পলস স্টক সেক্টর
কনজিউমার স্ট্যাপল মানে বোঝায় যেসমস্ত প্রোডাক্ট বা পন্য প্রতিদিনের জীবনে অপরিহার্য। এর মধ্যে যেমন পড়ে খাবার দাবার, পানীয়, বাড়ির প্রয়োজনীয় জিনিসপাতি, হাইজিন বা স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কিত এবং ব্যক্তিগত পন্য তেমনিই পড়ে মদ সিগারেটের মতো নেশাদ্রব্যও। এই সমস্ত পণ্যের উৎপাদন এবং ডিস্ট্রিবিউশন বা বিতরণ তথা বিক্রি (রিটেল) সম্পর্কিত সমস্ত কোম্পানি এই সেক্টরের মধ্যে পড়ে।
এটাও ডিফেন্সিভ সেক্টরের মধ্যে পড়ে কারণ বাজারের পরিস্থিতি যখন খারাপ হয় তখনও এই ক্ষেত্রের উৎপাদিত পণ্য প্রতিদিনের জীবনে অপরিহার্য বলে ওইসব পণ্যের চাহিদা সব সময়ই অব্যাহত থাকে এবং কোম্পানিগুলোর তথা তাদের শেয়ারের পারফরম্যান্স অন্যান্য নন-ডিফেন্সিভ সেক্টরের কোম্পানির তুলনায় ভালো হয়।
এই ক্ষেত্রের বহু পরিচিত কয়েকটা ব্র্যান্ড হল ইমামি, ডাবর ইন্ডিয়া, হিন্দুস্তান ইউনিলিভার, মারিকো, আদানি উইলমার, ধামপুর সুগার মিলস, কোহিনুর ফুডস, জিলেট ইন্ডিয়া, প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল হাইজিন অ্যান্ড হেলথ কেয়ার, বরুণ বেভারেজ, টাটা কফি ইত্যাদি।
৫। শক্তি ক্ষেত্র বা এনার্জি সেক্টর
এই বিভাগে সেই সমস্ত প্রতিষ্ঠান আসে যারা তেল, গ্যাস, কয়লা ইত্যাদি বিবিধ শক্তির উৎস উত্তোলন ও শোধনের সাথে যুক্ত। এছাড়া যারা এই সমস্ত কাজের জন্য যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম তৈরি করে ও এই সংক্রান্ত বিবিধ সার্ভিস প্রোভাইড করে তারাও এই সেক্টরের অন্তর্গত। দেশী ও বিদেশী বাজারে ক্রুড অয়েল, ন্যাচারাল গ্যাস ও অন্যান্য কমোডিটির দামের ওপর এদের ব্যবসার লাভক্ষতি নির্ভর করে। দেশের ইকোনমির বৃদ্ধি এই ক্ষেত্রের ওপর অনেকাংশেই নির্ভর করে।
এক্ষেত্রে কয়েকটা পরিচিত নাম হল রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ, ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন, টাটা পাওয়ার, কোল ইন্ডিয়া, ওএনজিসি ইত্যাদি।
৬। স্বাস্থ্য পরিচর্যা ক্ষেত্র বা হেলথ কেয়ার সেক্টর
কথায় আছে স্বাস্থ্যই সম্পদ। স্বাস্থ্য পরিচর্যা সম্পর্কিত যন্ত্রপাতি ও সার্ভিস প্রদানকারী এবং তার সাথে ফার্মা (ওষুধ তৈরি) বায়োটেক ও এই সম্পর্কিত জীববিদ্যায় গবেষণাকারী কোম্পানিগুলো এই ক্ষেত্রের আওতায় পড়ে।
মানুষ মাত্রই রোগব্যাধি থাকবে আর সেজন্য সময়ের সময়ে হসপিটালে যাওয়া, বিবিধ টেস্ট করানো এবং ওষুধপত্রের দরকার পড়তেই থাকবে। আর এই কারনে এতাকেও ডিফেন্সিভ সেক্টরের মধ্যে ফেলা হয়।
এই বিভাগের অন্তর্গত কয়েকটা কোম্পানি হল ডক্টর লাল প্যাথ ল্যাবস, নারায়ণা হৃদয়ালয়, অ্যাপোলো হসপিটালস, সিপলা, সান ফার্মা, জাইডাস লাইফসাইন্সেস, বায়োকন, অ্যাবট ইন্ডিয়া, লুপিন ইত্যাদি।
৭। শিল্পক্ষেত্র বা ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেক্টর
এটা একটা সুদূরপ্রসারী সেক্টর। বড় বড় যন্ত্রপাতি, বড় বড় গাড়ি-ঘোড়া সহযোগে এদের কাজ। এই বিভাগের মধ্যে যেমন এরোস্পেস ও ডিফেন্স সংক্রান্ত কোম্পানিগুলো পড়ে তেমনি পড়ে বৈদ্যুতিন, বিল্ডিং ও কনস্ট্রাকশন সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি, বড় বড় ট্রাক ও এগ্রিকালচারের যন্ত্রপাতি এবং বিবিধ ইন্ডাস্ট্রির আরও অন্যান্য যন্ত্রপাতি তৈরির সাথে যুক্ত কোম্পানিগুলো। এছাড়া কমার্শিয়াল প্রিন্টিং, অফিস সাপ্লাই, সিকিউরিটি ও অ্যালার্ম সার্ভিস, হিউম্যান রিসোর্স, রিসার্চ ও কনসাল্টিং সার্ভিস এবং এয়ারলাইন্স, মেরিন, রেলরোড ও ট্রাকিং ট্রান্সপোর্টেশন সংক্রান্ত কোম্পানিগুলোও এই সেক্টরের অন্তর্গত।
আদানি এন্টারপ্রাইজেস, অশোক লেল্যান্ড, ভারত ডাইনামিক্স, ব্লু ডার্ট এক্সপ্রেস, কোচিন শিপইয়ার্ড, ডেলটা কর্পোরেশন, ফিনোলেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, হানিওয়েল অটোমেশন, জিএমএম ফডলার, হিন্দুস্তান এরো, এল এন্ড টি, রাইটস, এসআরএফ, কিরলস্কর ব্রাদার্স ইত্যাদি এই ক্ষেত্রে চেনা নাম।
৮। প্রযুক্তি ক্ষেত্র বা টেকনোলজি সেক্টর
টেকনোলজি সম্পর্কিত পণ্য এবং সেবা দেয় যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান সেগুলোই এই সেক্টরের অন্তর্গত। প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার ও ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরি ও সার্ভিস দেওয়া এবং এই সংক্রান্ত বিবিধ হার্ডওয়ার এবং সেমিকন্ডাক্টর তৈরির সাথে এই বিভাগের কোম্পানিগুলো যুক্ত।
এই বিভাগের কয়েকটা বড় বড় নাম হল টিসিএস, ইনফোসিস, এইচ সি এল টেক, টেক মাহিন্দ্রা এবং উইপ্রো।
৯। যোগাযোগ পরিষেবা ক্ষেত্র বা কমিউনিকেশন সার্ভিসেস সেক্টর
ওয়্যার্ড ও ওয়্যারলেস টেলিকমিউনিকেশন সার্ভিস এবং তার সাথে অ্যাডভার্টাইজিং, ব্রডকাস্টিং, কেবল ও স্যাটেলাইট, মুভি ও এন্টারটেইনমেন্ট সংক্রান্ত সমস্ত কোম্পানি এই সেক্টরের আওতায় পড়ে।
ভারতী এয়ারটেল, ভোডাফোন আইডিয়া, ইন্দাস টাওয়ার, এনডিটিভি, পিভিআর, সিটি নেটওয়ার্ক ইত্যাদি কোম্পানি এই বিভাগের আওতায় পড়ে।
১০। পদার্থগত ক্ষেত্র বা মেটেরিয়ালস সেক্টর
বিভিন্ন ধরনের পদার্থ বা কাঁচামাল খোঁজা ও প্রসেস করার সাথে এই সেক্টরের প্রতিষ্ঠানগুলো জড়িত। এর মধ্যে যেমন পড়ে ফার্টিলাইজার, এগ্রিকালচারাল ও অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ও কন্সট্রাকশন মেটেরিয়াল সংক্রান্ত কোম্পানি তেমনই বিবিধ ধাতু ও খনন সংক্রান্ত এবং কাগজ ও বনজাত পণ্য সংক্রান্ত কোম্পানিগুলোও পড়ে।
সাপ্লাই চেনের গোড়াতেই থাকার জন্য ব্যবসা চক্রের যেকোনো পরিবর্তন এই ক্ষেত্রে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।
এই বিভাগের কয়েকটা কোম্পানির উদাহরণ হল, এসিসি, অম্বুজা সিমেন্ট, দীপক নাইট্রেট, হিন্দালকো, জে কে পেপার, পিডিলাইট ইন্ডাস্ট্রিজ, রামকো ইন্ডাস্ট্রিজ, টাটা স্টিল, ন্যালকো, এনএমডিসি, ইউপিএল ইত্যাদি।
১১। ভুসম্পত্তি সংক্রান্ত ক্ষেত্র বা রিয়েল এস্টেট সেক্টর
বিবিধ রিয়েল এস্টেট প্রপার্টি তৈরি ও বিক্রি করা, রিয়েল এস্টেট সংক্রান্ত বিবিধ সার্ভিস দেওয়া কাজ যে সমস্ত কোম্পানির এবং তার সাথে বিভিন্ন ধরনের রিয়েল এস্টেট ইনভেসমেন্ট ট্রাস্ট (REIT) গুলো এই ক্ষেত্রের অন্তর্গত।
ভারত উন্নয়নশীল দেশ হওয়ায় ২০৩০ এর মধ্যে এই সেক্টরের সাইজ ১ ট্রিলিয়ন পর্যন্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সরকার এই ক্ষেত্রের প্রতি খুবই সাপোর্টিভ। তাই আশা করা যায় এই ক্ষেত্রের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।
এই ক্ষেত্রে কয়েকটা পরিচিত কোম্পানি হল ডিএলএফ, গোদরেজ প্রপারটিস, ইউনিটেক ইত্যাদি।
শেষ কথা
এই নিবন্ধে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন সেক্টরের কথা জানতে পেরে আশা করি আপনার পোর্টফোলিওর জন্য সঠিক শেয়ার বাছার ক্ষেত্রে একটু হলেও সুবিধা হবে। তবে উপরের প্রত্যেক ক্ষেত্রে যে সমস্ত কোম্পানির উদাহরণ আমি দিয়েছি সেটা বিভাগ গুলো ভালোভাবে বোঝার উদ্দেশ্যে শুধুমাত্র উদাহরণ হিসেবেই নেবেন। ওই নামগুলো কোনরকম স্টক রেকমেন্ডেশন কিন্তু নয়। বিনিয়োগের জন্য ভালো শেয়ার বাছার ক্ষেত্রে সেক্টর ছাড়াও আরও অনেক কিছু দেখার থাকে। সব কিছু না দেখে-শুনে জেনে-বুঝে বিনিয়োগ করার হঠকারী সিদ্ধান্ত কিন্তু কখনোই নেবেন না।
আজ তাহলে এখানেই শেষ করি। ভালো থাকবেন।