অনলাইনে নিরাপদে কেনাকাটা করে সাইবার ক্রাইম বা আর্থিক ক্ষতি থেকে বাঁচার 15 টি টিপস

5/5 - (3 জন রেটিং করেছেন)

টেকনোলজি ও মোবাইল উন্নততর এবং ইন্টারনেটের স্পিড দ্রুততর হওয়ার সাথে সাথে বেড়েছে আমাদের ইন্টারনেটের ব্যবহার। আর ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে অনলাইনে কেনাকাটা ও অনলাইন ট্রানজাকশন। আর তার সাথে সাথেই বেড়েছে ডিজিটাল প্রতারণামূলক কার্যক্রম বা সাইবার ক্রাইম। আর যেহেতু অনলাইনে কেনাকাটার সাথে পেমেন্ট, ট্রানজাকশন ও টাকা পয়সার ব্যাপার জড়িত তাই এই প্রতারণামূলক কার্যক্রমের একটা মূল টার্গেট হয়ে উঠেছে অনলাইনের শপিং এক্টিভিটি।

কিন্তু তাই বলে কি অনলাইনে কেনাকাটা করা বন্ধ করে দেবেন? আরে দাদা অনলাইনে কেনাকাটা করার হাজার সুবিধা। কি একটু ভয় আছে বলে সেই সুবিধা নেওয়া থেকে বঞ্চিত থাকবেন? রাস্তাঘাটে তো রোজ কত অ্যাকসিডেন্ট হয়, তাই বলে কি আমরা গাড়ি চড়া বন্ধ করে দিই? ঠিক তেমনি অনলাইন শপিং বন্ধ করার দরকার নেই একদমই। দরকার শুধু রিস্ক গুলোর ব্যাপারে জানা, একটু সতর্ক থাকা ও কিছু সাবধানতা মেনে চলা। আর এই বিষয় গুলোতেই আলোকপাত করব এই আর্টিকেলে।

সূচীপত্র দেখান

জনপ্রিয় বড়সড় ই-কমার্স প্লেস থেকে কেনাকাটা করুন

অনলাইনে কেনাকাটা করার ওয়েবসাইট বা অ্যাপ তো অনেক আছে। তবে যেখান সেখান থেকে কেনাকাটা করা উচিৎ না। গুগলে প্রোডাক্ট সার্চ করে সামনে যা এলো সেখানেই না জেনেশুনে ক্লিক করা বা কেনাকাটা করতে যাওয়াটা নিরাপদ নয়। কেনাকাটা করতে হলে করা উচিৎ অ্যামাজন, ফ্লিপকার্ট, মিন্ত্রা বা সমকক্ষ বড় পপুলার ওয়েবসাইট থেকে। এই ধরণের ওয়েবসাইটে সেফটি সিকিউরিটি যেমন বেশি তার সাথে প্রোডাক্ট এভেলেবিলিটি বেশি, প্রোডাক্ট কোয়ালিটি ভালো, খারাপ বা নকল প্রডাক্ট পাওয়ার চান্স কম, এছাড়া ছাড়-টার বা অন্যান্য সুবিধাও অনেক বেশি পাওয়া যায়।

কম্পিউটার ও মোবাইলে অ্যান্টিভাইরাস ইন্সটল করুন

যে কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহার করে কেনাকাটা করতে চান সেই কম্পিউটার বা মোবাইলটা যেন ভাইরাস ইনফেক্টেড না হয়। বেশিরভাগ ভাইরাসই কিন্তু সেন্সিটিভ ইনফরমেশন চুরি করে পাচার করে দেয়। তাই অনলাইনে শপিং বা ট্রানজেকশন যে ডিভাইসটা থেকে করতে চান সেটায় অ্যান্টিভাইরাস থাকাটা জরুরি। আর ডিভাইসটা উইন্ডোজ কম্পিউটার হলে দরকারটা সবথেকে বেশি। আর বেসিক অ্যান্টিভাইরাসের বদলে যদি ইন্টারনেট সিকিউরিটি স্যুট ব্যবহার করতে পারেন তাহলে সে ক্ষেত্রে অ্যান্টিভাইরাস ছাড়াও অনলাইন ট্রানজাকশন প্রটেকশন সহ আরো অনেক ফিচার পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে আর একটা কথা বলতেই হয় পাইরেটেড অ্যান্টিভাইরাস দিয়ে কিন্তু কাজ চলবে না। পাইরেটেড অ্যান্টিভাইরাস আর লাইসেন্স ছাড়া ডাক্তার একই ব্যাপার। কখন কোথায় কি ঢুকিয়ে দেবে ধরতেও পারবেন না!

আরও পড়ুনঃ  বেশি ছাড়ে ফ্যাশন সংক্রান্ত জিনিস কেনাকাটার জন্য অনলাইনের সেরা 5টা ওয়েবসাইট ও তাদের তুলনামূলক সুবিধা-অসুবিধা

অপারেটিং সিস্টেম, ব্রাউজার ও অন্যান্য সফটওয়্যারে লেটেস্ট আপডেট ইনস্টল করে রাখুন

সফটওয়্যারে সবসময়ই কিছু না কিছু বাগ এবং সিকিউরিটির লুপহোল থাকেই। আর হ্যাকাররা সেই সমস্ত লুপহোল খুঁজে সেগুলো ব্যবহার করেই তাদের কার্যসিদ্ধি করতে চায়। আর সফটওয়্যারের নির্মাতারা অনবরত আপডেট দিয়ে সেই লুপহোল গুলো বন্ধ করার ব্যবস্থা করে দেয়। তাই অপারেটিং সিস্টেম, ওয়েব ব্রাউজার বা মোবাইল-কম্পিউটারে ব্যবহৃত অন্য যেকোনো সফটওয়্যারে যখন যে আপডেট আসে সেগুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইন্সটল করে নেওয়াই ভালো।

মোবাইল ও মোবাইল অ্যাপ বেশি নিরাপদ

উইন্ডোজ পিসি ও ওয়েবসাইটের কম্বিনেশন থেকে যেকোনো মোবাইল এবং তার সাথে ই-কমার্স ওয়েবসাইট গুলোর অ্যাপ ব্যবহার করা বেশি নিরাপদ। ভাইরাসের রমরমা চিরকালই উইন্ডোজ পিসিতে সবথেকে বেশি। আর ওয়েবসাইট থেকে অ্যাপ গুলো বেশি নিরাপদ এবং অ্যাপ বাইপাস করে ফ্রড করা বেশি কঠিন। মোবাইলে যদি আপনি কেবলমাত্র অ্যাপ স্টোর থেকে পপুলার অ্যাপ ডাউনলোড করেন তাহলে ভাইরাস ইনফেক্ট হওয়ার চান্সও খুব কম। তাই অনলাইনে শপিং বা ট্রানজেকশনের সময় যতটা সম্ভব মোবাইল ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।

বাড়ির ওয়াইফাই বা মোবাইল ডেটা ব্যবহার করুন

কার্ড নাম্বার, একাউন্ট ইনফরমেশন ইত্যাদি সেন্সিটিভ ইনফরমেশন রক্ষা করতে কেনাকাটার সময় বাড়ির ওয়াইফাই ইন্টারনেট কানেকশন বা নিজের মোবাইল নেট ব্যবহার করে কেনাকাটা করুন। পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করে এসব করা কিন্তু একদমই নিরাপদ নয়। আর বাড়ির ওয়াইফাই কানেকশনটিতে পাসওয়ার্ড প্রটেকশন সেট করে রাখুন।

ওয়েবসাইটে কেনাকাটার আগে সাইট সিকিউরিটি চেক করুন

ওয়েবসাইটে ঢোকার পর চেক করুন সেই ওয়েবসাইট সিকিওর এনক্রিপটেড কানেকশন (SSL- Secure Sockets Layer) ব্যবহার করছে কিনা। এটা বোঝার জন্য দেখতে হবে ওয়েবসাইটের ইউআরএল-এর আগে ‘http’-এর বদলে ‘https’ আছে কিনা বা ইউআরএল শুরুর আগে প্যাডলক আছে কিনা। ওই প্যাডলক আইকনটাতে  ক্লিক করলেও দেখিয়ে দেয় ওয়েবসাইটটা সিকিওর কিনা।

অ্যাড্রেস বারে ই-কমার্স সাইটের অ্যাড্রেস সরাসরি টাইপ করুন

ওয়েবসাইট ব্যবহার করার সময় ওয়েবসাইট অ্যাড্রেস বা ইউআরএল ওয়েব ব্রাউজারের অ্যাড্রেস বারে সরাসরি টাইপ করাটাই মঙ্গল। এই কাজটা খুবই অসুবিধাজনক মনে হতে পারে কিন্তু ফিশিং থেকে বাঁচার জন্য এটাই সবথেকে ভালো উপায়। ফিশিং মানে হচ্ছে জেনুইন ওয়েবসাইট এর মত দেখতে এবং জেনুইন ওয়েবসাইটের ইউআরএল এর কাছাকাছি কিন্তু আসলে আলাদা ওয়েবসাইটে ট্রিক করে কোনওভাবে নিয়ে গিয়ে সেনসিটিভ ইনফরমেশন চুরি করা। কোথাও কোন লিংকে ক্লিক করলে এই ফাঁদে পা পড়লেও পড়তে পারেন কিন্তু যদি ওয়েব ব্রাউজারে ডাইরেক্ট অ্যাড্রেস টাইপ করা হয় তাহলে এই ধরনের ফাঁদ এড়ানো যেতে পারে।

আরও পড়ুনঃ  অ্যামাজন থেকে অবিশ্বাস্য ছাড়ে, খুব সস্তা দামে দুর্দান্ত কোয়ালিটির ব্র্যান্ডেড প্রোডাক্ট বা জিনিস কিনে টাকা বাঁচাবার উপায়।

ইমেইলে আসা কোন লিংকে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন

ইমেইলের মাধ্যমে বহু রকম প্রতারণামূলক কাজকর্ম চলে। আপনার চেনা কোন শপিং সাইট বা অন্য কোন আপনার বিশ্বস্ত জায়গার ইমেইল-এর ছদ্মবেশে ভীষণ কনভিন্সিং ফ্রড ইমেইল আপনার ইনবক্সে আসতে পারে। আর সেই ইমেইলে দেওয়া লিংকে যদি আপনি ক্লিক করেন তাহলে কোনো ফিশিং ওয়েবসাইটে যেতে পারেন বা আপনার ডিভাইসে ভাইরাস চলে আসতে পারে বা না জানি আরো কত কিনা হতে পারে। জেনুইনিটি সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত না হলে ইমেইলে আসা কোন লিংকে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকাই মঙ্গল।

অবিশ্বাস্য অফার মোটেও বিশ্বাসযোগ্য নয়!

গুগলে কোনও প্রোডাক্ট সার্চ করে যদি কোনও অবিশ্বাস্য ডিল যেমন ধরুন 15000 টাকার জিনিস 500 টাকায় এরকম কিছু দেখেন তাহলে সাবধান হন। 99.99% সম্ভাবনা ওটা ফ্রড ওয়েবসাইট। ওখানে কেনাকাটা করলে প্রোডাক্টের দামটা তো গেলই, তার সাথে আপনার কার্ড ইনফরমেশন চুরি হতে পারে আর যার জন্য ভবিষ্যতে আরও বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে।

পাসওয়ার্ডঃ

অনলাইনে ব্যবহার করা পাসওয়ার্ড এর ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী। আলাদা আলাদা শপিং ওয়েবসাইটগুলোতে ক্যাপিটাল ও স্মল লেটার, নাম্বার ও সিম্বল সহযোগে আলাদা আলাদা কঠিন পাসওয়ার্ড সেট করা জরুরী। আর পাসওয়ার্ড গুলো ব্রাউজারে সেভ না করে রাখাই ভালো। পাসওয়ার্ড ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলে স্পেশাল পাসওয়ার্ড ম্যানেজার সফটওয়্যার ব্যবহার করা যেতে পারে। অনেক সময় ইন্টারনেট সিকিউরিটি স্যুট গুলোর সাথে এ ধরনের সফটওয়্যার প্রোভাইড করা হয়। 

ওয়েবসাইটে পাসওয়ার্ডের পাশাপাশি মাল্টি ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহার করুন

এই সুবিধা অন করা মানে ওয়েবসাইটে লগইন করার সময় পাসওয়ার্ডের পাশাপাশি মোবাইলে আসা ওটিপি বা অন্য কোন বিশেষ পদ্ধতিতে পাওয়া আর একটা কোড দিয়ে তবে লগইন সম্পূর্ণ করার ব্যবস্থা চালু করা। আপনার শপিং ওয়েবসাইটের অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত করার জন্য এটা সিকিউরিটির একটা এক্সট্রা লেয়ার যা আপনার অ্যাকাউন্টকে হ্যাক হওয়া থেকে রক্ষা করবে।

আরও পড়ুনঃ  অনলাইনে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডে কেনাকাটার সময় ব্যাংকের তরফ থেকে সরাসরি 10% ছাড়ের উপরে আরও 10% পর্যন্ত এক্সট্রা ছাড় পেতে…

ভার্চুয়াল ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা নেওয়ার সুযোগ থাকলে তা ব্যবহার করুন

অনেক ক্রেডিট কার্ড ইস্যুআর ভার্চুয়াল ক্রেডিট কার্ড নাম্বার জেনারেট করে ব্যবহার করার সুবিধা দেয়।  আপনার ক্রেডিট কার্ড অপারেটর যদি সেই সুবিধা দেয় তবে সেই সুবিধাটার সুব্যবহার করুন। ভার্চুয়াল ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে আপনার আসল ক্রেডিট কার্ডের ইনফরমেশন চুরি হওয়ার ভয় থাকবে না।

ক্রেডিট কার্ডের ইন্টারন্যাশনাল ইউসেজ অফ রাখুন

ক্রেডিট কার্ডের সেটিংস্‌ থেকে ইন্টারন্যাশনাল ইউসেজ অপশন অফ রাখুন। কারণ ক্রেডিট কার্ডের নরমাল ট্রানজেকশনে একটা ওটিপি আসে, তারপরে ট্রানজাকশন কমপ্লিট হয় কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল ডলার ট্রানজেকশনের ক্ষেত্রে সেই ওটিপির দরকার পড়ে না। তাই যখন ডলার ট্রানজেকশনের দরকার নেই তখন এই ফিচারটা অফ রাখাই ভালো।

ক্রেডিট কার্ডের স্টেটমেন্টের দিকে নজর রাখুন

ক্রেডিট কার্ডে যেকোনো ট্রানজাকশন করলেই সঙ্গে সঙ্গে একটা এসএমএস মোবাইলে চলে আসে। সেগুলোর উপরেও যেমন খেয়াল রাখা এবং নজর রাখা জরুরী তার সাথে সাথেই মাসের শেষে যখন ক্রেডিট কার্ড স্টেটমেন্ট জেনারেট হয় সেটাও ভালো করে খতিয়ে দেখে নেওয়া উচিত। যে যে বা যত যত এমাউন্টের ট্রানজাকশন করা হয়েছে সেগুলো সব ঠিকঠাক আছে কিনা বা নিজের করা ট্রানজাকশনের সঙ্গে স্টেটমেন্টে দেখানো ট্রানজেকশন মিলছে কিনা সেটা মিলিয়ে নেওয়া উচিৎ। এছাড়াও ক্রেডিট কার্ড কোম্পানিগুলোর অ্যাপ থেকে স্টেটমেন্ট জেনারেট হওয়ার আগেই ক্রেডিট কার্ডের সমস্ত ট্রানজাকশন হিস্ট্রি দেখা যায়। পারলে সেটার উপরেও নজর রাখা ভালো।

অতিরিক্ত ইনফরমেশন চাইলে সাবধান হোন বা দেওয়া থেকে বিরত থাকুন

বিভিন্ন শপিং ওয়েবসাইট বা অ্যাপে অ্যাকাউন্ট তৈরীর সময় আপনার কিছু পার্সোনাল ইনফরমেশন দিতে হয়। কোনো ওয়েবসাইট যদি প্রয়োজনের থেকে অতিরিক্ত পার্সোনাল ইনফরমেশন চায় তবে সাবধান হন। আর যেকোনো শপিং ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট তৈরির সময় যতটা সম্ভব কম পারসোনাল ইনফরমেশন দিয়ে একাউন্ট বানানো যায় ততটাই দিন।

শেষ করার আগে…

শেষ করার আগে বলবো আরও জানুন, সাবধান হোন, সতর্ক থাকুন, উপরের টিপস গুলো ফলো করুন এবং চুটিয়ে অনলাইন শপিং-এর আনন্দ নিন। আজ তাহলে এই পর্যন্তই। দেখা হবে আরো নতুন কোন আর্টিকেলে এইরকমই আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে। ততক্ষণের জন্য টা টা। ভালো থাকবেন। 🙂

মন্তব্য করুন